মানুষ মানুষের জন্যে – যাদবপুর-ঢাকুরিয়া
jdvp

নাম শম্পা নস্কর। পেশা আয়া-র কাজ। বাড়ি ১০৬নং ওয়ার্ডের সাঁপুইপাড়া এলাকায়। সিপিআইএমএল-এর যাদবপুর-ঢাকুরিয়া লোকাল অফিসে এসেছিলেন লকডাউনের সময় কিছু সাহায্যের আশায়। তার হাতে খাদ্য-সমগ্রীর প্যাকেট তুনে দেওয়ার পরে বললেন তার এলাকায় আরো মানুষ রয়েছেন, যাদের এই সাহায্যের প্রয়োজন। তারপর নিজেই এলাকার সমস্ত বাড়ি ঘুরে ৪০/৫০ জনের তালিকা তৈরি করে, খাদ্যসামগ্রীর কুপন তুলে দিলেন পার্টি কর্মীদের সাহায্যে, তাঁর এলাকার গরিব মানুষের হাতে। স্থানীয় একজন ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নিজে পার্টি-অফিসে এসে কয়েক হাজার টাকা দিলেন গরিব মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এই রকম বহু মানুষ এগিয়ে এসে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

এই ভাবেই পার্টির বাইরের অসংখ্য মানুষের সহযোগিতায় ও পার্টি কর্মীদের মাধ্যমে যাদবপুর-ঢাকুরিয়া এলাকায় লকডাউনের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৮০০-র বেশি পরিবারের হাতে সাধ্যমত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।এই কাজে হাত লাগিয়েছিলেন পার্টি অফিস সংলগ্ন বেশ কিছু দোকানদার, রিক্সা চালক, সহ-নাগরিক, লকডাউনে গরিব মানুষের দূর্দশা, যাদের ব্যাথিত করেছিল, অনুভব করেছিলেন তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। খাবার প্যাকেট করা, লাইন ঠিক করা, কুপন পৌঁছে দেওয়া, খাবার হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত সব কাজই করেছেন, পার্টি কর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে।

গাঙ্গুলিপুকুরে লোকাল কমিটির অফিস থেকেই সমস্ত কাজ পরিচালনা হয়েছে। সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ১০৫নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর এই কাজ বন্ধ করার জন্য চাপ তৈরি করেছিলেন, থানার মাধ্যমে। কিন্তু সমস্ত বাধা অতিক্রম করে এখনও এই উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। ১০৪, ১০৫, ১০৬, ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের কাছে এই সাহায্য পৌঁছে দিতে পেরে, কার্যত আপ্লুত পার্টি-কর্মীরাও। গড়িয়া, সন্তোষপুর ও বাঘাযতীনে আটকে পড়া বেশ কিছু কাশ্মীরী মানুষের কাছেও সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হয়। এলাকার ছাত্র কমরেডদের উদ্যোগে গান্ধী কলোনী, বিজয়গড়, নেতাজি নগরেও ১০০-র বেশি মানুষের বাড়িতে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হয়, পৃথকভাবে।

স্থানীয় মানুষ, পার্টি কর্মী-সমর্থক, পার্টি কর্মীদের বন্ধুদের কাছ থেকে অকুণ্ঠ অর্থনৈতিক সাহায্য পাওয়া গেছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি অর্থ সংগ্রহ করে, এই কাজ চলছে। পার্টি কর্মী তমাল, রানা, স্বপন বিশ্বাস, রনজয়, ঋতম, মানস ঘোষ, নান্টু হোড়, অমলেন্দু চৌধুরী, সুশান্ত দেবনাথ, শুভ, অভিজ্ঞান, ঋত্বিক, অরিত্রা, বাপি, বাদল, সঞ্জয়, বাবুন চ্যাটার্জী ও আরও অনেকের যৌথ প্রচেষ্টায় এই কাজ সম্ভব হয়েছে। এই কাজের অভিজ্ঞতা স্থানীয় পার্টি-কর্মীদের অবশ্যই অনেকটা নতুন অনুপ্রেরণা দেবে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক-সামাজিক কাজে।

garfadha

গত ১২ মে সন্ধ্যায় কমরেড বাবুন চ্যাটার্জির ওপর হামলা হয়। তিনি যাদবপুর এরিয়া পার্টি কমিটির সেক্রেটরি। গত দেড়মাস যাবৎ শহীদনগর পার্টি অফিসকে কেন্দ্র করে তাঁর নেতৃত্বে আসপাশের চারটি ওয়ার্ডে লকডাউন-বিপন্ন মানুষের মাঝে খাবার প্যাকেট বিতরণের কাজ চলছে। প্রায় দুহাজার পরিবারের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এই পর্বে। এই উদ্যোগে সামিল হন এলাকার অনেক সাধারণ মানুষ। যাদের কিছু দেওয়ার ক্ষমতা আছে তাঁদের অনেকেই এগিয়ে এসে অর্থ সাহায্য করেন। অন্যদিকে যাদের নেওয়ার দরকার আছে তাঁরা নিজেরা ফুডপ্যাকেট নেওয়ার সাথে সাথে একই অবস্থায় থাকা অন্য মানুষদের যোগাযোগ করে লিস্ট বানিয়ে এনে উদ্যোগে সামিল হন। এইভাবে এক সামাজিক সংহতি ও সহমর্মিতার পরিবেশ গড়ে উঠছিল। রাজ্যের শাসক দলের তা পছন্দ নয়। আসলে মুখ্যমন্ত্রী অনেক ভালো ভালো কথা বললেও সার্বজনীন ও পর্যাপ্ত রেশনের অভাবে খাদ্য সংকট গভীর হয়েছে। আর, নিরন্ন বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তেমন উদ্যোগ নিতেও টিএমসির স্থানীয় নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছে না। বরং বিভিন্ন মাত্রার দূর্ণীতির কথাই বেশি শোনা যাচ্ছে। সিপিআই(এমএল)-এর ধারাবাহিক ও আন্তরিক সামাজিক সংহতি কর্মসূচী সরকার ও শাসকদলের কথা ও কাজের মধ্যে বিরাট ফারাককে সাধারণ মানুষের সামনে নীরবে প্রকট করে তুলছিল। টিএমসি এই উদ্যোগ বন্ধ করার বিভিন্ন চেষ্টা করে। হুমকি দেয়। পুলিশি অসহযোগিতা শুরু হয়। শেষে শারীরিক হামলার আশ্রয় নিল।

garf

 

কলকাতার বাইরেও বেশ কিছু ত্রাণকার্যের ওপর শাসকদলের বিভিন্ন মাত্রার আক্রমণ ও বাধা দানের খবর আছে। কমরেড বাবুন চ্যাটার্জির ওপর হামলার রাতেই গড়ফা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু পরদিন সকাল পর্যন্ত পুলিশকে কোনো উদ্যোগ নিতে না দেখা যাওয়ায় পার্টি কর্মী ও সমর্থকেরা থানার সামনে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখান। ডেপুটেশন দেওয়া হয়। স্থানীয় সিপিআই(এম) ও আরএসপি দলের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধিরা ডেপুটেশন দেন। পুলিশের কাছে দাবি করা হয় অবিলম্বে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার। জানিয়ে দেওয়া হয় যে ত্রাণকার্য যেমন চলছিল সেরকমই চালিয়ে যাওয়া হবে, আত্মরক্ষার অধিকার সকলেরই আছে। এলাকায় আরও অশান্তি আটকাতে পুলিশের উচিৎ দুস্কৃতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এই হামলা নিছক এক ব্যক্তির ওপর নয়, বরং এলাকায় পারস্পরিক সহযোগিতার ত্রাণ কর্মসূচীতে অংশ নেওয়া সমস্ত মানুষ তথা তালাবন্দিতে বিপর্যস্ত মানুষের ওপর হামলা।

খণ্ড-27