ধর্মীয় অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র : মন্দিরে গোমাংস রাখা নিয়ে শান্তিপুরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা
Conspiracy to create religious unrest

(এপিডিআর কৃষ্ণনগর শাখার তথ্যানুসন্ধানকারী দলের রিপোর্ট)

গত ১৫ মে অর্থাৎ ঈদের ঠিক পরেরদিন শান্তিপুর থানার অর্ন্তগত বেলতলার বাবলাবন গ্রামে স্থানীয় শনি মন্দিরের গ্রিলে গোমাংস ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। রাস্তা অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেফতার ও মারপিটের ঘটনাও ঘটে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস শেলও ফাটায়। এলাকায় এখনও উত্তেজনা রয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এপিডিআর কৃষ্ণনগর শাখা ও শান্তিপুর জনউদ্যোগের পক্ষ থেকে ১৯ মে এক তথ্যানুসন্ধান করা হয়।

তথ্যানুসন্ধান দলটি প্রথমে ঘটনাস্থল তথা বাবলাবন গ্রামে যায়। শান্তিপুর মোতিগঞ্জ মোড় থেকে বাবলাবন গ্রামের দূরত্ব আনুমানিক সাড়ে তিন কিলোমিটার। রাস্তার ওপরেই সেই শনি মন্দিরটি আমরা দেখতে পাই। স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, গ্রিল আটকানো শনি মন্দিরটি প্রায় দশ বছর আগে তৈরি হয়। বাবলাবন গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। জনসংখ্যা পাঁচশোর কিছু বেশি। মূলত কর্মকার, কুন্ডু ও বিশ্বাস’দেরই বসবাস। বাংলাদেশের যশোর জেলার অধিবাসীদেরই প্রধানত বসবাস এই এলাকায়। অনুসন্ধানকারী দল প্রথমে কথা বলে স্থানীয় কর্মকার মহাদেব কর্মকারের সাথে। নিজের কামারশালা, লকডাউনের ফলে যা আপাতত বন্ধ, সত্তরোর্ধ এই বৃদ্ধ জানান সেদিনের ঘটনার কথা। তিনি জানান, ১৯৭১ সাল থেকে তার এই এলাকায় বাস। ইন্দিরা গান্ধীর দিন থেকে আজকের দিন পর্যন্ত এই ঘটনা এই এলাকায় প্রথমবার ঘটল। পেশাগত কারণে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই তার কাছে কাজ করাতে আসেন। সেক্ষেত্রে কখনও ধর্মীয় পরিচয় প্রকট হয়নি। বরং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো বলেই জানান তিনি। যদিও সেদিনের ঘটনা এই সম্পর্কের ভিতকে কোথাও যেন নড়িয়ে দিয়েছে। ঐদিন ঘুম থেকে উঠে মন্দিরে গোমাংস দেখে এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই নানারকম প্রশ্ন উঠতে থাকে। একে একে লোক জড়ো হতে থাকে মন্দিরের সামনে। মানুষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। ঠিক এমন সময়ে নৃসিংহপুরবাসী জনৈক পার্থ বিশ্বাস টোটো নিয়ে সমস্ত ‘হিন্দু ভাইদের’ এই ঘটনার বিরোধিতা করার আবেদন জানিয়ে মাইকে প্রচার শুরু করেন। এই প্রচারে সাড়া দিয়ে প্রচুর মানুষ এলাকায় জড়ো হয়। কিছু বাইরের লোকজনও আসেন বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান। প্রায় পাঁচশোজন মানুষ সকাল সাড়ে নটা/দশটা নাগাদ উত্তেজিত অবস্থায় এই ঘটনার বিরোধিতা এবং অপরাধীকে গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। ঘটনাস্থলে শান্তিপুর থানার পুলিশ ও এসডিও আসেন। প্রশাসন থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা সেকথায় সাড়া না দিয়ে অবরোধ চালিয়ে যান। এরপর জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বিক্ষিপ্ত লাঠিচার্জ হয়। টিয়ারগ্যাসের শেল ফাটানো হয়। পুলিশ, পার্থ বিশ্বাস সহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে, যদিও একজনকে পরের দিন ছেড়ে দেয়। প্রশাসনের উদ্যোগে ঐদিনই মন্দির পরিষ্কার করা হয় এবং গোমাংসের টুকরোটি সরানো হয়। উল্লেখ্য, সেদিন ঘটনাস্থলে সদ্য বিজয়ী বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারও উপস্থিত ছিলেন। অনুসন্ধানকারী দল মহাদেব কর্মকারের কাছে জানতে চায়, কেন হঠাৎ করে এরকম ঘটনা ঘটলো? ঈদের দিন মুসলমান সম্প্রদায়গত মানুষের গরুর মাংস খাওয়া তো নতুন কিছু নয়, তাহলে হঠাৎ এখন কেন এরকম ঘটনা ঘটল? গ্রাম্য সারল্যের সাথে তিনি জানালেন, এই প্রশ্নের উত্তর সত্যি বলতে তাঁরও জানা নেই। কারা যে করল সেই বিষয়েও তাঁর কোনো ধারণা নেই। তবে কোনো হিন্দুর ছেলে এই পাপকাজ করবে বলে তাঁর মনে হয়না। আমাদের প্রশ্ন থাকে, তাহলে কি মুসলমানরাই কেউ করেছে? তিনি অসহায় বোধ করেন এই প্রশ্নের সামনে। কিছুক্ষণ ভেবে বলেন, “কি করে বলি! এতদিন তো ওরা এমন কিছু করেনি। এখন করেছে কিনা সেটাও ঠিক বুঝতে পারছিনা! তবে মানুষের মনে সন্দেহ তো তৈরি হয়েছে। প্রশাসন খুঁজে বের করুক সেই অপরাধীকে। তাহলেই সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে”। তিনি আরও জানান, একেই লকডাউনের পরে তাঁর কামারশালা প্রায় বন্ধ ছিল। তাও যা অল্পবিস্তর কাজ সকালের দিকে হচ্ছিল, এই ঘটনার পর তাও বন্ধ হয়ে গেছে। পুলিশ পিকেট বসেছে সামনেই। কেউই কাজ করাতে আসছেন না। তাই খেয়ে পরে শান্তিতে থাকতে চাওয়া প্রবীণ মহাদেব বাবু দোষী ব্যক্তির অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান নাহলে বেঁচে থাকাটাই প্রশ্নের মুখে পড়বে, এমনটাই দাবি তার। আমরা কথা বলি স্থানীয় বাবলু কুন্ডু, শম্পা কুন্ডু ও হরেন বিশ্বাসের সাথে এবং স্থানীয় কোয়াক ডাক্তার পীযুষ মন্ডলের সাথেও। পীযুষ বাবুর বাড়ি নৃসিংহপুর গ্রামের মধ্যপাড়ায়। তিনি জোরের সাথে জানান কোনো হিন্দু এইকাজ করবে না। তাহলে এতদিন পরে মুসলমানরাই বা কেন করবে? এই প্রশ্নের উত্তর তাঁর কাছে নেই বলে তিনি জানান, প্রশাসনের উচিত দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করা। তাঁর ডাক্তারখানায় থাকা স্থানীয় শ্রী ঘোষ অভিযোগ করেন সাহেবডাঙ্গায় মুসলমানরা তাদের গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছে না। তারা ঐ গ্রামের একটা মাঠে দুধ দোয়ানোর কাজ করেন। সেই দুধ শান্তিপুর এলাকা ও তার বাইরেও সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এখন ‘ওরা’ ঢুকতে না দেওয়ায় তাঁর মতো অনেক ঘোষেরই এখন রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পীযুষবাবু জানান, আমরাও যদি ‘আমাদের’ গ্রামে ‘ওদের’ ঢুকতে না দিই তাহলে বেশি সমস্যায় পড়বে ‘ওরাই’। কিন্তু এই ‘আমরা’-‘ওরা’র বাইরে এতদিনের যে সুসম্পর্ক ছিল তা কি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় মিটিয়ে নেওয়া যায় না? যায় না কি সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গ্রামগুলিতে জনমত গড়ে তুলতে? আমাদের এই প্রশ্নের উত্তরে তারা প্রশাসনকেই উদ্যোগ নিতে বলেন।

এরপর তথ্যানুসন্ধান দলটি যায় পাশের গ্রাম সাহেবডাঙ্গায়। হরিপুর পঞ্চায়েতের অর্ন্তগত সাহেবডাঙ্গা গ্রাম মুসলিমপ্রধান হলেও কিছু ঘোষেদের বসবাসও আছে। এই গ্রামের মানুষ সেদিনের পর থেকে অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য আব্বাস আলি। স্থানীয় আমির উদ্দিন শেখ জানান, ভয়ে আতঙ্কে তারা গ্রাম ছেড়ে বেরোতে পারছেন না। ঘোষ পাড়ার সাধন ঘোষ বলেন, তাঁরাও নিজের পাড়া থেকে বেরোতে পারছেন না। রুটি-রুজির কারণে তাকে নৃসিংহপুর ও নতুনবাজার যেতে হয়, যার পথ সাহেবডাঙ্গার মধ্যে দিয়েই গেছে। কিন্তু সাহেবডাঙ্গার লোকেরাই এখন কয়েকদিন গ্রামে যাতায়াত বন্ধ রাখতে বলেছেন। অবিশ্বাস আর সন্দেহের বাতাবরণ যে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মনে জায়গা করেছে তা তাদের কথায় উঠে আসা উদ্বেগ থেকেই স্পষ্ট বলে মনে হয়েছে। এরপর কথা হয় সাহেবডাঙ্গা গ্রামেরই বস্ত্র ব্যবসায়ী আসরাফ আলি শেখের সাথে। তিনি জানান, গরুর মাংস মন্দিরে রেখে যদি অশান্তি করার ইচ্ছে তাঁদের থাকত তাহলে তারা তাঁদের পাড়ার মন্দিরেই এই কাজ করতে পারতেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁরা তা করেননি। করার কথা ভাবেনও নি। কারণ দুই ধর্মের লোকজনই অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে একে অন্যের উপরে নির্ভরশীল। তাঁর অভিযোগ, আজ এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। শুধুমাত্র মুসলমানদের ওপর অভিযোগ আনতে ও হিন্দুদের অবিশ্বাস আর ঘৃণা জাগাতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা ঘটালো এমন ঘটনা? যখন এই প্রশ্ন করা হয় তিনি উত্তর দেন, “সেটা প্রশাসন দেখুক। আমরা কাকে সন্দেহ করবো? কেনই বা করব? অপরাধীকে খুঁজে বের করা প্রশাসনের কাজ। আমরা চাই দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করা হোক”। তাঁর দোকানে বসেই কথা হচ্ছিল। ঐ দোকানেই কথা বলতে এগিয়ে এলেন অন্যরা। তারা জানালেন, “কয়েক বছর আগেও তোপখানা গ্রামে এরকম ঘটনা ঘটেছিল। তখনও এইরকম ভয়, অবিশ্বাস আর সন্দেহ ছিল মানুষে মানুষে”। তাঁরা জানান, “হিন্দুরা আমাদের অপরাধী ঠাওড়েই নিয়েছিল। ‘অপরাধী তার অপরাধ জানলোনা অথচ ফাঁসি হয়ে গেল’ এইরকম পরিস্থিতি তখন। তারপর পুলিশ গ্রেফতার করল কয়েকজনকে। বিচারও শুরু হল। জানা গেল যে, এই জঘন্য কাজ করেছিল একজন হিন্দুরই ছেলে। আজও সে জেল খাটছে”। অনুসন্ধানকারী দল জানতে চায় ঘোষেদের তাঁরা কেন দুধ দেওয়াতে তাদের গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছেন না? এতে বিদ্বেষ আর দূরত্ব আরও বাড়বে না কি? আসরাফ আলির সাথে অন্যরাও পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “যদি আবারও কোনো অশান্তি হয়, তার দায়িত্ব কে নেবে? আপনারা তো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে আসবেন। প্রশাসনও তাই”। তাঁরা স্পষ্ট জানান, “মনে সন্দেহ নিয়ে সম্প্রীতি রাখা যায় না। তাই প্রশাসন দোষী ব্যক্তিকে আগে গ্রেফতার করুক তারপর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে”। অনুসন্ধানকারী দল ওখানেই জানতে পারে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চারজন মুসলিম যুবক আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের সাথে কথা বলতে হরিপুর পঞ্চায়েতের অধীনে হরিনদী দরগাতলায় যাওয়া হয়। এই গ্রামটি বেশ বড়, মুসলিমপ্রধান গ্রাম। গ্রামের অনেককেই বাজার ও ব্যবসাপাতির কারণে শান্তিপুর নতুন হাটের দিকে যেতে হয়। সেখানকার স্থানীয় মানুষদের সাথে কথাবার্তায় জানা যায়, এলাকার যুবক জসিমুদ্দিন সেখ (বয়স ২৯), বাবার নাম দিলবাহার সেখ, ঈদের পরেরদিন কয়েকজন হিন্দু যুবকের দ্বারা আক্রান্ত হয়। জসিমুদ্দিনের বাড়ি কাছেই ছিল তাই তার বাড়িতে সরাসরি যাওয়া হয়। সে ঐদিন কালনায় সিটি স্ক্যান করাতে গিয়েছিল বলে তার সাথে দেখা হয়নি, কিন্তু তার বাবা ও মায়ের সাথে কথা বলে জানা গেল, তাদের বাঁশের ব্যবসা আছে। গ্রামের অধিকাংশ লোকই বাঁশের ব্যবসা করেন।

ঈদের পরের দিন জসিমুদ্দিন বাঁশ দিয়ে নতুন হাটের দিক থেকে ফিরছিল। ফেরার পথে মুখে গামছা বাঁধা কয়েকজন যুবক তার ওপর আকষ্মিক চড়াও হয়। তারা জসিমুদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করে গতদিন অর্থাৎ ঈদের দিন সে জোরে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিল কেন? জসিমুদ্দিন জানান তিনি ঈদের দিন গ্রাম থেকে বেরোয়নি, এইদিকে আসেনও নি। এরপর মিথ্যে কথা বলার অভিযোগে তারা জসিমুদ্দিনকে মারতে থাকে। রড দিয়ে মারার ফলে তাঁর মুখ প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথাতেও আঘাত লাগে। মোটরবাইক ভাঙচুর করে। পথচলতি কয়েকজন যুবক এই ঘটনা দেখে জসিমুদ্দিনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। আক্রমণকারীদের তারা ভর্ৎসনা করে এবং তাঁকে বাড়ি ফিরে আসতে সাহায্য করে। জসিমুদ্দিন বাড়িতে জানান, যারা তার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তারা ধর্ম পরিচয়ে ছিলেন হিন্দু। এই ঘটনা জানিয়ে শান্তিপুর থানায় জসিমুদ্দিন লিখিত অভিযোগ জানান। যদিও কোনো জিডি/এফআইআর’র নম্বর/কপি থানা থেকে তাঁকে দেওয়া হয়নি। আক্রান্ত হন নৃসিংহপুর মধ্যপাড়ার আরেকজন যুবক যিনি শান্তিপুর পুরসভার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী, কটা সেখ। বিজেপির নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য সূপর্ণা বর্মনের সাথেও কথা বলার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু কোনো যোগাযোগ সূত্র না পাওয়ায় তা হয়ে ওঠেনি। তথ্যানুসন্ধান শেষে শান্তিপুর থানার ওসি সুমন দাসের সাথে দেখা করে তাঁকে তথ্যানুসন্ধানের সবকিছু জানানো হয়। গ্রামগুলিতে যে চাপা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হচ্ছে যা এতদিনের সামাজিক-অর্থনৈতিক সহাবস্থানের সম্পর্ককে নষ্ট করছে সেই বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে ওনাকে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করা হয়। দাবি রাখা হয়,

(১) অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে হবে।
২) গ্রামে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পরিবর্তে সম্প্রীতির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় হতে হবে। প্রয়োজনে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে বসে আলোচনা ও প্রশাসনিক উদ্যোগে সম্প্রীতির বার্তা দিতে হবে।
 
৩) জসিমুদ্দিন সেখের অভিযোগপত্রের কপি তাঁকে বা তাঁর পরিবারকে দিতে হবে।

অনুসন্ধানকারী দলের পর্যবেক্ষণ

মন্দিরে গোমাংস রাখার ঘটনার মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে সহজে আঘাত করার ঘটনা এর আগেও এখানে ঘটেছে। এই ঘটনায় সহজেই মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি হিন্দুদের বিক্ষুদ্ধ করে তোলা যায়, যা একটা দুটো বিক্ষিপ্ত ঘটনায় সার্বিক প্রভাব না ফেললেও ধারাবাহিক ঘটতে থাকলে আবশ্যিকভাবেই সম্প্রীতির সম্পর্কে ফাটল ধরায়। এই তথ্যানুসন্ধানে যেমন একদিকে ধর্মীয় পরিচয় ব্যতিরেকে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্তঃসম্পর্কই যথেষ্ট মাত্রায় দেখা গেছে, অন্যদিকে এই ঘটনার পর হিন্দুদের মনে সন্দেহ আর মুসলমানদের মনে ভয় আর আতঙ্কও প্রত্যক্ষ করা গেল। যদিও এই অঞ্চলের মানুষ এখনও পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় জড়িত হননি, কিন্তু অনুরূপ সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক ঘটনা যেরকম ধারাবাহিক আকার নিচ্ছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মনে হয়েছে। এই ঘটনা ধর্মীয় বিভাজন তৈরির উদ্দেশ্যেই ঘটানো হয়েছে বলেও মনে হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সামাজিক প্রেক্ষাপট অথবা দাঙ্গা পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হতে পারে তার জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি এলাকার মানুষের সামাজিক উদ্যোগকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে নাগরিক সমাজকেও।

তথ্যানুসন্ধান দলে ছিলেন এপিডিআর কৃষ্ণনগর শাখার পক্ষে তাপস চক্রবর্তী, মৌতুলি নাগ সরকার, কিশোর সিংহ এবং শান্তিপুর জন উদ্যোগের পক্ষে শমিত আচার্য, জয়ন্ত ব্যানার্জি, বাবর আলী মন্ডল।

(রিপোর্ট পাঠিয়ে সহায়তা করেছেন শংকর রায়) 

খণ্ড-28
সংখ্যা-19