খবরা-খবর
‘আজাদ হিন্দ কিষাণ দিবস’ ও ‘কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস ট্রাক্টর মিছিল’
gtttt

বাঁকুড়া

২৩ জানুয়ারী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে বিষ্ণুপুরে সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে ‘আজাদ হিন্দ কিষাণ দিবস’ পালন করা হয়। সকালবেলা বিষ্ণুপুর পৌরসভার ‘সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ ও আইসা-র যৌথ উদ্যোগে মিউনিসিপ্যালিটিতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয় ও মাল্যদান করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ১৫০-এর অধিক সাফাই কর্মী। ঐ স্মরণসভাতে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন ও AICCTU’র নেতা ফারহান খান, দিলীপ বাউরী, বিল্টু ক্ষেত্রপাল, দিলবার খান ও সংগঠনের অন্যান্য কর্মীরা। চকবাজারে পোকাবাঁধের পাড়ে পুরনো রিক্সা ইউনিয়নের স্থাপন করা নেতাজীর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সেখানেও স্থানীয় ৯নং ওয়ার্ড, ৬নং ওয়ার্ড ও শহর কমিটির পার্টি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে মনোহরতলা-বোষ্টমপাড়াতে ডিওয়াইএফআই পরিচালিত ‘মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণ’ অনুষ্ঠানেও আইসা অংশগ্রহণ করে প্রগতিশীল কাজে ও লড়াইয়ে একতার বার্তা দেয়। উপস্থিত ছিলেন আইসা কেন্দ্রীয় এক্সজিকিউটিভ কমিটির সদস্য মঙ্গল মুর্ম্মু, রাজ্য কাউন্সিল সদস্য গৌরব, সাভাপ্রমস নেত্রী তিতাস গুপ্ত এবং উদ্বৃত্ত-র চাকা ফোরামের প্রান্তিক দাশগুপ্ত।

ওন্দা বিধানসভার নিকুঞ্জপুর স্কুল মোড়ে আজাদ হিন্দ কিষাণ দিবসের বার্তা জনতার সামনে তুলে ধরা হয়। সুভাষ চন্দ্র বোসের ছবিতে মালা দেওয়ার পর সভায় বক্তব্য রাখেন ফারহান, তিতাস ও মঙ্গল মুর্ম্মু। এরপর শ্লোগানের সাথে মিছিল করে নিকুঞ্জপুর বাজারে যাওয়া হয়। মিছিল থেকে তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবি ওঠে এবং একই সাথে ভূমিহীন মানুষের পাট্টা ও বনের তপশীল মানুষদের অধিকারকে সুনিশ্চিত করার দাবি ওঠে। বাজারে পৌঁছেও একটি ছোটো সভা করা হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন আয়ারলা-র নেতা আদিত্য ধবল, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের নেতা রবিদাস মুর্ম্মু ও সিপিআই(এমএল)-এর জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জী।

ggg

কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস বাঁকুড়ায়

দিল্লীতে চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ও কৃষি-কৃষকবিরোধী নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে ওন্দা বাজারে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে প্রতীকীভাবে গণঅবস্থান শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। শুরুতে শতাধিক মানুষের মিছিল হয় সারা ভারত কিষান মহাসভার জেলা নেতা বৈদ্যনাথ চীনার নেতৃত্বে। অবস্থান শুরু করা হয় কৃষক আন্দোলনের যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করে। এই অবস্থান বিক্ষোভে কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সিপিআই-এর জেলা নেতা কল্যাণ সিং এবং আরএসপি-র জেলা নেতা সুনীল পাত্র। অবস্থান মঞ্চে বক্তা হিসেবে আইপোয়ার জেলা নেত্রী তিতাস জনতার মনযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল)’র জেলা কমিটির সদস্য ফারহান ও জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জী। পরবর্তীতে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের নেতা রবিদাস মুর্ম্মু, বিষ্ণুপুর পৌরভার AICCTU’র নেতা বিল্টু ক্ষেত্রপাল, আইসা’র নেতা গৌরব ব্যানার্জী, ক্ষেতমজুর নেতা আদিত্য ধবল। কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস ডাক দেওয়ার কারণ ও আজকের দিনে কৃষক বিদ্রোহের ঢেউ উত্তাল হওয়ার কি ভীষণ প্রয়োজনীয় তা ব্যাখ্যা করেন সিপিআই(এমএল) বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য ফারহান। জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জী বলেন, সর্বোপরি বিজেপি মানে বিপর্যয় আর এই বিপর্যয়কে একদিকে আটকাতে হবে এবং অন্যদিকে পরাস্তও করতে হবে কৃষক-ভূমিহীন- মজদুরের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে, ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে।

অন্যদিকে রাণিবাঁধ বিধানসভায় সকাল থেকে সারা দিনব্যাপী প্রচার চালানো হয় হীড়বাঁধ, খাতড়া ও রাণিবাঁধ ব্লক জুড়ে প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে পৌঁছোয়, ছোট ছোট সভা আকারে। সেখানে পথসভাগুলিতে বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা কমিটির যুবনেতা রামনিবাস বাস্কে এবং প্রান্তিক দাশগুপ্ত, আইসা কেন্দ্রীয় কমিটির সদাস্য মঙ্গল মুর্ম্মু এবং আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ ও পার্টির রাজ্য নেতা সুধীর মুর্ম্মু।

ggg

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

গত ২৩ জানুয়ারী সিপিআই(এমএল) দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা অফিস এবং বজবজ রণজিৎ মাঠে নেতাজী জন্মজয়ন্তী ও আজাদ হিন্দ কিষাণ দিবস পালিত হয় আইসা এবং আরওয়াইএ বজবজ জোনালের পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন আইসা নেত্রী অনিন্দিতা মালিক, আরওয়াইএ নেতা সেখ সাবির, আশুতোষ মালিক সহ আরো অনেকে। পার্টির জেলা অফিসের সামনে কর্মসূচীতে ছিলেন জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার সহ জেলা নেতৃবৃন্দ অঞ্জন ঘোষ, দেবাশীষ মিত্র লক্ষীকান্ত অধিকারী সহ আরো অনেকে। বজবজ গ্রামে ২৫ জানুয়ারী আয়ারলার নেতৃত্বে মশাল মিছিল হয়। উপস্থিত ছিলেন আয়ারলা জাতীয় কাউন্সিল সদস্যা দেবযানী গোস্বামী, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বজবজ গ্রাম লোকাল কমিটির সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ দত্ত, শ্যামসুন্দর গোস্বামী সহ আরো অনেকে।

২৬ জানুয়ারী বজবজে অবস্থান কর্মসূচী পালন হয়। বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার, বজবজ শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন ঘোষ, গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন রাজা (সেখ সাবির)। উপস্থিত ছিলেন জেলা আইপোয়া নেত্রী কাজল দত্ত, আয়ারলা’র নেত্রী দেবযানী গোস্বামী, এআইসিসিটিইউ নেতা শিবন ধর, লক্ষীকান্ত অধিকারী, অঞ্জনা মাল, যুবনেতা আশুতোষ মালিক, ‘চলার পথে’ সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি দেবাশিস মিত্র এবং আরো অনেকে। ঐদিন বিকালে বাখরাহাটে সারা ভারত কিষাণ মহাসভা ও এআইকেএস’র নেতৃত্বে বাখরাহাট নতুন রাস্তা মোড় থেকে রায়পুর মোড় অবধি মিছিল হয় কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে। উপস্থিত ছিলেন এআইকেএম দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক দিলীপ পাল সহ আরো অনেকে।

vdee

কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস পালন পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকে

দিল্লীর কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন, ট্রাক্টর নিয়ে লক্ষ লক্ষ কৃষকদের কুচকাওয়াজের সংহতিমুলক সমর্থনে সারা দেশের সাথে সাথে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন বিধানসভার গ্রাম-গ্রামান্তরে ট্রাক্টর নিয়ে পরিক্রমা করা হয়।

কালনা বিধানসভার অকালপোষ, বৈদ্যিপুর ও বাদলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সমস্ত গ্রামাঞ্চলে ৪টি টাক্টর, ১টি ছোট লরি ও ১৮টি মোটর বাইক নিয়ে পরিক্রমা করা হয়। আদিবাসী মহিলা সহ ৭০ জন কর্মীর অংশগ্রহণে প্রচার অভিযান সফল হয়। নেতৃত্ব দেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের কালনা লোকাল কমিটির সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। সামিল হয়েছিলেন পীযুষ কুমার সাহানা, জেলা কমিটির সদস্য প্রদ্যুত ঘোষ, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা সুমি মজুমদার ঘোষ ও হাফিজুর রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মিছিল পতাকা ব্যানারে সুসজ্জিত ছিল।

মন্তেশ্বর বিধানসভায় ১১টার সময় কুসুমগ্রাম বাজার থেকে শুরু করে ইছু ভাগড়া, পিপলন, মধ্যমগ্রাম, দেওয়ানীয়া মোড়, সাতগাছিয়া বাজার, পাহাড়হাটী, বীজপুর, মন্ডল গ্রাম, মালম্বা, ভাদুই, উজানিয়ার মোড় হয়ে ৩টার সময় কুলুট গ্রামে এসে দুপুরের খাওয়ার বিরতি করা হয়। আবার সাড়ে তিনটের সময় আরম্ভ করে মন্তেশ্বর বিডিও অফিস থানার বাজার ও মালডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজার পরিক্রমা করে কুসুমগ্রাম বাজারে সমাপ্ত করা হয়। ২টি টাক্টর ব্যানার ফেস্টুনে সুসজ্জিত ছিল। ৩০ জন লোক ২টি ট্রাক্টর ছিল। ছিলেন রাজ্য কমিটির সদস্য আনসারুল আমন মন্ডল ও সজল পাল, জেলা কমিটির সদস্য শিবু সাঁতরা, সমীর বসাক ও জিয়াদুল সেখ। ছিলেন অশোক চৌধুরী ও মনসুর মন্ডল। বিভিন্ন গঞ্জে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখা হয়। লিফলেট বিলি করা হয়।

দাবি ছিল
১) নয়া কৃষি আইন ও বিদ্যুত বিল ২০২০ বাতিল করতে হবে।
২) বাস্তুহীনদের বাস্তু, আবাস যোজনায় সমস্ত গরিব মানুষের ঘর ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। দখলে থাকা বাস্তু জমি গরিব মানুষের জন্য বাস্তু আইন কার্যকরী করার মাধ্যমে রেকর্ড করতে হবে।
৩) কর্মনিশ্চয়তা আইনে বছরে ২০০ দিন কাজ ও ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। ব্যক্তিগত জবকার্ড চালু করতে হবে। কাজের নিশ্চয়তার মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) বড় বড় কোম্পানিদের ঋণ ছাড় নয়, গরিবদের ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সমস্ত ধরনের ঋণ মুকুব করতে হবে। কিস্তি আদায়ের নামে গরিব মহিলাদের অসম্মান অপমান ও হেনস্থা বন্ধ করতে হবে।
৫) ফসলের দেড়গুণ দাম নিশ্চিত করতে হবে। ১,২০০ টাকা কুইন্টাল দামে সরকারকে কৃষকদের থেকে আলু ক্রয় করতে হবে। প্রতিটি ব্লকে বহুমুখী হিমঘর করতে হবে। হিমঘরে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গরিব ও প্রান্তিক চাষিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনতিভুক্ত ভাগচাষী ও পাট্টাহীন গরিব কৃষকদের শস্যবীমা, কৃষক বন্ধু প্রকল্প ও অন্যান্য সরকারী প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। সার, ডিজেল কীটনাশক ও বিদ্যুত কৃষকদের মধ্যে সুলভ মুল্যে সরবরাহ করতে হবে।

এই এলাকার মানুষের মধ্যে ভালো উৎসাহ সৃষ্টি করেছে অনেক জায়গাতেই মানুষ হাত তুলে অভিনন্দন জানিয়েছেন ও যাত্রীদের চা-পানের অনুরোধ করেছেন।

জামালপুর বিধানসভার ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় টাক্টরে করে ৩৫ জন ঋণগ্রস্ত মহিলাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঋণমুক্তি কমিটি, এআইকেএম এবং আয়ারলা’র ব্যানারে কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের সংহতিতে প্রচার পরিক্রমা করা হয়। বেলা ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত কর্মসূচী চলে। নেতৃত্ব দেন কুনাল বক্সী।

aaare

শিলিগুড়ি

শিলিগুড়ি শহরে ২৫ জানুয়ারী এআইসিসিটিইউ সহ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের আহ্বানে দুপুর ২টো থেকে ধর্ণা অবস্থান শুরু হয়। এআইসিসিটিইউ, সিটু, আইএনটিইউসি, ইউটিইউসি, এআইটিইউসি সহ অন্যান্য ফেডারেশন অংশগ্রহণ করে। ধর্ণা অবস্থান সারারাতব্যাপী চলে। ধর্ণা অবস্থানে বক্তব্য রাখেন এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সম্পাদক বাসুদেব বসু, সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন মোজাম্মেল হক। সাংস্কৃতিক কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে মীরা চতুর্বেদী ও গৌতম সঙ্গীত ও কবিতা পাঠ করেন। রাত্রি ১২টায় শপথ বাক্য পাঠ করা হয়।

২৬ জানুয়ারী সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তারপরে ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তির পাদদেশ থেকে কৃষকদের সমর্থনে বড় ট্রাক্টর মিছিল শহর পরিক্রমা করে। এই ট্র্যাক্টর র্যাবলিতে অংশগ্রহণ করেন সিপিআই(এমএল) দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, জেলা কমিটি সদস্য পবিত্র সিংহ, শরৎ সিংহ, নেমু সিং, অপু চতুর্বেদী, মোজাম্মেল হক, পৈসাঞ্জুসিং এবং ফাঁসীদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রের সম্ভাব্য প্রার্থী সুমন্তি এক্কা।

bee

উত্তর ২৪ পরগণা

২৬ জানুয়ারী সকাল ১০টায় নৈহাটিতে ট্রাক্টর সহ টোটো, সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে শতাধিক শ্রমিক-ছাত্র-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মিছিল হয়। ট্রাক্টরের উপরে ঝান্ডা প্ল্যাকার্ড সহ ছিলেন কৃষক সহ নৈহাটি গ্রামীণ নেতৃবৃন্দ। সামিল হন নৈহাটির নাগরিক সমাজেরও বিশিষ্ট মানুষজন। হাজিনগর-গৌরীপুর-নৈহাটি শহর-গরিফা-গরুরফাঁড়ি অঞ্চল জুড়ে প্রায় ১২ কিমি এই সুসজ্জিত মিছিল পরিক্রমা করে। দুধারে অগণিত মানুষ উৎসাহ ভরে এই মিছিল দেখেন এবং কেউ কেউ জানজট ছাড়িয়ে মিছিলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতাও করেন।

সংহতি মিছিল বেলঘরিয়ায়

বেলঘরিয়া কৃষক আন্দোলনের পক্ষে যৌথ সংহতি মিছিল বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে প্রবর্তক জুটমিল গেটে সভা হয়। বক্তা ছিলেন সিপিআই(এম)-এর প্রদীপ মজুমদার, সিপিআই(এমএল)-এর শিবশঙ্কর গুহরায়, জাতীয় কংগ্রেস-এর দিব্যেন্দুমিত্র, সিপিআই-এর বরুণ চক্রবর্তী, পিডিএস-এর প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত এবং সিপিবি-এর সন্দীপ পাল। সভা পরিচালনা করেন নবেন্দু দাশগুপ্ত।

gvvvv

 

২৩ জানুয়ারী বেলঘরিয়ায় আইসা’র আয়োজনে রক্তদান শিবির

শুধুমাত্র নিজেদের ফসলের উপযুক্ত সহায়ক মূল্য বুঝে নেওয়া নয়, কৃষি ও কৃষক স্বার্থ বিরোধী তিন নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে, বিশেষ করে কৃষিতে কোম্পানিরাজ কায়েমের বিরুদ্ধে লড়ছেন অন্নদাতারা। তাদের দেশপ্রেম, সাহস, আত্মত্যাগ ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেছে। অন্যদিকে দেশনায়ক সুভাষচন্দ্রের মতো মজ্জায় মজ্জায় অসাম্প্রদায়িক মানুষটিকে বিদ্বেষ ছড়ানোর কারবারি বিজেপি-আরএসএস নিজেদের ঘৃণ্য স্বার্থে প্রচারে ব্যবহার করার চক্রান্ত ছাত্রদের ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ করেছে। তাই আইসার বেলঘরিয়া জোনাল কমিটি ২৩ জানুয়ারী সুভাষ চন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মদিনে দেশব্যাপী চলমান কৃষক আন্দোলনে সংহতি জানাতে এবং ধর্মে ধর্মে বিভেদের বিরুদ্ধে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরতে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। এই শিবির চলে বেলঘরিয়া দেশপ্রিয়নগরে ‘সোনার বাংলা’ ভবনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কার্যালয় চত্বরে। ভারতবর্ষের বুকে ফ্যাসিবাদের ক্রমপ্রকাশ্য ভয়ঙ্কর রূপের বার্তা তুলে ধরে, এই দিন যখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের স্মৃতিতে আয়োজিত একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রী রাম’ সাম্প্রদায়িক শ্লোগান ওঠে, তখন এই রক্তদান শিবিরের মিলন মঞ্চ থেকে ভেসে আসে, হিন্দু-মুসলিম ঐক্য, সম্প্রীতির বার্তা। স্থানীয় মানুষরা দেখলেন ছাত্রছাত্রী, যুবক যুবতী, চটকলের শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান ও মহিলারা পাশাপাশি রক্ত দিলেন। রক্ত সংগ্রহ করে শ্রীরামপুরের বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতি।

এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইসা’র রাজ্য সভাপতি নীলাশিস বসু, উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক স্বর্ণেন্দু মিত্র, আইসা রাজ্য নেত্রী অন্বেষা সহ উৎসাহী ছাত্রীছাত্র বন্ধুরা। বক্তব্য রাখেন ‘কামারহাটি আইডিয়াল এডুকেশন সোসাইটি’র সেরাজ নোমানি। তিনি বলেন “একটি দল রক্তেরও সাম্প্রদায়িকীকরণ করছে, এখানে আপনারা ঐক্যের বার্তা তুলে ধরেছেন”। বিশিষ্ট নাট্যকার ‘শৌভিক সাংস্কৃতিক চক্র’র গৌতম মুখার্জি সাবলীল বক্তৃতায় বলেন, “আমাদের অতীত ইতিহাসকে আমরা ভুলে যাইনি, তেমনই তোমরা ছাত্ররাই ভবিষ্যৎ, আর আছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন”। রক্ত দেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডাঃ শান্ত সবুজ দাস ও ডাঃ দেবাশিস মুখার্জি। ছাত্রদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ শুভজিৎ ভট্টাচার্য, সমাজসেবী বিদ্যুৎ দেবনাথ, দেবজ্যোতি মজুমদার, মনোবিদ গোপাল শেঠিয়ার, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা অর্চনা ঘটক। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক সুব্রত সেনগুপ্ত, এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য কমিটির সভাপতি অতনু চক্রবর্তী এবং বিসিএমএফ নেতা মাজাহার খান। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বরুণ চক্রবর্তী (সিপিআই), কমরেড ঝন্টু মজুমদার (সিপিএম), শান্তনু চ্যাটার্জি (পিডিএস) এবং ঝুমন পাল (সিপিবি)।

শারীরিক কারণে এবং সময় অতিক্রান্ত হওয়ার জন্য আরও বেশ কয়েক জনের রক্ত দেওয়া হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত মোট ৩৫ জন রক্ত দিয়েছেন। আইসা বেলঘরিয়া জোনাল কমিটির সকল সদস্য, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বেলঘরিয়া আঞ্চলিক কমিটি, স্থানীয় পার্টি সদস্য, সমর্থক এবং স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় রক্তদান অনুষ্ঠান সফল হয়। রক্তদান শিবিরকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য আইসা বেলঘরিয়া জোনাল কমিটির পক্ষ থেকে এলাকার সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয়-ধর্মনিরপেক্ষ-শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে রক্তিম অভিনন্দন জানানো হয়।

- রিপোর্ট দীপায়ন

gaeee

নদীয়া জেলায় প্রচার পরিক্রমা ও ট্রাক্টর মিছিল

২৬ জানুয়ারী নদীয়া জেলায় ‘কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস’ নানাবিধ কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করা হয়। কোম্পানিরাজের হাত থেকে কৃষি-কৃষক-খাদ্য সুরক্ষা ও রেশন ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে, মোদীরাজের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পক্ষে কৃষক আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান তুলে ধরে বড় এলাকা জুড়ে প্রচার করা হয়।

সকাল ১০টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এক প্রচারগাড়ি ধুবুলিয়া ব্লকের বেলপুকুর অঞ্চল সহ বিভিন্ন গ্রাম পরিক্রমা করে। দিল্লীর কৃষক আন্দোলনের বার্তা পৌছে দেওয়া এবং এইরাজ্যে কৃষকদের বিভিন্ন দাবিগুলিকে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকদের মধ্যে প্রচার করা হয়। গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারী দরে কৃষকদের অবিক্রিত ধান কেনা, কাজের আকালের এই সময়ে বন্ধ হয়ে থাকা ১০০ দিনের কাজ চালু করা প্রভৃতি দাবিগুলি প্রচারে গুরুত্ব পায়। অংশগ্রহণ করেন পার্টির জেলা সম্পাদক সুবিমল সেনগুপ্ত, যুব সংগঠনের সন্তু ভট্টাচার্য, পার্টির এরিয়া সম্পাদক শংকর রায় প্রমূখ।

নাকাশীপাড়া ব্লকে বেথুয়াডহরী থেকে সকাল সাড়ে দশটায় প্রচার পরিক্রমা শুরু হয়। তারপর বিল্বগ্রাম, ধর্মদা, মুড়াগাছা অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে প্রচার গাড়ি যায়। ছোট ছোট পথসভা ও লিফলেট বিলি করা হয়। বেলা ৩টায় গাছা বাজার থেকে প্রচার পরিক্রমা ট্রাক্টর মিছিলে পরিণত হয়। লাল পতাকায় সুসজ্জিত ট্রাক্টর মিছিল গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন পথ দিয়ে চলার সময়কালে ব্যাপক মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা জানায়। কৃষক প্রজাতন্ত্র পালন করার আহ্বানের সাথে শোভিত তেরঙা জাতীয় পতাকা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরিশেষে নতুন নওপাড়া গ্রামে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের বহু মানুষ ভীড় করে দাঁড়িয়ে পথসভা শোনেন। দিল্লীর বুকে চলমান কৃষক বিক্ষোভ মিছিলের বার্তা বক্তব্যে তুলে ধরা হয়। অংশগ্রহণ করেন পার্টি, এআইকেএম, আয়ারলার নেতৃবৃন্দ জয়তু দেশমুখ, কাজল দত্তগুপ্ত, কৃষ্ণ প্রামানিক, হবিবুর রহমান, বাবর আলি সেখ।

কৃষ্ণনগর শহরে যৌথ ট্রাক্টর মিছিলের কর্মসূচীতে এআইসিসিটিইউ’র একটা প্রচার গাড়ি অংশগ্রহণ করে, তাতে ছিলেন শ্রমিক সংগঠনের অমল তরফদার, নীহার ব্যানার্জী, স্বপন দাস প্রমূখ।

dddg

ধনেখালিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল

“কুয়াশার মেঘ দুহাতে সরিয়ে দূরে
পরাজিত করে শীতের ঠান্ডা হাওয়া
কিষাণ-কিষাণি শত মুষ্টিতে ধরে
লাল পতাকার দৃপ্ত মিছিলে চলে।”

সত্যিই ২৬ জানুয়ারী শীতের কুয়াশা ভেদ করে রাজধানী দিল্লীতে ‘কৃষক প্রজাতন্ত্রের প্যারেডে’ যখন সমুদ্রের মতো ট্রাক্টর মিছিল আছড়ে পড়ছে তখন হুগলীর ধনেখালি বাজারে লাল লহর তুলে প্রবেশ করছে ট্রাক্টরের কাফেলা। দিল্লীর ঐতিহাসিক ট্রাক্টর মিছিলকে অভিনন্দন জানিয়ে, কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ও মোদী-শাহ চক্রের কোম্পানিরাজ কায়েমের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আয়োজিত সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের ‘কৃষকদের ট্রাক্টর প্যারেড’ আক্ষরিক অর্থেই ধনেখালি ব্লকের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে আলোড়িত করে। বেলা প্রায় বারটা। মেঘের চাদর সরিয়ে সবে যখন সূর্যের কিরণ আলতো করে দেখা দিচ্ছে তখন ধনেখালি হল্ট স্টেশন সংলগ্ন মল্লিকপুর থেকে ট্রাক্টর মিছিল যাত্রা শুরু করে। প্রথম ট্রাক্টরটিতে লাল পতাকার পাশাপাশি উড়েছে তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা। হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের আদর্শকে মুছে দিয়ে যখন মনুসংহিতাকে ভারতের সংবিধান হিসেবে তুলে ধরার ঘৃণ্য প্রয়াস চালাচ্ছে তখন জাতীয় পতাকার গোরব রক্ষার ভার তো কমিউনিস্টদের নিতেই হয়। প্রথম ট্রাক্টরটিকে ধরে এক-দুই করে মোট পাঁচটি ট্রাক্টর, একটি মোটর ভ্যানে ঠাসা গরিব কৃষক, খেতমজুর ও গ্রামীণ মেহনতিরা এই মিছিলে অংশ নিয়েছেন। মিছিলকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লাল পতাকা গাঁথা পাঁচটি মোটর বাইক এগিয়ে চলে মিছিলের পুরোভাগে। ফিডার রোড ধরে মাজনান, শিবাইচন্ডী, ধনেখালি গঞ্জ হয়ে মিছিল প্রথম দফায় এগিয়ে চলে কানানদী বাজার অবধি। মিছিলের সঙ্গে থাকা প্রচার গাড়ি থেকে দেশ বিরোধী তিন কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল ২০২০ প্রত্যাহারের দাবির সাথে সাথে সার, বীজ, ডিজেল ইত্যাদি কৃষি সরঞ্জামে সরকারের পর্যাপ্ত ভরতুকি প্রদান, গ্রামীণ মজুরদের বছরে ২০০ দিন কাজ,বেকারদের কর্মসংস্থান, কৃষি ও মাইক্রো ফিনান্সের ঋণ মকুব কার্যকরী করার আহ্বান রাখা হয়। এনআরসি ও নয়া নাগরিকত্ব আইন বাতিলেরও দাবি জানানো হয়। গঞ্জ ও বাজার এলাকায় যখনই মিছিল পৌঁছেছে, জনগণের প্রতি পার্টির আহ্বানকে মানুষ উদগ্রীব হয়ে শুনেছেন। বিশেষ করে সজল অধিকারী ও খেতমজুর ঘর থেকে উঠে আসা শ্রাবণী মালিকের বক্তব্য সকলকে আকৃষ্ট করে। ফিরতি পথে জয়হরিপুর গ্রামে কিছুক্ষণ বিরতি ও দুপুরের আহারের পর মিছিল পুনরায় এগিয়ে চলে বেলমুড়ি স্টেশনের দিকে। বাগনান, গৌরীপুর হয়ে মিছিল ফিডার রোড ধরে ধনেখালি হল্টে এসে শেষ হয়।

কৃষকদের ট্রাক্টর প্যারেডের সমগ্র কর্মসূচীটি পরিচালনা করেন পার্টির যুব নেতা সজল দে। কর্মসূচীটিতে পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার, এআইকেএম নেতা তপন বটব্যাল, আয়ারলা নেতা নিরঞ্জন বাগ, গোপাল রায়, বিনয় দাস, আইপোয়া কর্মী সোমা রায় (মালিক) প্রমুখ নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

geee

উত্তরপাড়া বিধানসভা জুড়ে ট্রাক্টর ও বাইক মিছিল

জাতীয় রাজধানীর বুকে নজিরবিহীন ট্রাক্টর প্যারেডের মাধ্যমে যখন ভারতবর্ষের অন্নদাতারা ইতিহাস রচনা করছেন তখন হুগলির উত্তরপাড়া বিধানসভার একটা বড় অংশ প্রত্যক্ষ করলো সেই কৃষকদের সমর্থনে এক লাল ঝাণ্ডার উদ্দীপনাময় শোভাযাত্রা। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন উত্তরপাড়া থানা এরিয়া কমিটির অফিস অর্থাৎ কোন্নগর ২নং কলোনি বাজার এলাকা থেকে সকাল ১০-৩০ টায় শুরু হয় ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা ও পতাকায় তিন তারা চিহ্নিত পার্টির লাল ঝাণ্ডায় সুসজ্জিত একটি ট্রাক্টর ও প্রায় ১৫টি বাইকের সুশৃঙ্খল মিছিল। এছাড়াও ট্রাক্টরটিকে চারদিকে ফ্লেক্স ও কমরেডদের নিজ হাতে লেখা কাপড়ের ব্যানারে মুড়ে ফেলা হয়। পার্টি অফিস থেকে মিছিল শুরু হয়ে জিটি রোড দিয়ে প্রবেশ করে কোন্নগর বাটা বাসস্টপেজ হয়ে ক্রাইপার রোডে। এই রাস্তা দিয়ে কোন্নগর স্টেশন পেরিয়ে পশ্চিমে নবগ্রাম ও নৈটি রোডের কিছুটা অংশ পরিক্রমা করে। এরপর পুনরায় স্টেশনের পূর্বদিকে এসে কোন্নগর চলচিত্রম মোড় দিয়ে জোড়পুকুর এলাকা হয়ে আবার জিটি রোডে উঠে সোজা উত্তরপাড়ার দিকে যায়। উত্তরপাড়া গণভবনের পাশ দিয়ে শহরের ভেতরের বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে শালিমার কারখানা ও উত্তরপাড়া স্টেশন, কাঁঠালবাগান বাজার, অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ স্কুল চত্বর হয়ে পুনরায় শখের বাজার বাসস্টপেজ দিয়ে জিটি রোডে এসে কোন্নগর ধাড়সা স্টপেজ হয়ে পার্টি অফিসে ফেরত আসে এই মিছিল। একঝাঁক ছাত্র-যুব কণ্ঠে অবিরাম স্লোগান ওঠে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ও সংগ্রামরত লাখো কৃষককে লাল সেলাম জানিয়ে। পথে এক জায়গায় বিজেপির জমায়েতের একেবারে মুখোমুখি হয় এই মিছিল। তারস্বরে “ফ্যাসিবাদী-আরএসএস-বিজেপি ভারত ছাড়ো” স্লোগান তুলে বিজেপির ধর্মীয় মৌলবাদী স্লোগানকে ছাপিয়ে যান কমরেডরা। গোটা বিধানসভার যতটা এলাকা পরিক্রমা করে মিছিল ততটাই সাধারণ মানুষ ঘর-বাড়ি, দোকানপাট থেকে বেরিয়ে এসে উৎসুক হয়ে মিছিলটি দেখেন এবং বেশ কিছু মানুষকে মুষ্টিবদ্ধ সমর্থনসূচক হাত ওঠাতে দেখা গেল মিছিলের উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য বাম দল ও অবিজেপি বিভিন্ন রাজনৈতিক মানুষকেও ইতিবাচক দৃষ্টি নিয়ে মিছিল ক্যামেরাবন্দী করতে দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে বেশ ছাপ ফেলার মতো কর্মসূচী সংগঠিত হয়েছে বলেই মনে করছেন উদ্যোক্তা পার্টি কমিটির সাথীরা।

একই দিনে নয়া কৃষি আইন বিরোধী শ্রীরামপুর নাগরিক উদ্যোগের আহ্বানে উত্তরপাড়া গৌরী সিনেমার সামনে থেকে সকাল ৯টায় শুরু হয় এক বর্ণাঢ্য গাড়ি মিছিল। ট্রাক, মোটর, টোটো সহ এক লম্বা শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেয় নবগঠিত ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা’ সহ আরো অনেক গণরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। জিটি রোড দিয়ে হিন্দমোটর, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটি, চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর, মানকুন্ডু, চন্দননগর হয়ে মিছিল শেষ হয় চুঁচুড়া ঘড়ির মোড় অতিক্রম করে কোর্ট সংলগ্ন মাঠে। চাঁপদানি থেকে এঙ্গাস জুটমিলের এআইসিসিটিইউ ইউনিটের শ্রমিক কমরেডরা এবং চন্দননগর তালডাঙা মোড় থেকে এআইপিএফের সাথীরা এই পরিক্রমায় সামিল হন। গোঁদলপাড়া ও তেলিনিপাড়া এলাকা থেকে ছাত্র সংগঠন আইসার সাথীরা কয়েকজন মিছিলে যুক্ত হন। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, এআইপিএফের তরফে ভিয়েত ব্যানার্জী, এপিডিআরের অমিতদ্যুতি কুমার সহ আরো অনেকে। পরিবেশিত হয় প্রতিরোধের সংস্কৃতির কিছু অনুষ্ঠান। ঐদিন সন্ধ্যাতেই কোন্নগর জোড়পুকুর সংলগ্ন ভগৎ সিং মূর্তির সামনে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে পথসভা সংগঠিত করে গণ সংগঠন ভগৎ সিং যুব ব্রিগেড। ঐ সভায় কৃষক শহীদ ও শহীদ-এ-আজম ভগৎ সিংয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পরে এলাকার কিছু দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের হাতে খাতা, পেন তুলে দেওয়া হয়। বক্তব্য রাখেন ছাত্র সংগঠন আইসার তরফে অসীম সরকার ও সৌরভ, আরওয়াইএসএফ-এর রৌণক মৌলিক ও উদ্যোক্তা সংগঠনের তরফে বরুণ গুহ। সভাটি সঞ্চালনা করেন যুব ব্রিগেডের আহ্বায়ক ব্রহ্মা মন্ডল। উপস্থিত ছিলেন যুব সংগঠন আরওয়াইএ এবং উদ্যোক্তা সংগঠনের অন্যতম আরো তিন দস্যু অতনু পাল, লক্ষ্মী গুহ ও দীপক দাস।

২৩ জানুয়ারী আজাদ হিন্দ কিষান দিবসে সকাল ১০টায় কোন্নগর পার্টি অফিসে কর্মীরা সমাবেশিত হয়ে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা ও মেহনতি জনতার লাল ঝাণ্ডা উত্তোলন করেন। এরপরে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তাঁর ও কৃষক আন্দোলনের সকল শহীদকে স্মরণ করে নীরবতা পালন করা হয়। পথচলতি কয়েকজন মানুষ ও এলাকার একঝাঁক শিশুও এই শহীদ স্মরণে অংশ নেন। নেতাজী লড়াইয়ের লক্ষ্য, কৃষক ও আম আদমির গণতন্ত্র এবং বিজেপি আরএসএস-এর সংবিধান ধ্বংসকারী ফ্যাসিবাদী ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে বক্তব্য রাখেন এরিয়া কমিটির সদস্য সৌরভ। এই কর্মসূচীর আগে এদিন সকাল ৮টা থেকে এখানকার কমরেডরা উত্তরপাড়া ঘড়িবাড়ি মাঠ অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের হাত থেকে রক্ষার নাগরিক মিছিলেও অংশ নেন।

gge

২৬ জানুয়ারী কলকাতার কর্মসূচী

২৬ জানুয়ারী কলকাতার বুকে ১৬ বাম দলের তরফ থেকে দু’টো মিছিল দু’টো অঞ্চল থেকে বেরোয়। একটা হাজরা মোড়, আরেকটা রাজাবাজার থেকে। দু’টো মিছিল বিকাল ৪টার সময় শুরু হয়ে পার্ক সার্কাসে মিলিত হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সভা হয়, যেখানে বামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। পার্টির তরফ থেকে সেখানে বক্তব্য রাখেন রাজ্য নেত্রী ইন্দ্রাণী দত্ত। দু’টো মিছিলেই পার্টির ব্যানার নিয়ে কমরেডরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, নো-এনআরসি ব্যানারে শিয়ালদহ বিগ বাজার থেকে এক বর্ণাঢ্য মিছিল বেরোয় যেখানে আইসা, আরওয়াইএ সামিল হয়। অমলেন্দু ভূষন চৌধুরী, অতনু চক্রবর্তী ও এই মিছিলে পা মেলান। মিছিল ধর্মতলায় কর্পোরেশনের কাছে এক সভায় পরিণত হয়। প্রসেনজিত বোস, সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, মতুয়া মহাসংঘ, জয় কিষানের পক্ষ থেকে অভিক সাহা সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গসেখানে বক্তব্য রাখেন। আইসা, আরওয়াইএ-র পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সৌমেন্দুমিত্র ও তমাল চক্রবর্তী।

বিকালে ৮বি বাস স্ট্যান্ডে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ মঞ্চের পক্ষ থেকে এক সভা হয়। সেখানে বিভিন্ন বক্তা তাদের বক্তব্যে ব্যাখ্যা করেন, কেন আসন্ন নির্বাচনে নির্বাচকমন্ডলী বিজেপিকে ভোট দেবেন না। মৌসুমি ভৌমিক অসাধারণ সঙ্গীত পরিবেশন করে বলেন, কিভাবে আজ আমাদের ভারতীয় সত্ত্বা বিপন্ন হচ্ছে, মানবাধিকার আন্দোলনের সংগঠক সুজাত ভদ্র আরএসএস’র জন্মবৃত্তান্ত ব্যাখ্যা করে দেখান এই বিজেপি সংখ্যালঘুদের কিভাবে নিধন করছে। কুশল দেবনাথ বলেন, কোন প্রয়োজন থেকে এই মঞ্চ গড়ে উঠেছে। অতনু বলেন, এই বিজেপির আমলে সমস্ত ফ্রন্টে কিভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে আমাদের দেশ – অর্থনীতি, সংস্কৃতি, গণতন্ত্র, সমস্ত দিক থেকে। সভা শেষে সেখানে চিত্র প্রদর্শনী হয় চলমান কৃষক আন্দোলনের উপর।

হাওড়া

দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে সকালে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন হাওড়া জেলা কমিটির পক্ষ থেকে হাওড়া স্টেশনে নেতাজীর মূর্তিতে মাল্যদান এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এই কর্মসূচীতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ছাড়াও উপস্থিত ছিল হাওড়া জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতৃত্ব ও সিপিআই(এম) সহ অন্যান্য বাম দলগুলোর নেতৃত্ব। পার্টির পক্ষ থেকে জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্ত নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করেন এবং এই দিনের বিশেষ তাৎপর্য তুলে ধরেন। ওই দিনেই পার্টির বালি-বেলুড় লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে সকাল দশটায় বালি শান্তিরাম রাস্তায় নেতাজীর ১২৫তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হয়। সেই সভায় বক্তব্য রাখেন বালি-বেলুড় লোকাল কমিটির সম্পাদক নিলাশিস বসু। ২৬ জানুয়ারী সারা ভারত কিষান মহাসভা এবং পশ্চিমবঙ্গ কৃষিমজুর সমিতির পক্ষ থেকে বাগনানে পথসভা সংঘটিত হয়। কিষান মহাসভার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন দিলীপ দে এবং কৃষি মজুর সমিতির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নবীন সামন্ত এবং সনাতন মনি। ওইদিনই জেলার অপরপ্রান্ত বালিতে হপ্তা বাজার থেকে সন্ধ্যা সাতটায় মিছিল বের হয় এবং মিছিল শেষে চৈতল পাড়া সংখ্যালঘু এলাকায় পৌঁছে দিল্লীতে ঘটে চলা ঐতিহাসিক ট্রাক্টর প্যারেডএর সমর্থনে কৃষি আইন ২০২০ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সভা সংগঠিত হয়। সভা শেষে ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসের শপথ হিসাবে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচী শেষ হয়। এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বালি-বেলুড় লোকাল কমিটির সম্পাদক নিলাশীস বসু।

খণ্ড-28
সংখ্যা-4