কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের প্রাপ্য মহার্ঘভাতাকে ২০২১-এর জুলাই মাস পর্যন্ত একই স্তরে আটকে রাখার যে নির্দেশিকা কেন্দ্রীয় সরকার জারি

কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের প্রাপ্য মহার্ঘভাতাকে ২০২১-এর জুলাই মাস পর্যন্ত একই স্তরে আটকে রাখার যে নির্দেশিকা কেন্দ্রীয় সরকার জারি করেছে, এআইসিসিটিইউ তার নিন্দা করছে এবং ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক তাদের জারি করা ২৩ এপ্রিলের নির্দেশিকায় কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের এবং পেনশন ভোগীদের ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে প্রদেয় ৪ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ও মহার্ঘ খয়রাতি সহায্য ২০২১ - এর জুলাই পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা বলেছে। কর্মচারিদের যে মহার্ঘ ভাতা এবং পেনশন ভোগীদের যে মহার্ঘ খয়রাতি সাহায্য ২০২০ সালের ১ জানুয়ারী থেকে প্রাপ্য সেটাকেই শুধু আটকে রাখা হচ্ছে না, ২০২০ সালের ১ জুলাই এবং ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী থেকে প্রাপ্য মহার্ঘ ভাতা ও মহার্ঘ খয়রাতি সাহায্যও দেওয়া হবে না। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়কালের জন্য কোনো বকেয়াও দেওয়া হবে না। “পি এম কেয়ারস” তহবিলের জন্য এক দিনের বেতন কেটে নেওয়া এবং  

ডিএ না পাওয়ার ফলে কর্মচারিদের সম্মিলিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ শতাংশ। এই নির্দেশিকা সামনের সারিতে থেকে কাজ করা কর্মীদেরও রেহাই দেবে না।

শ্রমজীবী জনগণের ওপর একাদিক্রমে নামানো বেশ কয়েকটি আক্রমণের সাথেই এল সাম্প্রতিকতম এই আক্রমণ। এটা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, করোনা মহামারী এবং তারপর আচমকা নামানো লকডাউনের পরিণামে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের গোটা বোঝাটাই শ্রমিক ও কর্মচারীদের ঘাড়ে চালান করার নীতিই সরকার নিয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার আশঙ্কা জোরালো হয়ে দেখা দিচ্ছে। গুজরাট ও রাজস্থানের মতো কয়েকটি রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ১২ ঘণ্টার শ্রম দিবসে বৈধতা দিয়েছে। মোদী সরকার একদিকে লক্ষ-লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে খাদ্য ও আশ্রয় ছাড়াই সহায়সম্বলহীন অবস্থায় আটকে থাকতে বাধ্য করছে, লকডাউন পর্বে অসংগঠিত শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তার নিজের নির্দেশিকা থাকলেও ব্যাপক সংখ্যাধিক শ্রমিকদের ওই মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অন্য দিকে, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ কর ছাড় দেওয়া ও সুরাহা করা  হচ্ছে আর কোভিড-১৯ অতিমারির মোকাবিলায় জিডিপি-র ১ শতাংশেরও কম পরিমাণের আর্থিক প্যাকেজ বরাদ্দ করেছে। দুর্নীতিপরায়ণ অতি ধনী সম্প্রদায় ও ধনকুবের ব্যবসায়ীদের থেকে কর আদায় না করে সরকার সাধারণ, শ্রমজীবী জনগণকে বঞ্চিত করে শুধু রাজকোষই ভরাচ্ছে না, কর্পোরেটদের ভাঁড়ারও পূর্ণ করছে।

ডিএ আটকে রাখাটা শুধু দুর্দশা সৃষ্টিকারী বড়সড় আর্থিক আক্রমণই নয়, বিশেষভাবে লকডাউন পরবর্তী পর্যায়ে মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশিত সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে, তা একই সাথে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারি ও পেনশন ভোগীদের কষ্টার্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়াকেও দেখিয়ে দেয়। এ ছাড়াও লকডাউনের সময় কর্মচারিরা যেহেতু অফিস যাচ্ছেন না, তাদের তাই পরিবহন ভাতা দেওয়া হবে না বলেও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে যে, “পি এম কেয়ারস” তহবিলের জন্য এক দিনের বেতন কাটা এক বছর ধরে চলবে। ডিএ আটকে রাখার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা রাজ্য সরকারগুলোর, সরকার গৃহীত সংস্থাসমূহর কর্মচারীদের ও শিল্প ক্ষেত্রের শ্রমিকদের থেকেও একই ধরনের ডিএ ও মজুরি কাটার সংকেত বা সূচনা হয়ে উঠতে পারে।

বর্তমানের এই সংকট মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারি ও পেনশন ভোগীদের এবং সাধারণভাবে শ্রমজীবী জনগণকে নিশানা না বানিয়ে সরকারের উচিৎ কর্পোরেটদের ওপর ১০ শতাংশ কোভিড-১৯ কর চাপানোর কথা বিবেচনা করা।

এআইসিসিটিইউ অর্থ মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।

এআইসিসিটিইউ আরও দাবি জানাচ্ছে, মহামারীর নাম নিয়ে কর্মচারীদের এবং সাধারণভাবে শ্রমিকদের কোনো ধরনের ডিএ আটকে রাখা অথবা যেকোনো ধরনের মজুরি কেটে নেওয়া বা হ্রাস করা বন্ধ রাখতে হবে।

(এমএল আপডেট থেকে গৃহীত রিপোর্ট)

খণ্ড-27