রায়বেরিলিতে যে ছেলেটাকে সমাজের মাতব্বররা পিটিয়ে মেরে ফেলল, পুলিশ তাকে অনায়াসেই বাঁচাতে পারত
h13

উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি জেলার বেলা খারা গ্ৰামে উচ্চ বর্ণের গুণ্ডারা একটা ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলে এবং তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গত ২৭ এপ্রিল সকাল নটার সময় দলিত সম্প্রদায়ের চারটে ছেলে গরু চরাচ্ছিল। তাদের একজনের একটা গরু প্রমোদ বাজপেয়ীর মাঠে ঢুকে যায়। অমিত শুক্লা বলে উচ্চ বর্ণের জনৈক ব্যক্তি ওই ছেলেদের সেখানে আটকে প্রমোদ বাজপেয়ী ও সিদ্ধার্থ বাজপেয়ীকে খবর দেয়। এরপর ওই তিনজন মিলে লাঠি দিয়ে, লাথি চালিয়ে, ঘুঁষি পাকিয়ে ছেলেগুলোকে মারতে থাকে। দলিত ছেলেগুলোর নাম ছিল – রাম শঙ্কর, উদয় ভান, অর্জুন কুমার এবং রাম কেশ। রাম শঙ্কর ছুটে পালাতে গেলে প্রমোদ ও সিদ্ধার্থ মোটর বাইক নিয়ে তাড়া করে ওকে ধরে ফেলে এবং নির্মম ভাবে মারতে থাকে। পুলিশকে ফোনে ঘটনাটা জানানো হলে তারা সেখানে আসে এবং ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যায়। এরপর ওই চারটে ছেলের পরিবারের লোকজন ২৮ এপ্রিল থানায় গিয়ে ঘটনাটার একটা রিপোর্ট দেয় এবং ছেলেগুলোর ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করার লিখিত আবেদন জমা দেয়। রিপোর্টও দেওয়া হয় না, আবার ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয় না, যদিও রাম শঙ্করের অবস্থা গুরুতর ছিল।

এরপর ২৯ এপ্রিল চারটে দলিত পরিবারকে থানায় ডাকা হলে ওরা আহত ছেলেগুলোকে নিয়ে থানায় যায়। যারা ছেলেগুলোর ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল তারাও থানায় হাজির থাকে। আহত ছেলেগুলো এবং পরিবারের লোকজনদের সারাদিন থানায় বসিয়ে রাখার পর বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। ছেলেগুলোর বাড়ির লোকেরা বারবার ডাক্তারি পরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা সত্ত্বেও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয় না।

মে মাসের ৩/৪ তারিখে রাম শঙ্করের অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠলে পরিবারের লোকজন একটা অ্যম্বুলেন্স যোগাড় করে ওকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে জেলা হাসপাতালে পাঠোনো হলে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে বলা হয়।

যাদের ওপর নির্যাতন চালানো হল তারা দরিদ্র ভূমিহীন দলিত। পুলিশ যদি ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিত, অভিযোগ দায়ের করত এবং রাম শঙ্করের চিকিৎসার ব্যবস্থা করত, তাহলে রাম শঙ্কর খুব সম্ভবত বেঁচে যেত। দরিদ্র বলে পুলিশ তাদের কথা শোনেনি আর উচ্চ বর্ণের পয়সা ও ক্ষমতার জোরের জন্য অপরাধকে উপেক্ষা করে। আর এসবের সম্মিলিত ফল হল ছেলেটার মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া। ছেলেটা মারা যাওয়ার পর একটা রিপোর্ট দেওয়া হলেও নির্যাতকরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং এখন আবার দলিত পরিবারগুলোকে হুমকি দিচ্ছে।

সিপিআই(এম-এল)-এর উত্তরপ্রদেশ শাখা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে, যে পুলিশরা ঘটনা ঘটার পর রিপোর্ট দিতে এবং ছেলেটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি রেখেছে। সিপিআই(এম-এল)-এর পক্ষে বিজয় বিদ্রোহী ও শামসের সিং শোকগ্ৰস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানিয়েছেন।

খণ্ড-27