কেন্দ্রে মোদি সরকারের ছয় বছর দেশকে কোথায় এনে ফেলেছে
Where has the six years of Modi government

কেন্দ্রে মোদী সরকার ছ’বছর পার করেছে। এই সময়কালে দেশকে কোথা থেকে কোথায় এনে ফেলেছে সেটা মিলিয়ে নেওয়া দরকার। বিজেপি ‘সোনার বাংলা’ করে দেওয়ার বুলি ঝাড়ছে আর এই ছলে চাইছে মানুষের ভোট আত্মসাৎ করতে। আজ আর কথা আমল দিলে চলবে না, আচরণের ভিত্তিতেই বিজেপি’কে দিতে জবাব।

মোদী জমানায়

১) ভারত ৪৫ বছরের সীমা ছাড়িয়ে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বেকারির মধ্যে পড়েছে। (এনএসএসও)

২) পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত ৩০টি শহরের মধ্যে ২২টি শহর ভারতে। (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)

৩) গত ৩০ বছরের মধ্যে এই ৬ বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় জীবন গেছে সেনাদের। (ভারতীয় সেনা বিভাগ)

৪) ৮০ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সর্বোচ্চ শিখরে। (Credit Suisse Report)

৫) মহিলাদের বসবাসের পক্ষে ভারত এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ। (টমাস রয়টার্স সমীক্ষা)

৬) ২০০০ সালের পর জিডিপি ঠেকেছে তলানীতে।

৭) গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাশ্মিরী তরুণ সন্ত্রাসবাদী হয়েছে গত ৬ বছরে। (ভারতীয় সেনা বিভাগ)

৮) ভারতের ব্যাঙ্কগুলো বিপর্যস্ত ৬,৬০,০০০ কোটি টাকা ব্যাড লোন বা এনপিএ-র ধাক্কায়।

৯) দারিদ্র্য বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

১০) ইউনাইটেড স্টেটস্ কমিশন ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষার প্রসঙ্গে ভারতকে দুশ্চিন্তাজনক দেশের শ্রেণীতে ফেলেছে।

১১) ভারতের কৃষকরা ১৮ বছরের ভেতর সবচেয়ে কম শস্যের মূল্য পেল। (ওয়ার্ল্ডপ্রাইস ইনডেক্স)

১২) গরু সম্পর্কিত হিংসা ও মব লিঞ্চিংয়ে মোদি সরকার রেকর্ড করেছে। (India Spend Data)

১৩) সম্পদের বিচারে ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৈষম্যমূলক দেশ। (বিশ্ব সম্পদ রিপোর্ট )

১৪) ভারতীয় মুদ্রা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নীচে।

১৫) পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে ভারত পৃথিবীর তৃতীয় খারাপ দেশ। (ইপিআই রিপোর্ট)

১৬) ফরেন ফান্ডিং ও দুর্নীতিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভারতের ইতিহাসে প্রথম। (ভারতের ফিনান্স রিপোর্ট)

১৭) ৬ বছরে প্রধানমন্ত্রী মোদী একটিও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। ৭০ বছরে এমন ঘটেনি। পিএমএর বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

১৮) ভারত বিদেশের সঙ্গে যুদ্ধে না পারলেও দেশে বড় বড় যুদ্ধ চলেছে সিবিআই বনাম সিবিআই, আরবিআই বনাম সরকার, সুপ্রীম কোর্ট বনাম সরকার। কারণ মোদীজী সমস্ত গণতান্ত্রিক সংস্থাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছেন।

১৯) সুপ্রীম কোর্টের চার বিচারক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, ‘ভারতে গণতন্ত্র বিপন্ন’।

২০) প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে এই প্রথমবার গায়েব হয়েছে সর্বোচ্চ গোপনীয় তথ্য।

২১) ধর্মীয় উন্মদনা ও হিংসা পৌঁছেছে ৭০ বছরের মধ্যে শীর্ষে।

২২) ভারতের মিডিয়া ৭০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বিশ্বাসযোগ্যতায় পৌঁছেছে।

২৩) গ্লেবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বা বিশ্ব অনাহারের সূচকে বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে ১০২ নম্বর স্থানে । এমনকি পাকিস্তান, বাংলাদেশ আর নেপালও ভারতের ওপরে আছে। (গ্লোবাল হাঙ্গার রিপোর্ট)

২৪) জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর রিপোর্ট প্রকাশ হতে প্রচন্ড দেরী হয়। ২০১৭ সালের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে কিছুদিন আগে মাত্র। ফলে বিচার কী হয় বোঝাই যায়।

২৫) আইএমএফ মোদী সরকারের তথ্য ও তা প্রকাশের ধরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তার বিলম্ব নিয়েও দুশ্চিন্তা জানিয়েছে। কর রাজস্বের সম্ভাব্য পরিমাণ ও আভ্যন্তরীণ মোট উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে। কিছুই তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না। ভবিষ্যতে অন্য সরকার এলে তারাও বিপদে পড়বে।

২৬) ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনীতির অপরাধীকরণে দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ। পূর্বতন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিঙ্গার, বিজেপি’র প্রাক্তন মন্ত্রী স্বামী চিন্ময়ানন্দর মামলা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মালেগাঁও বোমা মামলার অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুর এখন সাংসদ এবং হাস্যকর হল তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্যানেলে আছেন। অভিযুক্ত উগ্রপন্থী দেশরক্ষার সিদ্ধান্ত নেবেন, ভারত ছাড়া এমন কোথাও নেই। ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি অপরাধীদের থেকে বিপুল টাকা নিয়েছে। লোকে কী বলবে তা নিয়ে ভাবে না। ‘আরকেডব্লিউ ডেভেলপার্স লিমিটেড’ থেকে নেয় ১০ কোটি টাকা। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সংগঠিত করার টাকা যোগানোর তদন্ত করছে ইডি। এটা বিজেপি’ই নির্বাচন কমিশনকে জানায়।

২৭) নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আর নেই। ৩৪৭টি আসনে প্রার্থীর ক্ষেত্রে তারা নির্লজ্জের মতো পক্ষপাতিত্ব করেছে। একমাত্র অশোক লাভাসা আপত্তি করায় এখন তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর মানসিক নির্য্যাতন চলছে।

২৮) ২০১৯এর মার্চে ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স প্রকাশ করে। দেশের মানুষ কত ভালো আছে এবং সরকার কেমন শাসন করছে তা বোঝা যায় যাতে। তাতে মোদীজী সরকারের পতন অভূতপূর্ব। দেশের মানুষ ও দেশ এত কষ্টে কখনও থাকেনি। ছ’টি সূচকের ভিত্তিতে সামুহিক সুখের বিচার হয়। পার ক্যাপিটা জিডিপি, সুস্থ জীবন ও গড় আয়ু, জীবনে নিজের পছন্দ বাছার স্বাধীনতা, সমাজের পাশে থাকা বা নিঃস্বার্থ সাহায্য করা ও পাওয়া, উদারতা ও দুর্নীতি বিষয়ে ধারণা।

এই সব ধরে ১৫৩টি দেশের মধ্যে মোদীর ভারত স্থান পেয়েছে ১৪০ নম্বরে। ২০১৩ সালে ছিল ১১৭ নম্বরে। মানুষের সর্বনাশ করায় মোদীজীর এটা সেরা কীর্তি বলতে পারেন। যে পাকিস্তানের ভরসায় মোদীজীর অস্তিত্বের অনেকটা টিকে আছে সেই পাকিস্তান রয়েছে ৬৭ নম্বরে। আমাদের দ্বিগুণের বেশি স্বস্তিকর অবস্থায়। আর, ভারতের সাধারণ জনজীবন থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে চাকরি, স্বাধীনতা ও আনন্দ সবকিছু।

খণ্ড-28
সংখ্যা-15