মোদী-শাসিত ভারতে ‘‘ফ্যাসিবাদ কিভাবে কাজ করে’’ শীর্ষক পুস্তক পড়ে দেখা

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

৭) আইন শৃঙ্খলা

স্ট্যানলি লিখছেন, ‘‘আইন ও শৃঙ্খলা নিয়ে ফ্যাসিবাদীদের বড় বড় বুলির উদ্দেশ্য স্পষ্টতই হল নাগরিকদের দুটো শ্রেণীতে ভাগ করা : একদিকে সেই সমস্ত মানুষ যারা পছন্দের রাষ্ট্রের নাগরিক, যারা স্বভাবগতভাবে আইননিষ্ঠ, আর অন্যদিকে রয়েছে তারা যারা আইন মেনে চলে না, মজ্জাগতভাবেই বিশৃঙ্খল।” বিজেপি যে প্রকারান্তরে বোঝানোর চেষ্টা করে যে সমস্ত মুসলিমই মজ্জাগতভাবে ‘‘অনুপ্রবেশকারী’’, ‘‘ঝামেলা সৃষ্টিকারী, যাদের পোশাক দেখে চেনা যায়’’ এবং “সন্ত্রাসবাদী’’, এটা বোঝার জন্যে স্ট্যানলির এই মন্তব্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়।

৮) যৌনগত উদ্বেগ

ফ্যাসিস্ত রাজনীতি কিভাবে ‘‘অপরদের’’ যৌনগত দিক থেকে বিপজ্জনক হওয়ার উৎস রূপে চিত্রিত করে — স্ট্যানলি যে সমস্ত অনুচ্ছেদে এই বিষয়টা বর্ণনা করেছেন সেখানে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন জার্মানিতে নাজিদের ইহুদি বিরোধিতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ এবং মায়ানমার ও ভারতবর্ষে ইসলাম আতঙ্কের মধ্যে সংযোগকে।

স্ট্যানলি ‘‘জাতি-মিশ্রণ’’ বিরোধী নাজি নীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘‘শ্বেত আমেরিকান নারীদের বিশুদ্ধতা রক্ষায়’’ কালো পুরুষদের গণপ্রহারের দৃষ্টান্তের উল্লেখ করে দেখাচ্ছেন, ‘‘ফ্যাসিবাদী প্রচার’’ কিভাবে ‘‘অপরের থেকে বিপদ’’-এর বিষয়টাকে যৌনতার রঙে চিত্রিত করে।

তিনি আরো উল্লেখ করেছেন কিভাবে মায়ানমারে ‘‘রোহিঙ্গাদের গণহত্যা’’ বৌদ্ধ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীগুলোর ‘‘বৌদ্ধ নারীদের নিজেদের শিকারে পরিণত করার মুসলিমদের যৌন চক্রান্ত’’ সম্পর্কে ‘‘সন্দেহ চালিত ভ্রান্ত তত্ত্ব দ্বারা উসকিয়ে তোলা হয়েছিল।’’

স্ট্যানলি ভারত সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করেছেন :

‘‘ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা তাদের প্রচারের মধ্যে দিয়ে মুসলিম পুরুষদের হিন্দু পৌরুষের প্রতি তথাকথিত বিপদ সৃষ্টির দিকে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নিয়মিতভাবেই মুসলিম-বিরোধী ভাবাবেগকে উস্কিয়ে তোলে। সাম্প্রতিককালে এটা তথাকথিত ‘লাভ জেহাদ’-এর আতঙ্কের রূপ নিয়েছে।’’

সংঘের প্রচারে যেভাবে ‘‘আইন ও শৃঙ্খল’’ এবং ‘‘লাভ জেহাদ’’ নিয়ে বাগজাল মিলে-মিশে একাকার হয়ে যায় তা ২০১৪ সালে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর ভাষণে প্রকট হয়ে ওঠে, যে ভাষণে তিনি মুসলিম-বিরোধী হিংসার সমর্থনে বলেছিলেন, ‘‘একটা সম্প্রদায় যখন আমাদের ঘরের মেয়ে-বোনদের শ্লীলতাহানি ঘটায় এবং প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না, জনগণ তখন দাঙ্গা করতে বাধ্য হয়।’’ (পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের শামলিতে জাটদের সভায় অমিত শাহর ভাষণ)

ভারত মোদী সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং বেকারি সংকটের এক পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে। এটা যখন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্রোধের জন্ম দিতে পারে এবং তা দিচ্ছেও, আরএসএস এবং বিজেপি তখন পিতৃতান্ত্রিক ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে এই ক্রোধকে ‘‘আমাদের ঘরের মেয়ে-বোনদের শ্লীলতাহানি ঘটানো এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে’’ অথবা ‘‘অবাধ যৌনতার’’ যোগানদার বলে বর্ণিত নারীবাদী এবং ছাত্রীদের বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। নারী স্বাধীনতা এবং আন্ত-ধর্মীয় নারী-পুরুষদের মধ্যে প্রেম উভয়কেই সংঘ জাত এবং পিতৃতান্ত্রিক স্তর বিন্যাসের প্রতি বিপদ বলে ধিক্কার জানায়।

কেন এবং কিভাবে তা করা হয়, তা বুঝতে স্ট্যানলির বিশ্লেষণ আমাদের সাহায্য করে। তিনি লিখেছেন :

‘‘পিতৃতান্ত্রিক পৌরুষ পুরুষদের মধ্যে এই প্রত্যাশার জন্ম দেয় যে সমাজ তাদের পরিবারের একমাত্র রক্ষক ও ভরণপোষণের যোগানদার হওয়ার ভূমিকা মঞ্জুর করবে। ... ফ্যাসিবাদী রাজনীতি পুরুষদের উদ্বেগের—যাকে আরো তীব্র করে তোলে অর্থনৈতিক উদ্বেগ—বিকার ঘটিয়ে তাকে এই আতঙ্কে পরিণত করে যে, যারা পরিবারের কাঠামো ও ঐতিহ্যকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের কাছ থেকে পরিবারের অস্তিত্ব বিপদের মুখোমুখি হয়। এখানেও আবার ফ্যাসিবাদী রাজনীতিতে যে হাতিয়ারটা কাজে লাগানো হয় তা হল যৌন হামলার তথাকথিত সম্ভাব্যতা।’’

৯) নাগরিক বিশ্বজনীনতায় কলঙ্ক লেপন

মোহন ভাগবত কেন ধর্ষণ নগরেই ঘটে বলে নগরগুলোকে দায়ী করলেন? নয়া উদারবাদী নীতি গ্রামীণ স্তর বিন্যাসের উপরের দিকে থাকা সম্প্রদায়গুলোর প্রান্তিকীকরণ ঘটিয়েছে এবং তাদের মধ্যে সংকটের জন্ম দিয়েছে। ফলে, সংঙ্গভাবেই তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংঘ সম্ভবত: সেই ক্ষোভকে উদারবাদী শহুরে ক্যাম্পাস এবং বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে চালিত করে — যাদের ‘অভিজাত’ এবং নৈতিক দিক থেকে অধঃপতিত রূপে চিত্রিত করা হয় — ঐ গ্রামীণ সম্প্রদায়গুলোর কাছে আবেদন জানতে চায়। আর সেই কারণেই ধর্ষণের জন্যে নগর-শহরকে দায়ী করা হয়।

স্ট্যানলি ব্যাখ্যা করছেন, ‘‘বিশ্বায়িত অর্থনীতি গ্রামাঞ্চলে যে ক্ষতি করে, ফ্যাসিস্ত রাজনীতি তাকে জোরালোভাবে সামনে নিয়ে আসে, এরই সাথে তুলে ধরা হয় গ্রামাঞ্চলে প্রথাগতভাবে মূল্যবান রূপে গণ্য করা স্বয়ম্ভরতাকে যা নাকি উদারবাদী নগরগুলোর সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণে বিপদের মুখে পড়ছে।

ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ বহুত্ব এবং সহিষ্ণুতাকে প্রত্যাখ্যান করে। বড় বড় নগর কেন্দ্রগুলোতে বৈচিত্র, যার সহগামী হয় ভিন্নতার প্রতি সহিষ্ণুতা, এইভাবে ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের কাছে বিপদ রূপে দেখা দেয়।’’

পরিহাসের ব্যাপার হল, ফ্যাসিবাদী রাজনীতিবিদরা যখন জেএনইউ এবং দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এবং সুধা ভরদ্বাজের মতো ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের ‘খান বাজার’-এর উদারবাদী অভিজাত রূপে চিত্রিত করছে, তখন তারা কিন্তু চূড়ান্ত রূপে দুর্নীতিপরায়ণ, অতি ধনী নিজেদেরই স্যাঙাত পুঁজিপতিদের (আম্বানি ও আদানিরা) অভিজাত বলে মনে না করে ‘সম্পদের স্রষ্টা’ রূপে গণ্য করছে!

১০) কাজ তোমাকে মুক্তি দেয়আমাদের নিশ্চয় মনে আছে বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য কিভাবে মুসলিমদের ‘লিক সারানোর লোক’ বলে এবং অমিত শাহ তাদের ‘উইপোকা’ (অর্থাৎ পরগাছা) বলে বিদ্রুপ করেছেন? ওরা ওই ধরনের শব্দ কেন ব্যবহার করে, স্ট্যানলির লেখা পড়লে তা বোঝা যেতে পারে :

“ফ্যাসিবাদী মতাদর্শে রাষ্ট্র সংকটের এবং প্রয়োজনের সময় পছন্দের জাতির জন্য সমর্থন সংরক্ষিত রাখে, ‘‘আমাদের’’ এবং ‘‘ওদের’’ জন্য নয়। এর কারণ সংশয়হীনভাবেই হল ‘‘ওরা’’ অলস, কাজের প্রতি নিষ্ঠা নেই এবং রাষ্ট্রের অর্থের ভার দিয়ে ওদের ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না এবং আরো কারণ হল ‘‘ওরা’’ দুর্বৃত্ত এবং রাষ্ট্রের দাক্ষিণ্য নিয়েই বেঁচে থাকতে চায়। ফ্যাসিস্ট রাজনীতি বলে, কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়েই ওদের আলস্য এবং চৌর্যবৃত্তিকে শোধরানো যায়। এই কারণেই আউসউইজ এবং বুচেনওয়াল্ডের ফটকে জ্বলজ্বল করত শ্লোগান—কাজ তোমাকে মুক্ত করবে। ফ্যাসিবাদী মতাদর্শে কঠোর পরিশ্রমের আদর্শকে সংখ্যালঘু জনগণের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।’’

সিদ্ধান্তের স্বাধীনতার মতাদর্শ (লিবারটারিয়ান মতাদর্শ) এবং ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের মধ্যে সম্পর্ক কি, সে সম্পর্কে স্ট্যানলি গভীরে আলোকপাত করেন :

‘‘ফ্যাসিবাদী ধারণায় ব্যক্তি স্বাধীনতার সঙ্গে লিবারটারিয়ান ধারণায় ব্যক্তি অধিকারের মিল রয়েছে — যে অধিকার হল প্রতিযোগিতার অধিকার, কিন্তু অবশ্যম্ভাবীভাবে সফল হওয়া বা টিকে থাকার অধিকার নয়। ... ফ্যাসিবাদে যোগ্যতার গোষ্ঠীগত স্তরীয় বিন্যাসের প্রতি অঙ্গীকার থাকলেও তা যথার্থ লিবারটারিয়ানবাদের সঙ্গে পুরোপুরি বেমানান, যা ব্যক্তি ছাড়া অন্য কিছুর সাধারণীকরণ করে না, তবে উভয় দর্শনের মধ্যেই একটা সাধারণ নীতি আছে যা দিয়ে মূল্য মাপা হয়।’’

মনে করুন, বিজেপি কিভাবে শ্রমিক-কর্মকর্তার মধ্যে সম্পর্ককে ‘শিল্প পরিবার’-এর নতুন ছাঁচে ঢালতে চায়? মনে হচ্ছে সেটাও একটা মার্কামারা ফ্যাসিবাদী কৌশল যার সঙ্গে কর্পোরেট মতাদর্শের যথেষ্ট মিল রয়েছে। স্ট্যানলি বলছেন :

‘‘হিটলারের এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা ছিল যে, পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সরকারি সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের বহু বিচিত্র প্রথা ও কাঠামোর মধ্যে চাপা উত্তেজনা থাকে। ফ্যাসিবাদ এই সমস্ত ভিন্নতাগুলোকে দূর করে এবং সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু, ফ্যাসিবাদী মতাদর্শে পরিবার থেকে ব্যবসা থেকে রাষ্ট্র, সবকিছুই চালিত হত ফুয়েরারের নীতি অনুসারে। ফ্যাসিবাদী মতাদর্শে পিতা হল পরিবারের নেতা; সিইও হল ব্যবসার নেতা; স্বৈরাচারী নেতা হল রাষ্ট্রের পিতা বা সিইও। কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে নির্বাচকরা যখন কোনো সিইও-কে রাষ্ট্রপ্রধান রূপে চায় তখন তারা নিজেদের মধ্যেই নিহিত ফ্যাসিবাদী ভাবাবেগের প্রতি সাড়া দেয়।’’

উপসংহার

যখন দাবি করা হয় যে ভারত ক্রমেই ফ্যাসিবাদে অধঃপতিত হচ্ছে, সেটা কি বাড়াবাড়ি নয়? এই প্রশ্নটা প্রায়শই তোলা হয় এবং তা বিশেষভাবে তোলেন উদারবাদী ভাষ্যকাররা যাঁরা এখনও দাবি করতে চান যে পরিস্থিতি অত খারাপ নয়। স্ট্যানলি উপসংহারে বিষয়টি আলোচনা করেছেন :

‘‘স্বাভাবিকীকরণ যা করে তা হল নৈতিকভাবে অস্বাভাবিককে স্বাভাবিকে রূপান্তরিত করা। তা আমাদের কোন বিষয়কে মেনে নিতে সক্ষম করে তোলে — বিষয়টা চিরদিনই যেন এমনই ছিল এই বোধের জন্ম দিয়ে — যা এক সময় অসহনীয় ছিল। এর বিপরীতে ‘ফ্যাসিস্ট’ এই শব্দটা এক চরম অনুভূতি অর্জন করেছে, অকারণে বিপদের চিৎকার করার মতো। ... স্বাভাবিকীকরণের সঠিক অর্থ হল, মতাদর্শগত দিক থেকে ক্রমেই এগিয়ে আসা চরম পরিস্থিতিকে আর ঐ ধরনের বলে মনে হয় না, কেননা, তা স্বাভাবিক বলে মনে হতে থাকে। ফ্যাসিবাদের আক্রমণ সব সময়েই চরম বলে মনে হবে; স্বাভাবিকীকরণের অর্থ হল এই যে, ‘‘চরম মাত্রার’’ পরিভাষার বৈধ ব্যবহারের ধারণাগুলো ক্রমেই পরিবর্তিত হতে থাকে।’’

যে বইয়ে ফ্যাসিবাদী কৌশলের রূপরেখা বর্ণিত হয়েছে এবং যাতে ফ্যাসিবাদী রাজনীতি কত শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী হতে পারে বলে স্বীকার করা হয়েছে, তা শেষ হচ্ছে এক আশাবাদকে তুলে ধরেই। এনপিআর-এনআরসি-সিএএ-র বিরুদ্ধে যে আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়েছে, তার দিকে যখন তাকাই তখন আমাদেরও এই আশাকে কিছুটা লালন করতে হবে।

স্ট্যানলি লিখছেন,

‘‘আতঙ্ক এবং নিরাপত্তাহীনতা যখন মর্যাদার পিছনে নিরর্থক ছোটার পরিণামে আমাদের অলীক শ্রেষ্ঠত্বের সান্ত্বনাদায়ী কোলে ঠেলে নিয়ে যাবে, তখন আমরা সর্বজনীন মানবতার এক বোধকে ধরে রাখব কিভাবে? ... আমরা প্রগতিবাদী সামাজিক আন্দোলনগুলোর ইতিহাস থেকে স্বস্তি পেতে পারি, যে আন্দোলনগুলো অতীতে দীর্ঘ প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে এবং কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সমানুভূতি উদ্রেকের প্রকল্পে সফল হয়েছে।

“শরণার্থী, নারীবাদ, শ্রমিক ইউনিয়ন, বর্ণবাদী-ধর্মীয়-লিঙ্গগত সংখ্যালঘু — ফ্যাসিবাদী রাজনীতির প্রত্যক্ষ এই লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে আমরা আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির পন্থাগুলো দেখতে পাই। আমাদের কিন্তু কখনই ভুললে চলবে না যে, ফ্যাসিবাদী রাজনীতির মূল লক্ষ্য হল তার অভীষ্ট শ্রোতৃমণ্ডলী — যাদের সে তার মায়াময় কব্জার ফাঁদে জড়াতে চায়, এমন একটা অবস্থায় এনে ফেলতে চায় যেখানে মানব মর্যাদার ‘‘উপযুক্ত’’ বলে গণ্য হওয়া প্রত্যেককে ক্রমেই গণ মিথ্যামোহের দ্বারা প্রভাবাধীন করে তোলা হয়।’’

এই অন্তদৃষ্টিই সম্ভবত এই সময়ে সবচেয়ে বেশি অনুরণিত হচ্ছে। মুসলিমরাই এনপিআর-এনআরসি-সিএএ-র সবচেয়ে অসহায় নিশানা হলেও আমাদের কখনও ভুললে চলবে না যে, যে অ-মুসলিমরা ওদের ইসলামোফোবিয়া চালিত ঘৃণাভরা কুবচনের অভীষ্ট শ্রোতৃমণ্ডলী, তারা আবার হল সেই সমস্ত নিশানা এবং শিকার যাদের মোদী জমানা বিপথগামী করতে চাইছে। এনপিআর-এনআরসি-সিএএ অ-মুসলিম দরিদ্র সহ ব্যাপক সংখ্যাধিক ভারতীয়দের সর্বশক্তিমান ভারত রাষ্ট্রের কব্জায় এনে ফেলবে। রাষ্ট্র তখন তাদের ‘‘সন্দেহজনক নাগরিক’’ হিসাবে চিহ্নিত করা এবং নাগরিকত্ব ও মানবিকতা কেড়ে নেওয়ার চিরস্থায়ী হুমকির দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কাজেই স্ট্যানলি আমাদের সতর্ক করছেন, যে সংখ্যাধিক মানুষ ট্রাম্প ও মোদীদের বশংবদ ভক্ত হয়ে উঠেছে, আমরা তাদের যেন দানব রূপে গণ্য না করি :

“যারা ঐ শ্রোতৃমণ্ডলী এবং মর্যাদার অন্তর্ভুক্ত নয় তারা বিশ্বের ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করে, তারা হল তুচ্ছ নারী ও পুরুষ যাদের ধর্ষক, খুনী, সন্ত্রাসবাদীর ভূমিকার ছাঁচে ঢালা হবে। সন্ত্রাসবাদী কল্পকথার মোহিনী মায়ার কাছে ধরা দিতে অস্বীকার করে। আমরা হয়ে উঠি মুক্ত মানুষ যারা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা চালাতে পারি, আমরা সবাই এমন মানুষ যাদের ত্রুটি রয়েছে, সবাই চিন্তার অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির দিক থেকে একদেশদর্শী, কিন্তু আমরা কেউই দানব নই।’’

প্রথম কিস্তি - লিংক

দ্বিতীয় কিস্তি - লিংক

(সমাপ্ত)

 

খণ্ড-27
সংখ্যা-6