কমরেড শান্তি ব্যানার্জী স্মরণে
Comrade Shanti Banerjee

গত ১৪ মে বর্ধমানের নিজ বাসভবনে দীর্ঘদিনের পার্টি কমরেড শান্তি ব্যানার্জী (খুকুদি) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার দুদিন আগে বাড়িতে পড়ে গিয়ে চোট পান। কমরেড খুকুদি ৭৩ সালে নবদ্বীপে পার্টির সাথে যুক্ত হন। তাঁর বাড়ি ছিল নবদ্বীপের তেঘড়ি পাড়ায়। সিপিআই(এমএল) পুনর্গঠনের সময় নবদ্বীপ শহর ছিল পার্টির কাজের অন্যতম কেন্দ্র। খুকুদি’র বড় দাদা বামপন্থী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। ৭০ সালে ছোট ভাইও পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার বাড়ি পার্টির কমরেডদের আশ্রয়স্থল ছিল। পোড়ামাতলায় বড়দার দোকানে খুকুদিও দর্জির কাজ করতেন। তার রোজগারের অর্থ দিয়ে পার্টির পেশাদার ক্যাডারদের আর্থিক সাহায্য করতেন। একটা সময় পুলিশের অত্যাচারের জন্য নবদ্বীপ শহর ছেড়ে বর্ধমান শহরে গিয়ে থাকতে হয়। তারপর বেলঘরিয়া, কোন্নগর ও অন্যান্য জায়গায় থেকেছেন। মহিলা আন্দোলনের সাথে সক্রিয় থেকেছেন। খুবই দরদী ও মানবিকবোধ সম্পন্ন কমরেড ছিলেন। পার্টি নীতিতে সবসময় দৃঢ থাকতেন। যখন শরীর সুস্থ ছিল তখন পার্টির সব কর্মসূচীতে অংশ নিতেন। কমরেড শান্তি ব্যানার্জির মৃত্যু পার্টির কাছে বেদনাদায়ক। বর্ধমান জেলা কমিটি, বিশেষ করে কমরেড পরেশ ব্যানার্জি, একমাত্র পুত্র ও তার পরিবার পরিজনদের শোকের সাথে আমরাও শোকাহত।

কমরেড শান্তি ব্যানার্জি লাল সেলাম। কমরেড শান্তি ব্যানার্জি অমর রহে।

- সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটি 

 

In memory of Comrade Shanti Banerjee


কমরেড খুকুদি’র সাথে আমার প্রথম দেখা ১৯৭০ দশকের মাঝে, কমরেড পরেশদার সূত্রে। পার্টি তখন গোপন অবস্থায় কাজ করত, খুকুদি’রও তখন সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী হওয়ার উদ্দেশ্য। খুবই মিশুকে ও আন্তরিক কমরেড। আবার দেখা হল ’৮০ র দশকে। তখন সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী-মায়েদের অন্য এক লড়াই চোখে পড়ল। কমরেড মিনাদি ও খুকুদি’কে কেন্দ্র করে একটা আস্তানা গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই আস্তানার একটা বিচিত্রতা ছিল। সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা বলতে খুকুদি, একটা বাচ্চা মেয়ে (মিঠু) আর আমি। মিঠুর মা মীনাদি কাজে যেতেন কিন্তু রোজ সেখানে ফিরতেন না। খুকুদি’রও এক শিশু সন্তান ছিল। সে থাকতো আবার অন্য এক জায়গায়। তাকে মাঝে মাঝে এনে দিন কয়েক রেখে আবার সে যেখানে থাকতো সেখানে পাঠানো হত। দুই শিশুর বাবারা মাঝে মাঝে এসে দু’এক দিন থেকে আবার চলে যেতেন। কারণ তাঁরাও সর্বক্ষণের কর্মী। টিকে থাকার জন্য, গোপনীয়তা বজায় রেখে শ্রমজীবী মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য খুকুদি ও আমি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা নিলাম। খুকুদি সেলাইয়ের কাজ, আর আমি ছোট বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করলাম। এখানে দেখলাম এক অন্য খুকুদি - পরিশ্রমী, কষ্টসহিষ্ণু ও দরদী। একসময় আস্তানাটা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। কারণ এরকম আস্তানা একটানা বেশিদিন রাখা সম্ভব ছিল না।

আমাদের আবার দেখা হয়, যখন আমি মা হলাম। তখন অন্য দুই মা (মীনাদি ও খুকুদি) বেঁধে বেঁধে থাকার মতো এগিয়ে আসে আরেক মা’কে সাহায্য করতে। কারণ আমি তখন একলা। আমি জানতাম ওই দু’জন মা তাঁদের সেই সময়ে উপযুক্ত সাহায্য পাননি। উপযুক্ত শেল্টারের অভাব, আর্থিক সঙ্কট, গোপনীয়তা বজায় রাখা - সব মিলিয়ে এক অদম্য লড়াই। আমি আমার শিশু সন্তানকে নিয়ে যখন মায়ের সাথে দেখা করতে যাই তখনও খুকুদি আমার সঙ্গী ছিলেন। খুকুদির সাথে শেষ দেখা বর্ধমানের টাউন হলের এক পার্টি প্রোগ্রামের শেষে। সেবার অনেক সাথী মিলে একসাথে দেখা হয়। পরেশদাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই।

খুকুদি’কে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। লাল সেলাম।

- মলিনা বক্স 

খণ্ড-28
সংখ্যা-18