গ্রামবাংলার কৃষক ও গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জরুরি দাবিতে সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি (পশ্চিমবঙ্গ)-র ডাকে আজ রাজ্যের ব্লকে ব্লকে প্রতিনিধি ডেপুটেশন সংগঠিত হয়
aikm

বাংলার ২১টি কৃষক সংগঠন নিয়ে গঠিত সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির রাজ্য শাখার নেতৃত্বে আজ ১১ মে রাজ্যের ব্লকে ব্লকে লকডাউনের নিয়ম মেনে প্রতিনিধিত্ব ডেপুটেশন সংগঠিত হয়েছে। লিখিত ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনা এবং কৃষক, গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষদের অবস্থা ও দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো ইতিবাচক উত্তর আসেনি। আমাদের পক্ষ থেকে ব্লকে ব্লকে -- জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলী, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা প্রভৃতি জেলায় – লকডাউনের নিয়ম মেনে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। ধান, পাট, ভুট্টা, পান, পলু চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ব্লক আধিকারিকরা মেনে নিয়েছে। সব জায়গায় রাজ্যের ও জেলার নেতৃত্ব ডেপুটেশনে উপস্থিত ছিলেন। যে সব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে তার কোনো জবাব সরকারের পক্ষ থেকে নেই ফলে ব্লক আধিকারিকরা কিছু বলতে পারেননি, দু-তিন জনের রেশনের সমস্যা হলে তাঁরা কিছু করতে পারবেন বলে জানান। রেশন নিয়ে অনিয়মের কথাও তাঁরা মেনে নেন। কিন্তু সব কিছুরই জবাবে বলেন সরকারের কাছে আপনাদের ডেপুটেশনের কপি পাঠিয়ে দেব। একদিকে কেন্দ্রের সরকার চাইছে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নস্যাৎ করতে আর অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করে রাখতে। যার ফলস্বরূপ রাজ্যের সমগ্র প্রশাসন পরিণত হয়েছে নীরব দর্শকে। প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা মনেকির এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। আগামীদিনে আন্দোলন জোরদার করা ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা আমাদের সামনে নেই।

দাবিসমূহ

  • করোনা লকডাউনের ফলে এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ধান, সব্জি, ফল-ফুল, ভুট্টা, গম, পানচাষ, দুধ উৎপাদন, উদ্যান পালন, পলু চাষ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত কৃষিজীবী মানুষদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
  • কৃষকদের ভর্তুকিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ ও ডিজেল সরবরাহ করতে হবে।
  • গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারী দরে সমস্ত রকম ফসল কিনতে হবে, ধান কেনার জন্য সরকারকে অতিরিক্ত বোনাস দিতে হবে।
  • কাজ না পাওয়ার কারণে ভর্তুকি বাবদ প্রতিটি জবকার্ডে ১০ হাজার টাকা জমা করতে হবে। অবিলম্বে কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের কাজ চালু করতে হবে। ধান কাটা সহ কৃষিকাজকে এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, জেসিপি ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
  • রেশনে সমস্ত গ্রামীণ গরিব মানুষদের মাথাপিছু ১৫ কেজি চাল/গম, ডাল, তেল, আলু ও মশলা সরবরাহ করতে হবে।
  • কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনে করে এরাজ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিটি পরিযায়ী শ্রমিককে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • করোনা মোকাবিলা ও গ্রামীণ চিকিৎসার উন্নতির জন্য জেলা ও ব্লকস্তরে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি জেলায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।
  • আদিবাসী জনগণকে জমি ও জঙ্গলের অধিকার থেকে উচ্ছেদ করা চলবে না। আদিবাসী জনগণের শিল্পীভাতা অবিলম্বে চালু করতে হবে।

ধন্যবাদান্তে,
সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি (এআইকেএসসিসি)
পশ্চিবঙ্গ শাখার অন্তর্ভুক্ত ২১টি কৃষক সংগঠনের পক্ষে
অমল হালদার (আহ্বায়ক)
কার্তিক পাল (সাংগঠনিক সম্পাদক)

bisbloc

অনেককিছুই অপেক্ষা করতে পারে -- কিন্তু কৃষিকাজ নয়! একদা এ কথা বলেছিলেন এক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনেতা। আজ করোনা লকডাউনের অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে সেটা যেন প্রকটভাবে সামনে উঠে এসেছে। কৃষিকাজ থেমে নেই। লকডাউনের সংকটের বোঝা ঘারে নিয়ে, প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে অসম্ভব শ্রমে ঘামে কৃষক ফসল ফলিয়ে চলেছে। বৈশাখের প্রখর তাপে কখনও বা বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির ক্ষয় ক্ষতি মাথায় নিয়ে অন্নদাতারা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষিকাজ। কিন্তু লকডাউনের বাজারে তাদের উৎপাদিত ফসলের দাম নেই। ফসল বাজারে নিয়ে যাবে কে? এ দায়িত্ব তো ছিলো সরকারের। কিন্তু এ কাজে সরকারের কোনো প্রচেষ্টাই দেখা গেলো না। এভাবে কৃষকদের বিশেষত গ্রামের ৮০ ভাগ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের আবারও নতুন করে ঋণফাঁদে জড়িয়ে পড়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। কাগজে কলমে সরকারের পরামর্শদাতা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশগুলি কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার ঘোষণা করলো। যেমন, সরকারীভাবে ফসল ক্রয় করো, বাজারের সংযোগ রক্ষা করো, চাষিদের আর্থিক সহায়তা দাও – ইত্যাদি ইত্যাদি! কিন্তু বাস্তবে প্রতিশ্রুতিগুলি পরিণত হয়েছে প্রতারণা আর চরম শঠতায়। যেমন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সহায়তা প্রকল্পর টাকা বাংলার একজন চাষিও পেলো না। লকডাউনে ফসলের চূড়ান্ত অভাবী বিক্রির জন্য এক পয়সাও ক্ষতিপূরণ নেই, কৃষিতে উদ্বৃত্ত ব্যাপক শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন। তাদের জন্য কোনো আর্থিক সহায়তা এলো না। দেখা গেলো রাজ্য কেন্দ্র যেন একই পথের পথিক। কৃষি ও কৃষকদের প্রতি কেবলই মিথ্যার বেসাতি-নির্লজ্জ ধোঁকাবাজি! এর বিরুদ্ধে গ্রাম বাংলার দিকে দিকে চলছে কৃষক ও মজুরদের বিক্ষোভ। সরকারী প্রতারণা বঞ্চনার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফু্ঁসছে গ্রামের কৃষিজীবী শ্রমজীবী মানুষ। লকডাউন বিধির মধ্যেও একে সংগঠিত রূপ দিতে, বধির সরকারের কানে কৃষকের বাঁচার দাবি পৌছে দিতে গত ১১ মে রাজ্য জুড়ে ব্লকে ব্লকে অনুষ্ঠিত হলো বিক্ষোভ ডেপুটেশন। সারা ভারত কৃষক সমন্বয় কমিটির আহ্বানে সমস্ত বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির অংশগ্রহণে এই কর্মসূচী সংগঠিত হয়। দেখা গেলো ডেপুটেশন দেওয়ার পর ব্লকের আধিকারিকরা “উপরে পাঠিয়ে দেবো”, “দেখছি দেখবো” বলে দাবিগুলি উপেক্ষা করে কার্যত সরকারী উদাসীনতার মনোভাবকেই তুলে ধরলো। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও এই কর্মসূচী আমাদের কাজের এলাকায় গ্রামের মানুষের মধ্যে আন্দোলনের বার্তা পৌছে দিয়েছে। আগামীদিনে যে প্রবল সংকট নেমে আসতে চলেছে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যপক মানুষকে সজাগ করে তুলতে সহায়ক হয়েছে। এলাকায় গরিব মানুষদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে উৎসাহ।

nakas

 

ব্লক ডেপুটেশনের কর্মসূচীতে সবচেয়ে বড়ো হয়ে ওঠে খাদ্য সংকট তথা রেশনে বঞ্চনার বিষয়গুলি। দেখা গেলো বহু সংখ্যক মানুষের রেশন কার্ড নেই। যারা মাঠে চাল গম উৎপাদন করে,তারাই এখন রেশনের চালের জন্য সরকারী দপ্তরের দোরগোড়ায়! নদীয়া জেলার নাকাশীপাড়া ব্লকের বিডিও বঞ্চনার কথা কিছুটা মেনে নিলেন। কিন্তু তিনি খাদ্য সংকট আছে বলে স্বীকারই করলেন না। বললেন “আসলে কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না, শুধু এ জন্যই হাজার খানেক মানুষ ব্লক অফিসে ভীড় করেছিলো। যারা রেশন কার্ডের দরখাস্ত জমা করেছে,অথচ কার্ড না পাওয়ার ফলে মাল পাচ্ছে না।” কার্যত এভাবে তিনি সরকার বা শাসকদের প্রচারকেই তুলে ধরলেন। মাসে মাত্র ৫/৭ কেজি মাল দিয়ে লাগাতার প্রচার করা চলছে যে -- রেশনে নাকি প্রচুর মাল দেওয়া হচ্ছে! ঐ স্বল্প পরিমান চাল গম পেলেই ব্যাস! গরিবের যেন আর অন্য কিছুর দরকার নেই!! এ যেন ফোঁটা ফোঁটা জল দাও, কোনোরকম ভাবে যেন বেঁচে থাকে! বিডিওর এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিনিধিরা বলেন, খাদ্য সংকট এবং বঞ্চনা দুটোই আছে। ডেপুটেশনে উপস্থিত কিষান মহাসভা, কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি ও কিষাণসভার নেতারা বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র আপনি বা সরকার কিংবা শাসক দল কী ভাবে বুঝবেন? মোদ্দা বিষয় হলো রেশনকার্ড মানুষের অধিকার। সেটা খাদ্যদপ্তর দেবে, নাকি ব্লক প্রশাসন দেবে আমরা জানি না। আপনার এক্তিয়ারে থাকা ব্লক খাদ্য দপ্তরের মাধ্যমে আপনি দ্রুত কার্ড বিলি করুন। বছরের পর বছর মানুষকে হয়রানি করা চলছে কেন? তাহলে কি লকডাউন উঠে গেলে মানুষকে কার্ড দেবেন?

প্রচুর বিতর্কের পর অবশেষে বিডিও প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, স্পেশাল জিআর-এর খাদ্য একেবারেই হতদরিদ্র মানুষদের দেওয়া হবে।

এরপর গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারী দরে কৃষকের ধান কেনা, বৃষ্টি-শিলাবৃষ্টিতে মাঠের ফসলের ব্যাপক লোকসানের ক্ষতিপূরণ, ১০০ দিনের কাজ চালু করা,লকডাউনে জবকার্ডে ক্ষতিপূরণ – ইত্যাদি ৮ দফা দাবি নেতৃবৃন্দ তুলে ধরেন। দিনমজুরদের জন্য এককালীন ১০০০ টাকা রাজ্য সরকারের অনুদানের “প্রচেষ্টা” প্রকল্প সম্পর্কে বিডিও বলেন “ব্লকে দুই আড়াই হাজার দরখাস্ত জমা পড়েছে। তবে সেগুলি ডাস্টবিনে যাবে! নাকি কোথায় যাবে! উপরতলার নির্দেশ না এলে বলা যাবে না।” যদিও এই প্রকল্পের জন্য অনলাইনে “নিস্ফল প্রচেষ্টার” কথা তার কাছে শোনা গেলো!

শুরুতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত পোষ্টার বুকে নিয়ে ভালো সংখ্যক কর্মীরা বিডিও অফিস চত্বরে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বক্তব্য রাখা ও স্মারক লিপি পাঠ করা হয়,যা ব্যাপক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নদীয়ার ধুবুলিয়ার (কৃষ্ণনগর ব্লক ২ নং) কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন এআইকেএম নেতা সুবিমল সেনগুপ্ত, খোদাবক্স সেখ প্রমূখ ৷ জাতীয় সড়কের উপর থাকা ব্লক অফিসের সামনে পোষ্টার সহ স্লোগানের মাধ্যমে এই কর্মসূচী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মালিকরা নয়, ভাগ-চুক্তি চাষিরাই যাতে ফসলের ক্ষতিপূরণ পায়, এ বিষয়ে বিডিও কে জোড়ালো দাবি জানানো হয়। বিডিও বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানান। এছাড়া ডেপুটেশন কর্মসূচী সংগঠিত হয় নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ ব্লকে।

bank

 

বাঁকুড়া জেলার ১ নং ব্লকে নজরকাড়া মিছিল করে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। আয়ালার রাজ্য নেতা বাবলু ব্যানার্জী সহ বামপন্থী কৃষক সংগঠনগুলির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। রেশনে খাদ্য না পাওয়া বহুসংখ্যক গরীব মানুষের কার্ডের দাবি তুলে ধরলে বিডিও জানায় যে ব্লকের জনসংখ্যা অনুযায়ী রেশন কার্ডের সংখ্যা প্রায় সমপরিমাণ। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে -- এই যে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক মানুষের কার্ড নেই – তার পেছনে কারণটা কি? তাহলে কি প্রচুর সংখ্যায় ভূয়া কার্ড রয়েছে? এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানানো হয়। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে ফারহান খান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ডেপুটেশন দেন। এখানে দিনমজুর ও অন্যান্য শ্রমজীবীদের পিএফ-এর জমা টাকা ফেরতের দাবিটা গুরুত্ব পায়। পুরসভা এলাকায় ১০০ দিনের প্রকল্প চালু নেই বলে জানা যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে শহর এলাকায় কর্মহীন গরিব শ্রমজীবী মানুষের কাজের উপযোগী প্রকল্প চালু করার দাবি প্রাধান্য পায়। এছাড়া বাঁকুড়ার ওন্দা, ছাতনা ও ২নং ব্লকে অনুরূপ কর্মসূচী সংগঠিত হয়।

hab

 

উঃ ২৪ পরগণার হাবড়া ২ নং ব্লকে আয়ারলার রাজ্য কমিটি সদস্য অজয় বসাক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ডেপুটেশন দেয়। এখানে ৩৯ জন গরিব মানুষ যাদের রেশন কার্ড নেই তাদের তালিকা স্পেশাল রিলিফের জন্য জমা দেওয়া হয়েছিলো, অথচ তারা মাল পায়নি। সেই বঞ্চিত মানুষদের নিয়ে ব্লক দপ্তরে অবস্থান শুরু করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়। তখন দুই দিনের মধ্যে তাদের খাদ্য দেওয়া হবে বলে বিডিও প্রতিশ্রুতি দেন। এই জেলার গাইঘাটা ব্লকে এআইকেএম রাজ্য কমিটি সদস্য কৃষ্ণ প্রামানিক সহ বামপন্থী কৃষক সংগঠনের নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। নতুন রেশন কার্ড দেওয়ার দাবি জানানো হলে ব্লক আধিকারিক বলেন, সেটা নাকি তাঁর দায়িত্ব নয়। এছাড়া ১০০ দিনের প্রকল্পে কৃষিকাজকে যুক্ত করা, শাসক দলের এক নেতার রেশনের মাল আত্মসাৎ করা সংক্রান্ত দুর্নীতির একটি ঘটনা তুলে ধরে তার উপযুক্ত তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

pbs

বর্ধমান

সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পশ্চিমবঙ্গ শাখার অন্তর্ভুক্ত ২১টি কৃষক, কৃষি মজুর ও আদিবাসীদের সংগঠনের যৌথভাবে রাজ্যব্যাপী ১১ মে ব্লকে ব্লকে ডেপুটেশন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পুর্ব বর্ধমান জেলার ব্লক ভিত্তিক ডেপুটেশন ।

জেলার আটটি ব্লকে যৌথ ভাবে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হয়। লকডাউন এর পর এই সমস্ত এলাকার কৃষকদের দুরবস্থার  সীমা থাকেনি। বিশেষ করে সব্জির চাষিদের। প্রথমে বলা হল জনতা কার্ফু। মানুষ মনে করল এক দিনের ব্যাপার ট্রেন বন্ধ থাকবে। তারপরই সব্জি তোলা যাবে। কিন্ত পর দিনই সমস্ত লকডাউন ঘোষণার পর ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। এখানকার সব্জির বেশিরভাগ ট্রেনের মাধ্যমে বিভিন্ন বাজারে যেত। সব্জির পাইকারী ব্যবসায়ীরা মুলত ট্রেনেই যাতায়াত করত। হঠাৎই বন্ধ করার ফলেই চাষিদের সব্জি জমিতেই নষ্ট হতে লাগল। জমি থেকে তোলা হলে ও তুলে আনার খরচাও উসুল হচ্ছিল না। ফলে চাষিদের চরম ক্ষতি হয়ে গেল। সরকার বহু বড় বড় ভাষণ দিলেও কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কোনও সহায়তা এই কৃষকরা পেলেন না । তার উপর বর্তমান ঝড় ও শিলাবৃষ্টি ধান-পাট ও সব্জির চরম ক্ষতি করেছে। তাই পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের ডেপুটেশনে ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবির উপর জোর দেওয়া হল। বিডিও সাহেব বললেন ফসলের ক্ষতিপূরণ ব্যাপারে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। এডিওর সাথে কথা বলার পরামর্শ দিলেন। অন্যান্য দাবিগুলো উপরে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন। পুর্বস্থলী ১নং ব্লকের ডেপুটেশন ও ফসলের ক্ষতিপূরণ এর উপর জোর দেওয়া হয়। ১০০দিনের কাজ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য আলোচনা করেন।

mant

 

মন্তেশ্বর ব্লকে ১০০ দিনের কাজ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের সরকারি খরচে দ্রুত ঘরে ফেরানোর দাবি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কালনা ২নং ব্লক-এর ডেপুটেশন ও ১০০ দিনের কাজের উপর জোর দেওয়া হল। এবং ৭ দিনের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাছাড়া ভাতার ব্লকে ডেপুটেশন দেওয়া হল। সদর ২নং ব্লক, রায়না ও জামালপুর ব্লকে ডেপুটেশন দেওয়া হল। সব ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে দেওয়া চিঠির বয়ান ভিডিও মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সব ক্ষেত্রেই মুলত সিপিএম-এর কৃষক সংগঠন কৃষিমজুর সংগঠন ও সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন-এর এআইকেএম ও আয়ারলা প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

bala

হুগলী জেলা

হুগলী জেলার ৩টি ব্লক – বলাগড়, পোলবা ও পান্ডুয়ায় ব্লক প্রশাসনের নিকট করোনা উদ্ভূত সঙ্কটকালে কৃষক ও কৃষিমজুরদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলি উত্থাপন করে এআইকেএসসিসির পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। বলাগড়ে ডেপুটেশনে নেতৃত্ব দেন আয়ারলার পক্ষে সেখ আনারুল। এখানে বামপন্থী ধারার অপর সংগঠন সারা ভারত কিষাণ সভার প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।

pol

 

পোলবায় আয়ারলা, হুগলী জেলা কমিটি সদস্য গোপাল রায় ডেপুটেশনে নেতৃত্ব দেন। পান্ডুয়ায় ব্লক ডেপুটেশনে আয়ারলার পক্ষে নিরঞ্জন বাগ ও এআইকেএম-এর পক্ষে মহঃ সিরজুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এখানে এআইকেএস-এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সৌরেন বসু ও গোপাল হেমরম। এআইকেএসসিসি-র এই কর্মসূচীর সমর্থনে বৈঁচি জিটি রোড চৌমাথায় এআইকেএম ও এআইকেএস-এর যৌথ উদ্যোগে এক অবস্থান কর্মসূচী পালিত হয়। এআইকেএম ও এআইকেএস-এর পক্ষে এই অবস্থান কর্মসূচীতে যথাক্রমে মুকুল কুমার ও প্রদীপ সাহাও উপস্থিত ছিলেন।

s24

দঃ ২৪ পরগণা
বিষ্ণুপুর ১নং ব্লকে অংশ নেন এআইকেএম রাজ্য কমিটি সদস্য দিলীপ পাল। স্মারকলিপি ও ৮ দফা দাবি তুলে ধরার পাশাপাশি এলাকায় গ্রামাঞ্চলে জল নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে পড়ছে,তাই নিকাশীবহালের দাবি,লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যানপালন, মৎসচাষিদের ক্ষতিপূরণ ও জমি মাফিয়াদের শাসকদল ও ভূমি দপ্তরের যোগসাজসে কৃষিজমি গ্রাসের বেআইনি কারবার বন্ধ করার দাবি প্রচারে তুলে ধরা হয়। মালদা জেলার কালিয়াচকে ইব্রাহিম সেখের নেতৃত্বে ডেপুটেশন কর্মসূচী সংগঠিত হয়।

উত্তরবঙ্গ

লকডাউন চলাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া -- ভতুর্কি দিয়ে সার বীজ প্রভৃতি সরবারহ করা, রেশনের মাধ্যমে প্রতিটি দরীদ্র গ্রামীণ মানুষদের ১৫ কেজি চাল, ডাল, আটা, ভোজ্য তেল প্রভৃতি দেওয়া, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের উপযুক্ত সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের জায়গায় ফিরিয়ে আনা, কোরোনা মোকাবিলায় গ্রামীণ ব্লক-জেলা স্তরে উপযুক্ত চিকিৎসার পরিকাঠামো তৈরি করার দাবিতে এআইকেএম-এর পবিত্র সিং আয়ারলার শরৎ সিং প্রমূখ। এই এলাকার গ্রামাঞ্চলে সব্জি চাষিরা লকডাউনের সময়কালে ২ টাকা ৩ টাকায় সব্জি বিক্রি করেছে। কখনও বা নিরুপায় চাষিরা স্রেফ বিনাপয়সায় সব্জি বিলি করে দিয়েছে। ডেপুটেশনে সরকারী উদ্যোগে সব্জি কেনার দাবি বিশেষ গুরুত্ব পায়। স্পেশাল রিলিফ বিলিবণ্টনের কাজে পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে বিডিও জানায়। সে ক্ষেত্রে প্রকৃত গরিবদের নাম বাদ দেওয়া হলে বা দলবাজি হলে আমরা তার বিরোধিতা করবো বলে জানানো হয়। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গরিব মানুষদের নাম সুপারিশ করা হলে সেগুলি বিবেচনা করা হবে বলে বিডিও প্রতিশ্রুতি দেয়।

জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে এআইকেএম নেতা ভাস্কর দত্তের নেতৃত্বে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। ব্লক দপ্তরে অনুষ্ঠিত একটি সর্বদলীয় বৈঠকে স্মারকলিপি ও দাবিসনদ পেশ করা হয়। আয়ারলার রাজ্য কমিটি সদস্য শ্যামল ভৌমিক ও বিল্টু চক্রবর্তী জলপাইগুড়ি ব্লকে অনুরূপ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন।

উঃ দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকে ডেপুটেশনে ছিলেন এআইকেএম রাজ্য কমিটি সদস্য তসলিম আলি। এখানেও রেশন কার্ড না থাকা গরিবদেরকে খাদ্য দেওয়া ও দ্রুত কার্ড প্রদানেরর দাবি তুলে ধরা হয়।

mur

 

মুর্শিদাবাদ জেলার মুর্শিদাবাদ ব্লকে এআইকেএম নেতা ও পার্টির জেলা সম্পাদক রাজীব রায় সহ অন্যান্য কৃষক সংগঠনের নেতাদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচী সংগঠিত হয়। বিডিও হাতে হাতে ডেপুটেশন নিতে না চাইলে স্মারকলিপি হোয়াটসএ্যাপে পাঠানো হয়। ব্লক দপ্তরের সামনে শ্লোগান সহকারে প্রচার করা হয়।

খণ্ড-27