চলুন ভারতবর্ষে যাই
gga

মানেটা কী? “সারে যাঁহাসে আচ্ছা ....” এ তো গান, বহু বার শোনা দিকপাল সব শিল্পীদের কণ্ঠে। তারান্নুমের কণ্ঠে শুনেছেন? সেটা কে? তারান্নুম পারভীন, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ওকে গান শোনাতে বলায় বললো যে এই একটাই নাকি গান ওর মুখস্থ! এক নিঃশ্বাসে গেয়ে ফেললো! আচ্ছা ওকেও কি দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট নিতে হবে তাদের থেকে? যারা কিছুদিন আগেই (১২ মে) ওদের সব সম্বল ভেঙে গুঁড়িয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে! উচ্চমাধ্যমিক এখনও শেষ হয়নি, তারান্নুমদের এডমিট কার্ড সহ সব জরুরি নথি পুড়ে ছাই!

ছাত্র সংগঠন আইসা (এআইএসএ)-র তরফ থেকে গত ১২ জুন ওকে আর ওর মতোই ছাত্রছাত্রীদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভদ্রেশ্বর থানায় ডায়েরী করাতে, এরপরে যেতে হবে শিক্ষাদপ্তরে ... যদিও ঘরবাড়ি হারিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের থেকেও জীবনের অনেক বড় পরীক্ষা দিয়েই ফেলেছে ওরা! আইসা ও এআইপিএফ ওদের জন্য কিছু জামাকাপড়ের ব্যবস্থাও করেছে কারণ প্রাণ বাঁচাতে এক কাপড়ে ঘর ছাড়তে হয়েছিল ওদেরকে, আশ্রয় শিবিরে সেই পোষাকেই দিনের পর দিন কাটানো!

জীবনের পরীক্ষা খুশিরাও দিচ্ছে, গোঁদলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক মহল্লায়। কারখানা বন্ধ ছিলই, তার উপর প্রতিদিন মালিকপক্ষ বিদ্যুতের লাইন কেটে দিতো লেবার লাইনে! গরমে, আলোর অভাবে পড়তে পারতোনা খুশি, রাজ, রোহনরা ... আইসা লড়াই করে ফিরিয়েছে বিদ্যুত, এখন মোটামুটি সারাদিন কারেন্ট থাকে ... আইসার ফ্রি কোচিং ক্যাম্পে পড়ে ওরা ... লক ডাউনের মধ্যে সবাই যখন আরো কষ্টে তখন এলাকায় নানা ছুঁতোনাতায় অশান্তি লাগালো আরএসএস, বিজেপি ... মানুষে মানুষে কী তীব্র ঘৃণা, কী বিদ্বেষ! ... তেলিনিপাড়ার নাম শুনলে আঁতকে ওঠে খুশিরা আর গোঁদলপাড়ার নাম শুনলে সন্ত্রস্ত তারান্নুমরা! এই পরিস্থিতিতে আরএসএসের লক্ষ্য ছিল পালানো, যা তাদের অভ্যাস – স্বাধীনতা সংগ্রাম ছেড়ে পালানো, দাঙ্গা লাগিয়ে, মানুষ খুন করে পালানো!

dee

 

আর আইসার ইচ্ছা ছিল মেলানো, এক বৃন্তের দুটো কুসুমকে আবার কাছাকাছি আনা ... খুশি প্রথমে একটু থমকে যায়, তারপর দুর্দিনের সাথী আইসার কমরেডদের দেখে বৃষ্টির মধ্যেও এক ছুটে চলে এলো তেলিনিপাড়ার দিকে ... পাইকপাড়ার যে আশ্রয় ক্যাম্পে সাবানা, শাহিদ, তারান্নুমরা আছে সেখানে এসে অজানা ভয় কাটিয়ে সামনে থেকে দেখলো ওদেরকে প্রথমবার ... শারীরিক দূরত্ব রেখেও লাজুক হাসির যে বন্ধুত্বের সেতুটা তৈরি হচ্ছিল সমবয়সী ফুলগুলোর মধ্যে সেই সেতুই চলে গেছে বিনোদ মিশ্রের মতো আরো অনেকের স্বপ্নের ভারতবর্ষের দিকে ... এখন আশা করি বোঝা গেল শুরুর ঐ কথাটার মানে!

সংযোজন :

ddaedep

১৮ জুন, চন্দননগর মহকুমা শাসকের কাছে দাবিপত্র জমা দিলেন দাঙ্গাবিধ্বস্ত তেলিনিপাড়ার ছাত্রছাত্রীরা। সংগঠিত দাঙ্গায় যে কেবল তাঁদের বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে তাই নয়, বাড়ির সমস্ত কাগজপত্র টেনে বের করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় শিবিরে আছেন এখন তাঁরা। অনেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড সহ সমস্ত ডকুমেন্ট, বইখাতা, স্কুলড্রেস পুড়ে গেছে দাঙ্গার আগুনে। গত সপ্তাহে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। আজ মহকুমা শাসকের কাছে দাবি জানানো হয় : পড়াশোনা চালানোর জন্য এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের অবিলম্বে ১০,০০০ টাকা করে সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে, অবিলম্বে অ্যাডমিট কার্ড সহ সমস্ত ডকুমেন্টের ডুপ্লিকেট কপি তৈরি করে দিতে হবে, বই খাতা স্কুলড্রেস সহ সমস্ত সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে এবং যাবতীয় ফি মকুব করতে হবে, আশ্রয় শিবিরে ইলেক্ট্রিকের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে পরিবার সহ তাঁরা যাতে নিজের বাড়িতে ফিরে নির্ভয়ে বসবাস ও পড়াশোনা করতে পারে তার বন্দোবস্ত প্রশাসনকে করতে হবে, করোনা স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত মাস্ক গ্লাভস ইত্যাদি সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। আইসা ও এআইপিএফের পক্ষ থেকে ধারাবাহিকভাবে এই লড়াই চলছে। আইসার পক্ষ থেকে সৌরভ রায় জিনিয়েছেন যে এই ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই তথাকথিত ‘প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী’ এবং চটকলের শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়ে হিসেবে এমনিতেই প্রতিকুল আর্থিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে পড়াশোনা চালাতে হয় তাঁদের, বর্তমানে একে তো করোনা-লকডাউন এবং তদুপরি এই সংগঠিত দাঙ্গায় তাঁদের শিক্ষার অধিকার লুট হয়ে যেতে বসেছে, সরকারের প্রথম কর্তব্য হল এইসব ছাত্রছাত্রীর শিক্ষার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা

– সৌরভ 

খণ্ড-27