অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত স্মরণে
agg

সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত নামে অনুবাদ কবিতার একটি বিখ্যাত সংকলন আছে। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত আর শঙখ ঘোষ - দুই বন্ধুর যুগ্ম সম্পাদিত এই সংকলনটি বিশ্ব কবিতার আবহমান কালের বহু শ্রেষ্ঠ রত্নকে নিয়ে এসেছে বাংলা ভাষায়। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তকে স্মরণ করতে হলে এই সংকলনের নামটির কথা বিশেষভাবে মনে পড়ে। কারণ বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চাকে সপ্তসিন্ধু দশদিগন্তের দিকে প্রসারিত করার মেধাবী অনুশীলন যাঁরা করেছিলেন, অলোকরঞ্জন তাঁদের অন্যতম। বাংলা সাহিত্যের মেধাবী ছাত্র অলোকরঞ্জনের অধ্যাপনা জীবন শুরু হয়েছিল বুদ্ধদেব বসু প্রতিষ্ঠিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭১ অবধি সেখানে পড়িয়ে অলোকরঞ্জন পাড়ি দেন জার্মানীতে এবং আমৃত্যু সেখানকারই স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। তবে বাংলায় আসা যাওয়া কখনো বন্ধ হয় নি। ছেদ পড়েনি বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে তাঁর অতি নিবিড় সংযোগেরও। ছয় দশক ধরে বাংলা কবিতা ও প্রবন্ধ সাহিত্যকে একদিকে তিনি পুষ্ট করেছেন, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে গেছেন অনুবাদকর্ম। জার্মান সহ বিভিন্ন ভাষা থেকে তিনি যেমন অজস্র অনুবাদ করেছেন বাংলা ভাষায়, তেমনি আবার বাংলা ও সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যকে জার্মান অনুবাদের মাধ্যমে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন সে দেশে। বাংলা ও জার্মান ভাষার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রধান দূত ছিলেন তিনি। তাঁর কবিতার স্বতন্ত্র উচ্চারণভঙ্গীটিকে পাঠক সহজে চিনে নিতে পারেন। পঞ্চাশের দশকের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি সমাদৃত। অলোকরঞ্জনের প্রবন্ধও বহুপাঠ ও মননদীপ্তির ঔজ্জ্বল্যের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়। শরণার্থীর ঋতু ও শিল্পভাবনা, ভ্রমণে নয় ভুবনে, ছায়াপথের সান্দ্র সংলাপিকা, এখনো নামেনি বন্ধু নিউক্লিয়ার শীতের গোধূলি, জ্বরের ঘোরে তরাজু কেঁপে যায়, তুষার জুড়ে ত্রিশূলচিহ্ন, ভারতীয় কবিতায় লিরিক ইত্যাদি বইয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি জগতে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

খণ্ড-27
সংখ্যা-42