সিদ্ধান্ত
“অন্নদাতাদের সংহতিতে বাংলা” : লাগাতার কর্মসূচী ঘোষণা কৃষক সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির
dddree

বিজেপি-আরএসএসের সরকারকে ঘিরে কৃষকদের আন্দোলন তীব্র চেহারা নিচ্ছে। দিল্লীর দরজায় কৃষকদের অবস্থান চল্লিশ দিন পেরিয়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ কৃষক সেখানে সংঘর্ষ ও নির্মাণের এক নয়া ইতিহাস তৈরি করছেন। ইতিমধ্যেই প্রাণ দিয়েছেন ষাট জন কৃষক। আদানি-আম্বানি কোম্পানীরাজের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বর্ষামুখ শানিত করেছে কৃষকেরা। সরকার এখন পর্যন্ত আটবার বৈঠক করেও কোন সুরাহার পথ দেখাতে পারে নি। বারবার আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য ‘সারা ভারত কিসান মহাসভা’ সরকারকে দায়ি করে জানিয়েছে যে সরকার একদিকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে আবার অন্যদিকে তাদের মন্ত্রীরা বিপরীত মন্তব্য করে চলেছে । নীতিন গডকরির সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে কর্পোরেটদের কাছে আরও কম দামে ফসল বিক্রি করতে কৃষকদের বাধ্য করা এবং কর্পোরেটদের ইচ্ছেমত চাষ করতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যেই কৃষি আইনগুলি এনেছে বিজেপি সরকার। গত ৪ জানুয়ারী এআইকেএম-এর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাজারাম সিং টিকরি সীমান্তের কৃষক জমায়েতে তাঁর বক্তব্যে কথাগুলি তুলে ধরেন। পশ্চিমবঙ্গ এআইকেএম নেতা কৃষ্ণ প্রামাণিক টিকরি সীমান্তে কৃষকদের মাঝে আছেন। কৃষকদের ওপর লাঠিচার্জকে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানান তাঁরা। আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলি বিজেপি ও এনডিএ শরিকদের বয়কট করার ইঙ্গিত দিয়েছে এবং ৬-২০ জানুয়ারী পর্যন্ত ‘জন জাগরণ অভিযান’ চালিয়ে ২৩ জানুয়ারী ‘আজাদ হিন্দ কিসান দিবস’ পালন করার আহ্বান জানিয়েছে। কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ থেকে আগামী ২৬ জানুয়ারী সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লীতে প্রবেশ করে লালকেল্লা চত্বরে ট্রাক্টর চালিয়ে প্যারেড করার ঘোষণা দিয়েছে। ৭ জানুয়ারী তার মহড়া হিসেবে এক হাজার ট্রাক্টর রেলি করছে হরিয়ানা বর্ডারে। দিল্লী ঘিরে এই কর্মসূচীর সংহতিতে সারা দেশে লাগাতার কর্মসূচী চলবে। কৃষক সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে অমল হালদার ও কার্তিক পাল এক প্রেস বিবৃতিতে বাংলায় নিন্মলিখিত কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন।

দিল্লীর চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ‘অন্নদাতাদের সংহতিতে বাংলা’ এই আহ্বানে আগামী ৯ জানুয়ারী থেকে কলকাতায় এআইকেএসসিসি’র উদ্যোগে এক লাগাতার সংহতি অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মসূচিতে ছাত্র-যুব-মহিলা-শ্রমিক সহ সমাজের সর্বস্তরের গণতান্ত্রিক শক্তিকে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। কর্মসূচির সম্ভাব্য স্থান ধর্মতলা চত্বর। ৬ জানুয়ারী এআইকেএসসিসি’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার বৈঠক থেকে আরও যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা হল :

  • (১) আগামী ২০-২১-২২ জানুয়ারী ২০২১ বৃহত্তর কৃষক সমাবেশের মাধ্যমে রাণী রাসমনি রোডে তিনদিন ব্যাপী অবস্থান সংগঠিত হবে।
  • (২) ২৩ জানুয়ারী ২০২১ আজাদহিন্দ কিষাণ দিবস উৎযাপন করা হবে।
  • (৩) ২৬ জানুয়ারী ২০২১ কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হবে। ঐদিন সংবিধান রক্ষা ও প্রকৃত দেশপ্রেমের আওয়াজকে তুলে ধরে কর্পোরেটের স্বার্থবাহী কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে জেলায় জেলায় ট্রাক্টর সহ কৃষক মিছিল সংগঠিত হবে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৩ জানুয়ারী সর্বত্র কৃষি বিলের কপি জ্বালানো এবং ১৮ জানুয়ারী মহিলা কিষাণ দিবস পালন করা হবে।

ইতিমধ্যে রাজ্যের জেলায় জেলায় কৃষক জাঠা, অবস্থান, মিছিল, সভা প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। জনবিরোধী কেন্দ্রীয় কৃষি আইনকে প্রতিহত করার উপযোগী রাজ্য আইন প্রণয়নের দাবি এআইকেএসসিসি রাজ্য সরকারের কাছে তুলে ধরছে। সাথে সাথে রাজ্য সরকারের কাছে এআইকেএসসিসি’র দাবি, অবিলম্বে আলু সহ অন্যান্য কৃযি পণ্যের সরকারী দর ঘোষণা ও গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করে আলু সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-1