পরিবেশ রক্ষার কথা বললে লাগবে ‘রাষ্ট্রদ্রোহীতা’র তকমা !
dest

আপনি পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত? প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার আর দূষণের সমস্যা আপনাকে ভাবায়? আপনি কি চান দেশের পরিবেশ আইন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হোক? পরিবেশ রক্ষা, সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেন, জল জঙ্গল জমির অবক্ষয় নিয়ে লেখালেখি করেন?

ব্যাস হয়ে গেল। যেকোনো দিন আপনার সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে আপনার উপরে ইউএপিএ আইনে মামলা করা হতে পারে! কারণ জানতে চাইছেন?

কারণ পরিবেশ রক্ষা নিয়ে কথা বলা তো আজকাল রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ! তাতে নাকি দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়!

বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে জেনে নিন।

wwq

 

লকডাউনের মধ্যে “পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা খসড়া নির্দেশিকা ২০২০” (ইআইএ) এনে বিভিন্ন প্রকল্পে পরিবেশ সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসেবনিকেশ করার প্রক্রিয়াটিকেই শিথিল করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে খোদ পরিবেশমন্ত্রক। কর্পোরেট লবিকে তুষ্ট করতে ‘ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়’-এর নামে একের পর এক পরিবেশ বিধিগুলিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে মোদী সরকার। পরিবেশ মন্ত্রকের (MoEFCC) ওয়েবসাইটে এই নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করার পরেই তা বিরোধিতার মুখে পড়ে। কেন্দ্র সরকার লকডাউনের সুযোগ নিয়ে কোনো জনমত সংগঠিত হতে না দিয়ে দ্রুত পাশ করিয়ে নিতে চেয়েছিল এই নির্দেশিকা। কেন ও কিভাবে এই নতুন ইআইএ নির্দেশিকা দেশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও পরিবেশ সম্পৃক্ত জনজাতিগুলির জন্য বিপজ্জনক তা নিয়ে বিস্তারিত লেখা এই পত্রিকার ২১ মে সংখ্যায় ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশ সচেতন সমস্ত মানুষ, বৈজ্ঞানিক মহল, এনজিও, পরিবেশ কর্মী ও পরিবেশ সংগঠনগুলি লাগাতার এই ইআইএ ২০২০-এর বিপদ নিয়ে সোচ্চার হওয়ায় ও কোর্টের চাপে এই বিষয়ে জনগণের মতামত দেওয়ার সময়সীমা খানিক বাড়িয়ে ১১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। সেই মতোই বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন থেকে ইমেল করে মতামত জানান হচ্ছিল পরিবেশ মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভারেকারকে। কেন এই নির্দেশিকা পরিবেশ-বিরোধী সেই বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়ে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকেও ইমেল করা হয়, যার বাংলা কপি ১৬ জুলাই দেশব্রতীতে প্রকাশিত হয়েছে।

greta

 

সুইডেনের বিশ্বখ্যাত পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের পরিবেশ আন্দোলনের আন্তর্জাতিক মঞ্চের ভারতীয় চ্যাপ্টার “ফ্রাইডেস ফর ফিউচার ইণ্ডিয়া”-র পক্ষ থেকেও তাদের মতামত ইমেল করা হয়। সংগঠিতভাবে ইআইএ নোটিফিকেশন ২০২০’র বিরুদ্ধে পরিবেশ দপ্তর ও পরিবেশ মন্ত্রীকে লাগাতার ইমেল পাঠানোর ‘অপরাধে’ “ফ্রাইডেস ফর ফিউচার ইণ্ডিয়া”-র ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। তাদের ওয়েবসাইটের ডোমেন হোস্টের কাছে ইউএপিএ চাপানোর ধমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে সাইবার ক্রাইম সেল থেকে। আর তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে সেই চিঠি পাঠান হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রীর নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই। পরিবেশ রক্ষার কথা নাকি দেশের শান্তি সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত করে!! এমনকি চিঠিতে সরাসরি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে ইউএপিএ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে! এই চিঠি সামনে আসতেই ব্যাপক শোরগোল পরে যায় দেশ জুড়ে, এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও। এরপরেই চাপে পড়ে দিল্লি পুলিশ বলে ইউপিএ-র নোটিসটি নাকি নেহাৎই টাইপিং মিসটেক, আসলে ওটা আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) অ্যাক্ট হবে! বুঝতে অসুবিধা হয়না এ নেহাতই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য দিল্লি পুলিশের মরিয়া চেষ্টা। দেশের সংবিধান আর গণতন্ত্র রক্ষা করতে পথে নামলে কিম্বা পরিবেশ তথা জল জঙ্গল জমি খনিজের অবাধ কর্পোরেট লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষায় সোচ্চার হলেই আপনি সরাসরি মোদী সরকারের নিশানায় চলে আসবেন, হয়ে যাবেন ‘দেশদ্রোহী’!

এরপরেও সন্দেহ আছে দেশের আসল শত্রু কারা?

- মধুরিমা 

খণ্ড-27
সংখ্যা-26