বিবৃতি
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজ্য কমিটির বিবৃতি
gge

২৮ জানুয়ারী পার্টির রাজ্য অফিসে এক সাংবাদিক বৈঠকে পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়তু দেশমুখ সংবাদ সম্মেলন করেন। বিবৃতিতে প্রথমেই কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে কেন্দ্র সরকারের কুৎসা প্রচারকে ধিক্কার জানিয়ে বলা হয়:

“লাল কেল্লা ঘটনায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে বিজেপির সঙ্গে, কৃষক আন্দোলন পরিচালনাকারী নেতৃত্বের সঙ্গে নয়। আর এই ঘটনার প্রশাসনিক দায়িত্ব বর্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের উপর। অথচ এর দায় চাপিয়ে কৃষক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযোগ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানাই।”

বিবৃতির দ্বিতীয় অংশে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পার্টির কর্মকৌশলের দিশা প্রসঙ্গে বলা হয়,

“রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপি মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন অবিজেপি দলে ভাঙন ধরিয়ে, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে এবং বাংলার মহান ঐতিহ্যকে জবরদখল করে বিজেপি তার ক্ষমতালিপ্সাকে যে কোনো মূল্যে চরিতার্থ করতে চায়। বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী সুভাষ কেউই এই জবরদখল ও বিকৃতির কুৎসিত অভিযান থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। নিজেদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী ও সর্বনাশা অ্যাজেন্ডাকে পশ্চিমবঙ্গের উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য আরএসএস-বিজেপি বাহিনীর এই বেপরোয়া বিধ্বংসী অভিযানকে রুখে দেওয়া এবারের নির্বাচনে সমস্ত বামপন্থী ও গণতন্ত্রপ্রেমী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সবচেয়ে প্রাথমিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।

করোনাকালে লকডাউনের তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বাংলার বিভিন্ন শ্রেণী ও স্তরের জনগণের দৈনন্দিন জীবনের এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মূল প্রশ্নগুলো যাতে নির্বাচনের মূল অ্যাজেন্ডা হিসেবে উঠে আসতে পারে সেই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছি। ‘জনগণের কথা, জনগণের দাবি’ অভিযানের পরবর্তী পর্যায়ে আগামী আট ফেব্রুয়ারী নাগরিক কনভেনশনের মাধ্যমে জনগণের দাবিসনদ প্রকাশিত হবে। এই দাবিসনদের ভিত্তিতে রাজ্য জুড়ে চলবে ব্যাপক গণসংযোগ অভিযান।

বিজেপির সর্বনাশা অ্যাজেন্ডাকে রুখতে চাই বামপন্থী আদর্শ ও আন্দোলনের শক্তিশালী উপস্থিতি এবং সুস্থ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা স্পষ্ট দেখিয়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র সরকারী ক্ষমতার রাজনীতি দিয়ে বিজেপিকে রোখা সম্ভব নয়। রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে বাছাই করা বারোটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা বিবেচনা করেছি। এই বারোটি আসনের তালিকা: ফাঁসিদেওয়া (দার্জিলিং), ময়নাগুড়ি (জলপাইগুড়ি), মোথাবাড়ি (মালদা), খড়গ্রাম (মুর্শিদাবাদ), মন্তেশ্বর, জামালপুর (বর্ধমান), ওন্দা, রাণীবাঁধ (বাঁকুড়া), কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, নাকাশিপাড়া (নদীয়া), ধনেখালি, উত্তরপাড়া (হুগলি)। অন্য কিছু বাছাই করা আসনে অন্যান্য বামপন্থী ও গণআন্দোলনের প্রার্থীদের সমর্থন করার সাথে সাথে রাজ্য জুড়ে বিজেপিকে পরাজিত করতে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ নেব।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পার্টির অবস্থান ব্যাখ্যা করে সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, সারা দেশের সর্বত্রই বিজেপি মানুষের প্রধান শত্রু। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এক জবরদখলকারী পার্টি হয়ে উঠছে, ছলে বলে অন্য দল ভেঙ্গে, বাংলার মনিষীদের সংকীর্ণ দলীয় সম্পদে পর্যবসিত করে বাংলাকে গ্রাস করতে চাইছে। কিন্তু বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে একটি মাত্র জোটে সব বিরোধী দলের চলে আসার বাস্তবতা নেই। টিএমসির উগ্র বাম-বিরোধিতা ও গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত করা বাংলার রাজনীতিকে আরও দক্ষিণপন্থী দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং বিজেপি সুযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে বিজেপিকে মূল শত্রু হিসেবে বুঝে উঠতে পারছে না সিপিএম, বিজেপি ও টিএমসিকে একাসনে বসিয়ে বিজেপিকে আড়াল করে ফেলছে। নীতিগত অভিমুখ মিলছে না বলে সিপিএমের সাথে নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পার্টি স্বাধীনভাবে অল্প কয়েকটি বাছাই করা আসনে লড়ছে। বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি প্রতিরোধ করে বাংলাকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা ও বাংলায় বামপন্থী পুনরুজ্জীবন ঘটানোর লক্ষ্যে পার্টি এই নির্বাচনী কর্মকৌশল গ্রহণ করেছে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-4