আবেদন
২২ এপ্রিল সিপিআই(এমএল)’র ৫১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আসুন আমরা শপথ গ্রহণ করি
h2

১) কোভিড-১৯ মহামারী ও মোদি সরকার ঘোষিত লকডাউনের ফলে সারা দেশে আমরা চিকিৎসা, জীবিকা ও খাদ্যের তীব্র সংকটে পড়েছি। গরিব খেটে-খাওয়া মানুষ, বিশেষত পরিযায়ী শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। “জনগণের স্বার্থই পার্টির স্বার্থ” – চারু মজুমদারের এই আহ্বানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ানোর শপথ নিচ্ছি। অভুক্ত ভারতকে অন্ন দাও, কোভিড-১৯-কে পরাজিত কর।

২) মানুষ যখন কোভিড-১৯ মহামারী ও লকডাউনে কঠোর মূল্য দিচ্ছে তখন আরএসএস ও বিজেপি চীন ও মুসলমান সম্প্রদায়কে দায়ী করে ঘৃণাপূর্ণ মিথ্যা প্রচার ছড়িয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। বিভিন্ন মিথ্যা খবর, কুসংস্কার ও বুজরুকি চিন্তা ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে ভুল পথে চালিত করছে। আমরা এই সাম্প্রদায়িক প্রচার অভিযানকে তীব্র ধিক্কার জানাই। করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া অস্পৃশ্যতা ও অপমান আমরা মানছি না। মুসলিম সম্প্রদায়কে সামাজিক ও আর্থিকভাবে বহিষ্কার করার চক্রান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই। এর বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব, জনগণের ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী করতে যা যা করণীয় তা আমরা করব – কোভিড-১৯ রোগের শিকারদের প্রতি সহমর্মিতা ও মৈত্রী প্রসারিত করব, সামনের সারিতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মী ও সাফাই কর্মীদের সমর্থন যোগাব, যুক্তি-বিবেচনা ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটাব এবং সাম্প্রদায়িকতার ভাইরাসকে পরাজিত করব।

৩) এই সংকট ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে যে কেন্দ্রের মোদি সরকার ও অধিকাংশ রাজ্য সরকারেরই কোনও উদ্বেগ বা সহমর্মিতা সাধারণ মানুষের প্রতি নাই। গরিব খেটে-খাওয়া মানুষের জন্য কোনো রকম বন্দোবস্ত না করেই তারা লকডাউন ঘোষণা করে দেয়। গরিবদের জন্য রাষ্ট্রের আছে কেবল দমন আর অপমান, যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ও গণতন্ত্র সংরক্ষিত আছে শুধুমাত্র বড়লোকদের জন্য। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতা একত্রিত করে সিপিআই(এমএল)-কে শক্তিশালী করব এবং জনগণের রাজনৈতিক মতামত ও ক্ষমতা প্রসারিত করতে জন-আন্দোলনকে তীব্রতর করব।

৪) এতদিনকার সমস্ত প্রতারণা ও ব্যর্থতাকে আড়াল করে ফেলার যুৎসই বাহানা হিসেবে কোভিড-১৯ মহামারীকে ব্যবহার করছে মোদি সরকার। দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত মানুষের গণতন্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশরাজ কায়েম করার হাতিয়ার হিসেবে লকডাউনকে ব্যবহার করছে রাষ্ট্র। এই সুযোগে কর্পোরেট লবিগুলি এবং সামন্ততান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক ও অপরাধী শক্তিগুলি লুটপাট ও আধিপত্য বাড়িয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও আঁটোসাটো করতে চাইছে। লকডাউনকে এইসব শক্তির নোংরা তাণ্ডবের লাইসেন্স বানিয়ে ফেলতে দেব না আমরা। সবদিক থেকেই এটা পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যে কোভিড-১৯ মহামারী ভারতকে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং মোদি সরকার সেই মন্দার বোঝা পুরোপুরি জনতার কাঁধে চালান করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আমরা আমাদের সব শক্তি দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়ব এবং সরকারকে দায়বদ্ধ করব। কোভিড-১৯ সংকট পেরিয়ে ভারত যাতে এক সমতামূলক দেশ হিসেবে উঠে আসে তার জন্য লড়ব আমরা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাবার অবাধ অধিকার।

৫) কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্ব-পুঁজিবাদের চরম নড়বড়ে অবস্থাকে প্রকাশ করে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল নিজের জনতাকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু)-কেও আক্রমণ করেছে। তারা ভারতকে চোখ রাঙাচ্ছে এবং ভেন্টিলেটর নির্মাণ সংস্থাগুলির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যেন তারা কিউবা ও ভেনিজুয়েলায় ভেন্টিলেটর বিক্রি না করে। এইভাবে তারা মহামারীকেই নিজেদের যুদ্ধাস্ত্র বানাতে চেয়েছে। পুঁজিবাদে অগ্রণী দেশগুলিই মহামারীর সবচেয়ে বড় শিকার। এই দেশগুলোতেও সেই শ্রমিকশ্রেণী আর নিপীড়িত প্রান্তিক মানুষেরাই কিন্তু সবচেয়ে কঠোর মূল্য চোকাচ্ছে। পুঁজিবাদী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যনীতি, যা স্বাস্থ্যকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে না দেখে পণ্য ও মুনাফা লোটার ব্যবসা হিসেবে দেখে, জনতার পরিত্রাণ ও পরিষেবা প্রদানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তার তুলনায়, গণমুখী স্বাস্থ্যসেবার দৃষ্টিভঙ্গী ও নীতিমালা অনেক ভালো কাজ দিয়েছে, তা সে কিউবা-তেই হোক বা ভারতের কেরালায়।

আমরা আরেকবার নিজেদের উৎসর্গ করছি, এই ধ্বংসাত্মক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর কাজে এবং ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে যার কেন্দ্রে থাকবে মেহনতি মানুষের স্বার্থ ও পরিবেশ রক্ষার কর্মসূচী ও তাগিদ।

আজ পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের নায়ক ও সমাজতন্ত্র নির্মাণের প্রথম ব্যাপক প্রচেষ্টার স্থপতি মহান লেনিনের একশ পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকী। এই উপলক্ষে আমরা কমরেড লেনিনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি ও সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠার তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার শপথ গ্রহণ করি।
সিপিআই(এমএল) দীর্ঘজীবী হোক।
আমাদের সমস্ত প্রয়াত সাথী ও শহীদদের জানাই লাল সেলাম।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
-- সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটি

খণ্ড-27