প্রয়াত কমরেড শৈলেন্দ্র মিত্র
late Comrade Shailendra Mitra

কমরেড শৈলেন্দ্র নাথ মিত্র গত ২০ মে হাওড়ার এক বেসরকারী হাসপাতালে মারা যান। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন। প্রয়াত কমরেড প্রতিরক্ষা শিল্পে কর্মরত অবস্থায় সিপিআই (এম-এল)’র সদস্য ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়দায়িত্ব পালন করতেন। অবসর নেওয়ার পর পার্টির জেলার সঙ্গে যুক্ত হন, আমৃত্যু পার্টি সদস্য ছিলেন। পার্টির মধ্য হাওড়া লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।

দীর্ঘদিনকার প্রবীণ কমরেড শৈলেন্দ্র মিত্র বহু পার্টি কর্মীর কাছে প্রদীপদা নামে পরিচিত ছিলেন। ৭০ দশকে পার্টির কাজ করার সময় জেল খেটেছেন, পরে পার্টি পুনর্গঠনের পর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। শিল্পগত পার্টি কাঠামোর সদস্য ছিলেন। পার্টির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন বিশেষত ৫ম পার্টি কংগ্রেসের সময়, শ্রমিক সংগঠন ডব্লিউএসও গঠন হোক বা এআইসিসিটিইউ গঠনপর্বে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৯০’র ৮ অক্টোবর “দাম বাঁধো, কাজ দাও, নইলে গদী ছেড়ে দাও” দিল্লি অভিযানেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়া পার্টির পথনির্দেশে প্রতিরক্ষা শিল্পে টিইউ স্তরে ফ্রাকশনাল কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি হয়েছিলেন এবং কার্যকরি সমিতির সদস্য ছিলেন। কমরেড প্রদীপদা প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রের মধ্যে তিনি যেমন জঙ্গি টিইউ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন, তেমনি শ্রমিকদের শ্রেণি সম্পর্কে সচেতন করতে পার্টির গোপন অবস্থায় সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাই তিনি শুধুমাত্র টিইউ নেতা হিসেবে নয়, একজন কমিউনিস্ট নেতা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শ্রমিকশ্রেণিকে নিছক ট্রেড ইউনিয়নের গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ না রেখে রাজনীতিকরণের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ফলে পার্টি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় শ্রমিকশ্রেণিকে পার্টি সংগঠনের সাথে সচেতনভাবে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। যেটা  আজকের পরিস্থিতিতেও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের কাছে শিক্ষণীয়। পার্টি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার পলিসি নেওয়ার পর ছুটি নিয়ে নির্বাচনের কাজে শুধুমাত্র দায়িত্বশীল হিসেবে নিজের অংশগ্রহণ নয়, অন্য শ্রমিকদেরও অংশগ্রহণ করান। মূল বিষয় হল, শুধুমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন কাজে অংশগ্রহণ করানো নয়, সাথে সাথে রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার কাজকে গুরুত্ব দিলেই পার্টি শক্তিশালী হবে মনে করতেন। কমরেড তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও সামিল করে ছিলেন। তাঁর স্ত্রী, ভাই-বোনরাও পার্টির প্রতি আন্তরিক ছিলেন। গোপন অবস্থায় বহু মিটিং হয়েছে তাঁর বাড়িতে। ২০০৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর হাওড়ায় পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। শেষ দিকে বয়স এবং শারীরিক কারণে সক্রিয় থাকতে পারেননি, কিন্তু পার্টির উপর, পার্টি লাইনের প্রতি গভীর আস্থা ছিল। এরকম একজন পার্টিজান কমরেড শ্রমিক শ্রেণিকে রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সেই শিক্ষা অবশ্যই তাঁর উত্তরসূরীরা পালন করে যাবে। এটাই আজকের দিনে পার্টিকে শক্তিশালী করার একটা কর্তব্য। কমরেড প্রদীপদা (শৈলেন্দ্র মিত্র) অমর রহে।

কমরেড শৈলেন্দ্র নাথ মিত্র লাল সেলাম।

খণ্ড-28
সংখ্যা-19