আবেদন
সিপিআই(এমএল)-এর প্রতিষ্ঠা দিবসের আহ্বান ও অঙ্গীকার:
CPI (ML) Foundation Day Calls

২২ এপ্রিল, ২০২১ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্কসবাদী লেনিনবাদী)-র বাহান্নতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই বিশেষ দিনটিতে আমরা আমাদের সকল শহীদ ও প্রয়াত নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করছি এবং সাম্প্রতিক অতীতে যে সব সাথীদের হারিয়েছি তাদের ভালোবাসায় স্মরণ করছি। আমরা আবেগউষ্ণ বিপ্লবী অভিনন্দন জানাই আমাদের সমস্ত সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের এবং ভারতের জনগণকে যারা ফ্যাসিবাদী মোদী সরকারের নিষ্ঠুর থাবা থেকে আমাদের দেশকে, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক কাঠামোকে এবং মানুষের অধিকারগুলিকে বাঁচাতে কঠিন সংগ্রাম করে চলেছেন। আমরা আমাদের সংহতি ও সমর্থন জানাচ্ছি পৃথিবীর সমস্ত অংশের ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের প্রগতিশীল অংশকে এবং সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী সমস্ত আন্দোলনরত শক্তিকে।

পর পর দুটি বছর কোভিড-১৯ অতিমারীর আবহে আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাদিবস উদযাপন করতে হচ্ছে। সত্যি বলতে কি, সরকারি পরিসংখ্যান, যেখানে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য কম করে দেখানো হয়, সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই দ্বিতীয় ঢেউ ইতিমধ্যেই গত বছরের প্রথম ঢেউয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ের থেকেও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ জায়গায়, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থায় শয্যা, ওষুধ ও টিকার অপ্রতুলতার সংবাদ আসছে। সরকার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার জন্য সাধারণ মানুষকে দায়ী করছে, কিন্তু সরকারের নিজের প্রস্তুতির চূড়ান্ত অভাব, আত্মসন্তুষ্টি এবং কোভিড বিধির ব্যাপক উল্লঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে নির্বাচিত ছাড় (যেমন কুম্ভমেলা এবং পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের কান্ডজ্ঞানহীন আট-দফা নির্ঘন্টের প্রচারপর্বে রোড শো এবং বিভিন্ন মেগা সমাবেশ) হচ্ছে মুখ্য কারণ যার জন্য কোভিড যুদ্ধে ভারতকে এমন ভয়ানক ও দীর্ঘস্থায়ী মূল্য দিতে হচ্ছে।

অতিমারী মোকাবিলায় ব্যর্থ সরকার কিন্তু এই সংকটকে কর্পোরেটদের শক্তিবৃদ্ধি এবং মানুষের অধিকারগুলি শেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি সুযোগ হিসাবে কাজে লাগাতে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। কৃষি আইনগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে কৃষি, বিশেষ করে কৃষি বিপণন এবং কৃষিপণ্যের বেশিরভাগের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আদানি ও আম্বানিদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, চলতি কথায় যাকে কোম্পানি-রাজ বলা হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে চালু শ্রম আইনগুলিকে সরিয়ে সেখানে আনা হচ্ছে নতুন শ্রম কোড যা কাজের পরিবেশ এবং কাজের শর্ত ও শ্রমিকদের মজুরির আরও অবনমন ঘটাবে আর মালিকদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে। সরকারের আগ্রাসী বেসরকারীকরণ অভিযান রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র এবং সরকারি সম্পত্তিকে ধারাবাহিকভাবে দুর্বল ও ধ্বংস করে চলেছে আর রেল, বিমানবন্দর, ব্যাঙ্ক এবং ইস্পাত কারখানাসহ গোটা জাতীয় অর্থনীতিকে মুষ্টিমেয় কয়েকটি কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছে। নয়া শিক্ষা নীতি শিক্ষাকে ক্রমশ আরও বেসরকারী, ব্যয়বহুল এবং ডিজিটাল করে তুলবে। এর ফলে বঞ্চিত এবং প্রতিকূল অবস্থায় থাকা ছেলেমেয়েদের শিক্ষার অধিকার বলতে আর কিছু থাকবে না।

ভারতবর্ষের মানুষ অবশ্য তাদের অস্তিত্ব এবং অধিকারের উপর এই লাগাতার আক্রমণকে সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করে চলেছেন। এক শক্তিশালী সমান নাগরিকত্ব আন্দোলনের পর আমরা সাক্ষী থাকছি এক ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের। বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন ক্রমশ বৃহত্তর সামাজিক অ্যাজেন্ডা এবং রাজনৈতিক প্রচারাভিযান হয়ে ওঠার আভাস দিচ্ছে। প্রকল্প কর্মী এবং চূড়ান্ত শোষিত ও অসুরক্ষিত মহিলা কর্মী এবং দলিত ও অন্যান্য বঞ্চিত শ্রেণীর অনিয়মিত ও অসংগঠিত শ্রমিকদের সংগ্রাম গোটা ভারত জুড়ে বেড়ে উঠছে। লক্ষ লক্ষ তরুণ ভারতীয় যারা ইতিমধ্যেই শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য লড়াই করছেন, তারাও কৃষক আন্দোলন এবং বেসরকারীকরণ-বিরোধী প্রচারাভিযানে আগ্রহী হয়ে উঠছেন ও অংশগ্রহণ করছেন। এই পরিবর্তন নির্বাচনেও প্রতিফলিত হতে শুরু করেছে। বিহার নির্বাচনে এই ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার এক জোরালো ঝলকের উদ্ভাস নজরে এসেছে।

বিহার নির্বাচনে পার্টির অর্জিত সাফল্য এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাহসী ও দৃঢ় অবস্থান নিয়ে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষিতে, পার্টির স্পষ্ট উচ্চারণ বাম আন্দোলন ও ফ্যাসি-বিরোধী প্রতিরোধে পার্টি সম্পর্কিত ধারণাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। পার্টির পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য সুযোগ যেমন বেড়েছে তেমনই দায়িত্বও বেড়েছে। তদনুযায়ী আমাদের নিজেদের প্রস্তুত হতে হবে এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। বিভিন্ন অংশের সংগ্রামকে একই কেন্দ্রাভিমুখী করে জনগণের এক ঐক্যবদ্ধ বলিষ্ঠ প্রতিরোধের রূপ দেওয়া জরুরি এবং তা সম্ভবও যা মোদী-শাহ-যোগী রাজ ও সঙ্ঘ বাহিনীর ফ্যাসিস্ট আক্রমণকে পরাস্ত করবে। সাথীরা গত বছর বিহার নির্বাচনে এবং বর্তমানে তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী চ্যালেঞ্জেও বিপুল উদ্দীপনায় সাড়া দিয়েছেন। পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের আসন্ন নির্বাচনী দফাগুলির জন্যও আমাদের উপযুক্ত ভাবে তৈরি হতে হবে। কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রথম ঢেউয়ে আমরা বিপন্ন মানুষের পাশে ছিলাম, চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আমাদের আবার সেটাই করতে হবে।

পার্টির বাহান্নতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে, আসুন পরিস্থিতির মোকাবিলায় আমরা নতুন করে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হই এবং আমাদের সমস্ত শক্তি ও উদ্যমকে সংহত করি!

সিপিআই(এম এল) দীর্ঘজীবী হোক।
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

কেন্দ্রীয় কমিটি
সিপিআই(এম এল)-লিবারেশন

22 april Asansol22 April Fansidewa

 

রাজ্যের সমস্ত পার্টি অফিস ও কাজের এলাকায় লেনিনের জন্মদিবস তথা পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপিত হয়। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আসা অহ্বান ও অঙ্গীকারকে আগামি দিনে সৃজনশীল ভাবে কার্যকর করা শপথ নেওয়া হয়। ২ মে রাজ্যের নির্বাচনি ফলাফল যা-ই হোকনা কেন পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নেন সকলে। পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য আসানসোলে হটন রোডে লেনিনের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, বিকেলে আসানসোল কর্পোরেশন চত্বরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রচারসভায় পার্টির আহ্বান ও অঙ্গীকার ঊর্ধেতুলে ধরেন।

মহান মার্কসবাদী শিক্ষক কমরেড লেনিনের ১৫১তম জন্মদিবস ও ৫৩তম পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবসে দার্জিলিং জেলার খড়িবাড়ি লোকাল কমিটির উদ্যোগে শচীন্দ্র চন্দ্র চা বাগানের চাপাটি লাইনে তরাই সংগ্রামী চা শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসের সামনে পতাকা উত্তোলন, কমরেড লেনিনের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও শহীদ স্মরণ করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির অঙ্গীকারপত্র পাঠ ও ব্যাখ্যা করেন রাজ্য সদস্য কমরেড পবিত্র সিংহ। উপস্থিত ছিলেন জেলা সদস্য কান্দ্রা মুর্মু, রাজকুমার এক্কা, পার্টি সদস্য সুকনাথ ওরাঁও, রাফায়েল ওরাঁও, ফুলজেন ওরাঁও প্রমুখ। কর্মসূচীটি পরিচালনা করেন কমরেড সুমন্তি এক্কা।

খণ্ড-28
সংখ্যা-15