দিল্লী সীমান্তে কৃষক আন্দোলনের একশ দিন দুর্জয় শপথ ও অমূল্য শিক্ষাগুলি
One hundred days of peasant movement

অনাদিকালের কোনো মহাকাব্যীয় বীরগাথা থেকে শুরু করে মানবজাতির লিখিত ইতিহাসের বহু বিচিত্র উপাখ্যানে বর্ণিত সমস্ত ন্যায়সংগ্রামের কাহিনীগুলি — সব কিছুই ম্লান হয়ে গেছে স্বার্থকুটিল এক বিংশ শতাব্দির এই কালবেলায় এক অনন্য সাধারণ কৃষক সংগ্রামের স্পর্ধার কাছে। যে অসামান্য ধৈর্য ও সংকল্প নিয়ে রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় বিধানকে পালটে দেওয়ার জন্য মহানগরী দিল্লীর সীমান্তে দেশের লক্ষ লক্ষ অন্নদাতা কৃষকদের যে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী তা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে কেন সারা বিশ্বেই অভূতপূর্ব, নজিরবিহীন। যখন তাপমাত্রা নেমে গেছে হিমাঙ্কের নীচে সেই কনকনে ঠান্ডার দিনগুলিতে শুরু হওয়া এই বিপুল গণঅবস্থান একশ দিন পাড় করে যখন আরো বিশালতর হচ্ছে তখন প্রবল উত্তাপে ঝলসে যাচ্ছে উত্তর ভারত। কৃষকদের এই হার না মানা এই জিদকে দেশ দুনিয়া যখন কুর্নিশ জানাচ্ছে তখন অন্তত দুই শত আন্দোলনকারী চলে গেছেন ‘না ফেরার দেশে। ‘সন্ত বাবা রাম সিং, ভীম সিং, জয় সিং, গুরবচ্চন সিং সিবিয়া থেকে গুরমেইল কাউর – দেশের শস্যভান্ডার পাঞ্জাব-হরিয়ানার নাম না জানা গ্রামগুলি থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়ে এরা প্রত্যেকেই শহিদ হয়েছেন। তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি সরকারের চরম অবহেলা ও হৃদয়হীনতায়। সাধারণ পরিবার থেকে আসা এই কিষাণ-কিষাণীদের সাথে মুহূর্তের জন্য মোদিজির দেখা করার সময় হয়নি। প্রতীক্ষায় থেকে, শীতের রাত্রে খোলা আকাশের নীচে ঠান্ডায় জমাট বেঁধে কিম্বা ক্লান্তিতে চিরবিদায় জানিয়েছেন তাঁরা। অথচ প্রধানমন্ত্রী প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সাড়ম্বর অভ্যর্থনা জানাতে আমেদাবাদ যাওয়ার সময় পান কিম্বা কৃষকদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে কোনো ‘সাথারি পার্কে বিজ্ঞাপনের জন্য’ স্যুটিং করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেননি। উলটে তাঁর তাঁবেদাররা আন্দোলনকারী কৃষকদের ফড়ে, দালাল, খালিস্তানপন্থী, অতি স্বচ্ছল চাষি, শুধু পাঞ্জাবওয়ালা ইত্যাদি নানা শব্দে নিন্দা করে গেছেন। ঠিকই, আন্দোলনকারীদের মধ্যে পাঞ্জাবের স্বচ্ছল চাষিরাও আছেন বৈকি। ‘সবুজ বিপ্লবের’ প্রথমদিকে আধুনিক চাষবাসের সুযোগ তাঁরা ভোগ করেছেন। কিন্তু আজ যখন সরকার আর শস্য কিনবে না আর খাদ্যশস্য কেনা বেচা সহ কৃষিক্ষেত্রের দন্ডমুন্ডের মালিক হবে আদানি-আম্বানি – তখন খেতমজুর, গরিব-মাঝারি চাষিদের সাথে সাথে স্বচ্ছল চাষিরাও প্রতিবাদে সামিল হলে বিজেপির গাত্রদাহ কেন? কিন্তু শত কুৎসা প্রচার সত্বেও কৃষক আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও ধীরে ধীরে উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাপক গ্রামীণ জনগণ সামিল হয়েছেন আন্দোলনে আর সেই ধাক্কায় বিজেপির জোট সঙ্গীরা একে একে এনডিএ শিবির থেকে সড়ে দাঁড়াচ্ছে। আকালি দলের সাংসদ হরসিমরত সিং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা জয়ন্ত চৌধুরী খোলাখুলি কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এনডিএ-র থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছেন। অবস্থা সঙ্গীণ বুঝে কেন্দ্রী সরকারের কৃষি ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রীরা কৃষকনেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক ডেকেছেন। তিন কৃষি আইন প্রণয়নের সময় কৃষকদের সঙ্গে কথা না বলার ত্রুটি মন্ত্রীরা কবুল করেছেন এবং আইনের বহু দিক সংশোধন করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কৃষক নেতারা তিন কৃষি আইন সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে দাবিতেই অবিচল থাকেন। প্রথমে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান তারপর আলোচনায় মিষ্টি কথা। সরকারের সব অস্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর (মোদির পরামর্শে) সুপ্রিম কোর্টকে আসরে নামতে হয়। সর্বোচ্চ আদালত কিছুদিনের জন্য কৃষি আইন প্রয়োগে স্থগিতাদেশ ও  সরকার এবং কৃষকদের মধ্যে আলোচনার জন্য চার সদস্যের এক কমিটি গঠন করে। গণআন্দোলনের চাপে সুপ্রিম কোর্টের নিজের থেকেই এভাবে রেফারির ভূমিকায় মাঠে নামা – আগে কখনো দেখা যায়নি। এসব কমিটি গঠনের প্রস্তাবে কৃষক নেতারা পত্রপাঠ; ‘না’ করে দিয়েছেন। এমনকি কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ (যথা ভূপিন্দর সিং মান কমিটিতে থাকতে নারাজ হলে সরকারের ‘সুপ্রিম কোর্ট চালাকিও” ভেস্তে যায়। কৃষক আন্দোলন নৈতিক শক্তিতে আরও বলীয়ান হতেই, কৃষক সংগঠনগুলির সংযুক্ত মোর্চা (এআইকেএসসিসি) ২৬ জানুয়ারী ঐতিহাসিক ট্রাক্টর প্যারেডের অভিনব ও প্রাণবন্ত কর্মসূচী ঘোষণা করে। এর কদিন আগেই (১৮ জানুয়ারী) এআইকেএসসিসি মহিলা কিসাণ দিবস পালন করে – যদিও শুরুর দিন থেকেই কৃষক ও খেতমজুর মহিলারা আন্দোলনে সামিল থেকে দেখিয়ে দেন – এ লড়াই কিষাণ-কিষাণীদের সম্মিলিত লড়াই। ১৮ জানুয়ারী কৃষক মহিলারা আইএমএফ ও ডব্লিউটিওর কুশপুতুল জ্বালান – কেননা এই দুই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মোদি সরকারের তিন কৃষি আইনের হয়ে ব্যাট ধরেছিল। বিদেশী প্রতিষ্ঠান মোদির হয়ে দেশের ব্যাপারে নাক গলাবে অথচ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানালে তাঁকে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হবে – এই দ্বিচারিতার পরতিবাদ জানান যশবীর কাউর নাট। এই কৃষকনেত্রী টিকরি বর্ডারে দিনের পর দিন অবস্থান করছেন এবং গণআন্দোলনের পত্রিকা ‘ট্রলি টাইমসে’ প্রতিদিন কৃষক সংগ্রামের খবর ছেপেছেন।

peasant movement on the Delhi border

 

২৬ জানুয়ারী ঐতিহাসিক ট্রাক্টর প্যারেডে হাজার হাজার কৃষক সুশৃংখলভাবে দিল্লী নগরীকে যখন উত্তাল করে তুলছেন তখন লালকেল্লায় এক বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে (যেখানে কিছু মানুষ শিখ ধর্মের প্রতীক ‘নিশান সাহিব’ উড়িয়েছিলেন। অতিরঞ্জিত করে কৃষক আন্দোলন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদতপুষ্ট’ বলে গোদি মিডিয়া ব্যাপক প্রচার চালায়। আর রাষ্ট্রের মদতে উন্মত্ত কিছু হাঙ্গামাকারী টিকরি, সিঙ্ঘু ও গাজিপুর বর্ডারে কৃষকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।বহু কৃষকনেতার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। কৃষকদের ছাউনিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ত্রাসের পরিবেশে অবস্থান শিবিরগুলি থেকে বেশ কিছু কৃষক ঘরে ফিরে যান। আন্দোলনে যখন ভাঁটা পড়ে যাওয়ার উপক্রম তখনই উৎসাহী দিল্লী পুলিশ ও উত্তরপ্রদেশ সরকার গাজিপুর বর্ডারে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতকে গ্রেপ্তারের জন্য এগিয়ে আসে। টিকায়েত বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করা হলে আমি প্রাণ বিসর্জন দেব।’ তাঁর অশ্রুসজল বক্তব্য সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, বিশেষকরে মুজফপরনগর জেলায় এক গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়। জাঠ সম্প্রদায়ের হাজার হাজার কৃষক বিভিন্ন উপায়ে রাত্রিবেলায়ই গাজিপুর বর্ডারের উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁরা বলেন, ‘বিজেপিকে ভোট দিয়ে কী ভুলটাই না করেছিলাম! যে বিজেপি কৃষক আন্দোলনকে খতম করতে চায় সেই বিজেপিকে একঘরে করে দিতে হবে।‘ সাত বছর আগে মুজফফরনগরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিতে জাঠ সম্প্রদায়কে প্ররোচিত করা হয়েছিল। এবার কৃষক সংগ্রামের অভিঘাতে আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ফিরে এসেছে মিরাট-মুজফফরনগরের মাটিতে। একের পর এক মহাপঞ্চায়েত থেকে ধ্বনি উঠছে, ‘বিজেপি হটাও, কৃষি বাঁচাও।‘ নতুন করে প্রাণস্পন্দনে কৃষক ছাউনিগুলি জেগে উঠতেই শ্রমিক, ছাত্র-যুব,এমনকি ক্রীড়া জগতের মানুষেরাও প্রত্যক্ষ্যভাবে এসে দাঁড়িয়েছেন কৃষকদের পাশে। দিল্লীর উপকণ্ঠে কুন্ডলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে বকেয়া মজুরির দাবিতে লড়ছিলেন যে শ্রমিকরা তাঁরা এসে কৃষকদের ছাউনিগুলিতে ময়লা সাফাই-এর কাজে হাত লাগান। এদেরই একজন, ২৩ বছরের শ্রমিক তরুণী নদীপ কাউর ছাউনিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নিয়েছেন। আর তার এই বিশিষ্ট ভূমিকার ‘পুরস্কার’ হিসেবে মোদি সরকারের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আবার দেশজোড়া প্রতিবাদের মুখে তাকে মুক্তিও দিতে হয়েছে। হরিয়ানার কুস্তিগিররা এবং তাঁদের প্রশিক্ষকেরাও কৃষক ছাউনিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জল সরবরাহ ব্যবস্থা ফেরানোর কাজে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। এভাবেই বিজেপি ও সঙ্ঘপরিবার সমাজের সর্বস্তর থেকে আজ নিন্দার মুখোমুখী। তারা বলেছিল, আন্দোলন কেবল পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় সীমাবদ্ধ। কিন্তু রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ — সর্বত্রই কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে বিশাল বিশাল ধর্না কর্মসূচী সংগঠিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক আদিবাসী কৃষক মহিলার কথা সবিশেষ স্মরণীয়। তিনি সীতাবাই রামদাস তাদভি(৫৬), মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। গত ২৫ বছর ধরে গণআন্দোলনের তিনি এক অগ্রণী সৈনিক। গত ২২ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে চালিত প্রতিবাদ মিছিলে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি হেঁটেছেন। ২৬ ডিসেম্বর দিল্লীর ট্রাক্টর প্যারেডে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে ঠান্ডায় ও ক্লান্তিতে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। জীবন দিয়েই তিনি বোধহয় জানান দিলেন সারা দেশই আজ তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার চায়।

৮ মার্চ দিল্লী সীমান্তে চলা কৃষক আন্দোলনের ১০০ দিন পূর্ণ হল। সেদিন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে গাজিপুর-সিঙ্ঘু-টিকরি — সর্বত্রই কৃষক পরিবারের ছাত্রী, তরুণী ও নানা বয়সের মহিলারা দৃপ্তকণ্ঠে নারী মুক্তির সাথে সাথে কৃষিতে কোম্পানিরাজ কায়েমের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছেন। সন্ত্রস্ত মোদি সরকার বলছে, তারা অনির্দিষ্টকাল কৃষি আইনগুলি স্থগিত রাখতে চায়। তারা নাকি আইনগুলি সংশোধন করতেও রাজি। পাশাপাশি মোদি সরকারের কোনো কোনো প্রভাবশালী মন্ত্রী (যেমন নীতিন গদকরি) বলছেন, ”মূল সমস্যা হল ভারতে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন ও বাজার দরের চেয়ে বেশি এমএসপি।“ তাঁরা নিদান দিচ্ছেন, খাদ্যশস্য উৎপাদন কমিয়ে জৈব ইন্ধন (বায়ো ফুয়েল) উৎপাদনে জোর বাড়ানো। কিন্তু কৃষকরা এ সমস্ত সুপারিশ নাকচ করেছেন এবং তিন কৃষি আইনের নিঃশর্ত প্রত্যাহার দাবি করেছেন। তাঁরা আগামী ২ অক্টোবর (গান্ধী জয়ন্তী) পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন – সরকারের কাছে এটাই তাঁদের চরম সময়সীমা। এই কঠিন দৈর্য্য পরীক্ষায় কৃষকরা নিশ্চিতভাবেই জয়ী হবেন। একথা সত্যি, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ। এই ‘সংখ্যার জোরে’ পরাক্রান্ত বিজেপি ও সঙ্ঘপরিবার ফ্যাসিবাদ কায়েমের জন্য সব বাধা চূর্ণ করতে চায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দুর্বল অস্তিত্ব ফ্যাসিবাদকে আরও উৎসাহ জোগায়। কিন্তু এমতো দৃশ্যপটে যে সুবিপুল কৃষক ঐক্য গড়ে উঠছে— তা বয়ে আনছে গণতান্ত্রিকতার এক বেনজির দৃষ্টান্ত। বিচিত্র মত ও ধারার অগণিত কৃষক সংগঠন, একের সাথে অন্যের দুস্তর মতপার্থক্য — অথচ তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সকলেই সঙ্ঘবদ্ধ। বৈচিত্রের মধ্যকার এই ঐক্য চেতনাই ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করার শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার। সুতরাং দেশের অন্নদাতা কৃষকরা জয়ের পাথেয় নিজেরাই সংগ্রহ করছেন, আলোকিত হচ্ছি আমরা সকলেই।

- মুকুল কুমার  

খণ্ড-28
সংখ্যা-9