পরিযায়ী শ্রমিক: গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহ এবং আশু করণীয় কাজ
miggr

১। সচলতা এবং স্থানান্তর গমন সর্বদাই শ্রমিক শ্রেণীর গঠন ও বিকাশের অপরিহার্য বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। গ্ৰাম থেকে শহর, শহর থেকে নগর ও মহানগর – শ্রমিকরা সর্বদাই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন এবং নতুন স্থানের শ্রমিক হয়ে উঠছেন। স্থানান্তর গমনের নানা ধরন ও স্তর রয়েছে যেগুলোকে দূরত্ব ও স্থিতিকালের ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করা যায় : আন্তঃজেলা, আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্দেশীয় পরিযান, মরশুমি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিযান, ইত্যাদি। কিন্তু, পরিযায়ী শ্রমিকদের সর্বব্যাপী উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা প্রধানত লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে গেছে। বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় (উদাহরণস্বরূপ, বিমুদ্রাকরণ বা অর্থনৈতিক মন্দা) অথবা সামাজিক সংঘাতের সময়ই (পরিযায়ী শ্রমিকদের যখন নিজেদের কাজের এলাকায় সংকীর্ণতাবাদ প্রসূত হিংসার মুখোমুখি হতে হয়) আমরা কেবল তাদের উপস্থিতির টের পাই। তবে, মোদীর সম্পূর্ণরূপের পরিকল্পনাহীন এবং নির্মম লকডাউন লোকচক্ষুর অন্তরালে চাপা দেওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের সামাজিক বাস্তবতাকে হাট করে খুলে দিয়েছে। মোদী সরকার এবং দ্রুত উন্নয়ন ও সুশাসন সম্পর্কে তার যাবতীয় শূন্যগর্ভ বাগজালের সামনে তারা এক বিস্ফোরক আখ্যান রূপে ফেটে পড়েছে। স্থানান্তর গমনের ব্যাপারটা লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটলেও বিপরীতমুখী পরিযাণ গোটা দেশকেই ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।

mig

 

২। কর্মস্থল ছেড়ে শ্রমিকদের দলে-দলে ঘরমুখী অভিযান লকডাউনের আপাদমস্তক পরিকল্পনাহীন ও স্বৈর চরিত্রকে চূড়ান্তরূপে উন্মোচিত করেছে। উন্নয়নের কর্পোরেট চালিত মডেলের মধ্যে নিহিত বিপর্যয়ের বাস্তবতা এখন প্রকট হয়ে সামনে এসেছে। আরও বুনিয়াদি একটা স্তরে এটা রাষ্ট্রের স্বরূপকেও অনাবৃত করে দিয়েছে। সরকার যখন লকডাউন ঘোষণা করল এবং আমাদের “ঘরে থেকে কাজ করুন”-এর মন্ত্র বিতরণ করল, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, সেই ব্যাপক সংখ্যক ভারতবাসী সম্পর্কে তার কোনো ভাবনাই ছিল না যাদের না আছে ঘর (অবশ্যই সেই ধরনের ঘর যেখানে দূরত্ব বিধি এবং স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যান্য নিয়মকানুন মেনে চলা সম্ভব) আর না আছে কাজ (অবশ্যই এমন ধরনের কাজ যা ঘরে থেকে করা যায়)। এটা যদি চরম হৃদয়হীনতার পরিচায়ক হয়ে থাকে তবে শ্রমিকরা যে ঘরে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তা সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যা ঘটল সেটা পুরোদস্তুর নির্মম ও অমানবিক বলেই প্রতিপন্ন হল। শ্রমিকদের ফেরাতে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের এক মাসেরও বেশি সময় লেগে গেল আর এখন তো ট্রেনগুলোই এক কলঙ্কের ব্যাপার হয়ে উঠেছে, কেননা, রেল কর্তারা নিজেরাই শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনগুলোতে ৮০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। ভারতে লকডাউন জনিত মৃত্যুর সংখ্যা, ৩০ মে পর্যন্ত নথিবদ্ধ হওয়া হিসেব অনুযায়ী, ৭০০ পেরিয়ে গেছে আর এই মৃতদের মধ্যে অনেক শ্রমিকও রয়েছেন।

৩। প্রশাসন তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্রে এটা প্রত্যাশিত যে বিচার বিভাগ সংশোধনকারীর ভূমিকা পালন করবে। ভারতে সরকারের নির্মমতা, হৃদয়হীনতা এবং চরম অপাদর্থতার দোসর হয়েছে বিচার বিভাগের অনীহা এবং সরকারের পদক্ষেপে মৌন সম্মতি প্রদান। পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে প্রথম আবেদনটা যখন সুপ্রিম কোর্টে উঠল, সরকার রাস্তায় পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থানের কথাই অস্বীকার করল। গোটা ব্যাপারটাকেই ভুয়ো খবর এবং আতঙ্ক ছড়ানোর কাজ বলে চালানো হল আর সুপ্রিম কোর্ট সরকারের কথাকেই মেনে নিল। লকডাউন কালে মজুরি দেওয়ার প্রসঙ্গ যখন উঠল, প্রধান বিচারপতি এই বলে বিস্ময় প্রকাশ করলেন যে, শ্রমিকরা যখন বিনা পয়সায় খাবার পাচ্ছে তখন তাদের মজুরির প্রয়োজনটা কোথায়। অবশেষে দু-মাস পর সুপ্রিম কোর্ট নিজের থেকেই বিষয়টাকে গ্ৰহণ করল এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনা ভাড়ায় ফেরানোর ব্যবস্থা করতে সরকারকে বলল। তখন কিন্তু সুবিপুল প্রতিবন্ধকতা এবং নিরাপত্তাহীনতা ও নিপীড়ন, যন্ত্রণা ও অবমাননার মোকাবিলা করে হাজার-হাজার শ্রমিক ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরে এসেছেন, এবং অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের জীবন দিয়ে তাঁদের বড় ধরনের মূল্যও চোকাতে হয়েছে। আধিপত্যকারী মিডিয়া গোটা সংকটটায় কোনো গুরুত্বই দিল না, তবে যে কয়েকজন সাংবাদিক গুরুত্ব দিয়ে সংকটটাকে তুলে ধরলেন সরকার সুপ্রিম কোর্টের সামনে তাদের ‘শকুন’ বলে অভিহিত করল।

migr

 

৪। পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাদের এখন কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে আর সেগুলোতে অব্যবস্থা এবং প্রস্তুতিহীনতা চরম অবস্থায় থাকায় সেগুলোকে অন্য নামে বন্দী শিবির বা নির্যাতন কক্ষ বলাই শ্রেয়। মুম্বাই, আমদাবাদ, সুরাট, দিল্লী এনসিআর অথবা বেঙ্গালুরুর মতো কোভিড বিপর্যস্ত নগরগুলোর ভিড়ে ঠাসা বাড়িগুলোতে পরিযায়ী শ্রমিকদের গাদাগাদি করে ঢোকানোয় কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রকোপের সামনে ভারতে তাদের সবচেয়ে নিরাপত্তাহীন সামাজিক গোষ্ঠীগুলোর অন্যতম করে তোলা হয়েছে। লকডাউন শুরু হওয়ার আগে বা লকডাউনের গোড়ার দিকে তাদের বাড়ি ফেরাটা সুনিশ্চিত না করে এমন সময় তাদের ফিরতে বাধ্য করা হল যখন অতিমারী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এটা পরিযায়ী শ্রমিক এবং তাদের পরিবারগুলোকে শুধু মহামারীর শিকার হওয়ার সম্ভাবনার মুখে এনেই ফেলেনি, সামাজিক অনাস্থা ও বিভেদের শিকার হওয়ার এবং নিজেদের গ্ৰামগুলোতে ও সন্নিহিত অঞ্চলে ক্রমেই আরও বেশি করে মানসিক চাপে পড়ার সম্ভাবনাকেও প্রকট করে তুলেছে।

coro

 

৫। মহামারী এবং স্বৈর চরিত্রের ও পরিকল্পনাহীন লকডাউনের সংযুক্ত অভিঘাত সৃষ্ট বিপর্যয় ক্ষণস্থায়ী এবং সীমিত মাত্রার হবে না। চার দিকের অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী এবং তালগোল পাকানো হবে। লকডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকেই অর্থনীতি মন্থরতার কবলে ছিল, আর এখন সরকারও স্বীকার করছে যে বিপুল আকারেই অর্থনীতির হ্রাস ঘটবে। অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে বৃদ্ধি শূন্যের নীচে নেমে যাবে। মোদী সরকার যে দিশায় অর্থনীতিকে চালাচ্ছে তার কারণেই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। রাষ্ট্রের আরও বেশি হস্তক্ষেপ ঘটিয়ে, সরকারী ব্যয় বাড়িয়ে এবং দরিদ্রদের কাছে বড় আকারে নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য হস্তান্তর করে জনগণের মধ্যে চাহিদার বৃদ্ধি ঘটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দিকে পদক্ষেপ সরকার তো করছেই না, বিপরীতে, অর্থনীতির আরও উদারিকরণ ঘটাতে সরকার এই সংকটকে একটা সুযোগ করে তুলছে; আর শ্রম আইনগুলোকে বাতিল ও মুলতুবি করে দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশগত ও কারখানা নিয়ন্ত্রণ বিধিগুলোকে লঘু করে তুলে পুঁজিকে তোষণ করারও একটা সুযোগ হয়ে তার কাছে দেখা দিচ্ছে এই সংকট। প্রতারণার উদ্দেশ্যে এই সবকিছুকেই হাজির করা হচ্ছে “আত্মনির্ভর ভারত অভিযান”-এর মোড়কে, যা নাকি ভারতকে আত্মনির্ভর করার অভিযান। সত্যিকারের আত্মনির্ভরতা বলতে কিন্তু বোঝাবে অভ্যন্তরীণ বাজার ও জনগণের ভোগব্যয়ের বিকাশ ঘটানো। সরকার কিন্তু এর বিপরীতটারই পরিকল্পনা করছে – সস্তা শ্রমের ভিত্তিতে বিশ্বের কাছে বিকোনোর লক্ষ্যে মজুরি ও ভোগব্যয়কে দমিয়ে রাখার আয়োজন করছে।

grant

 

৬। বৃহত্তর স্তরের অর্থনীতির এই প্রেক্ষাপট পরিযায়ী শ্রমিকদের ভবিষ্যতের সামনে এক বড় প্রশ্নচিহ্নকে তুলে ধরছে। কতজন পরিযায়ী শ্রমিক তাদের কাজের জায়গায় ফিরে গিয়ে লকডাউন শুরুর আগের জীবন পথকে আবার ফিরে পাবেন তা বলা শক্ত। তাদের মূল যে অঞ্চল ও রাজ্য, সেখানের অর্থনীতির মধ্যে তাদের পুনরায় একীভূত হওয়া/স্থান হওয়ার সম্ভাবনার কথা কি আমরা ভাবতে পারি? তাদের নিজেদের অঞ্চলে/রাজ্যে কাজের ও মোটামুটি মজুরির সুযোগের যে অভাব ছিল, যার কারণে তুলনামূলক ভালো জীবিকার সন্ধানে তাদের ভিন্ন রাজ্যে ও শহরে পারি দিতে হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি এখনও রয়েছে। স্থানীয় স্তরের অর্থনীতি পাল্টালে তবেই এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে – রুগ্ন ও বন্ধ কারখানার পুনরুজ্জীবন হওয়া ও সেগুলো পুনরায় খোলা, এবং কৃষিভিত্তিক ও অন্যান্য শ্রমনিবিড় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের শৃঙ্খল গড়ে ওঠা, এবং এইভাবে কর্মসংস্থান ও উপার্জনের সম্ভাবনার উন্নতি বিধান। স্বল্প-মেয়াদী পরিপ্রেক্ষিতের কথা ধরলে, এর পরিপূরক হতে হবে নরেগার আরও উন্নত ও কার্যকরী কাঠামো (যা বেশিদিন স্থায়ী হবে এবং যাতে কাজ পাওয়ার সুযোগ ও মজুরি বাড়বে), শহরাঞ্চলের বেকারদের জন্য কর্মনিশ্চয়তা আইন চালু করা, সরকারী কাজের বিপুল সম্প্রসারণ ঘটানো (যাতে অগ্ৰাধিকার দিতে হবে সরকারী হাসপাতাল এবং স্কুল ও কলেজ তৈরির ওপর), বেকারদের সুযোগ-সুবিধা/ভাতা দেওয়ার সংস্থান করা এবং স্ব-নির্ভর গোষ্ঠী ও স্টার্ট-আপদের আরও কার্যকরী উদ্যোগী সহায়তা প্রদান।

migg

 

৭। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসাটা শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনের কাছে এবং প্রগতিবাদী সামাজিক রূপান্তরণের এজেণ্ডার কাছে একই সাথে নতুন সম্ভাবনায় এবং চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ। সাধারণভাবে বললে, পরিযায়ী শ্রমিকদের গ্ৰাম সমাজের অগ্ৰণী অংশ রূপে গণ্য করা যায়। জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন শহরে চলে যাওয়ার আগে তাদের অনেকেই সামন্ততান্ত্রিক উৎপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য সংগ্ৰামে অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের অনেকেই শিক্ষিত যুবক,  গ্ৰামীণ অর্থনীতিতে  লাভজনক কাজের নিশ্চয়তা না থাকায় যাদের গ্ৰাম থেকে চলে যেতে হয়েছিল। শহরে থাকার সময় শহুরে জীবনযাত্রার আদবকায়দা ও নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে ওদের পরিচয় ঘটলেও গ্ৰামে ওরা যে সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা এবং প্রগতিশীল রাজনীতির প্রাণবন্ত পরিবেশ পেত সেটা সেখানে পাওয়া ওদের পক্ষে প্রায় সম্ভবই হয়নি। অনভিজ্ঞ/অনিশ্চিত শহর জীবনের নিরাপত্তাহীনতা এবং কাজের চাপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের যে কোনো ধরনের শ্রেণী সংগঠন বা শ্রেণী রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছে। অর্থনীতি এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। এই পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য রূপে দেখা গেছে নয়া-উদারবাদী নীতিমালার নিরন্তর আক্রমণ, দক্ষিণপন্থী ধ্যানধারণার বিস্তার, সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলোর আগ্ৰাসী উত্থান, আধিপত্যকারী মিডিয়ার প্রকৃতিতে পরিবর্তন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার পরিসরে মেকি ও বিকৃত সংবাদ এবং সাম্প্রদায়িক উগ্ৰ-জাতীয়তাবাদী প্রচারের রমরমা। এ সমস্ত কিছুই তাদের রাজনৈতিক পছন্দে প্রভাব ফেলেছে এবং পরিযায়ী শ্রমিকরা ২০১৪ ও ২০১৯ সালে মোদীর বিজয়ের শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে ওঠে। এবার এই শ্রমিকরা চূড়ান্ত মোহমুক্ত অবস্থায় ফিরে আসছেন – রাষ্ট্র যাদের পরিত্যাগ করেছে, অর্থনীতি যাদের নিংড়ে নিয়েছে এবং প্রাধান্যকারী সমাজ যাদের অবমাননা ঘটিয়েছে। এই মোহমুক্তিকে নতুন রাজনৈতিক উদ্যম এবং চেতনার ধারায় চালিত করার ক্ষেত্রে যেমন প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে তা তেমনি আবার যথেষ্ট চ্যালেঞ্জময়ও বটে।

wor

 

৮। বাম ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কাছেও পরিযায়ী শ্রমিকরা কখনই শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ বর্গ হিসেবে বিবেচিত হয়নি। চরম নিরাপত্তাহীনতার সময় বাম ট্রেড ইউনিয়ন এবং দলগুলো অবশ্য শ্রেণী ঐক্যের পক্ষে এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের বুনিয়াদি স্বার্থ ও জীবন রক্ষায় হস্তক্ষেপ ঘটিয়েছে। তবে সেটা কিন্তু তাদের জীবনধারা এবং কাজের পরিস্থিতির স্থায়ী উন্নতি এবং দরকষাকষির ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে তেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়নি। পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারগুলোর বাসস্থান, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষার মত ইস্যুগুলো এবং নাগরিক হিসাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকার (যথা, রেশন কার্ড ও ভোটার কার্ড থাকা) নিয়ে তেমন চর্চা হয়নি এবং সেগুলো অনার্জিতই থেকে গেছে। পরিযায়ী শ্রমিক পরিঘটনাটা দেরিতে হলেও যখন দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, আমাদের তখন এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে তাদের প্রতি এই স্বীকৃতিটা যেন সহানুভূতির কিছু শূন্যগর্ভ ভাবভঙ্গি প্রকাশের মধ্যে দিয়ে মিলিয়ে না যায়, তা যেন পরিযায়ী শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট অধিকার/লাভে পরিণতি পায়। পরিযায়ী শ্রমিকদের যে অন্যায় ও অবমাননার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে যেমন “দেশের স্বার্থে আত্মত্যাগ” বলে মহিমান্বিত করলে হবে না, সেরকমই, একটা ক্ষণিকের অসুবিধা বলেও তুচ্ছতায় পর্যবসিত করতে দেওয়া যাবে না। ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর এক গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর প্রতি রাষ্ট্র সংঘটিত অপরাধ বলেই এটাকে স্বীকৃত হতে হবে এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার মধ্যে দিয়ে তার সংশোধন ঘটাতে হবে।

খণ্ড-27