প্রতিবেদন
ফিরে দেখা : ২০১৮ এই দেশ এই বিশ্ব

২০১৮: এই দেশ

প্রয়াণ—এই ব দে ছ শ র রাজনীতি চলচ্চিত্র সাহিত্য ফিরে দেখা : ২০১৮ সংস্কৃতি জগতের যারা প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে আছেন অশোক মিত্র, মৃণাল সেন, নিরুপম সেন, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বিপ্লবকেতন চক্রবর্তী, পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়, মুশিরুল হাসান, অনিরুদ্ধ রায়, অটলবিহারী বাজপেয়ী, শ্রীদেবী, সুপ্রিয়া দেবী, রমাপদ চৌধুরী, গঙ্গা শহীদ জি ডি আগরওয়াল। আমাদের পার্টির পলিটব্যুরোর দীর্ঘদিনের সদস্য কমরেড ধূর্জটি বক্সীকে আমরা হারিয়েছি।

বিপর্যয়—কেরলের বন্যা শতাব্দীর ভয়াবহতম বিপর্যয়ের একটি হিসেবে সামনে এসেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। কেরালার ত্রাণ তহবিলে দেশের মানুষ মুক্ত হস্তে দান করেছেন এবং কঠিন সময়ে গোটা দেশ কেরালার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য কেরালাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দিতে টালবাহানা চালিয়ে গেছে এবং বিদেশের মানবিক সাহায্যকে আটকাতে তৎপর হয়েছে।

হামলা

অশান্ত কাশ্মীর—কাশ্মীরে গোটা বছর ধরেই নাগরিক অধিকারের ওপর পুলিশ মিলিটারির হামলা অব্যাহত থেকেছে। জঙ্গী দমনের নামে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদী জনতাকে পিষে দিয়েছে মিলিটারির গাড়ি, পেলেট গানের ছররা গুলিতে বিক্ষত হয়েছেন শিশু যুবক প্রৌঢ়। বিজেপি বিরোধী জোট সরকার গঠনের চেষ্টাকে থামিয়ে বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং বছর শেষে জারি হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসন।

ভীমা কোরেগাঁও—১ জানুয়ারী মহারাষ্ট্রের পুণার অদূরে ভীমা কোরেগাঁওতে দলিত সমাবেশের ওপর ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির আক্রমণ ও পাল্টা প্রতিরোধ। পুলিশি ধরপাকড় ও সন্ত্রাস। আর্বান নকশাল ছাপ ও মানবাধিকারের ওপর হামলা—ভীমা কোরেগাঁও- এর ঘটনাকে ব্যবহার করে মানবাধিকার কর্মীদের ওপর আর্বান নকশাল ছাপ মেরে গ্রেপ্তারী শুরু হয়। মানবাধিকার কর্মী, বাম-ঝোঁক সম্পন্ন বুদ্ধিজীবী, কবি এবং আইনজীবীদের গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে দেশের বহু শহরেই সি পি আই (এম এল) প্রতিবাদ সংগঠিত করে। সমাজের নানা স্তর থেকে প্রতিবাদ দানা বাঁধে।

রাফাল চুক্তি—মোদি সরকার অনেক বেশি দামে রাফাল বিমান কিনছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালকে বাদ দিয়ে অনিল আম্বানীর সদ্যোজাত সংস্থাকে বরাত পাইয়ে কোটি কোটি টাকার মুনাফার ব্যবস্থা করে দিয়েছে – এই অভিযোগ উঠেছে ব্যাপকভাবে। সি বি আই ডিরেক্টরকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে রাফাল তদন্তকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে। তিন তালাক নিয়ে অর্ডিনান্স - কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ তিন তালাক দেওয়াকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে চায়।

শবরীমালা—তিন তালাক প্রসঙ্গে অর্ডিনান্স এলে বিজেপি যখন মুসলিম মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর ভঙ্গী করতে চায়, তখনই শবরীমালা মন্দিরে হিন্দুমহিলাদের প্রবেশাধিকারের সপক্ষে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সে দাঁতে নখে বিরোধিতা করে। এর মধ্যে দিয়েই বিজেপির পিতৃতান্ত্রিক ও রক্ষণশীল মানসিকতাটি উন্মোচিত হয়ে পড়ে। কেরলে লক্ষ লক্ষ মহিলার মানবীপ্রাচীর গঠন কর্মসূচী বিজেপির শবরীমালাকে কেন্দ্র করে কর্মসূচীর স্পষ্ট জবাব দিয়ে দিয়েছে।

নাগরিকপঞ্জী—আসামে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে নাগরিক পঞ্জী তৈরির কাজ চালাচ্ছিল সে রাজ্যের প্রশাসন, তার তালিকা প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষের নাম সেখানে নেই। তালিকায় গরমিল ও ত্রুটিবিচ্যুতি পাহাড় প্রমাণ। বিরাট সংখ্যক মানুষ আশঙ্কায় ভুগছেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনসুকিয়ায় পাঁচ বাঙালির নৃশংস হত্যার ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি সভাপতি নাগরিক পঞ্জীকে গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। পশ্চিমবাংলায় এসে এখানকার নাগরিকদের একাংশকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও তিনি দিয়ে গেছেন। এরই পাশাপাশি বিজেপির তরফে নাগরিকত্ব বিলের নামে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের একটি চেষ্টা শুরু হয়েছে।

ইসলামপুরে গুলি চালিয়ে ছাত্রহত্যা—উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুলে শিক্ষকের অপ্রতুলতার জন্য ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। বিভিন্ন গণআন্দোলনে মা মাটি মানুষের তকমাধারী সরকার যেভাবে দমন নামিয়ে এনেছে। ইসলামপুরে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপরেও এই সরকারের ট্রিগার হ্যাপী পুলিশ একই কায়দায় আক্রমণ নামায় এবং গুলি চালায়। গুলিতে মৃত্যু হয় রাজেশ সরকার, তপন বর্মণ নামে স্কুলের দুই প্রাক্তন ছাত্রের। এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ।

আন্দোলন সংগ্রাম

কিষাণ মুক্তি মার্চ—২৯ নভেম্বর মহানগরী দিল্লীকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল গ্রাম গঞ্জের কৃষকেরা। ৩০ নভেম্বর রাজধানীর রাজপথের দখল নিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজার হাজার কৃষক। একদিকে বিজেপি যখন ‘অযোধ্যা চলো’ ডাক দিয়ে সারা দেশে হিংসা আর ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে দিতে চাইছে,তখন নিজেদের অধিকার ও সন্মানের প্রশ্ন তুলে ধরে সারা দেশের কৃষকেরা এক অভূতপূর্ব সংগ্রামী একতা গড়ে তুললেন, “দিল্লী চলো” রণধ্বনিকে সামনে রেখে সংগঠিত হল কিষাণ মুক্তি যাত্রা।

মহারাষ্ট্রের কৃষক লং মার্চ (৬ মার্চথেকে ১১ মার্চ)—মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে মুম্বাই পর্যন্ত ১৮০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে হাজার হাজার কৃষক পথ হাঁটেন চাষিদের জঙ্গলের জমিতে অধিকার, শস্যের ন্যায্য মূল্য, ঋণ মকুব ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে। লাল পতাকা হাতে কৃষকদের মিছিল দেশের বুকে অভূতপূর্ব আলোড়ন তৈরি করে।

বিহারে আশা কর্মীদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট— বিহারে প্রায় ১ লক্ষ আশা কর্মী ২০১৮-র ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন। বিহারে সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১ ডিসেম্বরের সকাল থেকে অচল হয় পড়ে। জরুরী পরিষেবা ছাড়া অন্য সমস্ত কাজই বন্ধ হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে মিড-ডে মিল কর্মীদের আন্দোলন—২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী মিড-ডে-মিল (রন্ধনকর্মী) ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এক রাজ্য সমাবেশ আয়োজিত হয় শিয়ালদা স্টেশন চত্বরে। দীর্ঘ বছর ধরে সরকারী বিদ্যালয়গুলিতে মিড ডে মিল প্রকল্পে কর্মরত রন্ধনকর্মীরা নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের রান্না করে খাইয়ে আসছেন। কিন্তু এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারেও এদের জন্য বরাদ্দ সামান্য যে অর্থ (১৫০০ টাকা), তার কোনো বৃদ্ধি নেই।

ধর্মঘটের প্রস্তুতি—দেশজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেবিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন, বামপন্থী পার্টি ও সংগঠনের কর্মীরা ৮ ও ৯ জানুয়ারীর দেশজোড়া সাধারণ ধর্মঘটের লক্ষ্যে আন্দোলন প্রচার গণসংযোগের কাজ চালিয়ে গেছেন এই বছরের শেষভাগ জুড়ে। আমাদের রাজ্যে চটশিল্প, চা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকেরা এতে যেমন সামিল, তেমনি সামিল ব্যাঙ্ক রেল সহ বিভিন্ন সরকারী ক্ষেত্রের কর্মীরা। পথে নেমে আন্দোলন করছেন আশা, অঙ্গনওয়াড়ি, মিড-ডে মিল কর্মীরা, পার্শ্বশিক্ষক, আংশিক সময়ের শিক্ষকেরা। প্রায় চোদ্দ কোটি শ্রমিক মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অনাস্থা জানাচ্ছেন এই আন্দোলন প্রচারের মধ্যে দিয়ে।

মি টু আন্দোলন—ভুক্তভোগী নারীদের নিজেদের মুখেই সিনেমা, সাংবাদিকতা, শিল্প, পড়াশোনা এবং আন্দোলনের জগতে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত স্বভাবগত হেনস্থাকারীদের মুখোশ খুলে দেওয়ার এক সুনামিই দেখা গেল। গত বছর আমেরিকার নারীদের হার্ভে উইনস্টেইনের মতো হলিউডের নারী-খাদকদের মুখোশ খুলে দিতে দেখা গিয়েছিল। তাদের মতোই আমাদের দেশের নারীরাও ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে দাবি করেছেন যে, হিংসা সম্পর্কে নারীদের অভিজ্ঞতাকে স্বীকার করতে ও বিশ্বাস করতে হবে। প্রিকল শ্রমিকদের ১০৩ দিনের ধর্মঘট শেষ, আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে— তামিলনাড়ুর উপ-মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের ফলে প্রিকল শ্রমিকদের ১০৩ দিনের ধর্মঘটের অবসান ঘটে। ধর্মঘটের জন্য কোন ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নিতে পরিচালকমণ্ডলি সম্মত হয় এবং বেতন প্রশ্নের মীমাংসার জন্য কেবলমাত্র এ আই সি সি টি ইউ অনুমোদিত ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করতেও তারা রাজি হয়। আলোচনার পর ইউনিয়ন ৩ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরিচালন কর্তৃপক্ষ ৩০২ জন শ্রমিককে তাদের উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশ কারখানায় অবৈধভাবে বদলি করে এর প্রত্যুত্তর দেয়। এটা সম্পূর্ণরূপেই অন্যায্য এবং অবৈধ শ্রম পদক্ষেপ এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শ্রম দপ্তর যে পরামর্শদেয় তারও বিপরীত। শাস্তিমূলক এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ৫০০-র মত শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ ৪ ডিসেম্বর কোয়েম্বাটুরে সমবেত হন।

আইন আদালত প্রতিষ্ঠান

সুপ্রিম কোর্ট—প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে চার প্রবীণ বিচারপতির নজিরবিহীন সাংবাদিক সম্মেলন বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রত্যয়কে নাড়িয়ে দেয়। অভিযোগ ওঠে সুপ্রিম কোর্টের কাজে স্বচ্ছতার অভাব হচ্ছে। সর্বোচ্চ আদালতের কাজকে ও সামগ্রিকভাবে বিচার ব্যবস্থাকে মোদি সরকার প্রভাবিত ও ধ্বংস করতে চাইছে – বিচারপতিদের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এই বার্তা উঠে আসে।

আধার রায়—আধার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ব্যাঙ্ক বা টেলি সংযোগের ক্ষেত্রে আধার আর বাধ্যতামূলক নয় একথা বলা হয়েছে, কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স বা সরকারী ভরতুকি থেকে নানা সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য তার ব্যবহার অব্যাহত রাখা হয়েছে। আধার সংক্রান্ত তথ্যের অন্যায্য ব্যবহার নিয়েও আধার অ্যাক্টিভিস্টরা মুখর হয়েছেন।

সি বি আই—এর আগের সরকারের শাসনাকালে সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখযোগ্যভাবে সিবিআই-কে খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি বলে অভিহিত করেছিল। ঐ তোতাপাখিকে খাঁচা থেকে মুক্ত করার পরিবর্তেমোদী সরকার একেবারে শুরু থেকেই খাঁচার অর্গলকে আরো দৃঢ় করতেই ব্যস্ত থেকেছে, আর জোটকে রূপ দিতে অথবা জোট ভাঙ্গতে যথা সময়ে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে সিবিআই-কে লেলিয়ে দিয়েছে।

আর বি আই—রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর প্রাক্তন অধিকর্তা রঘুরামন রাজন মোদি সরকারের সাথে একমত হতে না পেরে সরে যান। পরবর্তীকালে ডি মানিটাইজেশন নিয়ে তিনি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ্যেই ব্যক্ত করেছেন। রঘুরামন রাজনের স্থলাভিষিক্ত উর্জিত প্যাটেলও এ বছর বিদায় নিলেন পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগের দিন। মনে করা হচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জমানো আমানতে যেভাবে সরকার হাত দিতে চাইছে, তা মেনে নিতে না পেরেই তাঁর এই পদক্ষেপ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর সায়ত্ততা সরকার নষ্ট করছে, এই অভিযোগ উঠেছে নানা মহল থেকেই।

আদালতের ইতিবাচক রায়—আদালত এর দুটি রায় ইতিবাচক বলে গণ্য হয়েছে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মহলে। আদালত খারিজ করেছে ৩৭৭ ধারা, এর ফলে সমকামিতা আর ভারতে শাস্তিযোগ্য বিষয় নয়। অপর একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে ‘পরকীয়া’ আইনের চোখে ফৌজদারি অপরাধ নয়।

বিধানসভা নির্বাচন—গুজরাট নির্বাচনে কোনওক্রমে জয় পেলেও কর্ণাটকে বিজেপি সরকার গড়তে ব্যর্থ হয়। আর বছর শেষে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের একটিতেও তারা জিততে পারে নি। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে সরকার তাদের হাতছাড়া হয়েছে। বামপন্থীরা কৃষক আন্দোলনের জেরে রাজস্থানে দুটি আসন জিততে সক্ষম হয়েছেন, যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মহড়া হিসেবেই এই নির্বাচনগুলিকে দেখা হচ্ছিল এবং এর ফলাফল মোদি রাজ সম্পর্কে বিরাট প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।

রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন—তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনে এ রাজ্যের গণতন্ত্রের চেহারা কোন তলানিতে ঠেকেছে তার নজির হিসেবে গোটা দেশেই আলোচিত হয়েছে প্রহসনের পঞ্চায়েত নির্বাচন। ভোটে দাঁড়াতে বাধা দেওয়া থেকে জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার, নির্বাচনের দিন বেনজির হামলা, গণনা কেন্দ্রে কারচুপি, জয়ী প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে দল বদলে বাধ্য করা, বোর্ড গঠনের সময় সন্ত্রাস – নির্বাচনের প্রতিটি পর্যায়ে গণতন্ত্রের ওপর হামলা চলেছে। এরপরেও আদিবাসী অঞ্চলে শাসক দলের প্রতি প্রান্তিক মানুষের ক্ষোভের প্রকাশকে আটকানো যায়নি।

ঐতিহ্যের পথে নতুন অঙ্গীকার

কার্ল মার্কসের দ্বি-শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন—দেশ ও দুনিয়া জুড়ে মার্কসের জন্ম দ্বিশতবর্ষ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলেও এই নিয়ে আলোচনাসভা আয়োজিত হয়েছে, যেগুলিতে মুখ্য বক্তা হিসেবে হাজির ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।

রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি—এই বছরটি ছিল সারা বিশ্বের মেহনতি ও নিপীড়িত মানুষদের অন্যতম প্রেরণা রুশ বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তির বছর। রুশ বিপ্লব ছিল খাঁটি গণবিপ্লব। বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিলোপ ঘটল এর মধ্য দিয়ে।

ক্রান্তি পার্কের উদ্বোধন—বিহারের ভোজপুরের জেলা সদর আরা শহরে স্থাপিত হলো ক্রান্তি পার্ক। ১৮ ডিসেম্বর ভারতীয় বিপ্লবের স্বপ্নদ্রষ্টা, ধ্বংসস্তূপ থেকে পার্টিকে পুনর্গঠনের স্থপতি কমঃ বিনোদ মিশ্রের ২০তম প্রয়াণ বার্ষিকীতে আয়োজিত সংকল্পসভায়। এই কর্মসূচী উপলক্ষে আরা হয়ে উঠেছিলো লালে লাল। এক জনাকীর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে পার্কের উদ্বোধন এবং তার অভ্যন্তরে স্থাপিত ৫ জন বিপ্লবী নেতার আবক্ষমূর্তিতে মাল্যদান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। যারা হলেন জগদীশ প্রসাদ (মাস্টার) যিনি ভোজপুরের একওয়ারী গ্রামে সামন্ত উৎপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধের মশাল জালিয়েছিলেন; তাঁরই সহকর্মী রামেশ্বর যাদব, পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে বিহার বিধানসভায় পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতা লড়াকু যোদ্ধা রামনরেশ রাম, পার্টির দ্বিতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত (জহর) দত্ত—যিনি ভোজপুরের মাটিতে সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদের মৃত্যু বরণ করেন এবং পরবর্তী সম্পাদক বিনোদ মিশ্র যিনি ছিলেন পার্টিকে নতুন দিশায় পুনর্গঠিত করার কান্ডারী।

২০১৮ : এই বিশ্ব

১৩ জানুয়ারী – পাকিস্থানে নাকিবুল্লা মেসুদের হত্যাকাণ্ডের পর গোটা দেশ বিচার বহির্ভূত হত্যা নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

২০ জানুয়ারী – উত্তর সিরিয়ার কুর্দ বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণা করেন তুরষ্কের রাষ্ট্রপতি এর্দোগান। ২৩ জানুয়ারী – চিলির কবি নিকানার পাররার মৃত্যু।

১১ মার্চ – চিনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পুনঃনির্বাচনের সীমা তুলে দেওয়া হল।

১৪ মার্চ – বৃহৎ বিস্ফোরণ শিশু মহাবিশ্ব ইত্যাদির সন্ধানে মহাকাশে চিরতরে পাড়ি দিলেন একালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং।

১৮ মার্চ – রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে চতুর্থবারের জন্য নির্বাচিত হলে পুতিন।

১৪ এপ্রিল – রাসায়নিক হামলার অভিযোগে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ শুরু করল মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সদস্যরা।

১৮ এপ্রিল – সামাজিক সুরক্ষা কাটছাঁটের বিরুদ্ধে নিকারাগুয়ায় ব্যাপক প্রতিবাদ। পুলিশের গুলিতে ৩৪ জনের মৃত্যু। ২৭ এপ্রিল – ১৯৫৩ সালের পর প্রথম উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা পরস্পরের সাথে দেখা করলেন। মিলিত হলেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন।

৫ মে – বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হল মার্কসের জন্ম দ্বিশতবর্ষ।

৮ মে – ইরানের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের স্বাক্ষরিত পারমানবিক চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২৫ মে – গণভোটের মধ্যে দিয়ে আয়াল্যাণ্ডে গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল।

১২ জুন – উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং ও মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্প এর ঐতিহাসিক বৈঠক সিঙ্গাপুরে, যা নিয়ে আগে পরে দীর্ঘদিন চর্চায় মেতেছিল গোটা বিশ্বের সংবাদ মহল।

২৪ জুন – সৌদি আরবে মহিলাদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হল।

১৭ জুলাই – ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হল। এর আওতায় এল বিশ্বের সামগ্রিক উৎপাদনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। ফিরে দেখা ছয়ের পাতার পর

৭ অগস্ট – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করল।

১২ অগস্ট – রাশিয়া ইরান তাজাকিস্থান তুর্কমেনিস্থান ও আজারবাইজানের মধ্যে কাস্পিয়ান সাগর সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হল।

২ সেপ্টেম্বর – ভয়াবহ আগুনে ভষ্মীভূত হল ব্রাজিলের রিওর কেন্দ্রীয় জাদুঘর।

২৮ সেপ্টেম্বর – ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্পে প্রায় তেরো হাজার মানুষ হতাহত হলেন।

২ অক্টোবর – তুরষ্কের সৌদি দূতাবাসে হত্যা করা হল বিখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে। এই নিয়ে বিতর্কের ঝড় আছড়ে পড়ল সৌদি রাজতন্ত্রের ওপর এবং কড়া শাস্তির দাবি উঠল।

৮ অক্টোবর – জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ সংক্রান্ত প্যানেল তাদের প্রকাশিত জরুরী রিপোর্টে বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করল।

২০ অক্টোবর – ব্রিটেনে সাত লাখ লোকের বিরাট মিছিল ব্রেক্সিট নিয়ে নতুন গণভোটের দাবি জানাল।

২৮ অক্টোবর – বিশ্বকে স্তম্ভিত করে ব্রাজিলে রাষ্ট্রপ্রধান হলেন অতি দক্ষিণপন্থী বোলশোনারো।

২৮ নভেম্বর – চিনা বিজ্ঞানী হে জিয়ানকুই দাবি করলেন তিনি দুটি বালিকার জিনের পারস্পরিক অদল বদল ঘটিয়ে তাদের এইচ আই ভি ভাইরাসের সংক্রমণ সম্ভাবনা থেকে মুক্ত করেছেন।

১-৮ ডিসেম্বর – ফ্রান্সে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন ক্রমশ ব্যাপ্তি পেল।

খণ্ড-26
সংখ্যা-1