সিদ্ধান্ত
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন রাজ্য কমিটি বৈঠকের রিপোর্ট
statre

গত ৩ সেপ্টেম্বর সিপিআই(এমএল) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির (ভার্চুয়াল) বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকে বর্তমান জাতীয় ও রাজ্য পরিস্থিতি এবং সংগঠনের কাজকর্ম ও অভিজ্ঞতা বিষয়ে গভীর প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। আর, বেশ কিছু সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়।

বৈঠকের শুরুতে এই সময়ে যেসকল পার্টি কমরেড, গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামী সাথী ও ব্যক্তিত্ব যারা প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরা হলেন কমরেড রঞ্জিত সরকার (আলিপুরদুয়ার), শান্তনু বক্সী (পূর্ব বর্ধমান), তরুণ প্রকাশ কুন্ডু (বাঁকুড়া), প্রদীপ ব্যানার্জী (শিলিগুড়ি), কমল মান্ডি (বাঁকুড়া), রহিম সেখ (নদীয়া), আনু মিত্র (কলকাতা), শ্রদ্ধেয়া রানু দাশগুপ্ত (দমদম), বিমল পাড়ুই (হাওড়া), জহর মুখার্জি (বালি), সুশান্ত রায় (বজবজ), সিপআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী, অধ্যাপক হরি বাসুদেবন, অধ্যাপক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যকর্মী উষা গাঙ্গুলি, সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী রায়া দেবনাথ, পিডিএস নেতা কমরেড নটবর বাগদি প্রমুখ।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পার্টির  সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। তিনি জাতীয় পরিস্থিতির কয়েকটি মূল মূল বৈশিষ্ট্য এবং সেই সমস্ত প্রশ্নগুলিতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা কর্মনীতি তুলে ধরেন। জাতীয় পরিস্থিতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠির কথা তিনি বলেন। প্রথমত কোভিড তথা জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়, দ্বিতীয়ত তীব্র আর্থিক সংকট, তৃতীয়ত ক্রমবর্ধমান ফ্যাসিবাদী প্রবণতা তথা গণতন্ত্রের উপর হামলা। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, দেশজুড়ে জনগণের প্রতিবাদ প্রতিরোধগুলিও গড়ে উঠছে। যথা শ্রমিকদের বিভিন্ন সেক্টরে ধর্মঘট (সফল কয়লা ধর্মঘট), অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিক্ষোভ, ঋণমুক্তি আন্দোলন, ছাত্রদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ আন্দোলন, প্রশান্তভূষণের প্রশ্নে দেশজুড়ে বড় মাত্রায় প্রতিবাদ গড়ে ওঠা ইত্যাদি। এছাড়া দেশের আর্থিক সংকট তীব্রতর হয়ে উঠেছে, যেখানে জিডিপির ২৪ শতাংশ সংকোচন এই প্রথম লক্ষ্য করা গেল। এসমস্ত কিছু আমাদের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা ও দিশা নির্দেশ করছে। ওদিকে দিল্লির দাঙ্গার ঘটনাগুলিকে ভীমা কোরেগাঁওএর মতো করে সাজানো হচ্ছে। সমগ্র সিএএ বিরোধী আন্দোলন বা শাহিনবাগকে দেশবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত বলে ওরা তুলে ধরতে চাইছে। আমাদের ছাত্র সংগঠন ও অন্যান্য আন্দোলনকারী শক্তিগুলিকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। পরিস্থিতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, মোদী নিজের ভাবমূর্তিকে কিছুটা আলাদা করে জনপ্রিয় রূপে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। একটি সংবাদ মাধ্যম জনমত সমীক্ষার এ জাতীয় জনপ্রিয়তার সাফল্যর খবর প্রকাশ করেছে। অতীতে বিভিন্ন দেশে এ জাতীয় বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে, যেখানে পতনের আগে পর্যন্ত এক ধরনের জনপ্রিয়তা ফ্যাসিস্ট “নায়ক”দের জন্য লক্ষ্য করা যায়। যদিও আগামীতে দেশজুড়ে প্রতিবাদের মুখে মোদীর এই জনপ্রিয়তা জোড়ালো ধাক্কা খেতে বাধ্য।

লকডাউনকে আমরা অপরিকল্পিত, বিশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত, দমন-পীড়ন মূলক এবং সংক্রমন প্রতিরোধে ব্যর্থ এক পদ্ধতি হিসেবে চিহ্নিত করেছি। কিন্তু লকডাউন মানছি না, মানব না – এটা বলা আমাদের পক্ষে যুক্তিযুক্ত হোত না। এটা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার একটা প্রশ্ন। এছাড়া শাসকেরা আমাদের ভূল ভাবে চিহ্নিত করতো, কিংবা আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার সুযোগ পেতো। যদিও লকডাউনের মধ্যেও আমরা যতটা সম্ভব বিভিন্ন কর্মসূচী সংগঠিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছি।

বিগত দিনগুলোতে ত্রাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কর্মসূচিতে রাজ্যের প্রায় সমস্ত জেলাতেই ধারাবাহিক ভাবে কমরেডরা প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। জনগণের বিভিন্ন অংশের থেকে ভালো সাড়াও পেয়েছেন। এজন্য রাজ্য কমিটি পার্টির সমস্ত জেলা কমিটি ও পার্টি কমরেড, সমর্থক ও দরদীদের অভিনন্দন জানাচ্ছে। ত্রাণকার্য চালাতে গিয়ে দেখা গেল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মোকাবিলা করার জন্য সরকারের প্রস্তুতি ভীষণ, ভীষণ দুর্বল। বাংলার গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ বাড়ি কাঁচা, মাটির বাড়ি। প্রাণহানির একটা বড় কারণ এটাই। নদী বাঁধ সংস্কার, মাস্টার প্ল্যানগুলির নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রূপায়ণ, সর্বোপরি সুন্দরবন বাঁচাও পরিকল্পনা কার্যকরী করার দাবিতে আমাদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চলে আমাদের কাজের এলাকার কয়েকটি ব্লকে আবাস যোজনার দাবিতে পার্টি কমিটি ও গণসংগঠনগুলির একপ্রস্থ কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিত। এবারের নির্বাচনে আমফান বিপর্যয়, ত্রাণ দুর্নীতি ও আবাস যোজনা বড় ইস্যু হয়ে উঠবে।

৯ আগস্ট এবং ১৩ আগস্ট দেশজুড়ে ঋণমুক্তি ও কাজের দাবিতে কর্মসূচী এরাজ্যেও যথেষ্ট গুরুত্বসহ সংগঠিত হয়েছে। আমাদের সমস্ত গণসংগঠন ও পার্টি ব্যবস্থা আন্তরিকভাবে এই কর্মসূচীগুলি সফল করার চেষ্টা চালিয়েছে। ১৫ আগস্ট কর্মসূচী বিশেষত জাতীয় পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চর্চা চলেছে। ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের মুখে জাতীয়তাবাদের হিন্দুত্ববাদী সংজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়ার বিপরীতে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে জনগণের প্রগতিশীল ভাবনা তুলে ধরার দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে।

বর্তমান পর্যায়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এমন কিছু পদক্ষেপ আমাদের নিতে হচ্ছে যা আমাদের পুরানো ভাবনার সাথে মিলছে না। এ বিষয়টা আমাদের আত্মস্থ করতে হবে যে, পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে ফ্যাসিবাদের সাথে লড়াইয়ের বিভাজনরেখা বা পার্থক্যরেখাগুলি সরে সরে যেতে থাকবে। কিন্তু সেগুলি পাল্টে যাবে না। নতুন নতুন প্রশ্নে বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিকে সাবলীল ভাবে বুঝতে পারলেই আমাদের বিভিন্ন উদ্যোগগুলি বিকাশ করতে শুরু করবে।

আগামী বিধানসভা নির্বাচন ও আমাদের ভূমিকা

পশ্চিমবঙ্গের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের সম্ভবতঃ একক ভাবেই লড়তে হবে। কারণ কার্যকরী বাম ঐক্যের পরিবর্তে ২০১৬ সালের মতো কংগ্রেস-সিপিএম বোঝাপড়ার সম্ভাবনা প্রবল ভাবে দেখা যাচ্ছে। বাস্তবে নির্বাচনী আসন বোঝাপড়ায় আমাদের জায়গাটাও তেমনভাবে নেই। এ রাজ্যেও আমাদের প্রধান জোর দিতে হবে বিজেপিকে পরাস্ত ও প্রতিহত করার উপর। অন্যদিকে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসও এক স্বৈরাচারী শক্তি। বিজেপিকে প্রধান লক্ষ্যবস্তু করে সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করব এমন জায়গায় আমরা নেই। প্রধানত শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যেই আমরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। বিজেপি বিরোধী গণআন্দোলন ও নির্বাচন এই দুটো দিকই আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। কোনো নেতিবাচক বা পরাজয়বাদী মনোভাব থেকে আমরা আন্দোলনগুলিকে দেখি না। যেমন নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে সর্বোচ্চ যৌথ কার্যক্রম আমরা করেছি। আন্দোলনে জয়লাভ করা গেলো কি না, কেবল সেটাই নয়, কিংবা তার পরিধি-মাত্রা যাই হোক না কেন, আমাদের ফোকাস থাকবে আন্দোলনের উপর, যার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সেটাকে কতটা নির্বাচনে প্রতিফলিত করা যায় আমাদের সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিজেপিকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে টিএমসিকে চাপের মধ্যে রাখতে হবে। এখানে টিএমসি বনাম বিজেপির যে লড়াই হতে চলেছে তাতে কংগ্রেসকে বিরোধী দল হিসাবেই আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে।

আমাদের এককভাবেই লড়াই করার প্রস্তুতি গড়ে তুলতে হবে। তবে আসন বোঝাপড়ার কোনো প্রস্তাব এলে আমরা অবশ্যই কথা বলব, কিন্তু সেটা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলি রক্ষা করেই।

ঋণ মুক্তি আন্দোলন

রাজ্যের কয়েকটি জেলায় প্রধানত স্বনির্ভরগোষ্ঠী ও গরিব মানুষদের মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। হুগলী, বর্ধমান, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটে, দার্জিলিং জেলার দু’একটা পকেটে বিক্ষোভ আন্দোলনে নতুন নতুন শক্তিকে সমাবেশিত করার উদ্যোগ খুবই আশাপ্রদ ও ইতিবাচক। তৃণমূল ও বিজেপির চাপ সত্বেও বহু সংখ্যক মানুষ এতে সামিল হচ্ছেন। এটা দেখায় যে, সংকট যথেষ্ট গভীরে রয়েছে। ইস্যুটা যে দাঁড়িয়ে গেছে এটাই আমাদের প্রথম সাফল্য। যদিও কৃষকদের এই ইস্যুতে যুক্ত করা যায়নি। ফসলের ন্যায্য মূল্য ও ঋণমুক্তির লড়াই কীভাবে যুক্ত করা যায়, তার জন্য আগামীতে আমাদের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

আমাদের মূল মূল কাজের বেশ কিছু জেলা ঋণমুক্তি নিয়ে তেমন উদ্যোগ নিতে পারেনি। সেই জেলাগুলিতে আলাপ আলোচনা করা প্রয়োজন যে সমস্যাগুলি কী থাকছে বা কিভাবে উদ্যোগ বাড়ানো যায়। মিড-ডে-মিল ইউনিয়নকেও এই উদ্যোগে যুক্ত করা যেতে পারে। ঋণমুক্তি আন্দোলন গড়ে ওঠার একটা বড় কারণ গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সংকট, এবং নয়া মহাজনী শোষণ, লকডাউনের সময়কালে যা তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের সাথে কাজের দাবি ও গরিব মানুষদের স্বার্থে নানাবিধ সরকারী প্রকল্পে হস্তক্ষেপকে যুক্ত করা দরকার। মূলত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবীরা ও ভাগে বা চুক্তিতে যারা চাষাবাদ করেন সেই ঋণগ্রস্ত  দরিদ্র মানুষেরা এই আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন। আয়ারলা এ কাজের কেন্দ্রে রয়েছে। রাজ্য স্তরে আয়ারলা, এ্যাপোয়া, মিড-ডে-মিল ও পার্টির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা সমন্বয়ধর্মী বডি গঠন করা হবে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে জেলা বা মহকুমা স্তরে ঋণমুক্তির দাবিতে যে গণজমায়েত কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে তা সফল করতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। তারপর একটি বৈঠকের মাধ্যমে এই বডি গঠিত হবে। আশু দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে অন্তত দু’বছর মোরেটরিয়াম, সুদ মকুব, ঋণ আদায়ে অন্যায় জুলুম বন্ধ, মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলির উপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ জারি করা, সুদের অত্যধিক হার ও চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বন্ধ করা। রাজ্য ও কেন্দ্রীয়, দুই সরকারের বিরুদ্ধেই আমাদের দাবিগুলি তুলে ধরতে হবে। রাজ্য সরকারের কাছে মন্ত্রী পর্যায়ে ডেপুটেশনের কর্মসূচী নিতে হবে। করোনা আবহ একটু অনুকূলে আসলে আগামীতে রাজ্য জমায়েতের কথাও ভাবা যেতে পারে।

নয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে

দেশজুড়ে নয়া শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ছাত্র বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ ও আন্দোলনগুলি গড়ে উঠেছে। এনআরসি, সিএএ বিরোধী আন্দোলনের মতই বামপন্থী ছাত্র সমাজ এবং আমাদের ছাত্র সংগঠন আইসা, যুব সংগঠন আরওয়াইএ যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে। এই আন্দোলনে গতি প্রদানের জন্য আমাদের কাজের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলিতে উদ্যোগ বাড়ানো প্রয়োজন। পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া বা শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ভালোই বিতর্ক চলছে। ভোকেশনাল বা জাতিগত ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া নিয়েও প্রতিবাদ জোড়ালো হচ্ছে। এতে ছাত্র-যুব উদ্যোগ সমন্বয় প্রয়োজন। এরাজ্যে আইসার বিকাশ খুবই ইতিবাচক, তবে সার্বিক রাজনৈতিক বিষয়গুলি নজরে রাখতে হবে।

ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন প্রসঙ্গে

করোনা লকডাউন পর্যায়ে বকেয়া মজুরির প্রশ্নটি অত্যন্ত জরুরী হয়ে রয়েছে। আমাদের ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। ২১ সেপ্টেম্বর রাজ্যের সমস্ত চটকলে বকেয়া মজুরি নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচী সংগঠিত হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে লেবার কোডের প্রতিলিপি পোড়ানোর কর্মসূচী সংগঠিত হবে। ১২ অক্টোবর প্রতিরক্ষা সেক্টরের ধর্মঘট হওয়ার দিন সারা ভারত সাধারণ ধর্মঘট ডাকা যায় কিনা কেন্দ্রীয় টিইউগুলির তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে নিবিড় তথ্যানুসন্ধান করা, তাদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলার কাজ দ্রুত করতে হবে। অনেকেরই মোবাইল স্মার্ট ফোন আছে। তাদের হোয়াটসএ্যাপ নম্বর সংগ্রহ করা, গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগকে আরও কার্যকরী করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। একাজে পার্টির জেলা কমিটিগুলিকেও পরিকল্পনা নিতে হবে।

গণস্বাস্থ্য উদ্যোগ

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বেসরকারী হাসপাতালগুলির অমানবিক আচরণ, মুনাফাবাজি ইত্যাদি বর্তমানে রাজ্য রাজনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি অপরদিকে রাজ্য সরকারের অপদার্থতা-অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে আমাদের এলাকাস্তরে জনস্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। সম্প্রতি এবিষয়ে কয়েকটি এলাকায় কিছু উদ্যোগ যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক ও শিক্ষণীয়। যাকে উপর থেকে সচেতন পরিকল্পনায় সংগঠিত করার সুযোগ রয়েছে। বৃহত্তর কলকাতা ও অন্যত্র যেভাবে আমরা ত্রাণ উদ্যোগ নিয়েছিলাম সেভাবেই জনস্বাস্থ্য উদ্যোগও নেওয়া যায়। গণসচেতনতা ও স্বেচ্ছাসেবা মূলক কর্মসূচীর সাথে সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনমুখী উদ্যোগ – এ দুয়ের সমন্বয় প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য আন্দোলন বিভিন্ন রূপে গড়ে উঠছে। “পিপলস হেলথ”-কে সামনে রেখে আইসা, আরওয়াইএ সহ যেখানে যেমনভাবে সম্ভব গণসংগঠনগুলিকে যুক্ত করা এবং তাতে চিকিৎসকদের ও অন্যান্য শক্তিকে সামিল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য রাজ্য স্তরে একটা পার্টি টিম গঠন করা হবে। বিভিন্ন সংক্রমক রোগ প্রতিরোধে একটা জনমুখী নীতি তৈরি করার লক্ষ্যে এগোনো যেতে পারে।

দেশব্রতী

লকডাউন পর্বে দেশব্রতীর ডিজিটাল সংখ্যাগুলি যথেষ্ট আকর্ষণীয়ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন মহলে সমাদৃত হচ্ছে। নতুন নতুন পাঠকবর্গের কাছে পত্রিকা পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু মুদ্রণ সংখ্যা প্রকাশনার মতো অবস্থা এখনও সৃষ্টি হয়নি। বিভিন্ন জেলা থেকে পত্রিকা নিয়ে যাওয়া বা ক্যুরিয়ারে পাঠানোর মতো সুযোগ এখনও হয়নি। তাই আগামীতে রেল চলাচল শুরু হলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-32