প্রতিবেদন
তথাকথিত ‘লাভ-জিহাদ’ কানুন আদৌ আইনসম্মত?
dddda

প্লেটো বলেছিলেন – প্রেমের পরশে প্রত্যেকে কবি হয়ে ওঠে! দুটি মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা, বিশ্বাস, মর্যাদায় অভিষিক্ত ‘প্রেম’ ঊষর জীবনের ধূসরতা মুছে, জীবনকে করে তুলতে পারে এক রম্য উপত্যকা! বিশ্ব সাহিত্যের কালজয়ী সৃষ্টির পাতায় পাতায় এমন হর-হামেশা ঘটেছে।কিন্তু ‘প্রেমের’ এই অমোঘ মানবিক শক্তিতে ওরা বিশ্বাস করে না, ওদের ভরসা, ঘৃণা আর বিদ্বেষের বিধ্বংসী দানবীয়তায়। তাই প্রেমের সঙ্গে অনায়াসে ওরা জুড়ে দিতে পারে ঘৃণাকে। ওরা মানে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। প্রায় এক দশক আগে তাদের আমদানি করা এক শব্দবন্ধ ‘লাভ জিহাদ’ যার  গৈরিক ভাষ্য হল – ‘প্রেমের অছিলায় ধর্মান্তরকরণ’। হিন্দু নারী এবং মুসলিম পুরুষের প্রেমজ বিবাহের পিছনে তারা খুঁজে পেয়েছে ইসলামের সংগঠিত উদ্যোগে ধর্মান্তরকরণের গূঢ় অভিসন্ধি! মানবাধিকার ও মহিলা সংগঠনগুলির মতে ‘লাভ জিহাদ’ আসলে ইসলাম-বিদ্বেষের এক তত্ত্ব। তার সঙ্গে, নারীর অধিকারের উপর পিতৃতান্ত্রিক কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র।

উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা ও কর্ণাটকের বিজেপি সরকার ‘লাভ জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে আইন আনার হুমকি দিয়েছে। তার প্রস্তুতিও চলছে। যোগী সরকার ইতিমধ্যেই এক অর্ডিন্যান্স জারি করেছে ‘উত্তরপ্রদেশ বিধিবিরুদ্ধ ধর্ম পরিবর্তন প্রতিষেধ অধ্যাদেশ’। আন্তঃধর্ম বিয়ের ক্ষেত্রে ধর্ম পরিবর্তন করলে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ তাদের এই রণহুঙ্কার কেন? এই অভিযোগের বাস্তব ভিত্তি আদৌ আছে কি? এই অর্ডিন্যান্স তথা আইন আদৌ বৈধ?

সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সম্পাদক বামপন্থী নেত্রী কবিতা কৃষ্ণান মনে করেন, ‘লাভ জিহাদ’ হিন্দুত্ববাদীদের মনগড়া একটি ধারণা। হিন্দুত্ববাদীরা বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর পছন্দ-অপছন্দ এবং সম্মতির প্রতি কোনো শ্রদ্ধা দেখায় না। বামপন্থী নেত্রী বৃন্দা কারাত লাভ-জিহাদ বিরোধী এই অধ্যাদেশের সঙ্গে ১৯৩৪ সালে নাৎসী জার্মানিতে হিটলারের আনা ইহুদি-বিরোধী আইনের তুলনা করেছেন, যে আইনে ইহুদিদের সঙ্গে আর্য বংশোদ্ভূতদের বিয়ে ও যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মুসলিম সমাজকে সন্ত্রস্ত রাখা, ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে হিন্দুভোট আকর্ষণ করা, নারীর স্বাধিকার, স্বায়ত্ততার দাবিকে নাকচ করা এবং সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল, আরও দ্রুত ‘এক জাতি এক রাষ্ট্র’ – ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের পথে এগিয়ে যাওয়া যার সংবিধান হবে মনুস্মৃতিনির্ভর। সম্ভবত এই উদ্দেশ্যেই এই রণহুঙ্কার। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ভারতে ‘লাভ জিহাদ’-এর ঘটনা কাল্পনিক।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, কেরালার কংগ্রেস নেতা বেণি বেথনানের এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, এই শব্দবন্ধ ‘লাভ জিহাদ’কে আইনে সংজ্ঞায়িত করা নেই। কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থাই লাভ জিহাদের কোনো কেস দায়ের করেনি। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলার মতে, সমাজকে সাম্প্রদায়িক করে তুলতেই ‘লাভ জিহাদ’-এর মতো পদক্ষেপ আমদানি করা হয়েছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী গেহলট বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব নষ্ট করতে এবং দেশের মধ্যে বিভাজন আনতেই এই পদক্ষেপ। ভালোবাসায় জিহাদের স্থান নেই। বিবাহ মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়। এই বিষয়ে আইন আনা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং এই আইন কোনো আদালতে গ্রাহ্য হওয়ার কথা নয়।

অল ইন্ডিয়া ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির ‘লাভ জিহাদ’ অর্থাৎ আন্তঃধর্ম বিবাহের বিরুদ্ধে আইন আনার হুমকিকে ধিক্কার জানিয়েছে। এই সংগঠন মনে করে, সরকারের এই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের তত্ত্বকে পরিহার করে বরং তথাকথিত ‘সম্মানরক্ষা’র নামে যে ভিন্ন জাত ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে দম্পতিদের বেপরোয়াভাবে হত্যা করা হচ্ছে ,তাদের বিরুদ্ধে হিংসার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে সেইসব অপরাধের বিরুদ্ধে আইন বলবৎ করা উচিত যেটা ‘শক্তিবাহিনী বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য’ (AIR ২০১৮ SC ১৬০১) মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। এই সংগঠনের মতে ভিন্ন ধর্মে বিবাহকে ঐ সাম্প্রদায়িক শব্দে চিহ্নিত করে সংবিধানের ১৪, ২১ এবং ২৫ নং ধারাকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই ধারাগুলি একজন ব্যক্তি মানুষের সমানাধিকারের, মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার, স্বাধীন ধর্মাচরণের, নিজের পছন্দমতো কাউকে ভালোবাসার এবং বিয়ে করার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং ঐ গেরুয়া ভাষ্য সরাসরি দেশের সংবিধান এবং ব্যক্তিস্বাধীনতাকে আঘাত করেছে। সংগঠন আরও উল্লেখ করেছে, ‘শাফিন জাহান বনাম অশোকান কেএম এবং অন্যান্য’ [(২০১৮) ১৬ এস সিসি ৩৬৮] মামলার রায়, সাধারণ্যে যা ‘হাদিয়া রায়’ বলে পরিচিত সেই রায়ে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় পরিষ্কার বলেছেন “পোশাক এবং খাদ্য, মত এবং মতাদর্শ, ভালোবাসা এবং যৌথজীবনের মতো বিষয়গুলি ব্যক্তিগত পরিচয়ের মূল অভিব্যক্তিগুলির মধ্যে পড়ে – আমাদের  জীবনসঙ্গী নির্ধারণে সমাজের কোনো ভূমিকা নেই।” এআইএলএজে বিজেপি’র ঐ সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপের বিরোধিতায় ‘আনিস হামিদ বনাম কেরালা রাজ্য’ মামলায় কেরালা হাইকোর্টের রায়কেও তুলে ধরেছে : “রাজ্যে প্রত্যেকটি আন্তঃধর্ম বিবাহকে হয় লাভ জিহাদ নয় ঘর ওয়াপসি বলে উত্তেজনা সৃষ্টির সাম্প্রতিক প্রবণতায় আমরা গভীর মর্মাহত। দেশের কয়েকটি অঞ্চল থেকে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো খবর আসছে যে যেসব তরুণ তরুণী ভিন্ন জাতে-ধর্মে বিয়ে করছে তাদের হয় হিংসার হুমকি দেওয়া হচ্ছে অথবা তাদের উপর হিংসার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। আমরা মনে করি, এই হিংসা বা হুমকি বা হেনস্থার যেকোনো ঘটনা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ এবং যারা এসব করছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। এটা স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক দেশ আর কোনো মানুষ, নারী অথবা পুরুষ, প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার যাকে পছন্দ তাকেই বিয়ে করতে পারে।”

বিচারালয়ের আরও মন্তব্য – এইসব হত্যায় ‘সম্মানের’ কোনো প্রশ্নই নেই, যা আছে তা হল সামন্ততান্ত্রিক নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা। এই ব্যাপারে কোর্টের নির্দেশ ও সুপারিশগুলি মানার ক্ষেত্রে সরকার চূড়ান্ত ব্যর্থ বলেই সংগঠনটি মনে করে। বস্তুত, ভালোবাসার জন্য জাতি, ধর্ম ও লিঙ্গের সীমানা পেরিয়ে এইসব প্রেমিকযুগল প্রচলিত সমাজ কাঠামোর অনমনীয়তার জগদ্দল পাথরটাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন এবং আমাদের গোটা সমাজের জন্য পরিসরকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’-এর কোনো বাস্তব বা আইনগত ভিত্তি নেই। আর তার বিরুদ্ধে আনা আইন সংবিধান-বিরোধী।

dddaaaa

 

এবার নারীর প্রতি ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীদের অবস্থানের প্রতি একটু দৃষ্টিপাত করা যাক।

মনুস্মৃতি শাসিত ব্রাহ্মণ্যবাদী পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কাছে নারীর ‘প্রেম’ প্রার্থিত নয়। নারী অল্পবুদ্ধি, চপলমতি, অশুচি, নরকের দ্বার; তাই তারজন্য শিক্ষা সম্পত্তির অধিকার, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার নয়! তার প্রাণরসটুকু নিংড়ে নাও সংসার প্রতিপালনে, পরিজনের পরিচর্যায়! প্রয়োজনে তার মেধা, লাবণ্য, সৌন্দর্যটুকু শুষে নাও, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক স্বার্থের চরিতার্থতায়। কিন্তু তার জন্য মর্যাদা, বিশ্বাস, অধিকার – নৈব নৈব চ!

পিতৃতন্ত্র সব সময়েই নারীর উপর অনৈতিক কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রাচীনা পৃথিবী হাজার হাজার বছরের সূর্যপ্রদক্ষিণে তারই সাক্ষী থেকেছে যুগে যুগে – নানা দেশে, নানা ধর্মে, নানা সমাজে। তাই ইভকে শাস্তি পেতে হয়, সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়, দ্রৌপদীকে প্রেমিক অর্জুন ছাড়াও আরও চারজনের শয্যাসঙ্গিনী হতে হয়, পাশাখেলায় বাজি থাকতে হয় ও ‘রক্ষক’ পাঁচ ‘স্বামী’র চোখের সামনেই চরম লাঞ্ছিতা হতে হয়, খনার জিভ কাটা যায়, জোয়ান অব আর্ককে প্রকাশ্য বিচারসভায় পুড়ে মরতে হয় – তালিকা অনেক অনেক দীর্ঘ হতে পারে। থাক।

অষ্টমবর্ষীয়ার সঙ্গে অষ্টআশির বৃদ্ধের বিয়ে দিয়ে কৌলীন্য রক্ষা, স্বামীর চিতায় স্ত্রীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা ইত্যাদি কুৎসিত ধর্মীয় অনুশাসন তথা সামাজিক বিধানের বিলুপ্তির জন্য ভারতীয় নারী সমাজ রামমোহন, বিদ্যাসাগরের কাছে চিরঋণী। ভগিনী নিবেদিতা, বেগম রোকেয়া, জ্যোতি রাও ফুলে, সাবিত্রী বাঈ ফুলে, বেথুনের মত অজস্র সমাজ সংস্কারক, চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদের কাছেও তাদের আজকের অবস্থানের জন্য তারা অশেষ ঋণী। অনেক কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই নারী আন্দোলন সমৃদ্ধ হয়েছে, পরিণত হয়েছে। নারীর সমানাধিকার সংবিধান-স্বীকৃত হয়েছে। আর এই জন্য তারা বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। বাবা সাহেব দেখেছিলেন, মনুবাদী হিন্দু সমাজ নারী ও শূদ্রদের প্রতি কতটা নির্মম, নিষ্ঠুর এবং ক্রূর! নারীকে আর্থিকভাবে সবল না করলে তাদের এই হীন অবস্থা থেকে মুক্তি আদৌ সম্ভব নয়। এজন্য হিন্দু সমাজের সংস্কার দরকার। আর সেই উদ্দেশ্যে তিনি ‘হিন্দু কোড বিল’ প্রণয়ন করেন। অনেক জলঘোলার পর ১৯৫১-তে, স্বাধীনতার পর প্রথম আইনমন্ত্রী হিসেবে তা সংসদে পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী নেহরুর সমর্থন ও সহযোগিতায়। এই বিলে হিন্দু নারীর বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষের অধিকার, স্বামীর ও পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার, হিন্দু পুরুষের বহুবিবাহ রদের কথা বলা হয়। কিন্তু আরএসএস-সহ হিন্দু মৌলবাদীদের সংসদের ভিতরে ও বাইরে তীব্র বিরোধিতায় সে বিল পাস করা তো দূরের কথা, প্রত্যাহার করে নিতে হয়। ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে বাবা সাহেব মন্ত্রীপদে ইস্তফা দেন। পরে ১৯৫৬ থেকে চারটি পর্যায়ে বিলটি আইন হিসেবে পাস হয়। নারীর সংবিধান-প্রদত্ত সেই অধিকারগুলিই হরণ করে বিজেপি-আরএসএস আবার তাদের কয়েকশো বছর আগেকার পুরোনো অবস্থানে ঠেলে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এ সম্পর্কে সারা ভারত মহিলা সমিতির অভিমত তথা প্রতিবাদ প্রণিধানযোগ্য। এই সংগঠন খুব বলিষ্ঠভাবে জানিয়েছে, আম্বেদকরের সংবিধানে বিশ্বাসী ভারতে এই আইনের (তথাকথিত লাভ জিহাদ বিরোধী আইন) কোনো ঠাঁই নেই ।

অ্যাপোয়া মনে করে, সারা ভারতবর্ষে লাভ-জিহাদের কোনো অস্তিত্বই নেই। বরং দেশের তরুণ সম্প্রদায় প্রেমের ক্ষেত্রে জাত-ধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে যে নিজেদের স্বাধীন অবস্থানকে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরছেন, গোটা দেশের স্বার্থে তাকে স্বাগত জানানো উচিত। কারণ ঐ মারাত্মক আইনের মাধ্যমে ভালোবাসার বিরুদ্ধে পিতৃতান্ত্রিক হিংসাতাড়িত তথাকথিত ‘সম্মানরক্ষা’র অপরাধের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হচ্ছে।

তারা আরও বলেছেন, মনুবাদী পিতৃতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আম্বেদকর যে হিন্দু কোড বিল এনেছিলেন, যা ভারতীয় নারীর স্বাধীনতা ও সমানাধিকারের আইনী রক্ষাকবচ – তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার বিজেপি-চক্রান্তই হল ‘লাভ জিহাদ’। মুসলিম যুবকদের থেকে নয়, বিজেপি’র থেকেই আজ হিন্দু নারীর বিপদ যারা ‘হিন্দু’র নাম করে রাজনীতি করছে! যে কোনো ধর্মের নামে যারা শাসন চালায় তারা নারী-অধিকারের শত্রু – ইতিহাস তার সাক্ষী। নিকিতা তোমর, প্রিয়দর্শিনী মাট্টু বা হিন্দু যুবকদের দ্বারা বিহারে গুলনাজের হত্যা কখনই প্রেম যুদ্ধ নয়, বরং পিতৃতান্ত্রিক হিংসার ভয়াল ছবি। এই মেয়েরা কেউ হত্যাকারীদের ভালোবাসেনি। ভালোবাসায় কোনো জিহাদ বা যুদ্ধ থাকতে পারে না! এই মহিলা সংগঠন মনে করে, প্রেম ও বিয়ের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো নারী-পুরুষের স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তনের অধিকার আছে। ভিন্ন ধর্মের বিয়ের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ বিবাহ আইন ১৯৫৪’র সংস্থান আছে কিন্তু তাতে এক মাসের নোটিশের প্রয়োজন যে অপেক্ষা নোটিশদাতাদের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। সেই জন্যেই হয়তো ভিন্ন ধর্মের বিয়ের ক্ষেত্রে ধর্মান্তরকরণের প্রয়োজন হয়। অ্যাপোয়া চায় বিশেষ বিবাহ আইনে এক মাসের বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি বাতিল করা হোক।

উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের গণ ধর্মান্তরকরণের বিরুদ্ধে অধ্যাদেশটি শুধু সংখ্যালঘুদের জন্যই নয়, দরিদ্র দলিত সম্প্রদায়ের তরুণ ও মহিলাদের জন্যও বিপজ্জনক। সংবিধানের উপর এই বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধের পথে হাঁটতে হবে আসন্ন বিপদের কথা মাথায় রেখে।

- জয়ন্তী দাশগুপ্ত  

খণ্ড-28
সংখ্যা-1