খবরা-খবর
হুগলির চারটি ব্লকে আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের সমাবেশ
hg

অমিত শাহ বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন, বাংলার তপশিলি, আদিবাসী, মতুয়া জনগোষ্ঠীর ভোট বিজেপি মুখি করতে পারবেন, মুখ্যত এই প্রত্যাশা থেকে। বিগত লোকসভা ভোটে বিজেপির অগ্রগতির অন্যতম প্রধান কারণ ছিল টিএমসি থেকে মুখ ফেরানো গ্রামীণ ক্ষেত্রে নির্ধারক এসসি/এসটি জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত ভোট বিজেপির ভোট বাক্সে যাওয়া।

এবার বাংলায় এসে একদিকে নেতাদের কাছে ২০০ আসনে বিজয় দাবি করলেন, বুথ সংগঠনের পরামর্শ দিলেন অন্যদিকে আদিবাসী বাড়িতে ভোজ সেরে অমিতজী তৃণমূল স্তরে বার্তা ছড়াতে চাইছেন, “আমি তোমাদেরই লোক”!

২০২১-এর বাংলার ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই ভণ্ডামি বাড়তে থাকবে। বিগত লোকসভা ভোটের সময়ও লকেট চ্যাটার্জীরা বারবার ছুটে যান আদিবাসী গ্রামে। আদিবাসী নাচে পা মেলাচ্ছেন, মিডিয়া এই ছবি কভার করে। হুগলি লোকসভায় বিজেপি জেতেও। কিন্তু তারপর লকেট চ্যাটার্জীর দেখা মেলেনি, আদিবাসী পল্লীতে। তিনি তখন ব্যস্ত ছিলেন চন্দননগরের উর্দিবাজারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির কাজে! হুগলি নদীর ওপারের অর্জুন সিং-এর সাথে যৌথভাবে! এমনকি আদিবাসী জনগণ প্যানডেমিক পরিস্থিতিতেও হুগলির বিজেপি এমপিকে পাশে পায়নি। ভোট এলে লকেট চ্যাটার্জীরা তবেই আদিবাসীদের সাথে নাচ করেন! বাকি সময় ভুলে যান। একারণেই, লকডাউনের সময় করোনার বিপদের ঝুঁকি নিয়ে রিলিফের কাজে লকেট চ্যাটার্জীরা থাকেন না।

বিপরীতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি এবং বিশেষত আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ নিজেদের অর্থনৈতিক সীমিত সাধ্যকে ছাড়িয়ে ওই দুঃসময়ে আদিবাসী গ্রামগুলিতে রিলিফের কাজ চালিয়েছে, বিপন্ন আদিবাসীদের পাশে থাকার চেষ্টা চালিয়েছে।

রিলিফ ছাড়াও রেশন আদায়, জবকার্ড আদায়, রেশন কার্ড আদায়, ১০০ দিনের কাজ আদায়ে লাগাতার সক্রিয় থেকেছে সংগঠন।

লকডাউনে হঠাৎ কাজ হারিয়ে দিশেহারা ছিলেন মেহনতিরা। বিশেষত যে সকল পরিবারের ঋণগ্রস্থতা ছিল, তাদের বিপন্নতা ছিল বহু গুণ।

সিপিআই(এমএল) সংগঠকদের নেতৃত্বে পরিচালিত ঋণমুক্তি কমিটি এসময় লাগাতার গরিব ঋণগ্রস্ত, অসহায় পরিবারগুলির পাশে থেকেছে; ভরসা দিয়েছে। এখনো ভরসা দিচ্ছে।

হুগলি জেলার আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক ছিলেন কমরেড বিশ্বনাথ সরেন।

প্রয়াত কমরেডকে লকডাউনের মধ্যেও যথাযোগ্য শেষ বিদায় জানানো, প্রয়াত কমরেডের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংগঠনের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল। জেলা আদিবাসী নেতৃত্বের ভালো অংশের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল।

এই পরিস্থিতিতে অমিত শাহের বাংলা অভিযানের প্রেক্ষাপটে মাত্র ৩ দিনের ব্যবধানে আদিবাসী, মেহনতিদের রুটি, রুজির প্রশ্ন নিয়ে ৬ নভেম্বর জেলার চারটি ব্লকে বিডিও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।

মূলত আদিবাসী ও আয়ারলা নেতৃত্বের তৃণমূল স্তরের উদ্যোগে এই কর্মসূচী। ভোট সর্বস্বতা নয়, গিমিক নয়; দাবি আদায়ে লাগাতার গণ আন্দোলনের চাপ সৃষ্টি করে চলেছে সংগঠন।

গ্রাম বাংলা দীর্ঘ লকডাউনে কর্মহীন থেকে এখন চাষের মরশুমে, মেহনতিরা কর্মহীন থেকে কাজের মরশুমে ঢুকছেন। চলবে অন্তত দেড় মাস। হালকা হতে ডিসেম্বর শেষ। ঠিক ধান কাটা ও আলু চাষের শুরুর মুখে এই কর্মসূচী। ৬ নভেম্বরের কর্মসূচীতে কয়েকটি ব্লকে বুনিয়াদী আদিবাসী জনগণের অংশগ্রহণ ছিল উৎসাহজনক।

আদিবাসী মঞ্চের নভেম্বর কর্মসূচীর দাবি ছিল –
১) লোকপ্রসারে স্বজনপোষণ চলবে না।
২) প্রতি হাতে জবকার্ড, ২০০ দিনের কাজ
৩) গ্রামীণ মেহনতিদের মর্যাদা সহ (আরপিএফ জুলুম), করোনা সুরক্ষিত রেল যাত্রা
৪) গ্রামীণ কারখানাগুলিতে ন্যূনতম মজুরি, ৮ ঘণ্টার শিফট সহ শ্রম আইন কার্যকর করা, খেতমজুরদের সরকার নির্ধারিত মজুরি নিয়ে বিডিও-র হস্তক্ষেপ
৫) লিজ/ভাগচাষি সহ প্রকৃত উৎপাদকদের রবি চাষাবাদে ঋণ, ভর্তুকিতে আলুবীজ, সার সরবরাহ, অভাবী বিক্রি রুখতে অবিলম্বে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয়।

- সজল অধিকারী   

খণ্ড-27
সংখ্যা-40