বিবৃতি
সম্পূর্ণ সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এনআইএ-কে ব্যবহার করছে কেন্দ্রীয় সরকার
rad

মুর্শিদাবাদের গ্রামে এনআইএ হানা ও ধরপাকড় প্রসঙ্গে গত ২১/৯/২০২০ একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে সিপিআই(এমএল) রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন যে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই অভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ভীমা কোরেগাঁও এলগার পরিষদ মামলায় এনআইএর ভূমিকা তথা এরাজ্যে এক তরুণ বিজ্ঞানীকে তলব করার সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই ‘জাতীয় তদন্ত সংস্থা’টির প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাজ্যের মানুষ খানিকটা সচেতন হয়েছেন।

পার্থ ঘোষ আরও বলেন, “এনআইএ’র পক্ষ থেকে সরকারীভাবে কিছু জানানো না হলেও সংবাদমাধ্যমের একাংশ ধৃত মানুষগুলিকে উচ্চস্বরে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল কায়েদার  সদস্য হিসেবে তুলে ধরছে। গল্পের গরু ইতিমধ্যেই গাছে উঠতে শুরু করেছে। আল কায়েদার কি মাত্রায় অবনতি হয়েছে যে, প্রায় নিরক্ষর কিছু যুবক এই টেক স্যাভি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সিক্রেট মডিউলের সদস্য হিসেবে কাজ করে! সংবাদ মাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে, মুর্শিদাবাদে এদের বাড়িতে নাকি গোপন সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং তার মধ্যে কিছু আতস বাজি, তার ও কিছু ইলেকট্রনিক গুডস পাওয়া গেছে। অথচ স্থানীয় সাংবাদিকরা সরেজমিন রিপোর্টে জানাচ্ছেন, সুড়ঙ্গ নয়, ওটা পায়খানার সেফটি ট্যাংক! এনআইএ’র তরফ থেকে এই সংবাদের কোনো পুষ্টিকরণ এখনও পাওয়া যায়নি‌‌।

কেন্দ্রের শাসকদল ২০২১ এর নির্বাচনী পরিকল্পনা তৈরি করতে ইতিমধ্যে দিল্লিতে বৈঠকে মিলিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ‘মুসলিম সন্ত্রাসবাদের’ এতবড় ঘটনায় নীরব থাকতে পারেনি। সামনেই নির্বাচন। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী থেকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা রাজ্যের শাসকদল ও সরকারের প্রশ্রয়ে এরাজ্যে এবং কেরলে শক্তিবৃদ্ধি করছে – এই প্রচারে নেমে পড়েছে তারা। বিজেপি-বিরোধী কোন কোন দলের নেতৃবৃন্দ বিজেপির এই প্রচারে প্রভাবিত হয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন। তাঁরা ভুলে গেছেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, বিজেপির প্রচারে এলডিএফ শাসিত কেরলও আছে।

গত মার্চ মাস থেকে কোভিড অতিমারী ও অপরিকল্পিত লকডাউন ও কর্মচ্যুতির অনিশ্চিত জীবনে যে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী/প্রবাসী শ্রমিক দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে লং মার্চ করলেন, পথে অন্তত ৭৯২ জন প্রাণ হারালেন, তাদের ভবিষ্যৎ আজো অন্ধকারে। অবশ্য সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই বলেই সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনে জানান হয়েছে। তবে এদের মধ্যে কারা কারা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে নাম লিখিয়েছে বা তার হয়ে কাজ কাজ করছে, সে তথ্য সংগ্রহে কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রের শাসকদল অত্যন্ত তৎপর।

অতিমারী ও লক ডাউনের কারণে এনপিআর, এনআরসি এবং সিএএ-র কাজ বন্ধ হয়ে আছে। তাকে পুনরায় শুরু করার এক আবহাওয়া ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলা ও কেরলে এই আন্দোলন যথেষ্ট জোরালো। তাকে মাথায় রেখেই কোনো পরিকল্পনা হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে  রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মেরুকরণ, সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও ঘৃণার রাজনীতি ফেরি করতে কোনো স্বাধীন সরকারী সংস্থা বা গোয়েন্দা সংস্থার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। স্থানীয় জনগণের থেকে প্রকৃত ঘটনা জানতে রাজ্যের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলির দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া দরকার।”

খণ্ড-27
সংখ্যা-34