খবরা-খবর
বাঁকুড়ায় আদিবাসী ও গরিব দলিতরা ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের সম্মুখীন
bank

বাঁকুড়া ব্লক-২-এর অন্তর্গত কোষ্ঠিয়া অঞ্চলের খেমুয়া গ্রামসভার সিধু-কানু পল্লীর ২৩ ঘর আদিবাসী পরিবার। এরা এখানে ৫০-৬০ বছর ধরে বনের জমিতে ঘর তৈরি করে, জমি চাষযোগ্য করে তুলে, চাষাবাদ করে বসবাস করে আসছেন। এদের বাড়িতে বিদ্যুৎ লাইন আছে। জমিতে সেচের জন্য শ্যালো মেশিন আছে। বনের জমিতে বসতকারী-আবাদকারী আদিবাসী ও বনবাসীদের পাট্টা দিতে ২০০৬ সালে অরণ্যের অধিকার আইন তৈরি হয়েছিল। সেই আইন অনুসারে এদের ১৮ ঘর পাট্টা পেয়েছিল। যদিও দখলিকৃত জমির তুলনায় পাট্টা পাওয়ার পরিমাণ ছিল অনেক কম। আর, কোনো এক অজানা কারণে দখল থাকা সত্ত্বেও ৭টি ঘর কোন পাট্টা পায়নি। দীর্ঘ ৯-১০ বছর আগে যারা পাট্টা পেয়েছেন তাদেরও ঐ সমস্ত জমির আজ পর্যন্ত পরচা হয়নি। ফলে কাগজে কলমে জমিগুলো বনের নামে রয়ে গেছে। শ্যালোর মাধ্যমে জল সেচ করে অনেক দিন ধরে চাষ করে আসা হচ্ছে। ফলে সরল বিশ্বাসে এরা পরচার জন্য আর কিছুই করেনি।

কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে যখন অফিসগুলোতে কোনো কাজই হচ্ছে না তখন বনের অফিসারের (রেঞ্জার) প্রত্যক্ষ মদতে উচ্চবর্ণের প্রাধান্যকারী বন-কমিটি এতদিনের আদিবাসীদের ভোগদখলকারী জমিতে লাগানো পটল-কুন্দরী মাচা ভেঙে, ফলন্ত লাউগাছ কেটে তছনছ করে দিয়ে বনের জন্য গাছ লাগিয়ে দেয়। অপরদিকে একই গ্রামের বাউরি পাড়ার বাড়ির সামনে নালা কেটে তাদের লাগানো বাঁশ-আম-কাঁঠাল গাছের দখল নিয়ে নিয়ে নেয় বন-কমিটি। শুধু তাই নয়, নিত্যদিন বাড়ি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলেছে। কিন্তু এলাকার উচ্চবর্ণের দখলিকৃত জমিতে একটি গাছও লাগানো হয়নি।

adi

 

এখন আক্রান্ত আদিবাসীরা যাবে কোথায়? খাবে কী? করোনার বিপদকে উপেক্ষা করে ডিস্ট্রিক্ট ফরেস্ট অফিসে আবেদন জানাতে গেলে অফিস থেকে বলা হয়, জমির ভোগদখল করার কাগজপত্র দেখাও। গত জানুয়ারী মাসে এই কাগজের জন্য আয়ারলার নেতৃত্বে দল বেঁধে বাঁকুড়া জেলা শাসকের কাছে গেলে জেলাশাসক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এখনই কাগজ দেওয়া না গেলেও কাউকে দখলিকৃত জমি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। সহজ সরল মানুষগুলো জেলাশাসকের কথায় বিশ্বাস করেছিল। ঠিক যেমন, ৩৪ বছর ধরে বামফ্রন্ট সরকারকে বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু সেই আমলেও কাগজ মেলেনি। নয় বছরের তৃণমূল রাজত্বও কাগজ করে দেয়নি। এখন এই কাগজের অভাবে এই গরিব এসসি-এসটি পরিবারগুলো তাঁদের জমি হারাতে বসেছেন। শুধু এই গ্রামেই নয়, সারা বাঁকুড়া জেলার ব্যাপক এসসি-এসটি পরিবার এই কাগজের অভাবে জমি থেকে আজ উচ্ছেদের মুখে।

ওন্দা ব্লকের কল্যাণী অঞ্চলের জরকাতড়ার ১৮টি আদিবাসী পরিবার বনের জমি পাট্টা পেয়েছে, কিন্তু পরচা পায়নি। জমির আইল সম্পর্কে অ-সচেতন সরলমতি আদিবাসীরা পাট্টাকেই যথেষ্ট ধরে নিয়ে চাষ করে আসছিলেন। এরা সবাই এখন উচ্চবর্ণের বন কমিটির দ্বারা উচ্ছেদের মুখে পড়েছেন। ওন্দার বিএলআরও অফিসে পরচা করতে গেলে উনি তাচ্ছিল্যভরে বলেন, এসব অনেক পুরানো, বাতিল হয়ে গেছে। জোর করলে বলেন, এখন করোনা চলছে। নতুন করে দরখাস্ত নিয়ে পরে আসুন। এতো পাট্টা রয়েছে, তবু বলে কিনা বাতিল।

একইরকমভাবে ব্লক-১ জুনবেদিয়া অঞ্চলের পেঞ্জা গ্রামের বাউরিদের বসত বাড়ির কোনো পাট্টা নেই। গোটা বাঁকুড়াতেই এই অবস্থা। এঁদের পাশে আজ আর শাসক দলগুলির কোনো নেতা নেই, ওদের ভাষায় এসসি-এসটি পরিবারের ছাগল-মুরগিতে ফিষ্টি খাওয়া ভোটবাজ নেতারা সব ফুড়ুৎ। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রভাবিত গ্রামীণ শ্রমিকদের সংগঠন আয়ারলা এদের বৈধ কাগজের জন্য গত নভেম্বর মাস থেকে প্রত্যক্ষ লড়াই চালিয়ে আসছে। সমস্ত বাম-গণতান্ত্রিক মানুষের কাছে আবেদন, এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপক মানুষকে উচ্ছেদের হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।

- বাবলু ব্যানার্জী 

খণ্ড-27