খবরা-খবর
পোলবা-দাদপুরে ঋণমুক্তির দাবিতে এবার পথে নামলেন গ্রামীণ মানুষ
pol

নাম হরেকরকম। সবার সুদের ব্যবসা। মাইক্রো ফাইন্যান্স জাল বিছিয়েছে পশ্চিম বঙ্গের প্রতিটি জেলার প্রতিটি গ্রামের প্রতি পাড়ায়। আশীর্বাদ মাইক্রো ফাইন্যান্স, এলএনটি ফাইন্যান্স, বন্ধন, উজ্জীবন, ভিলেজ, জানা স্মল ফাইন্যান্স, সমস্তা, এসকেএস, স্বতন্ত্র মাইক্রো ফাইন্যান্স, ভেদিকা ক্রেডিট ক্যাপিটাল, গ্রামশক্তি ফুলটন ইন্ডিয়া, শার্টিল ক্রেডিট কেয়ার এদের সবারই রমরমা ব্যবসা।

বাধ সেধেছে লকডাউন। তার উপর আমফানের ধাক্কা। গ্রামের মানুষ ঋণ নিয়েছিলেন রাজ্যের বাইরে কর্মরত ছেলেদের পাঠানো উপার্জনের ভরসায়। সে টাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ হবে। কিন্তু এখন সে রাস্তা বন্ধ। কেউ বা লোন নিয়ে চাষে লাগান। আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত খেত। ধান, সব্জি, তিল, আম, কলা সব ফসলের দফারফা। সংসার চালানোই দায়। কোনো ক্ষতিপূরণও মেলেনি। ঋণ শুধবেন কিভাবে? সরকার বলেছে, লকডাউনের সময় কিস্তি আদায় করা চলবে না। কিন্তু মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানি ছাড়ছে কৈ? নিয়ম করে চলছে হুমকি তাগাদা। সব মিলিয়ে দিশেহারা মানুষ।

pol

 

লকডাউনের আগেও গ্রামীণ অর্থনীতির হাল ভালো ছিল না। ফসলের দাম না থাকা, নোট বাতিল, কাজের অভাব ইত্যাদি নানা কারণে ভুগছিল গ্রাম। তবুও কোনোরকমে ঋণ পরিশোধ চলছিল। লকডাউনের শুরু থেকেই মাইক্রো ফাইন্যান্স নিয়ে আমরা নিয়মিত প্রচার চালাতে থাকি। ইতিমধ্যে আইপোয়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ঋণমকুবে সর্বভারতীয় দাবি দিবস পালনের ডাক দিলে পোলবা দাদপুরের আমনান অঞ্চলের ঋণগ্রস্ত মানুষের ডাক দেওয়া হয়। দেখা যায় মরিয়া মানুষ বড় সংখ্যায় যোগ দিলেন অবস্থানে। কিন্তু পরিস্থিতি কেবল ‘দাবি দিবসে’ সীমায়িত ছিল না। দাবি দিবস পালনের দিনেই আমরা স্থির করি এই মহাজনী পুঁজির দৌরাত্ম্য কোন অবস্থাতে পৌঁছেছে, তা আরো স্পষ্ট বুঝতে ফর্মের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। সরকারের সাথে ঋণ মকুবের দাবিতে লড়তে গেলেও তথ্য নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। সেইমতো সেদিনই জমা পরে কয়েকশো মানুষের ঋণ সংক্রান্ত বিবরণ। পরবর্তী কয়েক দিনই বিডিও অফিসে দলে দলে মানুষ আসতে থাকেন ঋণ মকুবের দাবিতে।

এই পরিস্থিতিতে ৮ জুন আবার আরো বড় আকারে বিডিও ডেপুটেশনের ডাক দেওয়া হয় ইতিমধ্যে গড়ে ওঠা লকডাউন ও আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের সংগঠন ঋণমুক্তি কমিটির ব্যানারে। ৮ জুন পোলবা বিডিও মাঠের চতুর্দিকে যারা জড়ো হয়েছিলেন; এদের সমস্যা শুধু নিত্যদিনের খাদ্য বা রেশন, করোনা কিংবা আমফানের ধাক্কায় জমির ফসলহানি, ভাঙ্গাচোরা ঘর ইত্যাদিই নয়, এসব ছাড়াও এদের খুবই বড় উদ্বেগ ঋণ সম্পর্কিত। শুধবেন কিভাবে!! ঋণ মুক্তির পথ কি?

সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা ভেবেই আমরা ডাক দিয়েছিলাম-বলা হয়েছিল প্রতিটি গ্রুপের সকলে (১০/১৫ জন থেকে ৮০/৯০ জন) নয়, কোভিডের সংক্রমণ বিষয়টি মাথায় রেখে প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে ২ জন চলে আসুক পোলবা-দাদপুর বিডিও অফিসের মাঠে। পৌঁছাতে হবে বেলা ১টায়। প্রথমে আলোচনা হবে। শেষে বিডিও মারফত মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি পাঠানো হবে। দেখা গেল বেলা ১ টার আগেই ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকাগুলি থেকেও চলে এসেছেন কয়েকশো মানুষ। বেলা ২টার মধ্যে জমায়েত ২/৩ হাজারের!

dadpur

 

শুরুতেই আমরা তুলে ধরি আমাদের শ্লোগান, শিল্পপতিদের যদি লোন মকুব হয়, রাইট অফ হয়, বেল আউট হয়, সংকটে নানা ছাড় হয়; তবে এই লকডাউন-আমফান পর্যায়ে গরিবের ঋণমুক্তিতে কেন সরকার ভূমিকা রাখবে না? সব সরকার দাবি করে তারা “আম আদমি”র সরকার। তবে ঋণগ্রস্ত মানুষের দাবি কেন শুনবে না সরকার। আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে তুলে ধরে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা, সমবেত মানুষের কাছে জানতে চাইলে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে হাত তুলে সম্মতি প্রদান করলেন সকলেই।

৯ জুন থেকে শুরু হচ্ছে আন্দোলনের নতুন উদ্যোগ-মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রত্যেক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিঠি-ঋণমুক্তির আবেদন সহ। ৮ তারিখে প্রিন্ট করে নিয়ে যাওয়া কয়েকহাজার পোস্টকার্ড ফুরিয়ে গেল নিমেষে। একই সাথে চলছে এলাকায় এলাকায় ঋণমুক্তি কমিটির শাখা গঠনের কাজ। আন্দোলন চলার মাঝে ২/৩ ভ্যান পুলিশ ঢোকে সংক্রমণ ছড়ানোর অজুহাতে আন্দোলন ভাঙ্গতে, ঢোকেন জেলা পরিষদের বড় নেতা। জয়েন্ট বিডিও-কে এগিয়ে দেওয়া হয় বলতে যে এই আন্দোলন ভাঁওতা মাত্র। তিনি চেষ্টা করেন আমাদের বিরুদ্ধে সমবেত মানুষকে দাঁড় করাতে। কিন্তু ব্যর্থ হলেন।

polba

 

সমস্ত প্ররোচনা নস্যাৎ করে শেষে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা স্মারকপত্র বিডিও-কে জমা দিয়ে বাড়ি ফিরলেন পাগান মুর্মু, গোপাল রায়, শৈলেন মাজি, সোমা রায়, সজল দে, সজল অধিকারীরা। তাঁদের সাথেই সমান তালে নেতৃত্ব দিলেন সাথী সম্রাট, নন্দলাল জাহাঙ্গীর, হারু রায়, নীলিমা পালের মতো গণ আন্দোলনের একদল সম্ভবনাময় নেতৃবৃন্দ।

৯ জুন সকালে হুমকি ফোন করেন গোস্বামী মালিপাড়ার এক তৃণমূল নেতা। ওঁদের বক্তব্য স্পষ্ট; লোন নিয়েছে; শোধ করতে হবে যেকোনো প্রকারে! এসব ওঁরা বরদাস্ত করবেন না। এই ফোন আসার আগে ও পরে প্রায় সারাদিন ধরে ফোন আসে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এবং এখনো পর্যন্ত অংশ নেননি এমন অনেক মানুষের, যাঁদের বক্তব্যও পরিষ্কার; শিল্পপতিদের যদি বারংবার ঋণ মকুব হতে থাকে, তবে গ্রামীণ দরিদ্রদের কেন ঋণমকুব হবে না!! লড়বো আমরা, জিতবো আমরা।

লকডাউন সম্ভবত এমন এক অভিজ্ঞতা, যা চিনিয়ে দিচ্ছে অনেককিছু। জনপ্রতিরোধের মুখে ব্যাঙ্কারে ছুটতে হয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ট্রাম্পকেও! নতুন পৃথিবীর এই দিনবদলের গান যেন শুনি পোলবার মাটিতে। সাথী, কোনদিক বেছে নিবি বল –

-- সজল অধিকারী  

dhapeo

ধনেখালিতে আন্দোলনরত জনগণের জয়। অনশনস্থলে উপস্থিত হলেন পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসের কর্মকর্তারা। দু-এক দিনের মধ্যে শুরু হবে ১০০ দিনের কাজ, জয়হরিপুরে। একাংশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে পারিবারিক জবকার্ডে। নতুন জবকার্ডের জন্য বাকিদের তালিকা দেওয়া হল প্রশাসনকে।

jou
খণ্ড-27