বিবৃতি
ফাদার স্ট্যান স্বামীর বিবৃতি
gae

(৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ৮৩ বছর বয়সী ফাদার স্ট্যান স্বামীকে এনআইএ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারির দু’দিন আগে একটি ভিডিও বার্তা স্ট্যান স্বামী আমাদের সকলের উদ্দেশে রেকর্ড করেন যা তাঁর সাথিরা প্রকাশ করেছেন। ইংরেজিতে বলা কথাগুলি বাংলা অনুবাদে আমরা তুলে দিচ্ছি।)

এই মুহূর্তে কীরকম পরিস্থিতির মধ্যে আছি সেকথা বলে আমি এই ভিডিওটা শুরু করতে চাই। এই সময়ে এনআইএ আমাকে জেরা করছে। ইতিমধ্যেই ওরা আমাকে ১৫ ঘন্টা জেরা করে ফেলেছে। তারপরও ওরা আমাকে মুম্বাই যেতে বলছে। আমি বলেছি যে আমি মুম্বাই যাব না, কেন যাব না সে কারণ পরে জানাব।

এবারে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠিত হওয়ার পশ্চাদপটে ঝাড়খণ্ডে আমার সক্রিয়তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে দু’একটি কথা। হ্যাঁ, সকলেই ঝাড়খণ্ড চেয়েছিল, কিন্তু আরও কিছু বিষয় তো ছিল। বিশেষ করে উচ্ছেদের প্রশ্ন। খনি খনন, দুর্ঘটনা, শহর গড়া বা জলাধার নির্মাণে ভূমিহারা হওয়ার প্রশ্ন। জনসাধারণের ভরসা জাগানোর কোনও রকম উদ্যোগই ছিল না। ক্বচিৎ কদাচিৎ … সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ তাদের দেওয়া হত। তাই আমরা এই প্রশ্নগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম এবং বললাম যে তরুণ প্রজন্ম এগুলিকে জীবন-মরণ সংগ্রাম হিসেবে দেখে লড়াই চালিয়ে সমাধা করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ভারতের সংসদে অত্যন্ত কার্যকরী কিছু বিধি-বিধান পাস হয়। বিশেষ করে PESA আইন, যে আইনে গ্রাম সভাগুলির হাতে বিশেষ ক্ষমতা অর্পন করা হয়, গ্রামে যে কোনও কিছু করতেই গ্রামসভার সাথে আলোচনা ও সম্মতি বাধ্যতামূলক করা হয়। অন্যটি হল জমি অধিগ্রহণ আইন। এই আইনে প্রথমবার মানুষের, জমির মালিকদের সম্মতি নেওয়া ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তো, এইসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের জন্য কিছু রাস্তা খুলে যায় এবং সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার দাবি করতে শুরু করে। কিন্তু যেই তারা দাবি জানানো শুরু করে ওমনি তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হতে থাকে।

সুতরাং, ২০১৭ সালে, যাকে যাকেই আমি চিনি তাদের সকলকে, কেবল ঝাড়খণ্ডে নয়, বরং মধ্য ভারতের সব আদিবাসী রাজ্যগুলিতেই — মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগঢ়, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা ও বাংলা — আমি আহ্বান জানাই। এভাবে আমরা একত্রিত হই। পার্সেকিউটেড প্রিজনার্স সলিডারিটি কমিটি নামে একটি সংস্থা গঠন করি আমরা, এবং তার মাধ্যমে আমরা পরিকল্পনা করি — প্রথমে এই সবক’টি রাজ্যের বিচারাধীন বন্দীদের সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান চালানো ও তারপর সুবিচার পেতে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় আমি, জেলে পচতে থাকা ৩০০০ আদিবাসী যুবর পক্ষ থেকে, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টে মামলা করি। রাষ্ট্রের সাথে এই আমার সংঘাত, এবং ওরা আমাকে রাস্তা থেকে সরাতে চাইল। তা করার একটা উপায় হল কোনও সিরিয়াস কেসে আমাকে জড়িয়ে দেওয়া। এবং অতঃপর এই মামলা, এরকমই হল — ভীমা কোরেগাঁও, যে জায়গায় আমি জীবনে কখনও যাইইনি — আমাকে সেখানে অভিযুক্ত করা হল, আমার বাড়িতে দু’বার রেইড করা হল। প্রথমবার করেছিল পুণে পুলিশ, তারপর এনআইএ মামলাটি জোর করে নিজের হাতে নিল। ওরা আমাকে জুলাই মাসে ৫ দিনে ১৫ ঘন্টা জেরা করেছে। আমার বায়োডেটা ছাড়াও পিপিএসসি সম্পর্কে কিছু তথ্য, পাথালগাঢ়ি আন্দোলন সম্পর্কে, ভীমা কোরেগাঁও আন্দোলন ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁরা যা জানতে চেয়েছে তা জানিয়েছি। এই জেরার প্রক্রিয়ায় যাদের সাথে পরিচয় হয় তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে কিছু জিনিস দেখাতে শুরু করে যেগুলো নাকি তারা আমার কম্পিউটার থেকে খুঁজে বের করেছে। এমন কিছু জিনিস যেগুলিতে, আপনারা জানেন, মাওবাদীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে এবং সেখানে কিছুক্ষেত্রে আমার নাম উল্লিখিত হয়েছে। সুতরাং তারা বলল, “কোথায় তোমরা মিট করেছিলে?” আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, “কে এটা লিখেছে? কাকে লিখেছে? কত তারিখে লিখেছে? লেখার নীচে কি কোনও স্বাক্ষর আছে?” এসব কিছুই সেখানে ছিল না। সুতরাং আমার সামনে যা রাখা হয়েছিল সেগুলির প্রত্যেকটিকে আমি অস্বীকার করি, কেবল একটি ছাড়া, যেখানে সুধা ভরদ্বাজ ও আমার কথোপকথন আছে যেখানে — আমরা দু’জন পিপিএসসি’র যুগ্ম আহ্বায়ক — আমরা ভারতের সব মানবাধিকার সংগঠনগুলির কাছে পিপিএসসি সম্পর্কে বুঝিয়ে ব’লে হাতে হাত মেলানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম যাতে এই কাজে যৌথ উদ্যোগ তৈরি হয়। তো, ওইসব খুঁজে বের করা জিনিসগুলি আসলে আমার কম্পিউটারে প্রক্ষিপ্ত হিসেবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই আমি সে বিষয়ে স্পষ্টত সঠিক অবস্থান নিয়েছিলাম।

পরিশেষে, ওরা আমাকে আরও জেরা করার জন্য এখন মুম্বাই যেতে বলছে যা আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ … আমার এই বয়স, আমার নির্দিষ্ট কিছু অসুস্থতা আছে, মহামারীতে দেশ আক্রান্ত, এবং ঝাড়খণ্ড সরকার স্বয়ং নির্দেশ দিয়েছে বয়ঃবৃদ্ধরা যেন জনসমাগমে না যান বা বাইরে ভ্রমণ না করেন। আমি নিজেও কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না, অন্যদিকে এনআইএ চাইলে আমি আরও জেরার জন্য প্রস্তুত আছি, কিন্তু তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। এটা আমি ওদেরকে জানানোর জন্যই বলছি এবং আশা করছি সামান্য মানবিক বোধ বজায় থাকবে, যদি তা না থাকে তাহলে আমি প্রস্তুত, এবং আমি আশা করি যারা আমাকে চেনে জানে বা আমার সম্পর্কে ভাবিত তারা সকলেই প্রস্তুত, যা হবে তার মুখোমুখি হতে।

এই কথা বলে আমি শেষ করব যে আমার সাথে যা ঘটছে তা কেবল আমার সাথেই ঘটছে তা নয়, এটা আরও বড় একটি প্রক্রিয়া যা দেশ জুড়ে ঘটছে। আমরা সকলেই জানি কীভাবে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের, আইনজীবীদের, লেখক ও কবিদের, আন্দোলনকর্মী আর ছাত্রছাত্রী নেতাদের – সকলকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে কারণ তাঁরা ভারতের ক্ষমতাসীনদের প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বা বিরুদ্ধতা ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং আমরা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। ফলত এক অর্থে আমি খুশিই যে আমিও এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি কারণ আমি মোটেই নীরব দর্শক নই, বরং আমিও অংশীদার, এই খেলার অংশ। যে কোনও মূল্যই চোকাতে হোক না কেন, আমি প্রস্তুত।

মনযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।

খণ্ড-27
সংখ্যা-37