প্রতিবাদের আওয়াজ উঠুক -- আওয়াজ উঠুক প্রতিরোধের
Let the voice of protest rise

মিডিয়া চিত্রিত করছে ‘হাই ভোল্টেজ’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ-এর ‘সংযুক্ত মোর্চা’র হয়ে সিপিএম এক যুব নেত্রীকে প্রার্থী করেছে। কিন্তু টক্করটা হবে মূলত তৃণমূল নেত্রী আর তৃণমূল থেকে বিজেপিতে চলে যাওয়া কাঁথির ‘অধিকারী সাম্রাজ্যে’র দাপুটে অধীশ্বরের মধ্যে। তৃণমূল নেত্রী বলছেন, ‘খেলা হবে’। বিজেপি বাজী ধরেছে খেল দেখানোর। তার প্রার্থী বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে হারাতে না পারলে রাজনীতি করা ছেড়ে দেবেন। এইসমস্ত বাগযুদ্ধ চলছে। তা চলুক। এর শেষ দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত।

তবে আমজনতাকে মাথায় রাখতে হবে ফ্যাসিবাদী বিজেপির কথা। এর চেয়ে বড় বিপদ আর কিছু হতে পারে না। তাই তার দৌড় চেনা, স্বরূপ উন্মোচন করা, তাকে প্রতিহত করা মায় ভোট না দেওয়া, এবং নির্বাচনে পরাস্ত করা — এই সবকিছুকেই পাখির চোখ করা উচিত। এই সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে তালাশ করা যাক বিশেষত নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে।

সবচেয়ে বড় কথা, নন্দীগ্রাম ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ হয়ে আছে এবং থাকবে কৃষক জনতার প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে। এ প্রতিরোধ ফেটে পড়েছিল দেড় দশক আগে, অধঃপতিত বামফ্রন্ট আমলে। কৃষি জমিতে বিদেশী বহুজাতিক কর্পোরেট বর্গী হানা ডেকে আনার বিরুদ্ধে। নন্দীগ্রামের আগে আগে ঘটেছিল সিঙ্গুর। কৃষক জনতার আরেক ঐতিহাসিক প্রতিরোধ। ঐ প্রতিরোধও ছিল শাসক-কর্পোরেট আঁতাতের জমিগ্রাস নীতির বিরুদ্ধে। উভয় ক্ষেত্রেই ‘শিল্পায়ন’ আর ‘কর্মসংস্থান’ ছিল সরকারপক্ষের বাহানা, আসলে লক্ষ্যটা ছিল কর্পোরেট পুঁজির ইচ্ছাপূরণে দাসখত লিখে দেওয়া, জোর করে জমি গ্রাসের আইন সংশোধন করে নামানো হয়েছিল বর্বর আক্রমণ। তা সত্ত্বেও, বহু মূল্য দিতে হলেও, অবশেষে বিজয়ী হয় কৃষক জনতার প্রতিরোধ।

নন্দীগ্রামে প্রার্থী দিয়ে বিজেপি বিষদাঁত কি বসাবে! বিজেপি যাকে প্রার্থী করেছে তার সামনে উভয় সংকট। যদি জমি রক্ষার আন্দোলনে থাকার অতীত ভাঙিয়ে ভোট চান, তবে সে গুড়ে বালি। কারণ তাহলে বলতে হবে কৃষি জমিতে কর্পোরেট পুঁজির আগ্রাসন ও বিরোধিতার কথা। কিন্তু সেটা এখন বলা খুব মুশকিল, কারণ যে দলের প্রার্থী হয়েছেন তার অনুমোদন মেলার কথা নয়। ইতিমধ্যেই দলবদলু নেতাদের প্রকাশ্যে কবুল করতে হচ্ছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন ছিল ভুল। লোকের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য ঠেকবে না। কারণ, কেন্দ্রের মোদীরাজ ও রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি সরকার নিয়েছে জল-জমি-জঙ্গল সব কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার নীতি। মোদী সরকার প্রথম পর্বেই চেষ্টা করেছিল কর্পোরেট স্বার্থ সর্বস্ব নয়া জমি অধিগ্রহণ (সংশোধিত) আইন চাপিয়ে দিতে। কিন্তু জোর ধাক্কা খায়। দ্বিতীয় পর্বে আবার এনেছে কৃষি ও কৃষক বিরোধী তিনটি আইন। যার মধ্যে রয়েছে ছলে-বলে-কৌশলে কৃষি জমি গ্রাস করে নেওয়ারও ফাঁস। যার বিরুদ্ধে রাজধানীর নাকের ডগায় কৃষক জনতার দিবারাত্রির আন্দোলন চলছে লাগাতার। আন্দোলন পার করেছে একশ দিন। আন্দোলনের প্রতি চূড়াম্ত অবিচার করছে মোদী জমানা-বিজেপি। বিনিময়ে কুড়োচ্ছে দেশব্যাপী ধিক্কার। সেই কৃষক নেতারা আসছেন বাংলায়। তারা যাবেন নন্দীগ্রামে, সিঙ্গুরে, সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রে। তাদেরও ইস্যু, বিজেপিকে ভোট নয়। বিজেপি হারাও, বাংলা বাঁচাও।

বিজেপি নিশ্চিত মরীয়া হবে আরও ছলনার জাল পাততে, টাকাকড়ি ছড়িয়ে বিবশ করতে, সন্ত্রাসের হুঙ্কারও দেবে ‘জয় শ্রীরাম’! জবাবে আবার প্রতিরোধে উঠে দাঁড়াক, আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে উঠুক নন্দীগ্রাম।

খণ্ড-28
সংখ্যা-9