মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি : পশ্চিমবঙ্গ গৃহ অন্যান্য নির্মাণ শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়ন
H6

করোনা মহামারীর যুগেও আমাদের দেশের শাসকরা এই বার্তাই ছড়িয়ে দিতে চাইছে যে -- আইন হাতে তুলে নিয়ে জোরালো প্রতিবাদ না করলে কোনো দাবিই মানা হবে না।

আমাদের দেশে ৩০ জানুয়ারী প্রথম করোনা আক্রান্ত রুগী দেখা দিলেও (যদিও তার আগেই চিনের মাধ্যমে সারা বিশ্ব জেনে গেছে করোনা রোগের ভয়ঙ্করতা) ২৫ মার্চ অপরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করে দিলেন (এই দীর্ঘ সময় দেশে কী কী খেলা কেন্দ্র সরকার চালিয়েছে তা দেশবাসীর জানা হয়ে গেছে)।

দেশের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে উপেক্ষা করে উচ্ছেদ, কর্মচ্যুত, অপমানিত হওয়া ও প্রতিবাদরত লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকরা লকডাউনের সমস্ত বিধিনিষেধকে অগ্রাহ‍্য করেই নিজেদের হাতে গড়া জাতীয় সড়ক ধরে নিজ গ্রামের পথে হন্টন শুরু করলো। শত শত মাইল পদযাত্রায় মরলো, রক্তাক্ত হলো, পড়ে গেল আবার উঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করলো। তাদের এই একরোখা মনোভাবের কাছে শেষমেশ সরকার ঘোষণা করলো পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজ গ্রামে ফিরতে পারবে। কেন্দ্র সরকার ট্রেনে ব‍্যবস্থা করে দেবে (ট্রেনের ভাড়া নিয়ে কেন্দ্র সরকার সামন্ত রাজাদের মতো ব‍্যবহার করেছে তাও দেশবাসী দেখেছে)।

করোনা রোগের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে যারা জীবনপন করে লড়ছেন তাদের জন‍্য পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজার, কিট ও রোগীদের পরীক্ষা নিয়ে সর্বত্র ছেলেখেলা চলছে। যেন জীবনের কোনো মূল্য নেই।

দেশের ৮০ কোটি মানুষ যাদের কাছে করোনা মহামারীর চেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রনা আরো ভয়ঙ্কর, তাদের রেশনের প্রাপ্তি নিয়ে কেন্দ্র -রাজ্যের সংখ্যা তত্বের লড়াইর মধ‍্যে পড়ে কতশত মানুষ ক্ষুধায় দিনযাপন করতে বাধ‍্য হলো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশকে বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ মহল, বিরোধী রাজনৈতিক দল, কেন্দ্রীয় ট্রেড-ইউনিয়নগুলি লাগাতারভাবে দাবি তুলছে ৮০ কোটি শ্রমজীবী পরিবারকে ১০০০০ টাকা করে ৬ মাস লকডাউন ভাতা দিতে হবে। দেশের সরকার (রাজা) মোদী কেয়ার ফান্ড ও প্রধান মন্ত্রী জাতীয় রিলিফ ফান্ডে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছিত থাকা সত্বেও সে দাবি পূরণ করেনি।

আমাদের রাজ্যেও তৎপর মুখ্যমন্ত্রীর এ প্রশ্নে কোনো জবাব নেই। বিশেষ করে বাংলার লাখ লাখ নির্মাণ শ্রমিকদের রক্তঘামে পশ্চিমবঙ্গ নির্মাণ শ্রমিক কল‍্যাণ পর্ষদে শত শত কোটি টাকা জমা আছে। সেই গচ্ছিত তহবিল থেকে নির্মাণ শ্রমিক পরিবারকে সম্মান নিয়ে জীবন যাপন করতে লকডাউন ভাতা হিসাবে ১০০০০ টাকা ৬ মাস প্রদান করা হোক এই দাবি বারংবার উঠলেও রাজ‍্য সরকারের তরফ থেকে কোন সদুত্তোর নেই। ফলে নির্মাণ শ্রমিকদের মধ‍্যে ক্ষোভ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর শ্রমজীবি মানুষকে মানুষ হিসাবে গ্রাহ‍্য করেননা তাই দেশব‍্যাপী অপরিকল্পিত লকডাউন ঘোষণার পর লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক শত শত মাইল পথ পদযাত্রা করেই নিজেদের গ্রামে ফেরার অধিকার আদায় করে নিয়েছে। রাজ‍্য সরকারও কি তাই চাইছে? বাংলার লাখ লাখ নথিভূক্ত নির্মাণ শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার আদায় করতে লকডাউনের সমস্ত বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে একরোখা মনোভাব নিয়ে সরকারী দপ্তরের দিকে অভিযান করুক।

আশাকরি রাজ্য সরকার বাংলাকে এই অরাজকতার দিকে ঠেলে দেবেন না। কেন্দ্রের মতো শ্রমজীবি মানুষকে অগ্রাহ্য না করে রাজ্য সরকার নির্মাণ শ্রমিকদের জন‍্য ১০০০০ টাকা করে ৬ মাস লকডাউন ভাতার দাবি প্রসঙ্গে দ্রুতই সরকারী কোনো ঘোষণা করে ক্ষুব্ধ, বিধ্বস্ত নির্মাণ শ্রমিকদের সঠিক পথে চলার দিশা প্রদান করবেন।

ধন্যবাদান্তে,
কিশোর সরকার
সাধারণ সম্পাদক
পশ্চিমবঙ্গ গৃহ অন্যান্য নির্মাণ শ্রমিক কর্মচারি  ইউনিয়ন (এআইসিসিটিউ অনুমোদিত)।

খণ্ড-27