ওয়ার্ক ফ্রম হোম বনাম ওয়াক টু হোম এবং কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ
h19

দেশের সকল মোদি ভক্তরাই জানেন যে, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। ফলে গত মঙ্গলবার (১২ মে, ২০২০) রাত আটটায় (আবার মঙ্গলবার রাত আটটা! নোটবন্দির রাত আটটা, ঘরবন্দির রাত আটটা, সবই মঙ্গলবার) দেশের ‘প্রধান সেবক’ যখন জানালেন যে আমরা এক আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলব, ভারতে ‘অচ্ছে দিন’-এর কথা এখন অতীত, তখন বুঝলাম যে দারুণ কিছু ঘোষণা হতে চলেছে। এর আগে ২৪ মার্চ, মঙ্গলবার রাত আটটার ঘরবন্দির ঘোষণার পরে সবাই বুঝতে পেরেছিলাম যে, সর্বহারা শ্রমিক বলতে কী বোঝায়!  ‘একিশ’ বছর যাতে ভারত পিছিয়ে না যায়, সেই জন্যে ‘একিশ’ দিনের জন্য ঘরবন্দি থাকার আদেশ দেওয়া প্রধান সেবক ভুলেই মেরে দিয়েছিলেন যে, শহরগুলিতে কয়েক কোটি শ্রমিক আছে যাদের বন্দি থাকার মতো ঘরই নেই, আর পেট ভরানোর মতো কাজ ও খাবার থাকবে না ওই প্রধান সেবকের ঘরবন্দির আদেশের ফলে। সেই সব শ্রমিকের ধারাবাহিক অবাধ্যতা জানিয়ে দিল, এ দেশে দুটি ভারত আছে। এক ভারত ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছে অট্টালিকায় থেকে, আরেক ভারত ওয়াক টু হোম-এ চলেছে পুলিশের লাঠির আঘাত সহ্য করে। তাই আত্মনির্ভর ভারতের শ্লোগান দেওয়া প্রধান সেবকের কথায় ভাবলাম, হয়তো তিনি ওই সরকারের ঔদাসীন্যকে উপেক্ষা করে বাস ট্রেন না পেয়ে নিজেদের পায়ের উপর ভরসা করা প্রকৃত আত্মনির্ভর কোটি কোটি শ্রমিকের কথা বলছেন। কিন্তু ৩৫ মিনিটের বক্তৃতায় একবারও তিনি পরিযায়ী, অভিবাসী বা মাইগ্রান্ট শ্রমিকের কথা উচ্চারণ করলেন না, দুঃখ প্রকাশ করলেন না রেললাইনে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাণ দেওয়া ১৬ জন হাঁটতে থাকা শ্রমিকদের কথা, একবারও সেই ১২ বছরের ৩-৪ দিন হাঁটা ১২ বছরের শিশু শ্রমিক জামালো মাকড়ামের কথা উচ্চারিত হল না তাঁর মুখ থেকে। তবে শুনলাম সারা বিশ্বের এই অস্থির সময়ে শোকাবহ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তিনি ভারতকে একবিংশ শতকে শ্রেষ্ঠ বানাতে বদ্ধপরিকর। কোন রাষ্ট্রনায়ক যে সারা পৃথিবীর দু:সময়কে সুযোগ হিশেবে ভাবতে পারেন এই ভেভে আতঙ্কিত হয়েছি, কারণ তিনি আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ঘোষণা করলেন যে, ২০ লক্ষ কোটি টাকার আত্মনির্ভরশীল ভারত প্যাকেজ উপহার দেবে তাঁর সরকার। তবে সাসপেন্সে রাখলেন সকলকে, আগামী দিনে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করবেন সে প্যাকেজ। এও বললেন যে, ঘরবন্দির ৪র্থ পর্যায় চলবে। মানে, উনি যে ২১ দিনের কথা বলেছিলেন সেটা মিথ্যে তো আগেই প্রমাণিত হয়েছে, এখন সেটা ৫৪ দিনকে টপকে হয়তো ৭৪ দিনের পথে অগ্রসর হবে, সেবিষয়েও নির্দিষ্ট ঘোষণা পরে হবে। অর্থাৎ, ৩৫ মিনিটে যা জানা গেল, তা মিনিট পাঁচেকেই জানা যেত। যদি দেশের ২০ কোটি মানুষও ওই বক্তৃতা শুনে থাকেন তাহলে সেই হিসেবে ১০ কোটি মানব ঘন্টা বা, অন্তত ১ কোটি মানব দিবস নষ্ট হল। ন্যূনতম মজুরি হারেও যার মূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি। রাজার খেয়ালে এরকম কতই না নষ্ট হয়।

walk

 

এরপরে জানা গেল যে, অর্থমন্ত্রী ১৩ মে বিকেল ৪টের সময় ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ উন্মোচিত করবেন। তিনি ও তাঁর শাগরেদ, গোলি মারো শালোকো খ্যাত অনুরাগ সিং দ্বিভাষিক ছবির মত ঘোষণা করতে থাকলেন। তাঁরা এমএসএমই অর্থাৎ মাইক্রো, স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজের (অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) জন্য ৬টি ঘোষনা করলেন। প্রথমটি বেশ বড়সড় পরিমাণের। ৩ লক্ষ কোটি টাকার। তবে সরকার কিছু দেবে না, ব্যাঙ্ক ও অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নিকারি সংস্থাগুলি ৪৫ লক্ষ এমএসএমইকে তাদের বকেয়া ঋণের সীমার অতিরিক্ত ২০% জরুরি ঋণসীমা হিশেবে প্রদান করবে। যে সমস্ত সংস্থার ২৫ কোটি টাকা অবধি ঋণ আছে ও বিক্রির পরিমাণ ১০০ কোটি টকার মধ্যে তারা এই সুযোগ পাবে। ওই ঋণের সময়কাল ৪ বছর ও মূলধন পরিশোধের উপর ১২ মাসের মরেটোরিয়াম থাকবে। তবে সুদ ওই ১২ মাসেও দিতে হবে। অর্তমন্ত্রী বলেছেন, ৪৫ লক্ষ এমএসএমই এর ফলে উপকৃত হবে। তাহলে প্রত্যেক সংস্থা গড়ে ৬ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকার অতিরিক্ত ঋণসীমা পেতে পারবে। ওই সামান্য অর্থে সংস্থাগুলির দুরবস্থার কী সুরাহা হবে তা বোঝা গেল না। তবে এর জন্য সরকারের কোনো টাকাই খরচ হবে না। ব্যাঙ্কগুলিকে ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিতে হবে, তবে সরকার ওই ঋনের গ্যারান্টর হবে। দ্বিতীয় ঘোষণাটি হল, রুগ্ন এমএসএমইদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার অধস্তন ঋণ। যে সমস্ত এমএসএমই কর্মরত অবস্থায় এনপিএর অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য শেয়ারের বন্দোবস্ত করা হবে। ব্যাঙ্ক এমএসএমইদের ঋণ দেবে যা মালিক শেয়ারে রূপান্তরিত করবে। ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড ট্রাস্ট ফর মাইক্রো এন্ড স্মল এন্টারপ্রাইজেস (সিজিটিএমএসই) ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণের জন্য আংশিক নিশ্চয়তা প্রদান করবে। সরকার সিজিটিএমএসইকে ৪ হাজার কোটি টাকা দেবে। ফলে এই প্রকল্পে সরকারের খরচ ৪ হাজার কোটি টাকা। তৃতীয়ত, ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করা হবে যা এমএসএমইগুলিতে ৫০ হাজার কোটি টাকার শেয়ারের বন্দোবস্ত করবে। চতুর্থত, এমএসএমইর সংজ্ঞাতে পরিবর্তন এনে আগে যে সর্বোচ্চ সীমা ছিল ১০ কোটি টাকা যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ (পরিষেবা ক্ষেত্রে ৫ কোটি টাকা), তাকে বাড়িয়ে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ বা ১০০ কোটি টাকা অবধি বিক্রিতে পরিবর্তন করা হল। ফলে অনেক তুলনামূলক বড় সংস্থা এমএসএমই-তে পরিণত হবে। ফলে প্রথম বিষয় হিসেবে উল্লেখিত ৩ লক্স কোটি টাকাট ঋণের দাবিদার ারো অনেকে হবে। ফলে ওই ৬৬৭ হাজার ঋণের পরিমাণটিও কমবে। তবে এই চতুর্থ বিষয়টির জন্য সরকারের খরচ নেই। পঞ্চমত, এমএসএমইদের কাজের সুবিধের জন্য ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি টেন্ডারের জন্য গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হবে না। এর জন্য সরকারের খরচ নেই। ষষ্ঠত, এমএসএমইদের যোগানের জন্য দেয় অর্থ সরকার ও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলি ৪৫ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দেবে। এর জন্যেও কোন খরচ নেই। ফলে এমএসএমই খাতে সরকারের মোট খরচ ১৪ হাজার কোটি টাকাল তবে প্যাকেজে তাকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

namak

 

অর্থমন্ত্রী জানান, কর্মচারি ভবিষ্যনিধি খাতে (ইপিএফ)-এ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ের করমচারিদের জন্য নিয়োগকর্তা ও কর্মচারির প্রদেয় অর্থ আরো ৩ মাস, জুন-আগস্ট পর্যন্ত দেওয়া হবে। এরজন্য সরকারের ২,৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এছাড়া অন্যান্য কর্মচারিদের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা ও কর্মচারিদের বিধিবদ্ধ ইপিএফ দেয় ১২% থেকে কমিয়ে ১০% করা হবে ৩ মাসের, জুন-আগস্ট, জন্য। এর ফলে যেটি হল যে, কর্মচারিদের তহবিলে কম টাকা জমা পড়বে। ইপিএফ অবসরের পরে কর্মচারিদের ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তার জন্য তহবিল। তাকে এভাবে কমানো অবশ্যই কর্মচারি স্বার্থ বিরোধী। এর জন্য সরকারের কোনো খরচ নেই। কিন্তু দেখানো হচ্ছে যে, এর ফলে ৬৭৫০ কোটি টাকার নগদ যোগান বাড়বে। ফলে ইপিএফ খাতে সরকারের খরচ ২,৫০০ কোটি টাকা। তবে সরকারি প্যাকেজে তা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ৯, ২৫০ কোটি টাকা হিসেবে।

তিন নম্বরে এসেছে অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নি সংস্থা/গৃহ অর্থলগ্নি সংস্থা/অতিক্ষুদ্র অর্থলগ্নি সংস্থা র জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ নগদ সরবরাহ প্রকল্প। এক্ষেত্রে সরকার ওইসব সংস্তাকে বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহে সাহায্য করবে। তাদের ঋণকে সরকার নিশ্চয়তা প্রদান করবে। এর জন্য সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় নেই। নিম্ন মানের ঋণ মানের অনুরূপ অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নি সংস্থা/গৃহ অর্থলগ্নি সংস্থা/অতিক্ষুদ্র অর্থলগ্নি সংস্থার ৪৫ হাজার কোটি টাকার আংশিক ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্পে সরকারঋণপ[ত্রের ক্ষতির প্রথম ২০% র দায় বহন করার নিশ্চয়তা সরকার প্রদান করবে। এব্যাপারেও কোনো বযয় সরকারের তরফে নেই। ফলে অব্যাঙ্ক অর্থলগ্নি সংস্থা/গৃহ অর্থলগ্নি সংস্থা/অতিক্ষুদ্র অর্থলগ্নি সংস্থার জন্য সরকারের মোট ব্যয় শূন্য, এবং তাকে দেখানো হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকায়।

চতুর্থ এসেছে বিদ্যুত বণ্টন সংস্তাগুলিতে নগদ সরবরাহ। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রদেয় নিশ্চয়তার ভিত্তিতে ৯০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেবে পাওযার ফিনান্স কর্পোরেশন ও রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন কর্পোরেশন। এক্ষেত্রেও কোনো ব্যয় কেন্দ্রীয় সরকারের নেই। যদিও প্যাকেজে ৯০ হাজার কোটি টাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পাঁচ নম্বরে এসেছে, কন্ট্রাক্টরদের চুক্তির সময়সীমা ৬ মাস বাড়ানো ও তাদের কাজের সাপেক্ষে প্রদত্ত ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির আংশিক মুক্তি করে তাদের নগদ বাড়ানো। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু সময়সীমার ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। এবিষয়েও সরকারের কোনো খরচ নেই।

ষষ্ঠ বিষয় হিশেবে সুদ, পেশাগত ফি, চুক্তিগত প্রদেয় ইত্যাদি কয়েকটি বিষয়ের ক্ষেত্রে উৎস মূলে কর আদায়ের পরিমাণে বর্তমান হারের থেকে এক চতুর্থাংশ কম হারে কর আদায়ের কথা বলা হয়েছে। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী এর ফলে ৫০ হাজার কোটি টাকার নগদ সরবরাহ বাড়বে। তবে যেহেতু অগ্রিম করের হারে কোনো ছাড় দেওয়া হযনি তাই ওই পরিমাণটিও মনে হচ্ছে বাড়িয়ে দেখানো। তবে যাই হোক এক্ষেত্রেও সরকারের কোনো ব্যয় হবে না।

ফলে ১৩ মে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় আর্থিক প্যাকেজে সরকারের মোট ব্যয় ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, কিন্তু প্যাকেজ অনুযায়ী তার পরিমাণ ৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

dollar

 

এর আগে অর্থমন্ত্রী ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় সরকারের দাবি ছিল ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, যা আদতে বাজেট বহির্ভুত হিসেবে ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি নয়। এছাড়া করদাতাদের প্রাপ্য ১৮ হাজার কোটি টাকার কর ফেরতকেও কোভিড-১৯ এর জন্য সরকারি ব্যয় বলে দেখানো হয়েছে। জরুরি স্বাস্থ্য সাড়া হিসেবে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। ফলে সরকারের তরফে মোট ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়কে ২ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকা হিসেবে দেখানো হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে গৃহীত নগদ সরবরাহের বিভিন্ন প্রস্তাবে অনুমিত (তবে কার্যকরী হয়েছে এমনটা নয়) ৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৫০ কোটি টাকাকেও কোভিড-১৯ এর জন্য প্যাকেজ হিসেবে ধরা হয়েছে। সম্ভবত, রিজার্ব ব্যাঙ্কের আরো কিছু সাময়িক সুবিধে যেমন ইএমআইের ক্ষেত্রে মরেটোরিয়ামকেও ধরে পরিমাণটা ছয় লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে। ফলে এ পর্যায়ের প্যাকেজ ঘোষণার আগেই আট কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা হয়ে গেছে, সরকারি হিসেব অনুযায়ী। যদিও সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল সাকুল্যে এক লক্ষ পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী পূর্ববর্তী প্যাকেজসমূহ ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রদত্ত নগদ সুবিধেগুলি কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার অন্তর্ভুক্ত। ফলে ১৩ মে পর্যন্ত মোট ঘোষণা হয়েছে প্রায় চোদ্দ লক্ষ কোটি টাকার। যদিও তার জন্য সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে সাকুল্যে এক লক্ষ একুশ হাজার পাঁচশ কোটি টাকা। সরাসরি ভুখা কর্মহীন জনতার হাতে পৌঁছেছে একটি গ্যাস সিলিন্ডার (সর্বত্র নয়), পরিবার পিছু ১৫০০ করে টাকা (মহিলাদের জনধন হিসেব খাতায়, সকলের তা নেই), দিব্যাঙ্গ ও বয়স্কদের জন্য জনপিছু ১ হাজার টাকা, রেশন দোকান মারফত কিছু চাল ডাল (বন্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় স্তরেই অকর্মণ্যত, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ)। অভিবাসী বা পরিযায়ী বা মাইগ্রান্ট শ্রমিকদের জন্য কোন ঘোষণা এখনো পর্যন্ত হয়নি। তাঁরা এখনো বিপুল সংখ্যায় শহরগুলিতে রেল স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের জন্য হাপিত্যেস করছেন। কোনো প্যাকেজের স্তোক বাক্যের বদলে তাদের জন্য যদি একটি ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয় তাঁরা অন্তত পরিবার পরিজনের কাছে ফেরতে পারেন। ওযার্ক ফ্রম হোমের বিলাস তাঁদের জন্য নয় তা তাঁরা জানেন, ওয়াক টু হোমের স্বাধীনতাও তাঁদের নেই, একটি ট্রেনের টিকিট তাদের দাবি। ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে ১০০ কোটি টাকার বিক্রির বা ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সংস্থার শ্রীবৃদ্ধি হোক কিন্তু শ্রমিকদের নিজ ভূমে ফেরার ব্যবস্থাকে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না কি?

সব শেষে একটি কথা; প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভরতার জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা ঘোষণা করেছেন। সরকারী খাজানা থেকে ২০ কোটি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের কাছে পরিবার পিছু ১ লক্ষ টাকা পৌঁছে দিন তাঁদের ব্যাঙ্ক হিসেবে, তাঁদের খরচের জন্য, যে চাহিদা অর্থনীতিতে তৈরি হবে তার দ্বারাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব এই কোভিড-১৯ সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট।

-- অমিত দাশগুপ্ত

খণ্ড-27