কৃষিতে কোম্পানিরাজের গোলামী চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সারা দেশে শুরু হয়েছে কৃষকের স্বাধীনতার লড়াই
ddw

কৃষকদের কর্পোরেটদের গোলামে পরিণত করার এই আইন নিয়ে আসার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় লক্ষ লক্ষ কৃষক পথে নেমে এসেছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে এতবড় কৃষক বিক্ষোভ দেখা গেলো। ২৬৫টি সংগঠনের যুক্ত মঞ্চ সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবসের আহ্বানে গোটা দেশ জুড়ে গড়ে উঠলো উত্তাল কৃষক সংগ্রাম। কয়েকটি রাজ্যে বন্ধ এবং সর্বত্র ‘প্রতিরোধ আন্দোলন’ দেখিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকারের এই তিনটি কালো আইনকে দেশের কৃষকরা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিজেপি সরকার গায়ের জোরে সংসদীয় ব্যবস্থাকে হত্যা করে তড়িঘড়ি যতই আইন প্রণয়ন করুক না কেন, দিকে দিকে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তার লড়াইয়ের মাধ্যমে এই কৃষি সংস্কার আইনকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কৃষি ও কৃষকদের কোম্পানিরাজের অধীনস্ত করার বিরুদ্ধে গড়ে উঠছে এক নতুন স্বাধীনতার লড়াই।

পঃ বঙ্গের বিভিন্ন জেলার প্রায় ২০০টি স্থানে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়ক অবরোধ হয়েছে। কোথাও কোথাও কয়েক হাজার সংখ্যায় কৃষকরা অবরোধে সমাবেশিত হয়েছিলেন। বেশিরভাগ জায়গায় সকাল ১১টা থেকে ১২টা, পরবর্তিতে বেলা ২টা থেকে ৩টা – এক ঘন্টা বা তারও বেশি সময়ব্যাপী চলা এই অবরোধে ব্যপক মানুষ সমর্থন ও সহমর্মীতা জানিয়েছেন। কৃষকের পাশাপাশি সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষও পথে নেমেছেন। শ্রমিক, ছাত্র, যুব, মহিলা সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তি অন্নদাতাদের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থান হলো – বাঁকুড়া জেলায় কেরানিবাঁধে সকাল ৯টা থেকে এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অবরোধ ও মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন আয়ারলার নেতা বাবলু ব্যানার্জী, রাম নিবাস বাস্কে প্রমুখ। এই জেলার বিষ্ণুপুরে সবজি বাজারে অবরোধে ছিলেন ফারহান খান, মঙ্গল মুর্মু। এখানে নয়া শিক্ষানীতি ও শ্রমআইন তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এ ছাড়াও জেলায় সুপুর মোড়, ছাতনা সহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ হয়। দঃ ২৪ পরগণার আমতলায় ডায়মন্ডহারবার রোডে সড়ক অবরোধে ছিলেন এআইকেএম-এর সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি কার্তিক পাল, রাজ্য নেতা দিলীপ পাল, এআইকেএসসিসি’র সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অভীক সাহা, এআইকেএস-এর তুষার ঘোষ, আয়ারলা’র নবকুমার বিশ্বাস প্রমুখ। দার্জিলিং জেলায় ফাঁসিদেওয়ার ঘোযপুকুরে অবরোধে ছিলেন এআইকেএম নেতা পবিত্র সিং, শ্রমিক নেতা অভিজিৎ মজুমদার, বাসুদেব বসু প্রমুখ। মালদা জেলার কালিয়াচকে স্থানীয় থানার পুলিশ অবরোধের একদিন আগে থেকেই কৃষক সংগঠকদের হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু অবরোধের দিনে ব্যপক মানুষের উপস্থিতির কারণে প্রশাসন তেমন কিছু করতে পারে না।

dad

 

নদীয়া জেলার ধুবুলিয়াতে জাতীয় সড়কে সবজি ফেলে দিয়ে অবরোধে নেতৃত্ব দেন এআইকেএম নেতা সুবিমল সেনগুপ্ত। বেথুয়াডহরীতে অংশ নেন আয়ারলা’র কাজল দত্তগুপ্ত, চাপড়ায় কৃষক নেতা ধনঞ্জয় গাঙ্গুলী, ইনসান সেখ প্রমুখ। তাহেরপুরে নেতৃত্ব দেন জীবন কবিরাজ।

হুগলী জেলার পোলবা-দাদপুরের আলিনগর মোড়ে অবরোধ হয়। অংশগ্রহণ করেন আয়ারলা ও ঋণমুক্তি আন্দোলনের নেতা সজল অধিকারী। ব্যপক মহিলারা মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির অন্যায় সুদের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া ও ঋণ আদায়ের নামে জুলুমবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। বলাগড়ের মহিপালপুরের ইটাগড় মোড়ে অনুরূপ কর্মসূচী সংগঠিত হয়। একতারপুর মোড়ে কৃষি বিলের কপি পোড়ানো হয়। গুপ্তিপাড়া বড়বাজারে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচীগুলিতে উপস্থিত ছিলেন ঋণমুক্তি আন্দোলন ও আয়ারলার নেতা সজল দে, আনারুল সেখ, নিরঞ্জন বাগ প্রমুখ। পান্ডুয়ার দে পাড়া মোড়ে প্রতিবাদী সভায় বক্তব্য রাখেন এআইকেএম নেতা দেবাশীষ কুমার। কোন্নগর থেকে হিন্দমোটর এক দৃপ্ত মিছিল পথ পরিক্রমা করে কৃষকদের দাবিগুলি তুলে ধরে। শেষে বিপিনভিলা মোড়ে বিলের কপি পোড়ানো হয় ও প্রতীকী অবরোধ করা হয়। ব্যান্ডেল জিটি রোডে অবরোধে নেতৃত্ব দেন ভিয়েত ব্যানার্জী। হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়াতে ৬নং জাতীয় সড়কে অবরোধে বাগনান এলাকার ঋণ মুক্তি আন্দোলনের সাথে যুক্ত মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য। নেতৃত্বে ছিলেন শ্রমিক নেতা দেবব্রত ভক্ত, কিষাণ মহাসভার নবীন সামন্ত। বালী দুর্গাপুরের হেলথ সেন্টারের সামনে প্রতিবাদী সভা সংগঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন ছাত্র নেতা নীলাশীষ বসু, দীপক চক্রবর্তী প্রমুখ। বালী জোড়া অশ্বত্থতলা মোড়ে বিলের কপি পুড়িয়ে বিক্ষোভ ও অবরোধ সংগঠিত হয়।

basir

 

উঃ ২৪ পরগণার আওয়ালসিদ্ধি মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়, নেতৃত্ব দেন নারায়ন রায়, স্নেহাশীষ চক্রবর্তী। এরপর নৈহাটিতে বরোদা ব্রীজের মুখে অবরোধ হয়। অংশগ্রহণ করেন শ্রমিক নেতা সুব্রত সেনগুপ্ত, দেবজ্যোতি মজুমদার প্রমুখ। বেলঘড়িয়া শহরে পাওয়ার হাউজ মোড় থেকে বিটি রোড পর্যন্ত মিছিল করা হয়, তারপর রথতলা মোড়ে বিক্ষোভ অবরোধ সংগঠিত হয়। নেতৃত্বে ছিলেন নব্যেন্দু দাশগুপ্ত, শিবশংকর গুহ রায়। অশোকনগর গ্রামীণ এলাকার নুরপুর হাটে প্রচারসভা করা হয়, শহরের বিল্ডিং মোড়ে ৩৫নং জাতীয় সড়কে অবরোধ করা হয়। এই কর্মসূচীগুলিতে অংশ নেন অজয় বসাক, বাবুনি মজুমদার, জয়শ্রী দাস প্রমুখ। বসিরহাটে ত্রিমোহিনী মোড়ে অবরোধ করা হয়। এখানে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। নেতৃত্বে ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস।

বনগাঁ পাবলিক লাইব্রেরী থেকে মিছিল করে বাটা মোড়ে গিয়ে অবরোধ হয়। নেতৃত্ব দেন এআইকেএম নেতা কৃষ্ণ প্রামানিক। বারাসাতে হেলা বটতলা মোড়ে অবরোধ হয়। অনুরূপ  কর্মসূচী সংগঠিত হয় মধ্যমগ্রামে। নেতৃত্ব দেন সুজিত ঘোষ, দিলীপ দত্ত প্রমুখ। পঃ বর্ধমানের বার্ণপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদী সভা ও কাজোরা মোড়ে অবরোধ হয়। নেতৃত্বে ছিলেন, শ্রমিক নেতা সুরিন্দর কুমার, রেল শ্রমিক নেতা প্রদীপ ব্যানার্জী, স্বদেশ চ্যাটার্জী।

- জয়তু দেশমুখ   

খণ্ড-27
সংখ্যা-35