ভাইজ্যাগে বিষাক্ত গ্যাস লিকে হত্যা ও আওরঙ্গাবাদে ১৬ জন শ্রমিকের ট্রেনের তলায় পিষ্ট হওযার প্রতিবাদে ৯ মে ধিক্কার দিবস
bang

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর জনবিরোধী নীতির ফলশ্রুতিতে যে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিবিহীন করোনা লকডাউন চলছে তা সমাধানের পরিবর্তে সমস্যার আরো নিত্যনতুন দিক খুলছে প্রতিদিন। মানুষ চোখের জল ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না, একটার পর একটা লকডাউনজনিত মৃত্যুসংবাদ আসছে রোজ আর মোদী সরকার কেবল আর্থিক ‘ক্ষতিপূরণ’ ঘোষণা করে দায় সারছে! যে সরকার লকডাউনে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে বিনামূল্যে ট্রেন দিতে পারে না, সেই সরকারের অপদার্থতা মাইলের পর মাইল হাঁটতে থাকা শ্রমিকদেরকে ট্রেনে চাপা দিতে পারে! অন্ধের ভাইজ্যাগে জনবহুল এলাকায় বহুজাতিক সংস্থা এলজি-র কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস লিক করে গণমৃত্যুর পরের ভোরেই ঔরঙ্গাবাদে মালগাড়ি চাপা পড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের মর্মান্তিক মৃত্যু! এগুলো কি পরোক্ষে রাষ্ট্রের দ্বারা হত্যা নয়? এ'বিষয়ে এখনও সন্দেহ থাকতে পারে? এই দুটি ঘটনায় গণহারে মানুষ মারা গেলো, এছাড়াও বিচ্ছিন্ন ভাবে ইতিমধ্যেই দীর্ঘ পথ হাঁটার ক্লান্তি কিম্বা পথ দুর্ঘটনার বলি হয়েছেন শিশু, মহিলা সহ আরো বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক। এঁদের জন্য শোক প্রকাশের কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয় আর নিছক শোকপ্রকাশে আটকে থেকেও দায় সারা বা এই মৃত্যুমিছিল বন্ধ কোনোটাই করা যায় না। তাই সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের আহ্বানে এআইসিসিটিইউ, এআইএসএ, আরওয়াইএ সহ বিভিন্ন গণসংগঠনগুলির অংশগ্রহণে দেশ জুড়ে সংবেদনশীল প্রচুর মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ৯ মে সামিল হলেন সর্বভারতীয় শোক ও প্রতিবাদ দিবসে। কালো পতাকা, ব্যাজ, ফিতে পরে হাতে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার নিয়ে জায়গায় জায়গায় কোথাও পথে কোথাও বা বাড়ি থেকেই শারীরিক দূরত্ব যথাসম্ভব বজায় রেখে সরকারী ইচ্ছাকৃত উদাসীনতাকে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানালো সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ।

chu

 

kon

 

হুগলী জেলা: শিল্পাঞ্চল হুগলিতে চুঁচুড়া ও কোন্নগরে সিপিআই(এম-এল) ও এআইসিসিটিইউ-র উদ্যোগে কর্মীরা কালো ব্যাজ পরে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড সহ পথে নেমে স্লোগান ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য সহকারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন, পথচলতি মানুষকেও কালো ব্যাজ পরান নির্মাণ শ্রমিক কমরেডরা। চুঁচুড়ার প্রতিবাদে এআইপিএফ ও চেতনা মঞ্চের সদস্যরাও মিলিত হন বিক্ষোভ প্রদর্শনে। ভদ্রেশ্বর অ্যাঙ্গাস ইউনিটের জুটমিল শ্রমিক সদস্যরাও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শ্রমিক মহল্লায় অবস্থান করেন। চন্দননগরে কমরেড চৈতালি সেন বাড়ি থেকেই কালো পতাকা ও পোস্টার সহ বিক্ষোভে সামিল হন।

bain

 

গ্রামাঞ্চলে পাণ্ডুয়া ব্লকের বৈঁচির কোঁচমালিতে যুব কমরেড পাভেলের নেতৃত্বে ছাত্রছাত্রীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্ল্যাকার্ড সহ শ্রমিক হত্যাকারী মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। বৈঁচি বাজারে পার্টি সদস্যরা প্রতিবাদী পোস্টার নিয়ে হেঁটে বেশ কিছুটা পথ পরিক্রমা করেন। সাঁচিতাড়ায় ক্ষেতমজুর কমরেডরা শ্রমিক হত্যাকারী মোদী সরকারকে ধিক্কার জানাতে ও সকলের রেশনের দাবিতে অবস্থান করেন। পোলবা-দাদপুরে ছাত্রী কমরেড অর্পিতা বাড়ি থেকেই পোস্টার সহ বিক্ষোভ দেখান। ধনিয়াখালির মল্লিকপুরে ক্ষেতমজুর, আদিবাসী ও যুব কমরেডরা রাস্তায় প্ল্যাকার্ড সহ বেশ খানিকক্ষণ অবস্থান করেন।

bala

 

বলাগড় ব্লকের বরাল গ্রামে কৃষিজীবি গ্রামবাসী সাথীরা প্ল্যাকার্ড সহ শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জেলার সর্বত্রই শারীরিক দূরত্ব যথাসম্ভব বজায় রেখেই প্রতিবাদ কর্মসূচীগুলো সংগঠিত হয়।

jal

উত্তরবঙ্গ

কোভিড-১৯-এ একদিকে অপরিকল্পিত লকডাউন, ভেঙে পড়া আর্থিক ব্যবস্থা --! অন্যদিকে পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন নিরুপায় হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে, হেঁটে চলেছেন নিজের নিজের জায়গায় পৌঁছাতে চাইছেন, সেসময় লকডাউনে চলছে একের পর এক গণহত্যা! বিশাখাপত্তনমের কারখানায় গ্যাস লিক-ঔরঙ্গাবাদে ট্রেনে পিষে শ্রমিকের মৃত্য কোনটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা দুর্ঘটনা না --! ধারাবাহিক গণহত্যা।

এরই প্রতিবাদে পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানে দেশের অন্যান্য জায়গার সাথে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি এবং রাঙাপাণিতে প্রতিবাদে সামিল হন পার্টি নেতৃত্ব ও কর্মীরা।

sili

 

শিলিগুড়ি : দার্জিলিং জেলা অফিসের সামনে প্ল্যাকার্ড ব্যানার কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন জেলা নেতৃত্ব এবং কর্মীরা। ঘটনার প্রতিবাদে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে সোচ্চার শ্লোগান। উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, পুলক গাঙ্গুলী, মোজাম্মেল হক, অপু চতুর্বেদী, মীরা চতুর্বেদী, দীনবন্ধু দাস, লক্ষ্মী দাস, শাশ্বতী সেনগুপ্ত, রুবী সেনগুপ্ত, ময়না সূত্রধর প্রমুখ।

ফাঁসিদেওয়া: ফাঁসিদেওয়া রাঙাপাণি স্টেশনের পাশে পবিত্র সিংহের নেতৃত্বে কালা দিবস পালিত হয়। উপস্থিত ছিলেন শরত সিংহ, পঞ্চা বর্মণ, পৈষানজু সিংহ প্রমুখ।

dhu

নদীয়া

মহারাষ্ট্রে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া ও অন্ধ্রপ্রদেশে গ্যাসকান্ডে মৃত্যুর প্রতিবাদে নদীয়া জেলায় গত ৯ মে বিভিন্ন কর্মসূচী সংগঠিত হয়।

kan

 

জেলা সদর কৃষ্ণনগর বাস স্ট্যান্ডে পোস্টার পতাকা নিয়ে প্রচার করা, বক্তব্য রাখা হয়। এআইসিসিটিইউ জেলা সভাপতি অমল তরফদার, নীহার ব্যানার্জী সহ শহরের অন্যান্য কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। ধুবুলিয়া পার্টি অফিসের সামনে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক সুবিমল সেনগুপ্ত, কাজল দত্তগুপ্ত সহ অন্যান্যরা। নপাড়া ২নং অঞ্চলের সোনাতলায় আয়ারলার পক্ষ থেকে অবস্থান কর্মসূচী সংগঠিত হয়। এতে স্থানীয় গ্রামীণ কর্মীরাও অংশগ্রহণ করেন।

gaf

 

গাছাবাজারে দাবি সম্মলিত প্ল্যাকার্ড-স্লোগান সহকারে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন জয়তু দেশমুখ, এলাকার পার্টি নেতা হবিবুর রহমান প্রমূখ। তাহেরপুরে প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন জীবন কবিরাজ, যোগেশ শিকদার সহ অন্যান্যরা। নবদ্বীপ শহরে এআইসিসিটিইউ ও রেল হকার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শহরের জনবহুল স্থানে স্লোগান ও বক্তব্যর মাধ্যমে প্রচার সংগঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন পরিক্ষিৎ পাল, নারায়ন দেবনাথ, দেবাশীষ সিংহ প্রমূখ।

kal

পূর্ব বর্ধমান

দেশজুড়ে ৯ মে বিক্ষোভ ও শোক দিবস পালন করার কর্মসূচীর অংশ হিসেবেই পুর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকে কর্মসূচী পালন করা হয় ।

pfs

 

কাটোয়া থানার সাহাপুর গ্রামে কমরেড স্বপন মণ্ডল এর উদ্যোগে শোক দিবস ও বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়। পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের ফলেয়া অফিসে এবং সিমলা গ্রামে কমরেড শিবু সাঁতরাও কমরেড সমীর বসাকের নেতৃত্বে শোক দিবস ও বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয় ।

man

 

মন্তেশ্বর ব্লকের কুলুট গ্রামেকমরেড আনসারুল আমন মন্ডলের উদ্যোগে শোক দিবস পালন ও বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়।বর্ধমান সদর ১নং ব্লকের কামারকিতা গ্রামের কমরেড সমীর হাজরার উদ্যোগে প্রতিবাদ ও শোক দিবস পালন করা হয়। বর্ধমান সদর ২নং ব্লক এর করন্দা গ্রামের সুকুমার সোমের নেতৃত্বে শোক দিবস পালন ও বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। বর্ধমান শহরের কমরেড রা কমরেড শ্রীকান্ত রানা ও কমরেড কুনাল বক্সীর উদ্যোগে শোক দিবস ও বিক্ষোভ সংগঠিত করেন।

shak

 

শক্তিগড়ে কমরেড ময়না চাটার্জী নিজের বাড়ির মধ্যেই কালো পতাকা উত্তোলন করেন। কালনা ২নং ব্লক-এর অকালপোষ অঞ্চলের কমরেড রফিকুল ইসলাম-এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ অবস্থান ও শোক দিবস পালন করা হয়। জেলা কমিটির সদস্য কমরেড প্রদ্যুত ঘোষ নিজের বাড়ির ছাদে কালো পতাকা উত্তোলন করেন।

budg

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

৯ মে বিশাখাপত্তনম গ্যাসলিক কান্ড ও ১৭ জন পরিযায়ী শ্রমিকের গণহত্যার বিরুদ্ধে বজবজের জামালপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচী সংগঠিত হয়। জামালপুর গ্রামে কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন পার্টির দঃ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক কমরেড কিশোর সরকার, কমরেড দেবযানী গোস্বামী, যুব নেতা কমরেড আশুতোষ মালিক, কমরেড রঞ্জন ঘোষ ও অন্যান্য সাথীরা। গ্যাসলিক কাণ্ডের দোষীদের অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে, মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এই দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।

এদিন বিকালে বজবজে দঃ ২৪ পরগণা জেলা অফিসে বিক্ষোভ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক কমরেড কিশোর সরকার, বজবজ শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক কমরেড অঞ্জন ঘোষ,কমরেড পঞ্চু মন্ডল,যুব নেতা কমরেড সেখ সাবির, কমরেড নন্দন সহ অন্যান্যরা।

bank

 

১০ মে বাখরাহাটে সিপিআই(এম)-এর সাথে যৌথভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচী হয়। বাখরাহাট বাজার থেকে সংক্ষিপ্ত মিছিল করে বাখরাহাট স্কুল মোড়ে এসে আধঘণ্টা বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচীতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা নেতা কমরেড দিলীপ পাল। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা কমিটির সদস্য কমরেড শুভদীপ পাল, লোকাল কমিটির সদস্য কমরেড সুনীত ধাড়া, কমরেড সন্দীপ ধাড়া, কমরেড মোমিন সেখ সহ আরো অনেকে।

jadv

কলকাতা

বিশাখাপত্তনমে গ্যাস লিকের ফলে বহু সাধারণ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং ঔরাঙ্গাবাদে ট্রেনের তলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের পিষে মারার বিরুদ্ধে গোটা দেশ স্তম্ভিত, শোকাহত ও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। এর বিরুদ্ধে পার্টি ও এআইসিসিটিইউ সারা দেশে শোক ও প্রতিবাদ দিবস পালন করে।

কলকাতায় বিভিন্ন স্থানে এই কর্মসূচী পালিত হয়। যাদবপুরে পাল বাজারে এই কর্মসূচীর শুরুতে এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। শ্লোগান ও শোক পালনের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচী শেষ হয়।

bans

 

বাঁশদ্রোণীর বেলতলায় এই কর্মসূচী পালিত হয়। এখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিকও সামিল হন। বেহালার কালিতলায় পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে শ্লোগান ধ্বনির মাধ্যমে পালিত হয় এই কর্মসূচী। টালিগঞ্জের পার্টি কমরেডরা শোক ও প্রতিবাদ দিবস পালন করেন আই ব্লকে। ভবানীপুরের কমরেডরা চেতলা ব্রীজের সন্নিকটে এই কর্মসূচী পালন করেন। এখানেও কয়েক জন নির্মাণ শ্রমিক সামিল হন।

এছাড়া, জিএসএফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ঔরঙ্গাবাদে রেলের চাকায় পৃষ্ট ১৬ জন, গ্যাস লিকের জন্য মৃত ১১ জন ও লকডাউন পর্যায়ে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ঘটনা গুলোর প্রতিবাদে সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার দিবস পালন।

খণ্ড-27