বিহার বনধ: নীতীশ কুমারকে ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবি জানালেন বিহারের জনগণ
demanded an apology from Nitish Kuma

মোদী সরকারের তৈরি তিনটে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সংযুক্ত কিসান মোর্চার ভারত বনধের আহ্বানে শামিল হতে এবং বিহার বিধানসভায় পুলিশি পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মহাগঠন্ধন ভুক্ত দলগুলো বিহার বনধ সংগঠিত করতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়। সিপিআই(এমএল), সারা ভারত কিসান মহাসভা, এআইসিসিটিইউ ও আয়ারলার কর্মীরা বনধ সফল করতে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। যে ইস্যুগুলোকে কেন্দ্র করে বনধ ডাকা হয় তার মধ্যে ছিল তিনটে কৃষি আইন বাতিল করতে হবে, বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে এবং চারটে শ্রম-বিধি বাতিল করতে হবে।

সিপিআই(এমএল) কর্মীরা ২৬ মার্চ সকাল থেকেই রাস্তায় নামেন এবং দ্বারভাঙ্গা ও জাহানাবাদে রেল লাইন অবরোধ করেন। দ্বারভাঙ্গায় সহর্ষ-জয়নগর জানকি এক্সপ্রেস আটক করা হয় এবং সিপিআই(এমএল) কর্মীরা ঘন্টার পর ঘণ্টা দাবিগুলি ও বনধের সমর্থনে শ্লোগান দিতে থাকেন। রাজ্য স্ট্যাণ্ডিং কমিটির সদস্য অভিষেক কুমার, দেবেন্দ্র কুমার ও অন্যান্য নেতাদের পরিচালনায় লহেরিয়াসরাই রেল স্টেশনেও চাক্কা জ্যাম সংগঠিত হয়। মির্জাপুর-কৌয়াহী চক অবরোধ করা হয় লাহেরিসেরাই-রোসাদা রোড। জাহানাবাদে অবরোধের ফলে আটকে পড়ে গয়া-পাটনা লাইনের বহু ট্রেন।

আরাতে সিপিআই(এমএল) সমর্থকরা সকাল ৮টা থেকে আরা-পাটনা হাইওয়ে ৩০নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। বনধের ফলে আরা বাস স্ট্যাণ্ড জনশূন্য থাকে। সিপিআই(এমএল) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজু যাদব, কয়ামুদ্দিন আনসারি, দিলরাজ প্রীতমের নেতৃত্বে, এআইএসএ-আরওয়াইএ নেতা সুবির কুমার, শিব প্রকাশ রঞ্জন ও অন্যান্যদের নেতৃত্বে সিপিআই(এমএল) কর্মীরা দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শ্লোগান দিতে-দিতে লাগাতার প্রতিবাদ চালিয়ে যান। আরার পিরোতেও রাস্তা অবরোধ করা হয়।

ভোজপুরের আগিয়াঁও-এর দুর্গা মন্দিরের কাছেও চাক্কা জ্যাম সংগঠিত হয়। সিপিআই(এমএল) ও এআইএসএ নেতৃবৃন্দ নারায়নপুরে ১২নং জাতীয় সড়ক অবরোধে নেতৃত্ব দেন। কোলিভার ও বাধারা ব্লকের নেতৃবৃন্দ কোলিভারে আরা-ছাপরা হাইওয়ে অবরোধে সক্রিয় ভূমিকা নেন। সাহার ও গাধানিতেও বনধ ব্যাপকভাবে সফল হয়। এখানে সিপিআই(এমএল) ও আর জেডি কর্মীরা একসাথে আরা-সাসারাম হাইওয়ে অবরোধ করেন। জাহানাবাদের কোকা মোড়ে অবরোধ সংগঠিত হয় সিপিআই(এমএল)-এর জেলা সম্পাদক শ্রীনিবাস শর্মা ও অন্যান্য নেতাদের পরিচালনায়, এই অবরোধের ফলে পাটনা-গয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নালন্দার হিলসায় ইসলামপুর-ফতুয়া সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ রূপে ব্যাহত হয়। একানগড়সেরাইতে সকাল থেকেই পাটনা-গয়া সড়ক অবরোধ করা হয়। হিলসা বনধে নেতৃত্ব দেন জেলা সম্পাদক সুরেন্দ্র রাম ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ আর একানগড়সেরাই-এর অবরোধে নেতৃত্ব দেন প্রমোদ যাদব। চান্দিতেও বনধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

বক্সারের ডুমরাওতে বনধ বিস্তীর্ণভাবে সফল হয়। এখানে কয়ক শত সিপিআই(এমএল) কর্মী রাস্তায় নেমে সকাল থেকেই ১২০নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। সোনভদ্রতেও বনধের ব্যাপক প্রভাব চোখে পড়ে। গয়া জেলার কোচ ব্লকে রাস্তা অবরোধ করা হয়। টিকারিতে দোকানপাট ও সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। পূর্ণিয়ার রূপাউলিতেও বনধ ভালোভাবে সফল হয়। সমস্তিপুরের তাজপুরে গান্ধী চেকপোস্টের কাছে সিপিআই(এমএল) কর্মীরা জাতীয় সড়কে যান চলাচল রুখে দেন।

গত ২৩ মার্চ বিহার বিধানসভায় জেলা শাসক ও এসপির উপস্থিতিতে বিরোধী পক্ষের বিধায়কদের ওপর নির্মম নিপীড়নের ঘটনা ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই ঘটনা নিয়ে সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠলে যিনি বিধানসভায় পুলিশ ডেকেছিলেন সেই স্পিকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশ সেদিন বাড়াবাড়ি করেছিল কি না তা দেখার। সিপিআই(এমএল) এই অভিমত ব্যক্ত করেছে যে কোনো বিল নিয়ে বিরোধী পক্ষের আপত্তি থাকলে তা নিয়ে বিস্তৃত বিতর্ক ও আলোচনা চালানোটাই প্রথা। এর বিপরীতে নীতীশ কুমার পুলিশ ডেকে জোরজবরদস্তি বিল পাশ করিয়েছেন। সেদিন কিছু উর্দিবিহীন ব্যক্তিও বিধানসভায় ঢুকে বিরোধী বিধায়কদের নিগ্ৰহে হাত লাগায়, যারা বিজেপির গুণ্ডা বলেই ব্যাপকতর স্তরে অনুমান। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী, স্পিকার এবং পুলিশ ও প্রশাসনের বড় কর্তারা বিহারকে গণতন্ত্রের বধ্যভূমিতে পরিণত করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় জনগণের ক্রোধ প্রতিফলিত হয়েছে ২৬ মার্চের বিহার বনধকে সর্বাত্মক করে তোলার মধ্যে, মুখ্যমন্ত্রী, এসপি ও জেলা শাসকের বিহারের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জোরদার ভাবে তুলে ধরার মধ্যে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-12