বিবৃতি
রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে দাবিপত্র
Demand letter

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী,

পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মোকাবিলা করতে রাজ্য সরকার যে একগুচ্ছ ঘোষণা সামনে নিয়ে এসেছে, তাকে কার্যত লকডাউন বলেই মনে করা যায়। কোভিড প্রশমনে গতবছর সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হবার সময় থেকেই শ্রমজীবী মানুষ প্রবল সমস্যার মধ্যে আছেন। রাজ্য সরকারের বর্তমান পদক্ষেপে চা-বাগান বা জুট মিল অল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে চলার ছাড়পত্র পেলেও বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন সঙ্কট ভয়ানকভাবে বেড়ে যাবে। এ মতো পরিস্থিতিতে আমরা মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর রাজ্য সরকার ও রাজ্য প্রশাসনের কাছে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি রাখতে চাই।

১) লকডাউন’এর প্রথম দিন থেকেই রাজ্যের সমস্ত পুরসভা ও পঞ্চায়েতে ৫ টাকার সুলভ পেটভর্তি খাবারের ক্যান্টিন চালু করতে হবে, যার প্রতিশ্রুতি শাসক দল নির্বাচনের আগেই দিয়েছিল।

২) প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবিলম্বে দুয়ারে সরকার কর্মসূচী শুরু করতে হবে, ঘরে ঘরে প্রশাসনের তরফে রেশন পৌঁছে দিতে হবে এবং সেই রেশনের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। শ্রমজীবী জীবনে প্রোটিনের চাহিদা যত বেশি, জোগান তত কম। সেইসঙ্গে অতিমারীর সময়ে প্রোটিনের অধিক প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে পরিবার-পিছু মাসিক অন্তত তিন কেজি ডাল বিনামূল্যে দিতে হবে।

৩) স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা কোভিড-রোগীরা পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ নানা জায়গা থেকেই আসছে। এই সুবিধা অবিলম্বে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪) কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনে ত্রাস নেমে এসেছে। গ্রামাঞ্চলে দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তাঁদের এই সঙ্কটকে তীব্র করে তুলেছে। তাই অবিলম্বে --

  • প্রতি ব্লকে অন্তত একটি করে অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল করতেই হবে। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি সেগুলোকে পরীক্ষাকেন্দ্র ও প্রয়োজনমতো উচ্চতর পর্যায়ের হাসপাতালে পাঠানোর সহায়তা কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে গ্রামবাসীদের তাৎক্ষণিক পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চতর স্তরের হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমানো যাবে এবং মৃত্যুহার কমানো যাবে।
  • গ্রামস্তরে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্যের জন্য স্থানীয় স্তরের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে যাতে গ্রামে স্বাস্থ্যবিধির প্রচার থেকে শুরু করে রোগ নির্ণয়ের এবং চিকিৎসার প্রাথমিক কাজটা স্থানীয় স্তরেই সেরে ফেলা যায়। প্রয়োজনীয় ওষুধেরও জোগান রাখতে হবে।
  • প্রতিটি গ্রামে পালস অক্সিমিটার ও প্রাথমিক ওষুধপত্র সহ একজন করে স্বাস্থ্যকর্মী/স্বেচ্ছাসেবক থাকতেই হবে।

৫) শহরের পাড়াগুলোতেও রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রাথমিক কাজগুলো করে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে - এরজন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করার জন্য পাড়া থেকেই স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা যেতে পারে।

৬) অতিমারী মোকাবিলায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন নানারকম কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছেন। এই কাজে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সবরকমের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা যাতে প্রয়োজনমতো রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিনা বাধায় যোগাযোগ করে উঠতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭) রাজ্য ও জেলা স্তরের বড় বড় স্টেডিয়ামগুলোকে অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করতে হবে।

৮) যথেষ্ট সংখ্যক স্কুল ও কলেজকে অক্সিজেন পার্লার ও সেফ হোম হিসেবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯) অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য গাড়ি, অ্যাপ ক্যাব যাতে যথেষ্ট পরিমাণে ও সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

১০) ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচীকে ভিড় এড়িয়ে সুষ্ঠু ও সুস্থভাবে পরিচালনা করতে হবে। বর্তমানে এই নিয়ে যে অব্যবস্থা চলছে, তা সংক্রমণকে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করছে।

ধন্যবাদান্তে,
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন,
ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ, জনস্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী
দিলীপ ঘোষ, প্রাক্তন আইএএস
মৌসুমি ভৌমিক, গায়িকা
প্রদ্যোত নাথ, গণআন্দোলনের কর্মী
কুমার রাণা, সমাজ-গবেষক ও প্রবন্ধকার
রাজা পুনিয়ানি, কবি
মীর রেজাউল করীম, ডিন - কলা ও ভাষা অনুষদ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ডাক্তার অতনু রায়, জনস্বাস্থ্য আন্দোলন কর্মী
দেবাশিস চক্রবর্তী, নাট্যকর্মী, বাদল সরকার নাট্যচর্চা কেন্দ্র
কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, গণআন্দোলনের প্রবীণ কর্মী
ডাক্তার দেবাশিস মুখার্জী, ফোরাম ফর পিপলস হেলথ
মেরুনা মুর্মু, অধ্যাপক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
শামিম আহমেদ, লেখক ও গণআন্দোলন কর্মী
অর্জুন গৌরিসারিয়া, চলচ্চিত্র নির্মাতা
মহাশ্বেতা সমাজদার, সম্পাদক ও গণআন্দোলন কর্মী
অভিজিত মজুমদার, অধ্যাপক ও গণআন্দোলন কর্মী
সাইফুল্লা সামিম, অধ্যাপক, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
সৌমিত্র ঘোষ, অধিকার আন্দোলনের কর্মী
মির্জা মোসারফ হোসেন, সাংবাদিক
সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্লগার প্রবন্ধকার, গুরুচণ্ডালি
মারুফ হোসেন, প্রকাশক ও গণআন্দোলন কর্মী
আশিসকুসুম ঘোষ, গণআন্দোলন কর্মী
সামিরুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ
সিদ্ধব্রত দাস, জাতীয় বাংলা সম্মেলন।

খণ্ড-28
সংখ্যা-18