“দহনলিপি”
Combustion Script

ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকাকালীন ১০২ বছরের বৃদ্ধ চন্দ্রধর দাস কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেছিলেন, বাথরুমে যাওয়ার জন্য, কিছু খাওয়ার জন্য তার সাহায্যের দরকার হত। কিন্তু ক্যাম্পে তাকে কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতো না। বারবার তিনি বলতেন, ‘কোনো বৃদ্ধলোককে যেন ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো না হয়!’ ১০২ বছরের বৃদ্ধকে যারা ডিটেনশন ক্যাম্পে ছুঁড়ে ফেলতে পারে, ‘তারাই এই মানব সভ্যতার কলঙ্ক!’....

তবে তিনি ছিলেন দৃঢ় বিশ্বাসী – তিনি জাতিতে হিন্দু ও ভারতবর্ষ তাঁর দেশ। একদিন প্রমাণ হবেই তিনি ভারতীয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি বাবা বলে সম্বোধন করতেন। ক্যাম্পে অসহনীয় যাপনের পরও তিনি বলতেন মোদি আছেন বলেই আমি খাবার পাচ্ছি। জীবনে এতো দুঃখ কষ্টের মুহূর্ত কাটানোর পরও তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল যে একদিন তাঁর মহাপুরুষসম মোদিজির ক্যারিশমায় তিনি ভারতীয় প্রমাণিত হবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল সেরকম কিছুই ঘটেনি। চন্দ্রধর দাস অবচেতন মনে একটি কথা বারবার বলতেন, ‘আমার কাছে ৩০টি ভোট আছে। আমি মোদিকে সব ভোট দেবো’। গেল ১৪ই ডিসেম্বর ২০২০ সালে চন্দ্রধর দাস বিদেশি তকমা নিয়েই ইহ-সংসার ত্যাগ করেন।

[কমল চক্রবর্তীর লেখা “আসামে নাগরিকত্ব হরণের দহনলিপি” বই থেকে উদ্ধৃত একটি অংশ। এই অংশটি অনেক কথা বলে যায়।]

খণ্ড-28
সংখ্যা-11