হরিয়ানার জেলখানা — সংশোধনাগার না কসাইখানা

না, কাশ্মীরে যেতে হবে না। বিজেপি শাসিত হরিয়ানার জেলখানাগুলোতেই ঘুরে আসা যাক। সমস্ত গণতান্ত্রিক বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সেখানে বন্দীদের উপর চালানো হচ্ছে বর্বর অত্যাচার। ইলেক্ট্রিক শক, গোপনাঙ্গে ইঁট বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা, মহিলা কয়েদীদের ধর্ষণের হুমকি, যৌনলাঞ্ছনা, নগ্ন করে উল্টো দিক থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা — জেলবন্দীদের প্রতি এমন আচরণের রিপোর্ট এসেছে হরিয়ানা পুলিশের বিরুদ্ধে। মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে, এমনকি, অপ্রাপ্তবয়স্ক বন্দীদের উপর নির্মম অত্যাচার চালানোর রিপোর্ট ইতিমধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।

কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস্ ইনিশিয়েটিভ-এর তরফ থেকে সাবিকা আব্বাস এবং মধুরিমা ধানুকা একটি রিপোর্ট তৈরি করেছেন, যার শিরোনাম, “ইন্সাইড হরিয়ানা প্রিজনস্’’। হরিয়ানায় ১৯টি জেলখানায় ৪৭৫ জন বন্দীর জবানবন্দির ভিত্তিতে প্রস্তুত এই রিপোর্ট। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই বিপুল সংখ্যক বন্দীদের ওপর পুলিশের অমানুষিক অত্যাচারের নানা ঘটনা ওই রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। মোট ৪৭ শতাংশ বন্দীর জবানবন্দি থেকে উঠে এসেছে নৃশংস অত্যাচারের হাড়-হিম করা কাহিনী।

এই রিপোর্ট প্রকাশ করেন তিনজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। তখন উপস্থিত ছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী, পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিচারবিভাগ-জেলখানার অনেক হোমড়াচোমরা, পুলিশ অফিসারেরা।

রিপোর্টে অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে হরিয়ানা পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (সিআইএ)-র দিকে। রাজ্যের প্রতিটা জেলায় রয়েছে সিআইএ। অবৈধভাবে আটক রাখার পাশাপাশি, বন্দীদের পেট থেকে খবরাখবর আদায় করতে এই সিআইএ নানা ধরনের অত্যাচারে হাত পাকিয়েছে। রিপোর্টে একটি বইয়ের উল্লেখ করা হয়েছে—‘‘ভায়োলেশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস্ ইন ইন্ডিয়া’’, যার লেখক সমাজকর্মী এ আর দেশাই। সেখানেও দেখানো হয়েছে, হরিয়ানার সিআইএ নারকীয় অত্যাচারের কতই না বিচিত্র সব পন্থা উদ্ভাবন করেছে। রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে, পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের অশুভ আঁতাতের বেশ কিছু ঘটনা। একজন ১৭ বছরের বন্দীর বয়স ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে নথিভুক্ত করা হয়েছে। পায়ের গোড়ালিতে ব্যাটন দিয়ে পেটানো, মাথা নীচু করে উল্টো দিক থেকে ঝুলিয়ে ঊরুতে লাঠি পেটা, ইলেক্ট্রিক শক প্রভৃতি অত্যাচারগুলো করা হোত যাতে তার চিহ্ন চোখে না পড়ে।

মহিলা বন্দীদের উপর যৌন নির্যাতন, নগ্ন অবস্থায় মাটিতে শুইয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করা, জলের মধ্যে মাথা ডুবিয়ে লাঠি পেটা করা — মহিলা বন্দীরা এই সমস্ত অভিযোগ করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির না করিয়ে সাত দিনেরও বেশি পুলিশী হেফাজতে আটক রাখার বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। বন্দীরা জানিয়েছেন, রাজ্যে এমন একটাও জেলখানা নেই, যেখানে পুলিশী অত্যাচারের অভিযোগগুলো নথিভুক্ত করা যায়।

এই হচ্ছে বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ছবি। উত্তরপ্রদেশ তো এনকাউন্টার রাজ হিসাবে কুখ্যাতি কুড়িয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রসংঘ ভারত সরকারের কাছে উত্তর প্রদেশে সাজানো সংঘর্ষের নামে অনেকগুলো হত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে রিপোর্ট তলব করেছে। এই হচ্ছে মোদীরাজ। যার হাত ধরে আমরা সবাই এগিয়ে চলেছি ‘নতুন ভারতের’ দিকে।

তথ্যসুত্র : দ্য ওয়্যার

খণ্ড-26
সংখ্যা-26