কবি রাহাত ইন্দোরি
poet

প্রয়াত হলেন উর্দুর অন্যতম জনপ্রিয় কবি রাহাত ইন্দোরি। করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি। শেষে ১১ আগস্ট ইন্দোরের এক হাসপাতালে কর্ডিয়াক এরেস্টে মৃত্যু হয়। দেশে বিদেশে অজস্র মুশায়েরা কবি সম্মেলন মাতিয়েছেন তিনি। তাঁর লেখা কবিতায় সুর দিয়ে হিন্দি ছবির বহু কালজয়ী গান তৈরি হয়েছে।

১৯৫০ সালে বর্তমান মধ্য প্রদেশের ইন্দোর শহরে জন্ম হয় কবির। পিতৃদত্ত নাম রাহাত কুরেশি। ইন্দোর শহরেই জীবনের প্রায় পুরোটা কাটিয়েছেন তিনি। পড়াশোনা, গবেষণা, অধ্যাপনা এবং কবি বা শায়ের হিসেবে খ্যাতির সূত্রপাত এই শহর থেকেই।

সারা জীবন তিনি সোচ্চার ভাষায় বলেছেন ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা, মানবতার কথা বলে গেছেন। আওয়াজ তুলেছেন শাসকীয় স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাই ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে তিনি যেমন সরব ছিলেন, একইরকমভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার কবিতা ঝলসে উঠেছে বার বার।

“যদি আগুন লাগে, তবে তার কবল থেকে কি ওরা বেঁচে যাবে ?
এটা শুধু আমার একার বাড়ি তো নয়

আমি নিশ্চিত আমাদের শত্রু দুর্বল মোটেই নয়
কিন্তু ওদের মতো মৃত্যুর ভয় তো আমাদের নেই

আজ যারা সিংহাসনে আসীন, কাল থাকবে না
ওরা তো ভাড়াটে মাত্র, আমাদের মতো এ দেশের মালিক তো নয়

আমাদের সবার রক্ত মিশে আছে যে মাটিতে
সেই দেশটা কারুর একার পৈতৃক সম্পত্তি তো নয়"

সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি নিয়ে তিনি বারবার সরব হয়েছেন:

“আপনি হিন্দু, আমি মুসলিম, উনি ক্রিশ্চান, তিনি শিখ
দূর মশাই, ছাড়ুন তো এসব! চলুন প্রেম করি!”
অথবা
“আমার একটা বিশেষ পরিচয় ছিল
এ কথাটা আমি মরে গেলে সবাইকে জানিয়ে দিও
আমার কপালে রক্তাক্ষরে ভারতীয় লিখে দিও”

এরকম অজস্র বার অজস্র পংক্তিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ভাষায় তিনি মানবিকতার কথা, সম্প্রীতি সৌহার্দ্যের কথা বলেছেন। পৃথিবীর হেন কোনো দেশ নেই যেখানে তাঁর অনুরক্তরা নেই। তাঁকে শুনতে লোকে ভিড় জমাতেন হাজারে হাজারে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললে তাঁর নাম নামে তৈরি অসংখ্য ফ্যান পেজ, আর তার লাখে লাখে সদস্য তাঁর এই বিপুল জনপ্রিয়তার সাক্ষ্যই বহন করে। কিন্তু জনপ্রিয়তার ‘বোঝায়’ নুব্জ্য হয়ে নিজের মতামত নিয়ে তিনি আপোষ করেননি।

আজকের দিনে যেখানে আমাদের গোটা দেশ প্রতিদিন সাম্প্রদায়িক শক্তির কবলে, তখন রাহাত সাহেবের মতো উদারচেতা, স্পষ্টবক্তা, আর আপামর জনসাধারনের ভাষায় কথা বলতে জানা, কবিতা লিখতে জানা সাহিত্যিকের চলে যাওয়াটা একই সাথে বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক।

বিদায় রাহাত ইন্দোরি সাহেব। আপনি আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল উজ্জ্বল থাকবেন।

--  বিস্ময় বসু   

খণ্ড-27
সংখ্যা-28