ভগৎ সিংয়ের দেশে এনপিআর-সিএএ-এনআরসি চলবে না

“... স্বাধীনতা সকলের কাছে এক চিরস্থায়ী জন্মাধিকার। ...” — ভগৎ সিং

এদিকে আজাদীর শ্লোগান দিলেই ‘দেশদ্রোহীতা’-র মামলা করে, জেলে পাঠায় বিজেপির সরকার। কিসের থেকে আজাদী চায় ভারতবাসী? বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্ব থেকে আজাদী — ঋণের দায়ে জর্জরিত কৃষকদের আত্মহত্যা থেকে আজাদী — শিক্ষা ও গবেষণায় সরকারী বরাদ্দ কমানোর বজ্জাতি থেকে আজাদী — আম্বানী, মালিয়া, চোকসিদের পেট ভরাতে ইয়েস ব্যাঙ্ক সহ অন্যান্য ব্যাঙ্কের ভবিষ্যত না করে দেওয়া থেকে আজাদী — রেল, বীমা, প্রতিরক্ষা বেচে দিয়ে ৩০০০ কোটির মূর্তি বানানো কিম্বা মোদীজীর ২ লাখ টাকার রোদচশমা পরার দ্বিচারিতা থেকে আজাদী — টাকার দাম পড়তে পড়তে এক ডলারে ৭০ টাকার উপর হয়ে যাওয়া থেকে আজাদী — ঘরে-বাইরে মেয়েদের উপর পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য ও অনুশাসন থেকে আজাদী …

এবার আপনি নিশ্চয়ই ঠিক করে ফেলেছেন যে, ভগৎ সিং-দের মতো বুক টানটান করে সোচ্চারে আজাদীর স্লোগান দেবেন নাকি সাভারকর, বাজপেয়ীরা যেভাবে ইংরেজ শাসকদের পায়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ না দেওয়ার মুচলেকা জমা দিয়েছিল, দয়া ভিক্ষা চেয়েছিল তেমনভাবে দাঙ্গাবাজ গেরুয়া জল্লাদদের সামনে নীরব থাকবেন।

আজও যদি কেউ চুপ থেকে শাসকের গুডবুকে থাকতে চান তাহলে ভগৎ সিং, রাজগুরু, শুকদেবদের শ্রদ্ধা জানানোর নৈতিক অধিকার তার কতটা আছে সেটাই বড় প্রশ্ন। অবশ্য সেজন্য তার ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে না – দেশের মধ্যেই একদল মানুষকে আরেকদল মানুষের ‘শত্রু’ হিসাবে চিহ্নিত করে নতুন করে যে গণহত্যা ও দেশভাগের আয়োজন করেছে আরএসএস ও বিজেপির সরকার তার অফিসিয়াল নাম — এনপিআর-এনআরসি-সিএএ। যে নাগরিকদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এলো সরকার আজ তাদেরকেই সরকারের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে তারা এদেশের নাগরিক কিনা !!! তাহলে এই সরকারেরও প্রমাণ করার দায় আছে যে এই সরকারটা আদৌ ভারতের সরকার হিসেবে নৈতিক দাবি করতে পারে কিনা? এনপিআর-এর সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিতে না পারলে বা সব নথি দেখাতে না পারলে (যদিও নরেন্দ্র মোদী বলেছেন যে কোনো নথি ছাড়াই তার নাগরিকত্ব যে ‘খাঁটি’ সেটা সবাইকে মানতে হবে) যে কেউ হয়ে যাবেন প্রথমে ‘সন্দেহজনক’ আর কালক্রমে ‘বেনাগরিক’। অনেকগুলো যদি/কিন্তুর মারপ্যাঁচে থাকা বিভাজনকারী সিএএ আইনও কাউকে বাঁচাতে পারবেনা, উল্টে অনেকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে আর শেষ পর্যন্ত নাগরিকপঞ্জীতে (এনআরসি এবং এনআরআইসি) নাম তুলতে না পেরে রাতারাতি সমস্ত মৌলিক নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার হারিয়ে নিরপরাধ মানুষের জেলখানা তথা ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে হবে, এমনকি মোদী-অমিত শাহদের অবুঝ সমর্থকটিকেও। সুতরাং ব্যারিকেড না গড়ে আজ শহীদ-ঈ-আজম ও তাঁর সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানানোর অন্য কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। দরকার খেটে খাওয়া, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল মানুষের নজিরবিহীন ঐক্য তৈরি করা। আসুন সেই লক্ষ্যে ভগত সিং যুব ব্রিগেডের উত্তরপাড়া থানা এলাকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সবাই পথে নামি মত/রঙ নির্বিশেষে, Young India against NPR-CAA-NRC-এর ডাকে ২৩ মার্চ ভগৎ সিং-রাজগুরু-শুকদেব-এর শাহাদাত দিবসে কোন্নগর জোড়াপুকুর সংলগ্ন ভগৎ সিং মূর্তি প্রাঙ্গন থেকে সকাল ৯ টায়, পদযাত্রায় উঠুক আওয়াজ:

দাঙ্গাবাজির ছক এনপিআর-সিএএমানছি না। নাগরিকপঞ্জী নয়, বেকার যুবকদের পঞ্জী তৈরি করে অবিলম্বে সকলের স্থায়ী ও সম্মানজনক কর্মসংস্থান করতে হবে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-8