যেমন জুলুমবাজ তেমনি ঠগবাজ

উত্তরপ্রদেশে বিজেপির যোগী রাজত্ব ভাবছে যা খুশী জুলুমরাজ চালিয়ে যাবে। সরকারের জন্যও যে কিছু আইনকানুন মানামানির লক্ষণরেখা আছে যোগী সরকারের দিক থেকে তা মেনে চলার কোনও লক্ষণই নেই। কিন্তু এই ঔদ্ধত্য যেমন আরও গণপ্রতিবাদ ও নিন্দার সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি আদালতের পর্যবেক্ষণেও হুঁশিয়ারী শুনছে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট এক পিটিশনের প্রত্যুত্তরে রায় দিয়েছে, ‘ক্ষতিপূরণ আদায়ের’ নামে রাস্তায় রাস্তায় প্রকাশ্যে অর্ধশতরও বেশি ব্যক্তির নাম-ধাম-ফটো সহ টাঙানো সমস্ত হোর্ডিং অবিলম্বে সরকারকে খুলে ফেলতে হবে। ঐসব হোর্ডিং টাঙিয়েছিল সরকারই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিগত ডিসেম্বরে সিএএ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সরকারী ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে, যে বিষয়ে সরকার আলাদা ফৌজদারী মামলাও দায়ের করেছে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় আরও উল্লেখ করেছে যে, যোগী সরকারের ঐ পদক্ষেপ ব্যক্তিগত পরিসরের গোপনতা ক্ষুন্ন করে লঙ্ঘন করেছে সংবিধানের ২১ ধারা। যোগী সরকার তবু পিছু হটার নয়, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দ্বারস্থ হয়েছে সুপ্রীম কোর্টের। শুধু তাই নয়, একদিকে মন্ত্রীসভা প্রস্তাব বানিয়েছে নষ্ট হওয়া সম্পত্তির আর্থিক পরিমাণ পুনরুদ্ধারের জন্য নয়া অর্ডন্যান্স নিয়ে আসার লক্ষ্যে, অন্যদিকে তার পক্ষে সুপ্রীম কোর্টের ২০০৯ সালের অনুরূপ একটি রায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে, যে রায়টি নাকি দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল-ধর্ণা-ধর্মঘট চলাকালীন সম্পত্তিনাশের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ২০০৭ সালের এক পিটিশনের প্রত্যুত্তরে। কিন্তু সেই রায়ে ঠিক কি বলা হয়েছিল যোগী সরকারের ভাষ্যে তার হুবহু পুনরুল্লেখ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ঐ রায় সংবিধানের ২১ ধারা সাপেক্ষে ‘জরিমানা আদায়ের অর্ডন্যান্স’ আনা বা তা কার্যকরি করতে ‘ট্রাইব্যুনাল গঠনে’র সুপারিশ করেছিল কিনা বা তাতে ঠিক কি বলা হয়েছিল সেসব বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ ও তার সরকারী সূত্র এখনও সবকিছু প্রকাশ্যে আনেননি। সরকারপক্ষ তবু বলছে মন্ত্রীসভা জরিমানা আদায়ের নতুন বিধিনিয়ম বানাবে এবং সেক্ষেত্রে ‘হোর্ডিং’ লাগানোর বিষয়টিকেও যুক্ত করা হবে।

বোঝাই যাচ্ছে, যোগী সরকার হাইকোর্টের রায়ের চাপে পড়লেও তা না মানতে উল্টো চাপ তৈরির জন্য মরীয়া হয়েছে মন্ত্রীসভার পরবর্তী পদক্ষেপ করতে। কারণ লক্ষ্য হল, যেভাবেই হোক রাজ্যে সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে গুঁড়িয়ে দেওয়া। তার জন্য পলিসি নিয়েছে মারো-ধরো-ফাটকে পোরো-জরিমানা আদায় করো। প্রয়োজনে যে কোনো ধূর্তামি করতে ছাড়ছে না। যেমন, মারণভীতিপ্রদ ‘করোনা’কেও ব্যবহার করতে চাইছে বাহানা বানাতে। এটা ঠিকই যে, বিশেষজ্ঞ মতে যে কোনো জমায়েতে করোনার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিপদ অনুভূত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সর্বোপরি সরকারপক্ষকে প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিতে হবে, উদ্যোক্তাদেরও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করতে হবে, যদিও বিপরীত একটি মতও বিরাজ করছে যে করোনা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত আতঙ্ক সৃষ্টি করে ফেলা হচ্ছে, এই সমস্ত মতামত চর্চা থেকেই প্রচুর শিক্ষা নেওয়া সাবধানতা অবলম্বন করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মোদী-শাহ’দের নিয়ে আসা নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী লক্ষ্ণৌর আন্দোলনকারীদের কথা হল, প্রায় দু’মাস গড়াতে যাওয়া শাহীনবাগ ধাঁচের ধর্ণা আন্দোলন উঠিয়ে দিতে উত্তরপ্রদেশ সরকার নিচ্ছে দুমুখো পলিসি। একদিকে মেডিক্যাল টিম পাঠিয়েছে, কিন্তু সময় দিয়ে অবস্থানকারীদের শরীর-স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে টুকটাক দেখেই চেষ্টা করেছে করোনা সংক্রমণ এড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে অবস্থান আন্দোলন প্রত্যাহার করে স্থান ত্যাগ করাতে, কিন্তু আন্দোলনকারীদের অনুভূতিকে সংবেদনশীলতায় প্রভাবিত করতে ও প্রস্তাবে রাজী না করাতে পেরে কুমন্তব্য করতে ছাড়েনি। অন্যদিকে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘী গুন্ডাদের গুলিতে নিহত এক আন্দোলনকারী মুসলিম যুবকের মরদেহ নিয়ে শোকযাত্রা পর্যন্ত পুলিশ করতে দেয়নি, আপত্তি করেছে করোনার অজুহাতে। আবার সেই মৃত মুসলিম যুবকের সংঘী খুনিকে গণক্ষোভের চাপে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হলেও সে যেহেতু বায়না ধরে শরীর খারাপ হওয়ার তাই তাকে আর অপরাধীর প্রাপ্য হাজতে না রেখে জামাই আদরে অন্তরীণ রাখা হয়েছে এলাহি ব্যবস্থায়, আর সেখানে সংঘী বাহিনীর গুন্ডারা দলে দলে যাচ্ছে সঙ্গ দিতে, ভালোমন্দ ভেট দিতে। করোনার রয়েছে নিজস্ব মারণঘাতী রূপ, উত্তরপ্রদেশ জুড়ে তার মোকাবিলায় যোগী সরকার কি ব্যবস্থা নিচ্ছে স্পষ্ট নয়, উল্টে একে ব্যবহার করছে শাসকের স্বার্থে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-8