‘‘পেপার মিল বাঁচাও, শিল্প বাঁচাও’’! গুয়াহাটিতে কনভেনশন

“পেপার মিল বাঁচাও, শিল্প বাঁচাও” দাবিতে অসমের গুয়াহাটিতে এক রাজ্যস্তরের কনভেনশন করল এআইসিসিটিইউ গত ২৫ আগস্ট। এনআরসি নিয়ে বিতর্কে, ক্ষোভে-বিক্ষোভে তোলপাড় চলছে অসমে। মানুষের জীবিকার দাবিগুলোর প্রতি আদৌ কোনো দৃষ্টি দিচ্ছে না অসমের বিজেপি সরকার। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষেরা ও তাদের প্রতি আন্তরিক দায়বদ্ধ সংগঠন বারেবারে অবহেলার শিকার হওয়া জীবিকার প্রশ্নগুলোকে সামনে নিয়ে আসার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অঙ্গ হিসাবে সংগঠিত করা হয় গত ২৫ আগস্টের কনভেনশন। গুয়াহাটি প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ঐ কনভেনশনের উপলক্ষ্য ছিল দুটি বন্ধ কারখানা জাগীরোডের নওগাঁও পেপার মিল ও করিমগঞ্জের কাছাড় পেপার মিল খোলার দাবিতে চলমান শ্রমিক আন্দোলনের সংহতি-সমর্থনে সোচ্চার হওয়া, জনমত গড়ে তোলা। কারখানা দুটি বিজেপি সরকার বন্ধ করে দেয় যথাক্রমে ২০১৬-১৭ সালে।

ঐ কনভেনশনে অসমের বহু শ্রমিক-কর্মচারি সংগঠন, ইউনিয়ন অংশগ্রহণ করে। নওগাঁও ও কাছাড় মিল দুটির প্রতিনিধিরাসহ নামরূপ ফার্টিলাইজার ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, অসম স্টেট পাওয়ার ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, অসম সংগ্রামী চা শ্রমিক সংঘ, অসম প্রভিন্সিয়াল ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ এ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড ওয়ার্কমেন ইউনিয়ন, সিনটেক্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, ফার্টিকেম শ্রমিক ইউনিয়ন, বিল্ড ওয়র্থ শ্রমিক ইউনিয়ন, ইন্ডিয়া কার্বন এমপ্লয়িজ এ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, অসম কার্বন এমপ্লয়িজ এ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এবং সিটু, এআইটিইউ, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি-র মতো কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা কনভেনশনে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও প্রখ্যাত লেখক ডঃ দিলীপ বোরা, চা শ্রমিক নেতা বিবেক দাস, পেপার মিল শ্রমিক নেতা আনন্দ বরদলই, মানবেন্দ্র চক্রবর্তী, প্রবীণ সাংবাদিক খগেন কলিতা, লোকপ্রিয় গায়েন লোকনাথ গোস্বামী কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেন।

paper mill in assam

 

কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন বীরেন কলিতা ও সুভাষ সেন। আলোচনার প্রস্তাবনা পেশ করেন এআইসিসিটিইউ-র সহ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার দাস। কনভেনশন থেকে সমস্ত ইউনিয়ন ও সমাজের গণতান্ত্রিক অংশগুলোর প্রতি আহ্বান রাখা হয় আসুন, সংগ্রামী ঐক্য গড়ে তোলায় হাত লাগাই এবং শ্রমজীবী জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলি। একই সঙ্গে উপরোক্ত বন্ধ কারখানা দুটি খোলা এবং শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটিতে প্রতিবাদী সমাবেশে সামিল হোন।

কনভেনশন থেকে দাবি তোলা হয়, সম্প্রতি সংসদে কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী এইচপিসিএল বাবদ যে ৪,১৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন তারপর কি হল তা নিয়ে সিবিআই তদন্ত করতে হবে এবং এ বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। কনভেনশন প্রস্তাব গ্রহণ করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ফার্টিলাইজার এ্যান্ড কেমিক্যাল লিমিটেড তথা নামরূপের আধুনিকীকরণ, চা শ্রমিকদের দৈনিক ৩৫০ টাকা মজুরি ও ২০ শতাংশ বোনাস সুনিশ্চিতকরণ, এটিসি গার্ডেনের পুনর্জীবন, রাজ্য বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের স্বনির্ভরতা এবং চুক্তিপ্রথায় নিযুক্ত শ্রমিক ও অন্যান্য অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে। কনভেনশন থেকে “ শিল্প বাঁচাও, শ্রমিক বাঁচাও জয়েন্ট স্ট্রাগল কমিটি” নামে একটি মঞ্চ গঠন হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঐ কনভেনশন কেন্দ্রীয় সরকারের অর্ডন্যান্স কারখানার কর্পোরেট হস্তান্তরকরণ ও চাকরি খতমের বিপজ্জনক ভাবনার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সংগঠিত ধর্মঘটের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তাবও গ্রহণ করেছিল। যাই হোক, সরকার কিছু পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেওয়ায় ইতিমধ্যে অর্ডন্যান্স ধর্মঘট পাঁচদিন চলার পর প্রত্যাহিত হয়েছে। কনভেনশনে বলীন্দ্র শইকিয়া লড়াইয়ের গান গেয়ে শোনান।

 

খণ্ড-26
সংখ্যা-27