শ্রমিকদের সমস্যাগুলো সমাধান করার বদলে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক শ্রমে নিক্ষিপ্ত করতে শ্রম মন্ত্রক সুপারিশ করছে
aicctu

৬ মে, ২০২০ কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বৈঠক হয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর তরফ থেকে উত্থাপিত বিষয়গুলোর প্রতি শ্রম মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ও মনোভাবের তীব্র নিন্দা করছে এআইসিসিটিইউ। বিগত ৪৫ দিন ধরে লকডাউন চলাকালীন শ্রমিকরা যে সমস্ত সমস্যার মুখে পড়ে তা বৈঠকে সামনে আনা হয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে।

ইউনিয়নগুলো জানায় যে, লকডাউনের পর্যায়ে মজুরি প্রদান, ছাঁটাই বা মজুরি হ্রাস না করার যে নির্দেশিকা শ্রমমন্ত্রকের তরফ থেকে জারি করা হয়েছিল তাকে বিন্দুমাত্র আমল দিল না নিয়োগকর্তারা। লকডাউন পর্যায়ের মজুরি প্রদানের পাশাপাশি ঐ নির্দেশিকাকে পুরোপুরি কার্যকর করতে শ্রম মন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়। বিপুল সংখ্যক অসংগঠিত শ্রমিক ও গরিব মানুষ রেশন সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র পাচ্ছেন না, তা মন্ত্রীর গোচরে আনা হয়। ইউনিয়নগুলো বিশেষ জোর দেয় আটকে পড়া লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিকের তীব্র দুর্দশার প্রতি, তাঁদের উপর নেমে আসা পুলিশী বর্বরতার ঘটনা এবং নিখরচায় ও নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে আনার বিষয় গুলোর উপর।

সম্প্রতি কোভিড-১৯-এর পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র সরকার ও বেশ কিছু রাজ্য শ্রমিকদের অধিকারকে ছিনিয়ে ১২ ঘণ্টার শ্রমদিবস চালু করছে, শ্রমকোড ও বেসরকারীকরণকে এগিয়ে নিয়ে বর্তমান আর্থিক সংকটের গোটা বোঝাটাই শ্রমিক কর্মচারিদের উপর চালান করে ডিএ ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ সুবিধাগুলো হ্রাস করছে, কেটে নিচ্ছে একদিনের মজুরি ও বেতন, নানান নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের উপর বসাচ্ছে নতুন নতুন কর। শ্রমিকদের দুর্দশা ঘোচাতে ইউনিয়ন গুলো “পিএম কেয়ারস” তহবিল থেকে খরচ করার দাবি জানায়।

ইউনিয়নগুলো বিভিন্ন সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীদের, বিশেষ করে স্বাস্থ্য কর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করে, যারা নিজেদের স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করার ঝুঁকি নিয়ে কোভিড১৯-এর সংকটে দেশের কাজে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন।

migrant

 

কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, ইউনিয়নের তোলা এই সমস্ত নানা বিষয় ও দাবি সম্পর্কে শ্রমমন্ত্রী একটা শব্দও খরচ করলেন না। ফলে, গোটা বৈঠকটাই পর্যবসিত হল তামাশায়। সবচেয়ে আপত্তিকর বিষয় হল, বিভিন্ন রাজ্যে গত ৪৫ দিন ধরে অভুক্ত ও দুর্বিষহ অবস্থায় আটকে থাকা অভাবগ্রস্থ পরিযায়ী শ্রমিকদের সেই সমস্ত রাজ্যের আর্থিক পুনরুজ্জীবনের কাজে আবার ফেরত পাঠাতে শ্রম মন্ত্রীর সুপারিশ। তিনি আরও একধাপ এগিয়ে, এ প্রশ্নে ইউনিয়নগুলোর সাহায্য চেয়েছেন যাতে ঘরে না ফিরে পরিযায়ী শ্রমিকরা ঐ কাজে নিজেদের যুক্ত করেন।

আরও লজ্জাজনক বিষয় হল, তিনি জানান, পরিযায়ী শ্রমিকরা যেন করোনা ভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হন। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে মৃত্যুর হার অনেক কম। যখন এই মুহূর্তের প্রয়োজন করোনাকে মোকাবিলা করে মানুষকে বাঁচানো ও সকলের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়া, তখন এই সমস্ত পরস্পর বিরোধী, ক্ষতিকারক যুক্তি হাজির করে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক শ্রমে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে কর্পোরেটদের মুনাফাকে সুনিশ্চিত করতে। এই মনোভাব দেখিয়ে দেয়, লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় শ্রমিকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার বদলে সরকার বরং নিজের দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, “পিএম কোন আমলই” দিচ্ছেন না। সরকারের এই মনোভাবকে আমরা তীব্র নিন্দা করছি, যা সম্মিলিত প্রতিবাদের দাবি জানায়।

রাজিব ডিমরি
সাধারণ সম্পাদক। ৬ মে, ২০২০

খণ্ড-27