কমরেড গৌতম সেন স্মরণে
In memory of Comrade Gautam Sen

কমরেড গৌতম সেন, আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু, ২৫ মে যাদবপুরে কেপিসি হাসপাতালে সকাল ১১.২০ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কমরেড সেন গত ৩ মে কোভিড পজিটিভ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসারত অবস্থায় ২৫ মে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যান।

কমরেড গৌতম সেনের বাড়ি কলকাতায় কেয়াতলায়। স্ত্রী কমরেড কল্পনা সেন ও মেয়ে মিতালী সেন। পরিবারটি বিপ্লবী ও প্রগতিশীল কাজকর্মেই ব্যস্ত থাকেন। কমরেড গৌতম সেনের মৃত্যু আমাদের পার্টির কাছে বেদনাদায়ক। আমরা আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে হারালাম।

কমরেড সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরের রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। একই কলেজে পড়তেন কমরেড বিনোদ মিশ্র, ধূর্জটি বক্সী, গৌতম সেন এবং ব্রজবিহারী পান্ডে। কমরেড পান্ডে এখন পাটনায় আমাদের পার্টির হিন্দী পএিকা লোকযুদ্ধর সম্পাদনা করেন। এই কয়েকজনের মধ্যে গৌতম ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পূর্ণ করেন। তিনি কলেজের ছা্ত্রদের সমস্যা ও বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতেন। আন্দোলনের নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে খুব পরিচিত ছিলেন। কলেজে গৌতম সেনের ্ররনাম হয়েছিল ‘ঝাম সেন’। মানে সব সময় ঝামেলার মধ্যে থাকতো বলে। খুবই ভালো ছাত্র হিসাবে পরিচিত ছিলেন। জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। নকশালবাড়ির আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পরেন। কলেজে যখন গোপন সেল গঠন হয়, তার নেতা হন বিনোদ মিশ্র। কাশিপুরে শ্রমিকদের আন্দোলনের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর বিরুদ্ধে নিজেদের সমর্থন দিয়ে, তার পাশে ছাএদের সংগঠিত করার প্রশ্নে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তখনই কলেজ কতৃপক্ষ সবকিছু বুঝতে পারে। সিপিএমের সাথে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন প্রশ্নে বিরোধ হলে গৌতম এগিয়ে যেতেন। লড়াকু কমরেড ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কে গৌতম অংশ নিতেন, যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারদর্শী ছিলেন। গৌতম সেন প্রথম দিকে বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়াও দুর্গাপুর লোকাল কমিটির সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় সংগঠনের কাজ করেছেন। কয়েক বছর আগে অশক্ত শরীরেও কমরেড ধূর্জটি বক্সীর স্মরণসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন।

গৌতম সেন নিজে একটা সময় ‘মজদুর মুক্তি সংগঠন’ তৈরি করেন এবং সেই নামেই পএিকা প্রকাশ করতেন। ‘সার্চ প্রকাশনা’তে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতেন। আমাদের বিভিন্ন সেমিনার ও কনভেনশনে উপস্থিত হয়েছেন। গৌতম সেন ছিলেন সুবক্তা, সুলেখক। নিজের যুক্তি ও মতকে চমৎকারভাবে উপস্থাপণ করতে পারতেন। বিরোধী মতগুলি ধৈর্য ধরে শুনতেন, খোলামেলা বিতর্কে অংশ নিতেন।

কমরেড গৌতম সেন লাল সেলাম। কমরেড গৌতমের পরিবার, পরিজনদের শোকের সাথে আমরা সহমর্মি। কমরেড গৌতম সেন অমর রহে।

-- কার্তিক পাল

খণ্ড-28
সংখ্যা-19