জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাফুরার গ্রেপ্তার, বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রর নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে এবং সোশাল মিডিয়ায় ক্রমাগত সাফুরাকে হেনস্থার বিরুদ্ধে কপিল মিশ্র-র গ্রেফতারের দাবিতে, এনআরসি-এনপিআর-সিএএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির ফকদই বাড়ি এবং শক্তিগড়ে মীরা চতুর্বেদী ও রুবী সেনগুপ্তর নেতৃত্বে প্রতিবাদ অবস্থান কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির কমরেডরা। ফকদইবাড়ি নীচপাড়াতে ময়না সূত্রধর, রীতা দাস, লক্ষ্মী দাসদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরো অনেক শ্রমজীবী মহিলা। শক্তিগড়ে রুবী সেনগুপ্ত ছাড়াও ছিলেন গঙ্গা রায়, ভাগ্য মন্ডল, কল্পনা সরকার, মিলি ভট্টাচার্য, আরতি দাস, আরতি ভট্টাচার্য প্রমুখ। এছাড়াও সাফুরার সাথে সংহতিতে দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার এবং আইসার পক্ষ থেকে শাশ্বতী সেনগুপ্ত কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন ।
পূর্ব বর্ধমান
৭ মে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির দেশজুড়ে অবস্থান বিক্ষোভ-এর কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পুর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়। দাবি ছিল সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর থেকে সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। চার মাসের গর্ভবতী সাফুরা জারগার কে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গ্রেফতার করে তিহার জেলে রাখা হল কেন নরেন্দ্র মোদি জবাব দাও । নারীবিদ্বেষী কপিল শর্মা কে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা কমরেড সুমি মজুমদার-এর নেতৃত্বে কালনা ২নং ব্লক-এর তেহাটা গ্রামে বিক্ষোভ ও শপথ অনুষ্ঠান সংগঠিত হয়। ৫০ জনের বেশি গ্রামের মহিলা বিশেষ করে আদিবাসীদের পরিবারের ভাল সংখ্যক মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। জেলার সভানেত্রী কমরেড মলিনা ভট্টাচার্য বর্ধমান শহরের নিজের ঘরেই প্রতিবাদে অংশ গ্রহণ করেন । আর একজন জেলা সদস্যা কমরেড ময়না চাটার্জী শক্তিগড়ে নিজের বাড়ির মহিলাদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন। সদর ২নং ব্লক-এর খাড়গ্রামে কমরেড অশোকা ঘড়ুই এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ করেন ।
করন্দা গ্রামের পুর্ব পাড়ার কমরেড মানু সাঁতরার নেতৃত্বে বিক্ষোভ অবস্থান সংগঠিত হয়। করন্দা পশ্চিম পাড়ায় কমরেড রাখী হাজরার উদ্যোগে প্রতিবাদ সংগঠিত হয় । সদর ১নং ব্লকের কামারকিতা গ্রামের কমরেড চাপা হাজরার নেতৃত্বে অবস্থান বিক্ষোভ সংগঠিত হয় ।
পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের সিমলা গ্রামের জেলা কমিটির সদস্যা কমরেড তরী সাঁতরা ও বৈশাখী সাঁতরা সহ গ্রামের গরিব পরিবারের ২৫ জন মহিলা বিক্ষোভে সামিল হন ।
কাটোয়া থানার সাহাপুর গ্রামের সুমিত্রা মন্ডলের পরিচালনায় গ্রামের মহিলাদের প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। নাদনঘাট থানার ইসলামপুর গ্রামের জুলি সেখ পরিবারের লোকজন নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হন।
হুগলী
এআইপিডব্লিউএ-র ডাকে ও আইসা-র সমর্থনে ৭ মে সাফুরা, ইশরত, গুলফিশারার গ্রেফতারির প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ দিবসে সামিল হন কোন্নগর-হিন্দমোটরের মহিলা সমিতির মহিলারা এবং ছাত্ররা।
বলাগড গুপ্তিপাড়ায় কমঃ শোভা ব্যানার্জির নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়। হুগলির পোলবাতেও মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে এই প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়।
নদীয়া জেলায় তাহেরপুরে মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা অপু কবিরাজের নেতৃত্বে এই পোস্টারে প্রতিবাদ কর্মসূচী সংঘটিত হয়। এছাড়া নদিয়ায় নাকাশীপাড়া অঞ্চলে গাছা গ্রামের মহিলারা এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা
বজবজ গ্রামীণ অঞ্চলে এই কর্মসূচী পালন করা হয়। জেলা নেত্রী দেবযানী গোস্বামীর উদ্যোগে ২৫ জনের উপস্থিতিতে এআইপিডব্লিউএ এবং আইসা রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ছাত্রী সঞ্জনা কপিল মিশ্র কেন জেলের বাইরে আছে সেই শ্লোগান তোলে ও গ্রেফতারের দাবি তোলে।
উত্তর ২৪ পরগণা
এই জেলায় অশোকনগরে দুই প্রান্তে দেশব্যাপী এই বিক্ষোভ প্রতিবাদে সাড়া দিয়ে দুটি প্রতিবাদ কর্মসূচী হয়।নেতৃত্ব দেন যথাক্রমে জেলা সভানেত্রী কমঃ জয়শ্রী দাস ও ব্লক সম্পাদিকা কমঃ রীনা মজুমদার।
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির বেলঘরিয়া শাখা সিএএ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী সফুরা, ইশরত, গুলফিশারা সহ সকলের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ অবস্থান করেন। অবস্থানের শুরুতে বিশাখাপত্তনমে গ্যাস লিকে নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় এবং কোম্পানি মালিক ও কর্তপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান হয়। এই জেলায় বসিরহাটে মহিলা নেত্রী তপতি বিশ্বাস নিজ গৃহে এই কর্মসূচীতে অংশ নেন।
হাওড়া
৭ মে সাফুরা জারগারের প্রতি চূড়ান্ত নারীবিদ্ধেষী মন্তব্যকারী বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রর শাস্তির দাবিতে হাওড়া জেলায় তিনটি এলাকায় মহিলারা প্রতি বাদ কর্মসূচী পালন করা হয় – বালি, আমতা ও বাগানানে । বালিতে পুরুষ কমরেড সহ মহিলারা পোস্টার নিয়ে অংশ নেন। আমতাতে ও বাগনানে শ্রমজীবী মহিলারা পোস্টার প্রদর্শন করে প্রতিবাদ জানান। জেলা সম্পাদিকা কল্যাণী গোস্বামী নিজ গৃহেই পোস্টার প্রদর্শন করেন।
কলকাতা
মহিলা সমিতির বেশ কিছু নেত্রী ও কর্মী নিজ গৃহে পোস্টার প্রদর্শন করে এই বিক্ষোভে সামিল হন। এদের মধ্যে ছিলেন চ্ন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী, মিতালী বিশ্বাস, স্বপ্না চক্রবর্তী, রত্না মন্ডল, সম্প্রীতি মুখার্জী প্রমূখ।
যাদবপুর অঞ্চলে বারো ঘরে জেলা সম্পাদিকা মমতা ঘোষের নেতৃত্বে শ্রমজীবী মহিলারা পোস্টার সহ এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে সামিল হন।
সফুরা জারগার সহ বিভিন্ন এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার, ও ইউএপিএ আনার বিরুদ্ধে ও কপিল মিশ্রর নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে যাদবপুর ঢাকুরিয়ায় এআইপিডব্লিউএ-র উদ্যোগে ও আরওয়াইএ ও আইসা-র সহযোগিতায় এই বিক্ষোভ প্রদর্শন কর্মসূচী পালিত হয়। অংশ নেন মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রাণী দত্ত ও মধুরিমা বক্সি, কল্পনা দেশমুখ এবং আরওয়াইএ-র রাজ্য নেতা রনজয় সেনগুপ্ত ও আইসা-র ঋতম মাঝি সহ অন্যান্য সাথীরা।
বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরে কমরেড তিতাস সহ একজন সাথী এই কর্মসূচীতে অংশ নেন।
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির আহবানে সাড়া দিয়ে এবং দাবিগুলো তে সহমত হয়ে নিখিল বঙ্গ মহিলা সংঘ সাফুরা, ইশরাত, গুলফিসারা সহ সমস্ত এনআরসি বিরোধীদের মুক্তির দাবিতে পোস্টার প্রতিবাদ করে। এতে অংশ নেন এনবিএমএস-এর রাজ্য নেত্রী সর্বানী ভট্টাচার্য্য সহ অন্যরা।
প্রতি
বার্তা সম্পাদক
মহাশয়,
জামিয়া মিলিয়ার গবেষক ছাত্রী সাফরা জারদারের মুক্তির দাবিতে এবং তাঁর প্রতি জঘন্য অশালীন উক্তি করেন যে কপিল মিশ্র (দিল্লী গণহত্যার উস্কানিদাতা) তার শাস্তির দাবিতে আজ আমাদের সমিতির উদ্যোগে দেশব্যাপী পোস্টার প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হলো।
যখন দীর্ঘদিন এই লকডাউনের ফলে এক ব্যাপক খাদ্য সঙ্কট তৈরি হচ্ছে, খাদ্যের জন্য মানুষ হাহাকার করছে তখন সংকীর্ণ স্বার্থে কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি করে চলেছে। নিরন্নের মুখে খাদ্যের বদলে সাম্প্রদায়িকতার পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে। তাই সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির উদ্যোগে দেশব্যাপীএই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে সামিল হন এরাজ্যের বিভিন্ন জেলার গ্রাম ও শহরের মহিলারা।
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে জবাব চেয়েছ সমিতির পক্ষ থেকে জবাব চাওয়া হয় --
নিজের বাড়িতে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড ধরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মহিলারা প্রশ্ন তুলেছেন মহিলা কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। সাফুরার প্রতি ছুড়ে দেওয়া অপবাদকে প্রতিহত করার জন্য দেশব্যাপী নারীরা সংহত হন ভালোবাসা ও সংহতির বার্তা নিয়ে। ঘরে বসেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পোস্টার প্রতিবাদ জানিয়ে হলো এরাজ্যের বিভিন্ন জেলা সহ সারা দেশেই। আজ দাবি তোলা হয়েছিলো --
• সন্তানসম্ভবা সাফুরাকে করোনা সংক্রমণের বিপদের সময়ে কেন তিহার জেলে রাখা হল?
• মহিলা আন্দোলনের সঙ্গে প্রতারণাকারী বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে,
• দিল্লি দাঙ্গার মূলচক্রী কপিল মিশ্রকে গ্রেফতার করো,
• কুমন্তব্য আর ফেক নিউজের কারখানা বিজেপি আই টি সেল বন্ধ করো,
• সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় মহিলাদের জেলে পাঠানো বন্ধ করো,
• সন্তানসম্ভবা সাফুরা সম্পর্কে মিথ্যা ও অশ্লীল মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে মহিলা কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ধন্যবাদান্তে,
ইন্দ্রাণী দত্ত
সম্পাদিকা, পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য কমিটি
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি