মিড ডে মিলের বরাদ্দ অর্থ কোথায় গেল!
miday

অতিমারীর জন্য স্কুল আগেই ছুটি দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী মার্চ মাসে বিদ্যালয় আরও ১৪ দিন চলতে পারত। এপ্রিল মাসে ২১ দিন স্কুল চলার কথা ছিল। কিন্তু সরকার ছুটি ঘোষণা করে দেয়। প্রশ্ন উঠলো মিড ডে মিলের বাচ্চারা খাবে কি? রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিল ছাত্রদের চাল ও আলু দিয়ে দেওয়া হবে। তাই করা হল। চাল এবং আলু প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয় ছাত্রদের হাতে পৌঁছে গেল।

শিশুদের পুষ্টি যোগাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য খরচের ৬০:৪০ অনুপাতে আর্থিক দায় নেবে। এই যৎসামান্য টাকা শিশুদের খাওয়াবার জন্যে বরাদ্দ আগেই ছিল। প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে ছাত্রপিছু দৈনিক যথাক্রমে ৪.৪৮ টাকা এবং ৬.৭১ টাকা। এই আনুপাতিক হারে প্রাথমিকে কেন্দ্র দেয় ২.৬৯ টাকা এবং রাজ্যের ভাগে ১.৭৯ টাকা মোট অর্থের পরিমাণ ৪.৪৮ টাকা। উচ্চ প্রাথমিকে কেন্দ্র দেয় ৪.০৩ টাকা এবং রাজ্য ২.৬৮ টাকা মোট অর্থের পরিমাণ ৬.৭১ টাকা। চাল প্রতিটি রাজ্যে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বিনামূল্যে সরবারহ করে।

চারিদিকে দাবি ওঠে মিড ডে মিলের রান্না বন্ধ করা যাবে না। রাজ্য সরকার দাবি মেনে নেয়। সেই অনুযায়ী প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে ১৪ দিন ও ২১ দিনে দু-দফায় মাথা পিছু প্রথমবার ২ কেজি ও দ্বিতীয়বার ৩ কেজি আলু এবং চাল দেওয়া হল। ৩৫ দিনে প্রাথমিকে ৫ কেজি ও উচ্চ প্রাথমিকে ৫ কেজি মোট ১০ কেজি আলু দেওয়া হয়েছে। এবার আমরা খরচটা একবার দেখে নিই। চাল যেহেতু এফসিআই বরাদ্দ থেকে আসে তাই চালের কোন মুল্য খরচের সাথে যুক্ত করা হল না। আলুর দর বাজারে ২০/২২/২৪ টাকা। কিন্তু স্কুল পেয়েছে ১৮ টাকা দরে।

প্রাথমিকে – আলু ১৮ টাকা × ৫ কেজি = ৯০ টাকা
উচ্চ প্রাথমিক – আলু ১৮ টাকা × ৫ কেজি = ৯০ টাকা।

প্রাথমিকে দৈনিক মাথাপিছু অর্থ বরাদ্দ ৪.৪৮ টাকা হারে ৩৫ দিনে ১৫৬.৮০ টাকা খরচ হওয়া উচিত ছিল, হয়েছে ৯০.০০ টাকা। মোট উদ্বৃত্ত ৬৬.৮০ টাকা।
উচ্চ প্রাথমিক দৈনিক মাথাপিছু ৬.৭১ টাকা হারে ৩৫ দিনে ২৩৪.৮৫ টাকা খরচ হওয়া উচিত ছিল, হয়েছে ৯০.০০ টাকা। মোট উদ্বৃত্ত ১৪৪.৮৫ টাকা।

জনমানসে প্রশ্ন উঠছে অতিমারির সময় মিড ডে মিল তহবিল থেকে এই উদ্বৃত্ত কয়েক কোটি টাকা যাচ্ছে কোথায়? অর্থের পরিমাণটা কত হতে পারে ভাবতে পারছেন? গড়ে একজন ছাত্র ১৮৩ টাকা হলে, ৩০ লক্ষ ছাত্রে কত কোটি টাকা হতে পারে? সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে নতুন কোনো দুর্নীতির পূর্বাভাস নয়তো?

লকডাউনের সময় সরকারি রেশন, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে খাদ্যশস্য সাহায্যের উপর নির্ভর করে পরিবারগুলো কষ্ট করে বেঁচে আছে, হাতে কাজ নেই, নগদ অর্থ নেই। সব অর্থনীতিবিদরা বলছেন সাধারণের হাতে নগদ টাকা তুলে দিতে, তাতে যেমন বাজার চাঙ্গা হবে এই মানুষেরাও বাঁচবেন।

রাজ্য সরকার উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে ছাত্রদের অভিভাবকদের হাতে প্রথমিকে ৬৬.৮০ টাকা ও উচ্চ প্রাথমিকে ১৪৪.৮৫ টাকা নগদ তুলে দিতে পারতেন। সরকারের এতে কোন আর্থিক বোঝা বাড়তো না, মিড ডে মিল তহবিল থেকেই এই টাকা খরচ করা যেতে পারতো। অন্যথায় ছাত্রদের ডিম, সোয়াবিন সহ প্রোটিনের ব্যবস্থা করা হোক। লক্ষণীয় ব্যাপার হল কেন্দ্র ও রাজ্যে শাসকরা সুযোগ পেলেই কথার মারপ্যাঁচে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে প্রতরণা করেই চলে। শিশুদের পুষ্টিতেও তারা ছাড় দেয় না। কী বিচিত্র সব শাসক আমাদের স্বাধীন দেশে!

– নবেন্দু দাশগুপ্ত

খণ্ড-27