বামফ্রন্টের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের কাছে জিজ্ঞাসা

বামফ্রন্টের নেতা, কর্মী এবং সমর্থকদের কাছে জিজ্ঞাসা দেশটাকে গো-রক্ষকদের হাত থেকে, ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি থেকে মুক্ত করার জন্য আপনাদের কাছে বাম রাজনীতির মতাদর্শ কিছু অবশিষ্ট থাকবে তো!

সিপিআই(এম) বা বামফ্রন্টের ভোট ২০০৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ক্ষয় হচ্ছিল :

৫০.৭%-২০০৪, ৪৩.৩%-২০০৯, ২৯.৯%- ২০১৪ এবং ৭.৯৬%-২০১৯ সালে। ২০০৪- ২০০৯ কমেছে ৭.৪%। ২০০৯-২০১৪ কমেছে ১৩.৪%। ২০১৪-২০১৯ কমেছে ২১.৯৪% ভোট। সিপিআই(এম) বা বামফ্রন্টের ভোট কমা বা গণভিত্তির ক্ষয় হওয়া নিয়ে অনেকে অনেকভাবে আলোচনা করেছেন। তাই এই বিষয় কিছু লিখছিনা।

বামফ্রন্ট ও বামফ্রন্টের বাইরে বাম দলগুলোও সবাই একমত হচ্ছিলেন বামপন্থীরা তাদের জমি হারাচ্ছ। তাই যৌথভাবে লড়াই আন্দোলন চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বামেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে হবে। তাতে শ্রেণী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সব অ্যাজেন্ডাই মজুত ছিল। বেশকিছু সফল আন্দোলনও সংগঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচন যত এগিয়ে আসতে শুরু করলো সিপিআই(এম) নেতৃত্ব অঙ্ক কষা শুরু করলেন, কাদের সাথে জোট করে আখেরে লাভ হবে। শুরুতে কংগ্রেসের সাথে জোট নিয়ে জটিলতায় পড়লেন। কোন জোট হল না। নিজেরা কংগ্রেসের দুটি জেতা আসনে প্রার্থী না দিয়ে কংগ্রেসকে এক তরফা সমর্থন করার কথা জানিয়ে দিলেন। এই সিদ্ধান্ত বামফ্রন্টের শরিক আর এস পি মানতে পারেনি। তারা বহরমপুরে স্বাধীনভাবে প্রার্থী দিয়ে দিল। ঐক্যবদ্ধ বামফ্রন্টের ধারণা প্রশ্ন চিহ্নের মুখে গিয়ে পরলো। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনকে একটা আসন ছাড়ার কথা সিপিআই(এম) ঘোষণা করে পিছিয়ে গেল। ফলে বৃহত্তর বাম ঐক্যের ধারণারও কোন বাস্তবতা থাকলো না।

এতো দিন পর্যন্ত বামফ্রন্টের ভোট ক্ষয়কে বিশ্লেষকরা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ব্যর্থতা হিসাবে গণ্য করছিলেন। কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম। অভিযোগ হিসাবে এসেছে ‘বাম’ রামে গেছে। একজন বামপন্থী কর্মী হিসাবে এই অভিযোগ মনের গভীরে কি পরিমাণ ক্ষত তৈরি করতে পারে তা লিখে বোঝানো যাবে না।

ভোটের আগেই খবর আসছিল, ওদের নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে দেখেছি ওরাও শেষের দিকে দুশ্চিন্তায় ছিল। কিন্তু খেলা ততক্ষণে ওদের হাতের বাইরে চলে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদী ও আমিত শাহ সত্যি মিথ্যা মিলিয়ে প্রচারে কার্পেট বোম্বিং করা শুরু করলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। বামেরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। রাম রহিমের দ্বন্দ্বে আটকে গেলেন। মোদী ও মমতা একই মুদ্রার দুই পিঠ বলতে লাগলেন। সংখ্যাগুরু মৌলবাদকে ছোট করে দেখতে কর্মীদের শেখালেন। প্রচার করলেন তৃণমূলকে বামেরাই হারাতে পারে তাই বিজেপিকে নয়, বামেদের ভোট দিন। তৃণমূল হারলে দলটাই উঠে যাবে। তারপর বিধানসভা নির্বাচনে বামের সাথে বিজেপি-র লড়াই হবে। অর্থাৎ শেষ বিচারে সিপিআই(এম) ও বিজেপির লড়াইটা ছিল তৃণমূলকে হারানোর লড়াই।

ভোটের ফল দেখিয়ে দিল যারা কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী সরকার চান তারা তৃণমূল ও যেখানে কংগ্রেসের কিছুটা গণভিত্তি আছে সেখানে কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। এবং যারা রাজ্য সরকারের দ্রুত পতন চান তারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। বামফ্রন্টের কর্মীরা তথ্য দিয়ে আত্মঘাতী প্রচার শুরু করলেন। বিজেপি না আমরাই পারি তৃণমূলকে হারাতে। আর অত্যাচারিত বামকর্মী ও সমর্থকদের বেশিরভাগ ভেবেছেন উপর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাই পারে রাজ্য সরকারকে চাপের মধ্যে রাখতে। তাই বিজেপিকে ভোট দিয়ে তৃণমূলকে কোনঠাসা করা যায়। পার্টি নেতৃত্ব যখন প্রধান শত্রু ঠিক করেই দিয়েছেন তখন উগ্র দক্ষিণপন্থী দলকে ভোট দেওয়াটার আর কোনো নৈতিক বাধা থাকলো না। আর এভাবেই বামেদের কর্মী ও কট্টর সমর্থক ছাড়া অবশিষ্ট সব ভোট রামে পরিবর্তন হয়ে গেল। এই সব বামনেতা, কর্মী এবং সমর্থকদের কাছে জিজ্ঞাসা দেশটাকে গো-রক্ষকদের হাত থেকে বা ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি থেকে মুক্ত করার জন্য আপনাদের কাছে বাম রাজনীতির মতাদর্শকিছু অবশিষ্ট থাকবে তো!

অতি উৎসাহী সিপিআই(এম)-এর একটা আহাম্মকি প্রচারের নমুনা দেখুন।

একটি পোস্টারে লেখা হয়েছিল ‘‘দমদম লোকসভা কেন্দ্র সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে। বরানগর, কামারহাটি, দমদম, দমদম-উত্তর, খড়দা, পানিহাটি ও রাজারহাট-গোপালপুর — ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই সাতটি কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী দমদম লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট থেকে বামফ্রন্ট পিছিয়ে ৪৫ হাজার ভোটে (৪৫৭৭৩)। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট থেকে বিজেপি পিছিয়ে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ভোটে (৪,২৫,৭৩৯)। ভোট দেওয়ার আগে একটু ভাববেন, তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগ হতে দেবেন না। তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করবার সম্ভাবনা বামফ্রন্টেরই আছে।’’

নেতাদের কথামত বাম কর্মীরা তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগ হতে দেননি।


“বাংলায় বাড়ছে স্কুল ছুটের দুর্গতি”

পাঁচ বছর আগে এই রাজ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত ১৬ লক্ষের ও অধিক ছাত্রছাত্রী। এই বছর তাদের ১০.৫ লক্ষ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ৭.৫ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর স্কুল ছুট হওয়ার এই চিত্রটি গত ৭ বছরে তেমন বদলায়নি। বস্তুত, ২০১৬ সাল হতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। গত বছরের চাইতে এবার কমেছে ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী।

প্রতি বছর পূর্ব মেদিনীপুর জেলাটিতে পাশের হার সবচেয়ে বেশি থাকছে, বিপরীতে, সবচেয়ে নিচে থাকছে উত্তর দিনাজপুর। উত্তর দিনাজপুরে অকৃতকার্য হয়েছে ১৩% ছেলে, ৩৩% মেয়ে। বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়াতে মেয়েদের ফেল করবার হার ছেলেদের থেকে দ্বিগুণ। আর, দলিত আদিবাসীদের মধ্যে তা সবচেয়ে বেশি। শিক্ষার মানে তারতম্য থাকায় জাতি-জনজাতি-লিঙ্গ ভেদে সামাজিক বৈষম্য গভীরতর হচ্ছে।

এটা হল মমতার উন্নয়নের আসল ছবি। কত ভঙ্গুর ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এ রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা।

- (হোয়াটস অ্যাপের পাতা থেকে)

খণ্ড-26