বিবৃতি
বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে এক স্পষ্ট জনাদেশ
A clear mandate against the BJP

সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনগুলির রায় সম্পর্কেকেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি

ভারতে মোদী সরকারের অপশাসনের ফলে সৃষ্ট কালান্তক কোভিড-১৯ অতিমারী সংকটের মধ্যে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল আমাদের সামনে এলো।

বিজেপি’র এইরকম হামবড়াই মনোভাব মানুষের ঐতিহাসিক ফ্যাসিবাদ বিরোধী রায়ে নির্মমভাবে শূন্যগর্ভ প্রমাণিত হলো। ‘একুশের ডাক’ ও ‘নো ভোট টু বিজেপি’ এই দুই প্রচারাভিযান, পাশাপাশি কৃষক আন্দোলন রাজ্যের মানুষকে বিজেপি ও মোদী শাসনের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। মোদী সরকার ও শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ, নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা, পাশাপাশি বিজেপি’র বিষাক্ত ইসলাম বিদ্বেষ প্রচারও বিজেপিকে জয় এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই জয়ের জন্য আমরা তৃণমূল কংগ্রেসকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি একচেটিয়া বিরোধী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এইরাজ্যে সরকার বিরোধী অবিজেপি সংগঠনে শক্তিসঞ্চার এবং বামপন্থী শক্তির পুনর্গঠনের মাধ্যমে রাজ্যের এই রাজনৈতিক অবস্থার জরুরি প্রতিকার প্রয়োজন।

কেরালায় এলডিএফ স্পষ্ট জনাদেশ পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছে। এই জনাদেশ গত বছর কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের তৎকালীন পরিস্থিতিতে নির্মম ও অযোগ্য ভূমিকার বিপরীতে রাজ্য সরকারের মানবিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকার ফসল। আমরা এই জয়ের জন্য সিপিআইএম ও এলডিএফকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তামিলনাড়ু এআইএডিএমকে সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী জনাদেশ দিয়েছে, এই এআইএডিএমকে ক্রমশ বিজেপি’র প্রচ্ছন্ন মুখ হিসেবে ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছিলো। তবে রাজ্যে কিন্তু বিজেপি’র প্রবেশ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এখানে তারা দু’টি আসন পেয়েছে এবং অন্য দু’টি আসনে খুব কম ভোট পার্থক্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, তৎসহ তাদেরকে এই আসনগুলোতে এআইএডিএমকে-র থেকে বেশি ভোট প্রভাবিত করতে দেখা যাচ্ছে। তামিলনাড়ুর সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে এই প্রাথমিক বিপদসঙ্কেতের দিকে নজর রাখতে হবে এবং রাজ্যে বিজেপি’র সম্ভাব্য যে কোনও উত্থানকে রুখতে হবে।

এআইএনআরসি-বিজেপি জোট পুদুচেরিতে তাদের জয় নিশ্চিত করেছে। পুদুচেরির মানুষকে পুদুচেরির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সদাসতর্ক থাকতে হবে এবং বিজেপি’র তামিলনাড়ু বা কেরালায় প্রবেশের খিড়কির দরজা হিসাবে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিকে ব্যবহারের যে কোনও চেষ্টা আটকে দিতে হবে।

আসামে বিজেপি দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। তবে এখানেও কিছু উৎসাহব্যঞ্জক লক্ষণ রয়েছে। সিএএ-বিরোধী ও কৃষক আন্দোলনের কর্মী অখিল গগৈকে তাঁর লড়াই ও জয়ের জন্য আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁর এই জয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বিজেপি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে নিৰ্মম ইউএপিএ ধারায় মামলা করায় তিনি জেলবন্দী থেকে এই লড়াই লড়েছেন।

কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ভারতের প্রত্যন্ত কোণ থেকে কোণে ছড়িয়ে পড়ছে এবং চরম ভোগান্তি ও মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে। নবনির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলিকে কোভিড-আক্রান্তদের ত্রাণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এই মারণ ভাইরাসের পুনরায় ছড়িয়ে পড়া থামাতে হবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-16