সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণার দাবিতে আইসা-র দেশব্যাপী ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশন
aisa

অপরিকল্পিত লকডাউনের ফল ভোগ করছেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও পরিযায়ী শ্রমিকরা। এক চরম সংকটের সম্মুখীন তারা। এই প্রেক্ষিতেই আগামীকাল ১৯ এপ্রিল অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইসা) গোটা দেশব্যাপী বারো ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে সামিল হয় ছাত্র-ছাত্রী এবং পরিযায়ী শ্রমিক সহ সমস্ত শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণার দাবিতে। ইতিমধ্যেই এআইসিসিটিইউ গোটা দেশে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণার দাবিতে ১৮ এবং ১৯ এপ্রিল যে অনশন এবং আন্দোলন কর্মসূচী নিয়েছে আইসা তার প্রতিও সংহতি জানাচ্ছি। সকলেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমায়েত না করে এই প্রতীকী অনশনে সামিল হবে। এই রাজ্যেও আইসা-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আহ্বান জানায় শারীরিক দূরত্বকে বজায় রেখে এই অনশন আন্দোলনে সামিল হতে।

ae

আইসা-র দাবি --

১) লকডাউন ও লকডাউন পরবর্তী অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে দুটো সেমেস্টার একসাথে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষা নিলে ছাত্রছাত্রীদের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হবে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল/পরিবার থেকে আসা পড়ুয়াদের পক্ষে তাঁদের শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবেনা অর্থাৎ এই পদক্ষেপ শিক্ষার অধিকার বিরোধী পদক্ষেপ। লকডাউন পরবর্তী সময়ে সরকারকে সমস্ত ছাত্র সংগঠন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদদের সাথে কথা বলে যে সেমেস্টারগুলোর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেই সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণ করতে হবে।

২) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ব্যবস্থাকে উৎসাহ দেওয়ার ফলে সমস্ত ক্লাস এবং পরীক্ষা অনলাইন মাধ্যমে করানোর ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বঞ্চিত বর্গ এবং গ্রামীণ ক্ষেত্র থেকে আসা বহু পড়ুয়া ল্যাপটপ অথবা স্থিতিশীল ইন্টারনেট পরিষেবার অভাবে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অবিলম্বে এই বিষয়গুলিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

৩) সারাদেশে মেস অথবা ভাড়াবাড়িতে থাকা সমস্ত শিক্ষার্থীর ভাড়া অবিলম্বে মুকুব করতে হবে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের অধীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে বাড়ির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৪) স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিস্ কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে। কোনো পড়ুয়া যাতে অর্থাভাবে পড়াশুনা ছেড়ে না দেয় তার জন্য সরকারকে হস্তক্ষেপ করে আগামী সেমিস্টারের ফি মুকু্ব করতে হবে।

৫) বহু রাজ্যেই ইতিমধ্যে কোবিড-১৯ এর কারণে দ্বাদশ শ্রেণী অথবা সমস্ত স্তরের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। এই অবস্থায় প্রত্যেক রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আলোচনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে স্নাতক স্তরের বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলির মধ্যে সঙ্গতি স্থাপন করতে হবে।

ae

 

৬) এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত সমস্ত গবেষক এবং অন্যান্য পড়ুয়াদের বকেয়া বৃত্তি ও ফেলোশিপ অবিলম্বে মেটাতে হবে। শিক্ষাবর্ষের সম্প্রসারণ ঘটলে সেই অনুযায়ী ফেলোশিপের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে।

৭) বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্রছাত্রীরা যাতে লকডাউনের সময় পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য সরকারকে পরিকল্পনা করতে হবে।

৮) যে সব পড়ুয়া বাড়ি ফিরতে পারেনি তাদেরকে যথাযথ টেস্ট করিয়ে নিরাপদভাবে বাড়ি ফেরানোর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

৯) বেকারদের সাহায্যার্থে সব বেকারদের জন্য বেকার ভাতা চালু করতে হবে।

১০) স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১১) আগামী ৬ মাসের জন্য সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাঋণ মুকুব করতে হবে এবং পরবর্তী ২ বছরের জন্য শিক্ষাঋণের কোনো সুদ নেওয়া চলবে না।

১২) পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যবস্থা ও তাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা এবং যথাযোগ্য টেস্টের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।

১৩) লকডাউনের ক্ষতিপূরণ হিসাবে পরিযায়ী শ্রমিক সহ সমস্ত শ্রমিককে ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

১৪) সমস্ত শ্রমিকের মজুরি এবং কাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কোনওরকম মজুরি কাটা বা ছাঁটাই চলবে না।

১৫) বর্তমানে ভিনরাজ্যে আটকে পড়া সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সরকারকে নিয়মিত রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৬) পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর পুলিশী নৃসংশতা বন্ধ করো।

ধন্যবাদান্তে
অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন (আইসা) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফে
নীলাশিস বসু (রাজ্য সভাপতি), স্বর্ণেন্দু মিত্র (রাজ্য সম্পাদক)

খণ্ড-27