আবেদন
সিপিআই(এমএল) প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড চারু মজুমদারের জন্মশত বার্ষিকীতে সংহতি ও প্রতিরোধ কনভেনশন

প্রিয় সাথী, আমাদের দেশ ও রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে আবার আমরা মিলিত হব ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের স্বার্থে। জনগণের আশু ও বুনিয়াদি দাবিগুলিকে কার্পেটের তলায় চাপা দিয়ে আবার কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে চরম দক্ষিণপন্থী, উগ্র সাম্প্রদায়িক, অত্যন্ত পশ্চাদপদ ধারণার প্রতিনিধি মোদী-অমিত শাহর নেতৃত্বে বিজেপি। শুরু হলো প্রতারণার দ্বিতীয় পর্ব—মোদী ২। ক্ষমতায় বসার সাথে সাথেই জানা গেল ভারতের বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ সীমায়। ৫০টির মতো রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাকে বেসরকারীকরণের মধ্য দিয়ে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কর্পোরেট স্বার্থে শ্রমিকের কষ্টার্জিত অধিকারকে কেড়ে নিয়ে শ্রমআইন সংস্কারের অভিযান চলছে। ইতিমধ্যেই ছত্রিশগড়ে গৌতম আদানির সংস্থাকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জমি খোলামুখ খনি উত্তোলনের বরাত দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৫ লক্ষ আদিবাসী মানুষকে উচ্ছেদ করে দেওয়ার জন্য আনা হচ্ছে নতুন বন আইন। নতুন শিক্ষানীতি শিক্ষাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার নামান্তর। ফসলের দাম না পেয়ে ঋণগ্রস্ত কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়ে এখন রেশন ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। ভূগর্ভস্থ জলের সংকটকে কাজে লাগিয়ে সমাধানের কোনো রাস্তা ছাড়াই পানীয় জলের ব্যবসাকে উৎসাহ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

কর্পোরেট সেবার পাশাপাশি সরকারি মদতে হিংসা-বিদ্বেষ-সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে গড়ে তোলা হচ্ছে অরাষ্ট্রীয় সেনা সংগঠনগুলি। বিজেপির নেতৃত্ব একেই “উত্তরপ্রদেশ মডেল” নামে অভিহিত করছে। গণপিটুনিতে হত্যা ফ্যাসিস্ট শ্লোগান জয় শ্রীরামের সঙ্গে ধ্বনিত হচ্ছে। এবার এনকাউন্টার ডেথ্ ‘বৈধ’ বলে স্বীকৃত হবে। ২০১৯ বস্তুত এক অঘোষিত জরুরী অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে।

দেশজোড়া এই ভয়াবহ ঘটনাবলী আজ পশ্চিমবাংলায় সর্বগ্রাসী রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। যারা গোটা দেশে ঘৃণা বিভেদের রাজনীতি ছড়িয়ে মানুষের গণতন্ত্র হরণ করছে তারাই এরাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের হম্বিতম্বি চালাচ্ছে। বিগত দিনগুলিতে ‘পরিবর্তনের’ নামে যে সন্ত্রাস, গণতন্ত্রহীনতা ও অধিকারহীনতা তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকার জলসিঞ্চন করে মহীরুহ করে তুলেছে, সেই পথেই বিজেপি ও সংঘ পরিবার যাত্রাপথকে নির্দিষ্ট করেছে। দল ভাঙ্গানো, ঘোড়া কেনাবেচা, গায়ের জোরে পৌরসভা-পঞ্চায়েত দখলের সংস্কৃতি যেভাবে লালিত-পালিত হয়েছে তা আজ বিজেপির হাত ধরে স্থায়ী রূপ পেতে চলেছে। শিল্পহীন-কর্মসংস্থানহীন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা উন্নয়নের হাত ধরেই আজ কাটমানির সংস্কৃতি সর্বত্র জাঁকিয়ে বসেছে।

ফ্যাসিজমের পদধ্বনি তাই এরাজ্যে উত্তরোত্তর বাড়ছে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে, রাজনৈতিক সমস্ত অঙ্গনে একে মোকাবিলা করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। শ্রমজীবী জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ একে পরাস্ত করার চাবিকাঠি। কোনো শর্টকাট পথ নেই। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার আত্মঘাতী পথ খাল কেটে কুমির আনার রাস্তাকেই কেবল প্রশস্ত করবে। তাই আজ বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিকে সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-নৈরাশ্য ঝেড়ে ফেলে প্রতিরোধের ব্যারিকেড গড়ে তুলতে হবে। ইতিহাস শিক্ষা দেয় ফ্যাসিবাদ কখনোই শেষ কথা বলেনি, শেষ কথা বলে না।

লড়াই ও প্রতিরোধের এই পথ দেখিয়েছিল নকশালবাড়ি। প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে থাকা কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষকে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে সামিল করেছিল নকশালবাড়ি। আজ থেকে ৫০ বছর আগে এই লড়াইকে নেতৃত্ব দিতে জন্ম নিয়েছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। শত-সহস্র শহীদের প্রাণের বিনিময় লাল ঝাণ্ডাকে উড্ডীন রেখেছিল। ৫০ বছর ধরে এই পথে বহু আত্মত্যাগ, বহু ভুল, বহু সফলতার পথ পেরিয়ে, “জনগণের স্বার্থকেই পার্টির স্বার্থ” এই বিশ্বাসকে বুকে নিয়ে আজও আমাদের পথ চলা। পার্টি প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে ও পার্টি প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড চারু মজুমদারের জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা মিলিত হচ্ছি ৩০ জুলাই—সংহতি ও প্রতিরোধ গণকনভেনশনে। কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। আজ স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলার জন্য আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সমস্ত বাম-গণতান্ত্রিক-সংবেদনশীল মানুষকে আমরা এই গণকনভেনশনে উপস্থিত হওয়ার সাদর আমন্ত্রণ জানাই। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।
৩০ জুলাই, ২০১৯, সকাল ১১টা, নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়াম, কলকাতা।

সংগ্রামী অভিনন্দন সহ
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি,
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন

খণ্ড-26
সংখ্যা-18