বিবৃতি
ঐক্যবদ্ধ না হলে সামনে সমূহ বিপদ! – এখানে শুরু হয়েছে রাজায় রাজায় যুদ্ধ! সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়
press

দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চরম ব্যর্থতা, আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসায় চরম অব্যবস্থা, আক্রান্ত মানুষের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি এবং অন্ধবিশ্বাস ও অস্পৃশ্যতার রাজনীতির প্রসারে সদা তৎপর কেন্দ্রের মোদি সরকারের এখন একমাত্র হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে লকডাউন আর রাজ্যে-রাজ্যে হস্তক্ষেপ ঘটিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করা। করোনা প্রতিরোধে যথেষ্ট সময় পেয়েও ভেঙে পড়া সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করে তোলা, সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যারা লড়াই করবেন সেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সাফাই কর্মীদের সুরক্ষার জন্য পিপিই-এর ব্যবস্থা করা, কোভিড-১৯ প্রতিরোধের একটি জাতীয় রূপরেখা তৈরি করার বিপরীতে বেশি ব্যস্ত ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্মর্ধনায়। আজ তার খেসারত দিচ্ছে গোটা দেশ।

এরাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। এই রাজ্যের মাটিতেই বঙ্গসন্তান উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালাজ্বর প্রতিরোধের ওষুধ আবিষ্কার করেছিলেন, এই মাটিতেই স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, সিস্টার নিবেদিতা, ডঃ রাধাগোবিন্দ কর, ডঃ নীলরতন সরকার ১৮৯৭’র ভয়াবহ কলেরা মহামারী প্রতিরোধে গণউদ্যোগ, নাগরিক উদ্যোগের মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, আজ সেই মাটিতেই চলে মৃত্যু বা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে কারচুপি, তা সে ডেঙ্গি নিয়েই হোক, আর করোনা নিয়েই হোক। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ও একদল আমলার হাতে করোনা মহামারী প্রতিরোধের সমস্ত ঔষধি। লালারসের টেষ্টের জন্য আরও পরীক্ষা কেন্দ্র কেন খোলা হচ্ছে না, পিপিই এত অপ্রতুল বা নিম্নমানের কেন, করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত করণে রক্ত পরীক্ষা বা পুল টেষ্ট কেন হচ্ছে না, তা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ও কতিপয় অচিকিৎসক আমলা ঠিক করবেন। মুখ্যমন্ত্রী কালিঘাট থেকে কসবা, বেহালা থেকে বাঁশবেড়িয়া সদলবলে ত্রাণ বিলি করবেন; পুলিশ, আমলা, সরকারী-বেসরকারী ক্যামেরাম্যান নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড়িয়ে নিয়মভঙ্গ করবেন, প্রশ্ন তুললেই দমনমূলক মহামারী আইনের এ ধারা বা সে ধারা প্রয়োগের হুমকি।

পশ্চিমবঙ্গে এমনই আবহাওয়া গড়ে ওঠার অপেক্ষায় ছিল কেন্দ্রের মোদি-অমিত শাহ জুটি। প্রতিদিন এই আবহাওয়া সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে আছেন রাজভবনের মহামান্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রাজ্যপাল মহোদয়। তাকে নিয়মিত সহযোগিতা করে গেছে বিজেপির স্বনামধন্য সাংসদরা।

সাধারণ মানুষের জীবন যখন ক্ষুধার তাড়নায় বিপন্ন, করোনা রোগ ও আতঙ্ক যখন মাথার উপর, মানুষ যখন দিশেহারা, তখন কলকাতার রাজপথে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দলের গাড়ি ঘুরছে, আর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায়-রাস্তায় করোনা লকডাউনের নিয়মাবলী শেখাচ্ছেন যুগপৎ পুলিশ ও জনতাকে।

আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই অনভিপ্রেত রাজপথে ভ্রমণের বিরুদ্ধে, বরং যদি সহযোগিতার বিন্দুমাত্র আকাঙ্ক্ষা থাকে তবে নবান্নে বসে আলোচনা করুন, নচেৎ দিল্লি ফিরে বিশ্রাম নিন। আর মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আবেদন উত্তেজনা পরিহার করে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর কাজে মনোনিবেশ করুন। করোনা ভাইরাস আমজনতা বা মুখ্যমন্ত্রী কাউকেই আলাদা করে চিনতে পারে না। শিরোনামে থাকা কথাটা আমাদের সকলের জন্য প্রযোজ্য।

– পার্থ ঘোষ
সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি, সিপিআই(এমএল)

খণ্ড-27