বিবৃতি
মহামান্য আদালত প্রধান আসামী/অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিল, সহযোগীদের শুধু নোটিশ পাঠালো

ggaa

কোভিড-১৯ সংক্রমণ যখন চীনের উহান থেকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েনি, তখনই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) রেড এলার্ট জারি করে। মার্চ মাসের শুরুতে ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন সহ গোটা ইউরোপ যখন অতিমারির কবলে, তখনও নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্বর্ধনায় ব্যস্ত। এমনকি ১৪/১৫ মার্চ, ২০২০ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ভারতের মানুষকে কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কিত না হবার বাণী বিতরণ করেছে। সেই সময় ইউরোপ ও আমেরিকার মতো কোভিড আক্রান্ত দেশগুলি থেকে আন্তর্জাতিক উড়ানগুলিতে কয়েক লাখ মানুষ মুম্বাই, আমেদাবাদ, চেন্নাই,দিল্লি বিমানবন্দরে নামছেন, তখনও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার (rtPCR) ব্যবস্থা না করে কোভিড সংক্রামিত ব্যক্তিবর্গকে অবাধে দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। ইতিমধ্যে রাজস্থানের জয়পুরে বিদেশি পর্যটকদের কোভিড আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে গেছে। অথচ কর্পোরেট পুঁজিপতিদের চাপে পরিযায়ী/প্রবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা না করে (সস্তা মজুরের অভাব হবে বলে) কয়েক ঘণ্টার নোটিশে লকডাউন ঘোষণা করা হল। এমনকি ট্রেন লাইনে কাটা পড়ে ঘুমন্ত শ্রমিকদের মৃত্যুর পর মহামান্য আদালতের চিরস্মরণীয় উক্তি ট্রেন লাইন তো আর ঘুমোনোর জায়গা নয়। দেশবাসীকে হতবাক করেছে। মৃত শ্রমিকদের অসম্মান করেছে। একমাত্র বামপন্থী-গণতান্ত্রিক দলগুলি, বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন ও গণসংগঠনগুলির চাপে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসা শুরু হলে, কেন্দ্রীয় সরকার ট্রেনের ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করেছে বিন্দুমাত্র খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা ছাড়াই। আর অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এখন ‘লোকে বলে তাই বলেছি’ বললেও, শ্রমিক ভর্তি গাড়িগুলিকে করোনা এক্সপ্রেস বলে স্টিগমাটাইজড করে গেছেন। ন্যূনতম আর্থিক সহায়তা কোনো সরকারের এজেন্ডায় নেই। একমাত্র বামপন্থী দলগুলো ও ট্রেড ইউনিয়ন ও অন্যান্য গণসংগঠনের পক্ষ থেকে এই কাজহারা মানুষদের জন্য ন্যূনতম মাসিক ১০০০০ টাকার দাবি তুলেছে। আজ রাজ্যে রাজ্যে সেই অসম্মানের নতুন নতুন নজির সৃষ্টি হচ্ছে। মৃতদের পরিবারের মানুষজনকে দেখতে দেওয়া হবে না থেকে শ্মশান ঘাটের অবমাননাকর দৃশ্য দেখে যেতে হচ্ছে। কো-মরবিডিটির বোগাস তত্ত্ব এখন এরাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে রাজ্যে রাজ্যে এমনকি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কোভিড-১৯ টেস্টের ভেজাল কিট কে আমদানি করল, আর মুনাফাই বা কে করল, অধরাই থেকে গেল!!

রাজ্য সরকারগুলিকে বিন্দুমাত্র আর্থিক সহায়তা না করে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় টিমের ভ্রমণ বৃত্তান্ত কি ফল দিয়েছে, তার ফলাফল আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিত্রোঁ নরেন্দ্র মোদী হাত ধরাধরি করে চলার দিকে (যদিও মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও নির্ধারিত শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই) এগিয়ে যাচ্ছে।

মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত প্রধান আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়ে সহযোগীদের যতই নোটিশ পাঠান না কেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলতে পারে, স্কোর বোর্ডে নম্বর উঠতে পারে, তাতে কোভিড মহামারী বা ক্ষুধার জ্বালা কোনোটাই মিটবে না। মানুষকে ভিন্ন পথের সন্ধান করতেই হবে ।

ধন্যবাদান্তে, 
পার্থ ঘোষ 
রাজ্য সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন 

খণ্ড-27